জানলার পাশে বিষন্ন মনে আকাশপ্রান্তে চেয়ে আছে নীলা।নীল আকাশে একরাশ সাদা মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখছে।কিন্তু তার মনের আকাশে আজ কালোমেঘের ঘনঘটা।গত বছর এক ঝড়ের রাতে মা মারা গেল। মা মারা যাওয়ার ৪০দিন পরেই একরাতে বাবা ঘরে নিয়ে আসে নতুন মেহমান,যা কিনা নীলার সমবয়সী,তবুও বাধ্য হয়ে ছোট বোনের মুখের দিকে চেয়ে মা বলে মেনে নিল। নীপা নীলার ছোট বোন, নীলা অনার্স ১ম বর্ষে আর নীপা এসএসসি পাশ করে কলেজে ভতির্র অপেক্ষায়।নীলার ভালোবাসার মানুষটি ও আজ প্রবাসী। আগে মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হতো এখন সেটাও হয় না।নীলাদের মায়ের হাতে গড়া পরিবারে নীলারা আজ সবচেয়ে অবহেলিত। পারিবারিক অশান্তি এতবেশি যে আজকাল মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ছোট বোনকে নিয়ে কোথাও চলে যেতে।বাবা ও আগের মত স্নেহ করে না। ভাত খাওয়ার জন্য আপুকে ডেকে ভিতরে নিয়ে গেল ছোট বোন।
মাস ছয়েক পর একদিন বিকেলে অপরিচিত কিছু মেহমান আসে নীলাদের ঘরে। নীলা ঘুম,আব্বা এসে বলে যায় শাড়ি পড়ে যেন ড্রয়িং রুমে মেহমানদের সামনে যায়। ছোট বোন সুন্দর করে সাজিয়ে নীলাকে বর পক্ষের সামনে নিয়ে গেল। সবাইকে সালাম করার পর যখন সোফায় বসে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে নীলা তখন অবাক হয়ে যায়! এইতো তার প্রিয় মানুষ মামুন। কিন্তু ও তো আমাকে ও কিছু বলে নি! মামুনের আম্মু নীলার আঙ্গুলে আংটি পড়িয়ে দেয়। মামুনের মা বাবা খুব খুশি নীলাকে দেখে। নীলার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না,একি স্বপ্ন না সত্যি। পনের দিন পর বিয়ের দিনতারিখ ধার্য্য করা হয়। ছোট বোনটির কথা ভেবে সবসময় মন খারাপ থাকতো নীলার। রাতে ছোট বোনটিকে জড়িয়ে কাঁন্না করে দেয় নীলা। আমি চলে যাওয়ার পর এ বাড়িতে তো তুই একা থাকবি,মা নামের ওই মহিলাটা তো তখন তোকে আর বেশী অপমান করবে। ছোট বোন কেঁদে বলে আপু সব আমাদের বাবার দোষ। অনেক ধুমধাম করে বিয়ে হয়,কিন্তু বিদায় বেলায় দুই বোনের কাঁন্নায় পুরো বাড়ি নিশ্চুপ হয়ে যায়।
চার মাস পর মামুন বিদেশ চলে যাওয়ার সময় নীপাকে নীলার সাথে মামুনের বাড়িতে নিয়ে রেখে যায়। বছর দুয়েক পর নীপা এইস এস সি তে ভালো রেজাল্ট করে ভার্সিটিতে ভর্তি হয় আর নীলা একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি নেয়, মামুন ও এখন আর বিদেশ থাকে না,নিজ এলাকায় ব্যবসা করে।আজ তাদের কোন দুঃখ নেই, বাবার সাথে ও তেমন যোগাযোগ নেই। নীলা আর নীপার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তাদের নিজ এলাকায় তাদের মায়ের নামে একটি এতিম নিবাস কেন্দ্র খোলা, যাতে মা মারা যাওয়ার পরও যেন কোন সন্তানকে অবহেলায় বড় হতে না হয়। এরইমধ্যে নীলার কোলজুড়ে আসে এক ফুটফুটে সন্তান।
(চলবে)
উৎসর্গ -রুবেল মল্লিক,রাফিউল ইসলাম রাফী।
৬টি মন্তব্য
এই মেঘ এই রোদ্দুর
লেখা অনেক আবেগময় । কেমন একটা ধাক্কা লাগে বুকে ।
খুব সুন্দর লেখা
নীলকন্ঠ জয়
চলুক… শেষ পর্বে মন্তব্য করবো। -{@
লীলাবতী
খুব সুন্দর শুরু , পরের পর্বের অপেক্ষায় (y)
মিথুন
সুন্দর লেখা .. -{@
জিসান শা ইকরাম
ভালো লিখেছে দাদা ।
খসড়া
নীলা ঐ নীল নীল চোখে তুমি চেয়ে থেকো না। 🙂