আগষ্টে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতার উপরে কিছু মৌলিক ( বিশেষ করে সাধারন জ্ঞান এবং বুদ্ধিমত্তা ) ধারনা দেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষককে একটি কোর্সের জন্য বৃত্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য শিক্ষকদের কোন খরচ বহন করতে হবেনা। প্লেনের রিটার্ন টিকেট, দৈনিক ৫০০ ডলার পকেট খরচ এবং সবাইকে কোর্স সমাপ্ত হবার পরে ঢাকায় একটি ফ্লাট বা সত্তর হাজার ইউরো শুভেচ্ছা স্বরূপ দেয়ায়র সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২০ জন শিক্ষক নির্বাচনের দায়িত্ব দেন আমাকে। দায়িত্ব পাবার পরে একটি কাগজে কলমে জাতীয় পত্রিকায় যার প্রকাশ সংখ্যা ২০ টি, তাতে খুবই ছোট আকারে বিজ্ঞাপন দেই। আশা ছিলো কোন শিক্ষক এই বিজ্ঞাপন দেখবেন না, এই সুযোগে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ২০ জন শিক্ষকের সাথে আধাআধি ফ্লাট ভাগাভাগি করে নিজে ১০ টি ফ্লাটের মালিক হই। কিন্তু পত্রিকা যে প্রেস থেকে প্রিন্ট হয়, ওখানের এক কর্মচারীর মাধ্যমে বিষয়টা জানাজানি হয়ে যায় এবং শিক্ষকগন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইটে গিয়ে এটি নিশ্চিত হন। আবেদন পত্র দেখে অবাক হলাম। ভিসি সহ সব শিক্ষক আবেদন করেছেন। লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে ২০ জন নির্বাচিত করতে হবে। প্রশ্নপত্র তৈরি করার জন্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করি। কিন্তু কোন শিক্ষক এই প্রশ্নপত্র তৈরী করতে রাজি হলেন না। অথচ সময়ও বেশী নেই। কি আর করা, নিজেই তৈরী করলাম প্রশ্নপত্র। কেউ তো আর দেখবেন না কে তৈরি করেছেন এটি ।সাধারন জ্ঞান এবং বুদ্ধিমত্তার উপরেই প্রশ্ন করেছি এবং তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষকের নিজ সংশ্লিষ্ট। যাতে কেউ অভিযোগ দিতে না পারেন তাঁদের জানার সীমার বাইরে প্রশ্ন করা হয়েছে।
প্রশ্নপত্র
সাধারন জ্ঞান
পুর্ন মানঃ ৫০
(প্রতিটি সঠিক প্রশ্নের উত্তরের জন্য ৫, ভুলের জন্য ১০ মার্ক্স এবং উত্তর না দিলে ২০ মার্ক্স কাটা যাবে
১/ কলা ভবনের সবচেয়ে নিকটতম দুরত্বে আইট্টা কলা গাছের দুরত্ব কত মিটার ?
২/ ভিসির বাসার সামনের আইল্যান্ডে টিন দিয়ে ঘেরাও দিয়ে উন্নয়ন কাজ চলছে। মোটা রেইন্ট্রীর ৫ ফুটের মধ্যে স্থানে তিন ধরনের পাখির বিষ্ঠা আছে। কোন কোন পাখির বিষ্ঠা ওখানে আছে ?
৩/ অপারাজেয় বাংলার বেদীর পিছনে কোন এক দুষ্ট ছাত্র আজ কিছু কথা লিখেছে। কি লেখা আছে সেখানে ?
৪/ ১৯৮২ সনে ইংরেজী মাষ্টার্সে একজন পাগলাটে ছাত্রী ছিলেন। তাঁর নাম কি ? ( সুত্রঃ তাঁর পিতা এদেশের একজন মন্ত্রী ছিলেন )
৫/ ১৯৮১ সনে দর্শন সম্মান প্রথম বর্ষে একজন পাগলাটে ছাত্র ছিলেন। যিনি ইচ্ছে করে তাঁর জামার হাতা বা পকেট ছিড়ে ক্লাসে যেতেন, তাঁর ডাক নাম কি ?
৬/ আপনি সহ মোট পাঁচ জন শিক্ষকের নাম লিখুন যাঁদের মানসিক চিকিৎসা দরকার।
৭/ মহসিন হলের গেট থেকে রোকেয়া হলের গেটের দুরত্ব কত মিটার ?
৮/ আপনার মাথায় কতটি চুল আছে ? যে সংখ্যাটি লিখবেন তা কিভাবে জানলেন উল্লেখ করতে হবে। ৯/ সম্প্রতি একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে, তিনিও এখানে পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাকে কি আপনার কানমলা দিতে ইচ্ছে করছে? ইচ্ছে হলে কানমলা দিয়ে উত্তর দিন। হ্যা।
১০/ আপনার পাশের পরীক্ষার্থী কতদিন আগে নখ কেটেছেন ?
ফলাফল অত্যান্ত হতাশাজনক।
৩, ৬, ৮, ৯ নং প্রশ্নের উত্তর কেউ দেননি। মাইনাস ৮০ ( ৯ নং প্রশ্ন লেখার সময় সবাই একজন শিক্ষকের দিকে তাকিয়েছেন, ঐ শিক্ষক লেখা বাদ দিয়ে দু হাত দিয়ে কান ঢেকে রেখেছেন )
বাকি ৬ টি প্রশ্নের ভুল উত্তর দিয়েছেন। মাইনাস ৬০ ।
অর্থাৎ সবাই পেয়েছেন মাইনাস ১৪০। কি আশ্চর্য্য দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মান এই পর্যায়ে ? দেশের মান সম্মান বলে কথা। দেশের মান বাঁচাতে আমিই মিথ্যে জানিয়ে দিলাম অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে’ পরীক্ষা দিতে কোন শিক্ষক আসেননি, ব্যাক্তিগত যোগাযোগ করে জেনেছি যে তাঁরা কেউ এই বৃত্তি নিতে আগ্রহী নন ।
পুর্ব সুত্রঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে এ বছর মাত্র ২ জন ছাত্র ভর্তী হবার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
২৭টি মন্তব্য
বনলতা সেন
ব্যাপুক গবেষণাধর্মী লেখা। সহজে মুখস্থ করতে পারব বলে মনে হয় না।
জিসান শা ইকরাম
প্রশ্নপত্র দেখিলেই চলিবেক
অন্য সব কিছু যাত্রার পালা শুরুর বাজনা মাত্র 🙂
খসড়া
হা এত্ত মজা বহুদিন পাইনি। চমতকার।আপনিও দেখি রম্য রচনায় কম যান না।
এত্তদিনে মনের মত লেখা পেলাম।
জিসান শা ইকরাম
ঢাবির ইংরেজী বিভাগে নাকি মাত্র দুইজন ছাত্র যোগ্য বলে বিবেচিত।
সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন করার কারনে।
আমি তাঁদের চোখের সামনের কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করেছি শুধু 🙂
ব্লগার খসড়ার কাছে শিখছি ফান লেখা।
সাইদ মিলটন
বেচারা চিটার গো থুক্কু টিচারগো কোচিং বানিজ্যে হাতদিবেন তারা কি আপ্নেরে চুম্মা দিবো
জিসান শা ইকরাম
এগো চুম্মা নেয় কেডা ? মুখ দিয়া ছাগলের গন্ধও আইতারে [ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
বাংলার কথা
হা হা হা হা হা ভাইয়া আপনার জন্য ১০ টি গোলাপ আমি রেখে দিলাম ইনশাআল্লাহ দেখা হলে দিব , বাকিটা বুঝে নিয়েন 🙂
জিসান শা ইকরাম
আচ্ছা অবশ্যই গোলাপ নেবো 🙂
সীমান্ত উন্মাদ
হা হা বেফুক মজাক পাইলাম। ভাগ্য ভালো আমি কোন স্কুল কলেজ, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িনি, স্বশিক্ষিত তাই এই সব অপ্রশ্নের উত্তর দিতে হপে না। বাইচ্চা গেছি মামা :p
জিসান শা ইকরাম
হ , বাইচ্চা গিয়েছে আমার ভাইগ্না 🙂
রিমি রুম্মান
সময়োপযোগী লেখা… ব্যাপক আনন্দিত হইলাম এমন একখান লেখা দেইক্ষা …
জিসান শা ইকরাম
শিক্ষকরা এবার যে প্রশ্ন করেছেন, তাতে এই প্রশ্ন তাঁদের করতেই হয় ।
ছাইরাছ হেলাল
সর্ষের ভেতর ভুত না ভুতের মধ্যে সর্ষে তার সমাধান আগে করতে হবে।
জিসান শা ইকরাম
সব কিছুর মধ্যে সবকিছু 🙂
মিথুন
এমন আইডিয়া কোথায় পান ভাইয়া? কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছে করছে।
জিসান শা ইকরাম
জানার কোন শেষ নেই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই।
ব্লগার সজীব
হা হা হা হা হা , মজা পেলাম খুব।
নুসরাত মৌরিন
হাহাহা। ব্যাপক বিনোদন…।
মেহেরী তাজ
প্রশপত্র এতো সহজ বলেই কি প্রাপ্তনম্বর -১৪০?
হাসতে হাসতে চোখে পানি এসে গেছে।
এরুপ লেখা নিয়মিত চাই।
প্রজন্ম ৭১
বাঁশ ভালো ভাবেই দিলেন এদেরকে।
মোঃ মজিবর রহমান
এতেও লজ্জা হবে কি আমাদের।
খন্দকার মাহবুব, ১৯৭১ এ কি হয়েছে ভুলে যান।
লতিফ সিদ্দিকী
সৈয়দ মহসিন
নাহিদ এদের লজ্জা হবেনা।
আপু এদের বহিষ্কারও করবেনা।
আমার ইজ্জদ নাই আবার লজ্জা দেবেন কেমনে, হ্যা।
লীলাবতী
আজ হতভাগ্য কবি বলেছেন আপনি আর ছাইরাছ হেলাল ভাইয়া বস মানুষ। তিনি সত্যি বলেছেন। এমন স্যাটায়ার আমি খুব কম পড়েছি। প্রশ্ন গুলো পড়ে হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।
স্বপ্ন
ফলাফল মাইনাস ১৪০ ? ( ৯ নং প্রশ্ন লেখার সময় সবাই একজন শিক্ষকের দিকে তাকিয়েছেন, ঐ শিক্ষক লেখা বাদ দিয়ে দু হাত দিয়ে কান ঢেকে রেখেছেন ) হা হা হা হা হা হা এখানটায় মজা পেলাম খুব ভাইয়া।
শুন্য শুন্যালয়
প্রশ্নপত্র ফাঁস ছাড়াই কিভাবে এক্সাম নিলেন ভাইয়া? এতো বিরাট তাজ্জব ব্যাপার!! 9 নাম্বার প্রশ্নের উত্তর না লিখে সবাই একজনের দিকে তাকায় ছিলো? হা হা হা ভাই আপনি একটা মাস্টার পিস 😀
স্বপ্ন নীলা
আপনি সহ মোট পাঁচ জন শিক্ষকের নাম লিখুন যাঁদের মানসিক চিকিৎসা দরকার।———– এটা পড়ে আমি হাসতে হাসতে শেষ —– ওহ্ — দারুন দারুন ———
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
খুব ত্যাজী লেখা মনে হচ্ছে শিক্ষকদের উপর ভাইয়া বেশ চটে আছেন।মজা পেলাম।
মিসু
প্রশ্নের ধরনে মজা পেলাম খুব।