কি কথা দিয়ে লেখা শুরু করবো তা বুঝতে পারছি না। কিন্তু লিখতে আমাকে হবেই। প্রথমেই ক্ষমা চাচ্ছি কেউ যদি আমার লেখাটায় কষ্ট পান। ঘটনা সব সত্য কিন্তু নামগুলো বদলে দিয়েছি।
আমরা মানুষ। এই মানুষ নিয়ে মানে নারী পুরুষের বিভিন্ন অসংগতিমূলক সম্পর্ক নিয়ে কিছু কথা যা আমাদের দেশ, সমাজ এবং পরিবারের জন্য ক্ষতিকর ছাড়া অন্য কোন ভাল কিছু আশা করা যায় না। আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি হাজার বছরের পুরনো এবং সমৃদ্ধশালী । কিন্তু এখনকার অবস্থা দেখলে মনে হয় আমরা কি আসলেই বাঙ্গালী/ বাংলাদেশী?
বিবাহ ১ টি সামাজিক প্রথিষ্ঠান। আর তাই মানুষ ১ পরিবার থেকে আর ১ টি পরিবার গঠনের জন্য তথাপি তার জৈবিক চাহিদা পুরনের জন্য বিয়ে করে তার পরিবার গঠন করে। কিন্তু আমার প্রশ্ন তা না। আমার প্রশ্ন হল যদি আমি বিয়ে করি তবে আমার অন্য ছেলে বা মেয়ের সাথে কেন ইলিগাল সম্পর্ক থাকবে আর যার কারণে আমার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাহলে কি বলব এটাই আমাদের আজকালকার নারী পুরুষের সম্পর্ক ?
এবার আমি আসল কথায় আসি। আমাদের জিবনে প্রেম,ভালবাসা, বিবাহ, সন্তান আসে তা সময় বুঝে। প্রেম করা বা কাউ কে ভালবাসা অন্যায় নয়। বরং প্রেম , ভালবাসা মানুষের জীবনের ১ টা অংশ। কিন্তু এই প্রেম বা ভালবাসা করতে গিয়ে যদি কেও সঠিক মানুষ কে চিনতে না পারে তখনি শুরু হয় নানা গণ্ডগোল। আমার ১ বান্ধবী ৯ বছর ধরে প্রেম করে আসছিল। তারপর তারা বিয়ে করে। ২ বছর পর আমার বান্ধবী কেয়া জানতে পারে তার স্বামী বিবাহিত ১ টা পুরুষ। কেয়া এ কথা জেনে প্রথমে খুব কষ্ট পায় এবং পরে তার স্বামী কে ডিভোর্স করে। এ ক্ষেত্রে আমি কেয়া কে দোষ দিব। কারন আমিই তাকে বিয়ের আগে তার স্বামী সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে বলেছিলাম। সে শোনেনি। আপনারাই বলুন এটা কি ভালবাসা? আমি বলব এটা মেয়েটার সরলতার সুযোগ নিয়ে কেয়া কে প্রতারিত করা হয়েছে যদিও কেয়াই ভুল করেছে।
এইআধুনিকতার যুগে (আমি এটা কে আধুনিকতা বলব না) আমাদের ছেলে মেয়েরা যা করছে তা দেখলে আমার কাছে মনে হয় এরা কি বাংলাদেশী নাকি বিদেশী অপ সংস্কৃতির ধারক বা বাহক? এত কম বয়সে তারা যে কি করছে তা তারা নিজেরাই জানে না। আর তাদের মা-বাবা (সব মা-বাবা নন) এটাকে বাঁধা না দিয়ে আরও উস্কে দিচ্ছেন। আমি বলব এখানে সব দোষ পরে মা-বাবার উপর। আমাদের এই সব মা-বাবা রা যদি একটু সচেতন হতেন তাহলে এই ছেলে মেয়েরা আর বিপথে যেত না। আমি এ দেরকে বলি নব্য ধনী লোক। কেন বলি তারও কারন আছে। থাক সেটা না হয় বাদ দিলাম। আমি যাদের কথা বলছি তারা ছাত্র-ছাত্রী বা তরুন প্রজন্ম । এই তরুন প্রজন্ম বা ছাত্র-ছাত্রী তারা তাদের জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য বেছে নিয়েছে বিভিন্ন পার্ক, ক্লাস রুম বিশেষ করে প্রাইভেট ইউনিভারসিটির ক্লাস রুম, লেকের পাশে কোন এক নির্জন স্থান। এটা আমি নিজে দেখেছি যখন আমি এম বি এ করি তখন। সাধারণত আমাদের এম বি এর ক্লাস শুরু হত সন্ধ্যা ৬টার পর। সে দিন আমি প্রায় ৪ টার দিকে ১ টা কারনে তাড়াতাড়ি এসেছি ভার্সিটি তে। আমাদের ক্লাস ৭ তলায় হবে। তখনও ক্লাস খোলেনই। কি মনে করে আমি ৫ টার দিকে ক্লাসে গেলাম। দেখলাম ক্লাস রুম খোলা। সাধারণত ৬ টার পর ক্লাস রুম খুলে দেয়া হয়। আমি ক্লাস রুমে একটু উকি দিলাম যে আমাদের ক্লাসের কেউ আছে কিনা। ও মা! আমি এ কি দৃশ্য দেখলাম! আমি হতবাক এবং আমি বিশ্বাস করতেই পারছিলাম না যে এটা কি হচ্ছে! (আপনারা বুঝতেইপারছেন যে ব্যাপার টা কি) আমি ঐ দৃশ্য দেখে ২ মিনিটের মধ্যে ১ম তলায় এসে জোরে জোরে বললাম যে কমপ্লেইন রুম কোথায়? আমার ১ এম বি এ বন্ধু আমাকে এ অবস্থায় দেখে বললও যে রোশনি কমপ্লেইন কর না। তোমার ক্ষতি হবে। আমাদের তথাকথিত মা-বাবা রা যদি একটু খেয়াল রাখতেন যে তাদের ছেলে মেয়ে রা পরা-লেখার নাম করে কোথায় যায় এবং কি করে তাহলে মনে হয় আমার এ রকম ১ টা খারাপ দৃশ্য দেখতে হত না। এই সম্পর্ক কে আপনারা কি প্রেম বলবেন না কি অন্য কিছু?
একটা মেয়ের প্রতি এক টা ছেলে বা পুরুষের আকর্ষণ থাকতেই পারে বা এক টা ছেলে বা পুরুষের প্রতি এক টা মেয়ে বা নারীর আকর্ষণ থাকতেই পারে। তাতে আমি কোন দোষ দেখি না। কিন্তু নারীপুরুষের এই আকর্ষণ থেকে যদি কারো সংসার জীবনে ক্ষতি বয়ে আনে, মা বাবার মাঝে , সন্তানের মাঝে দূরত্ব তৈরী হয় সেটা হয় ১ টা পরিবারের জন্য খারাপ আর সমাজ তো আছেই। দু টি পরিবার। ১ পরিবারের বাবা আর ১ পরিবারের মা তারা প্রতি শনিবার মিলিত হয় ১ বন্ধুর বাসায়। বন্ধু টি আগে ব্যাপার টি বুঝে নি। তাই সরল মনে বাসার চাবি দিয়ে দেয়। ১ দিন বন্ধুটির মনে সন্দেহ হয় আর তখনি সে ১ টা ঝাঁকুনি খায়। ভাবে হায় হায় আমি কি করলাম। বাড়ীর মালিক যদি জেনে যায় তাহলে ত আমার থাকার জায়গা রইলো না। সে তার মান সম্মান রক্ষার জন্য তাদের দু জন কেই মানা করে দেয়। আর অপর দিকে দু জনের সংসারে দেখা দেয় অনাসৃষ্টি। দু জনের ছেলে-মেয়ে রা তাদের মা- বাবা কে ঘৃণা করতে শুরু করে। পরিবার ভেঙ্গে যায়। ১ টা ছেলে যখন ১ টা মেয়েকে বিয়ে করে তখন তাদের মাঝে বাস করে ভালবাসা। যখনি একটা বাচ্চা হয় তখন ভালবাসাটা চলে যায় বাচ্চার প্রতি। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একজন মা কেমন করে তার নিজের জৈবিক চাহিদা মেটানর জন্য এত নীচে নামতে পারে তা আমার বোধগম্যনয়। পুরুষ তো চাবেই। তাই বলে মেয়েটার কি বিবেক নেই? আমি এই সব নারীদের বলছি তোমরা নিজেদের আগে মানুষ ভাব। তারপর তোমার পায়ের নীচে ভীত শক্ত কর মানে স্বাবলম্বী হও। নারী পণ্য নয়। তার অনেক শক্তি কারণ নারী মায়ের জাত।
পুরুষ টি বিবাহিত কিন্তু সবাই জানে যে সে অবিবাহিত। অই পুরুষটি এই সুযোগের ব্যাবহারটা ভাল করেই করে। আমার আর এক বান্ধুবী নাম সিমী কে সে অফার করে। আমার বান্ধুবীর রূপ এর নানা বর্ণনা দেয় আর আমার বান্ধুবী তা শুনে গলে যায় আর চলতে থাকে ১ অবৈধ সম্পর্ক। ( মেয়েরা তাদের রূপ এর প্রশংসা শুনলেই মাথা আর ঠিক থাকে না) এই সুযোগটারই ব্যাবহার করেছেন তিনি। বিয়ের আগে বিয়ের কাজ করা শেষ। কিন্তু আমার বান্ধুবীকে বিয়ের কথা আর বলে না। এক পর্যায়ে সিমী জানতে পারে পুরুষটি বিবাহিত এবং তার ১২ বছরের ১ টা সন্তান আছে। সিমীর ভাগ্য ভাল যে সে আত্মহত্যা করার মত কোন সিদ্ধান্ত নেয় নাই। সে চুপ করে এই রাস্তা থেকে সরে পড়েছে।
এবারআসি এখনকার কথায়। বর্তমান যুগ মানে নেট, ইন্টারনেট এর যুগ। আমি সবাই কে বলবো ইন্টারনেট এর মাধ্যমে কারো সাথে প্রেম করা বা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিবেন না। এতে আপনি ১০০% ঠগবেন। এই নেটে ছেলে মেয়েকে ঠকাচ্ছে এবংমেয়ে ছেলেকে ঠকাচ্ছে। আপনি হতাশ হবেন। বুদ্ধির কাজ হবে ইন্টারনেট এ এই ধরনের কোন সম্পর্ক তৈরী না করা।
আরও ভয়ানক বিষয় হল ওয়েবক্যাম। আমার মনে হয় ওয়েবক্যাম কে খারাপ ভাবে ইউজ করা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে হয় না , হয় আমাদের দেশে। ইন্টারনেট এর এই ওয়েবক্যাম নামক জিনিস টাকে আমি খুব ভয় পাই। আমার দুই ভাই দেশের বাইরে থাকে। আমি সাধারণত মেইল এ সব যোগাযোগ রাখি। এতে আমার কোন অসুবিধা হয় না। ওয়েবক্যাম এর ব্যাবহারের কথা সবাই জানেন। কিন্তু এটাকে যদি কোন ছেলে বা মেয়ে খারাপ কাজে ব্যাবহার করে নিজের শরীর অপর পার্শে ছেলে বা মেয়েটাকে দেখিয়ে তারা সাময়িক মজা পায় তাহলে বলুন আমাদের ছেলে মেয়েরা কোথায় আছে?
আর বেশি কথা লিখবনা, তবে ১ টা বিষয় না লিখলেই নয় গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ করছি ৬০ বছরের বুড়ী রা তার ছেলে মেয়ে , স্বামী থাকা সত্ত্বেও ছেলের সমান বয়সি ছেলেক বিএ করছে। এটাও কি অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পর্ক নয়?
কে কি বলবেন আমি জানি না। আমি যা বলেছি তা আমার দেখা। কোন কোন ঘটনা সবার কাছে মনে হতে পারে এটা তো আমরা জানি। তারপরেও বলবো আমরা নারী, আমরা মা এর জাত। আমাদের অনেক শক্তি তাই পুরুষের কাছে আমি সব সময় পণ্য নই। কখনও আমি মা, কখনও আমি পত্নী, কখনও আমি বোন বা ভাবী।
আর পুরুষদের কে বলছি ভালবাস ঠিক কিন্তু কাওকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখিও না আর নারীদের সম্মান কর কারন তাদের মাধ্যমে তোমরা এই পৃথিবীতে এসেছও।।
১৬টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
অবশ্যই নৈতিকতার অবক্ষয় , যা একদিনে শুরু হয়নি ।
আবার হঠাৎ করেই আমরা এই কঠিন সমস্যা সমাধান করে ফেলব এমন ও নয় ।
তবে হ্যা , আমাদের সচেতনতা দরকার যা আপনি হচ্ছেন এবং আমরাও অনুভব করছি ।
ধুর , ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই ।
এমন শক্তিশালী প্রথম লেখার জন্য অবশ্যই অভিনন্দন ।
ইশ্পা খান
ছাইরাছ হেলাল ভাই ধন্যবাদ আপনাকে। জি আপনি ঠিক বলেছেন। এই সমস্যা দূর করতে হলে প্রথমে আমাদের সবাইকে সছেতন হতে হবে
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম -{@
সমাজের চলতি একটা বাস্তব সমস্যার কথা খুব সহজ ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
সবাইকে এসব ভাবতেই হবে ।
ধন্যবাদ এমন পোস্ট দেয়ার জন্য ।
শুভ কামনা ।
ইশ্পা খান
জিশান ভাই অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
এই মেঘ এই রোদ্দুর
উপযুক্ত সময় উপযুক্ত লেখা এবং আপনার লেখা ১০০% সত্যতা আছে
পোষ্টে অনেক ভাল লাগা
মোঃ মজিবর রহমান
আমাদের সবার পরিবার গতভাবে যদি সবাই সজাগ হয় এটা থেকে আমাদের
মুক্তি আছে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
নীলকন্ঠ জয়
সোনেলায় সুস্বাগতম -{@
এই পরিবারে অন্তত ভেদাভেদের যায়গা নেই। এই যেমন আপনাকে আমি ‘আপু’ বলে ফেললাম। এরপর আরো কতশত দাবি 😀 করবো।
নারী পুরুষের সমান এবং পারস্পারিক বোঝাপড়াটা খুব জরুরী। প্রথম পোষ্টেই জাত চেনালেন। নিয়মিত লিখুন। -{@
ইশ্পা খান
many many thanks to you. I am so happy to know yhat you have read my writing, ofcourse you can call me apu. take care
মা মাটি দেশ
দেরী হয়ে গেল উত্তর দেয়ায় সরি…যথার্থই বলেছেন আমরা অভিবাবক আমাদের অনেক সজাক থাকতে হবে নতুবা অবুঝেরা বিপদে পড়বে আর জৈবিক চাহিদা থাকবে তবে তা হতে হবে কাচের মত স্বচ্ছ। কোন কিছুই স্হায়ী নয় এই পৃথিবীতে তাই মানুষ মানুষকে মানুষ হিসাবে ভাবতে হবে।ভাল লিখেছেন প্রথম লেখাই বাজিমাত করলেন আশা করি নিয়মিত লিখবেন আমাদের সাথে থাকবেন ঐক্যতাই পারে ঐ সব ক্ষতকে শেষ করতে।আবারও ধন্যবাদ।
ইশ্পা খান
না ভাই, দেরী হলেও আপনি আমার লেখাটি পড়েছেন। এর জন্য ধন্যবাদ। না ভাই এত প্রসংশার দাবীদার আমি নই। আমি খুব কম লিখি। ভাল থাকবেন মা মাটি দেশ
লীলাবতী
অসাধারন বাস্তব সমস্যাকে নিয়ে একটি লেখা । সচেতনতা চাই সবার মাঝে ।
ইশ্পা খান
লীলাবতী আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। জি সচেতনতা চাই সবার মাঝে
নিশিথের নিশাচর
অসাধারন ভাবে আমাদের এই সমাজের বর্তমান বাস্তবতা গুলো তুলে ধরেছেন।
বর্তমান আমাদের সমাজে এই ব্যাপার গুলো মানে আধুনিকতার প্রকাশ।
প্রতিদিন ই কোন কোন মেয়ে ছেলে প্রেমের পরীক্ষা দেবার জন্য লিটনের ফ্ল্যাটে যাচ্ছে।
ভালো লাগলো আপনার লিখা টা।
ইশ্পা খান
নিশিথের নিশাচর ধন্যবাদ। আর আছে। সেগুলো লিখলে জনগণ আমাকে পেটাবে হাহাহাহ
রিমি রুম্মান
সময়োপযোগী লেখা… শুভেচ্ছা আপনাকে। -{@
শুন্য শুন্যালয়
সোনেলায় স্বাগতম আপু..অনেক সহজ উপস্থাপনা. ভালো লাগলো বেশ..সমস্যা গুলো কিন্তু অনেক জটিল..মনেহয় জটিলতা আরো বাড়বে কমবে না..