একঃ অনেকক্ষণ থেকেই ভাবছে অমৃতা, এই বুঝি ফোনটা আসবে। অপেক্ষা মানুষকে ধৈর্য্য ধরতে শেখায় নাকি ধৈর্য্যের পরিণতি অপেক্ষা, এখনও বুঝে উঠেনি। সে বলে গেছে ফোনটা যেনো মুঠোর ভেতরই রাখে। অনেকগুলো টেক্সট করেও উত্তর আসেনি। একদিনে অশান্তি-অস্থিরতা আর অন্যদিকে অভিমান। সূর্য এমন কেন? অপেক্ষা করেছে, কিন্তু এভাবে অপেক্ষা এ জীবনে কোনোদিনও করেনি।
দুইঃ অধিকার এমন একটি অনুভূতি, একটু বুঝে নিলে আকাশের চেয়ে বিস্তৃত হয়ে যায় তার সীমানা। যখন পরিচয়, তখনকার সেই অমৃতা আর এই এখনকার অমৃতার মধ্যে দিন-রাতের পার্থক্য। কোমলতা কেমন জানি রূক্ষ্ণ, সহজিয়া সারল্যও অনুপস্থিত। এসব কথা সূর্য প্রায়ই বলে। আচ্ছা একা একা কি বদলে যেতে পারে কোনো মানুষের মন কিংবা চরিত্র? সময়-পরিবেশ সর্বোপরি সঙ্গতাও কি এজন্য কোনো প্রভাব বিস্তার করেনা?
তিনঃ মুঠো থেকে ফোনটা আবারও বের করলো। একটা টেক্সটও নেই। আবারও হাওয়ায় ছুঁড়ে দিলো কন্ঠ। “সূর্য কোথায় তুমি?” উত্তর কবে পাবে সে কথা না ভেবে আরোও একটি টেক্সট দিলো অমৃতা। সকলেই বলে আবেগ-অনুভূতি এক তরফা হয়না। আমরা যখন কাউকে ভাবি, সেও ভাবে। তাহলে কেন এমন ছটফটানি নেই সূর্যর? এখনও যখন “অমৃতা” বলে ডেকে ওঠে, কাঁপতে থাকে সে। কিভাবে বোঝাবে সেই একই লাজুক-সহজ-সরল অমৃতার সে আজও? যদিও রাগ বেড়েছে, কিন্তু একটু আহ্লাদীর সাথে টেনে নিলে এখনও সেই কিশোরী বালিকা আবেগ।
চারঃ এতোক্ষণে প্লেন শুধু মাটি স্পর্শ করেনি, সূর্য ওর গন্তব্যেও পৌঁছে গেছে। অথচ একটা ফোন নেই। মেনে নিলো ফোন করতে পারছেনা কোনো না কোনো সমস্যায়। তা বলে একটা শব্দও কি লেখা যায়না, “পৌঁছেছি?” নিশ্চিন্তে নিঃশ্বাসটুকুর বিদায় হয়েছিলো সেদিন, যেদিন থেকে সূর্যর প্রেমে পড়েছিলো অমৃতা। হায়রে প্রেম। সূর্য এসে একদিন বলে, “আমি কি বলেছি, আমায় তুমি ভালোবাসো?” ওই কথায় খুব যন্ত্রণা হয়েছিলো অমৃতার। সেও বলেছিলো তখন, “তোমাকে তো আমিও বলিনি ভালোবাসি বলে, আমাকেও ভালোবাসতে হবে?” ওভাবে অমৃতা বলবে সূর্য কিন্তু ভাবেনি।
পাঁচঃ বারোটি দিন কেটে গেলো, সূর্যের মনেও নেই একটি বছর হয়েছে ওদের দাম্পত্য জীবন। যোগাযোগের মাধ্যমগুলো অসমাপ্ত সেতুর মতোই ঝুলে আছে। কিন্তু অমৃতার আবছায়াময় আবেগ এখনও উপচে পড়ে। এটুকু বুঝে গেছে এ জীবনে আর ফেরার উপায় নেই। আসলে ফিরতে কি আদৌ চায় অমৃতা? “সূর্য একটু তো জানাও। কোথায় তুমি?” চারদেয়ালের বাইরে চোখ রাখার জন্যে একটি জানালা, আকাশ দেখা যায়না। রাত জড়িয়ে নিয়েছে। আর কৃত্রিম আলোগুলো কেড়ে নিয়ে রাতের সৌন্দর্য। একদিন এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলো অমৃতা, জানালার বাইরের আকাশ দেখেছে মাটি থেকে শূণ্যে উঠে গেছে ও। চোখটা অজান্তেই বন্ধ।
ছয়ঃ অতঃপর ফোনটা বেজে উঠলো। নাহ সূর্য তার কন্ঠ শোনাতে চায়না। টেক্সট ম্যাসেজ, “পৌঁছেছি।” অভিমান সাঁতার কেটে কেটে পাড়ে এলো তীব্র জোয়ার হয়ে। “এতোক্ষণে? একদিন বুঝবে কি হারালে!” আবার বিপ বিপ শব্দ, “কি মিষ্টি একটা চরিত্র ছিলে,আহ্লাদী শিশুর মতো।” রিপ্লাই গেলো অন্যরকম, “এর জন্যে তুমি কি মোটেও দায়ী নও?” আর কোনো উত্তর আসেনি। অমৃতা আয়নার সামনে দাঁড়ালো, একই আছি, মোটেও বদলে যাইনি সূর্য। সময়ের গভীরতায় অধিকার প্রবল হয়েছে আর চাওয়ার পরিধি বেড়েছে। চাওয়া যখনই না-পাওয়ার পথে চলে, তখনই কষ্ট-যন্ত্রণার জন্ম হয়। আর সেই কষ্ট জমে জমে আগ্নেয়গিরি হয়ে যায়। কেন বোঝোনা সূর্য ভালোবাসি এখনও? দিনকে দিন বেড়েই চলছে এই পাগলামী। ভালোবাসার আরেক নাম যে পাগলামী, জানো সেটা? মিস করছো ভালো করেই অনুভব করছি, অস্বীকার করবে? করো।
হ্যামিল্টন, কানাডা
২২ জুন, ২০১৫ ইং।
২২টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
গল্পে গল্পে গল্প বলার অভিনব কিন্তু সুন্দর অনুভুতি প্রকাশের সক্ষমতা
দেখে ভালই লাগল।
স্বীকার বা অস্বীকার যা কিছুই করি না কেন সত্যি ভালোবাসা ভালোবাসাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভেঙ্গে ভেঙ্গে গড়ার অপচেষ্টায় ব্রত যে এই জীবন। ধন্যবাদ এভাবে সতত উৎসাহের জন্য 🙂
ব্লগার সজীব
অমৃতারা এত কষ্ট কেন পায়! ভাল থাকুক অমৃতারা।
অমৃতার অভাব একদিন বুঝবে সুর্য।
গল্প লেখার চেষ্টা এটি হলে,গল্প কেমন হবে তাহলে?
ছবিটার দিকে তাকিয়েই আছি।
নীলাঞ্জনা নীলা
অমৃতা কি চায় সূর্য ওর মতো কষ্ট পায়? আমি অমৃতা হলে চাইতাম না।
প্রশ্নটা যৌক্তিক, কিন্তু উত্তরটা যে খুঁজে পাচ্ছিনা ;?
ছবিটা গুগল মহাজনের। 😀
মোঃ মজিবর রহমান
অমৃতা
কি না যাদুতে লেখনি
গল্পের ভাবনা সুদুর প্রসারি
খুব ভাল লাগলো
শুভ কামনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
সাধারণ মেয়েদের নিয়ে গল্প লেখা বড়োই কঠিন। তাই গল্প লেখার চেষ্টা করলাম।
অসংখ্য ধন্যবাদ 🙂
জিসান শা ইকরাম
এমনই হয়
প্রতাশিত ভালবাসা আবেগ এসব অনুপস্থিত থাকে প্রায় সময়ই।
অমৃতার জন্য শুভ কামনা।
ছবি আর লেখা দুজনে দুজনার 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
অমৃতার জন্যে সূর্যর আবেগ চাই, কই থাইকা যে আইন্যা দেই নানা। ^:^
লীলাবতী
ভালবাসার আর এক নাম পাগলামী এটা অনেকেই বুঝে না।নীলাদি এত ভাল লেখেন কিভাবে?আপনি এখানে লেখেন ভাবতেই গর্ব হয় আমার।
নীলাঞ্জনা নীলা
ওমা এ কি কথা! গর্ব তো হয় আমার, এতো সুন্দর আর মায়াময় লেখনীর লেখক-কবিদের মধ্যে লেখার দুঃসাহস করছি। :v
মেহেরী তাজ
গল্প লেখার চেষ্টা বুঝলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই শেষ করে দিলেন কেনো???? চেষ্টাটা আর একটু চালিয়ে যেতেন।
আপু আপনি প্রত্যেকটা লেখা কে একটা আলাদ মাত্রা দেন কি ভাবে?
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া শেষ হয় বলেই তো শুরু করতে পারি। তা নইলে চেষ্টাটা আরেকটু টেনে নিতাম।
আর লেখা যে কিভাবে লিখি, মাথার ভেতরে আবেগ গড়াগড়ি খায় শুধু। ^:^
অনিকেত নন্দিনী
“অপেক্ষা মানুষকে ধৈর্য্য ধরতে শেখায় নাকি ধৈর্য্যের পরিণতি অপেক্ষা” আমিও কিন্তু জানিনা দিদি!
ভালোবাসার আরেক নাম পাগলামী এটা সূর্যেরা বুঝেনা। হয় আদতেই বুঝেনা, নয় ইচ্ছে করেই বুঝতে চায়না। তারাও মিস করে, স্বীকার করেনা। অমৃতারা কেঁদে কেঁদে হয়রান হয়, অভিমান করতে করতে একটা সময়ে বজ্রকঠিন হয়ে যায় আর তাদের মাঝে গড়ে উঠে “দূরত্ব” নামের সেতু। 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
বোঝে বোঝে। পৃথিবীতে মানুষ অবহেলা-তাচ্ছিল্য-প্রেম-ভালোবাসা খুব বোঝে। আর তাই তো প্রেম পেলে ভাব ধরে, অবহেলা পেলে ছুটে আসে। :p
শুন্য শুন্যালয়
সময় নামের একজন আছে, যে আমাদের সবার লাইফে এসে নাক গলায়, সব দোষ তার।
একা একা কেউ বদলাতে পারেনা। বোঝাটা বদলাতে পারে।
আপনার মোবাইলে বিপ বিপ মেসেজ কি গিয়েছে? (গল্প চাইনা, চেস্টাই চাই)।
নীলাঞ্জনা নীলা
দারুণ মন্তব্য। বিপ বিপ ম্যাসেজ আসার পথ নেই। লাইন বন্ধ করে রাখি।
অমৃতাদের ধরে পেটানোর দরকার, এমন আবেগ রাখে কেন? :@
প্রজন্ম ৭১
এত বেশি আবেগ ভাল না 🙂 কষ্ট দেয় এমন আবেগ।
নীলাঞ্জনা নীলা
কি করা উচিত তবে? মাইরের উপর ঔষধ নাই—ওটা কি প্রয়োগ করবো?
পারভীন সুলতানা
হু , ভালোবাসা , ভালোবাসাই চায় তবে সময়ে তার চরিত্র পালটায় । অধিকার আকাশ ছুতেঁ চায়, আর তখনি ফাঁস মনে হয় …………………পালাতে চায় । আবার গ্রীবা ফিরিয়ে দেখে কষ্টের রঙ কতটা নীল। খুব সুন্দর অমৃতা আর সূর্যের খন্ড । ভালোলাগলো খুব ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আকর্ষণীয় মন্তব্য। ধন্যবাদ আপনাকে -{@
খেয়ালী মেয়ে
গল্প লেখার চেষ্টা?….
আপু আপনার লেখার হাত যে খুব পাকা সেটা আগেও বলেছি, নতুন করে আর বলতে চাই না…………….
ছোট ছোট কষ্টগুলো জমে এক সময় আগ্নেয়গিরি হয়ে যায়, দারুন বলেছো আপু…..
ভালোবাসার আরেক নাম পাগলামী, সূর্যরা আসলে অনেক কিছুই বুঝে না, বুঝতে চায় না………..
নীলাঞ্জনা নীলা
কি যে বলবো। ভেবে পাচ্ছিনা যে! ;?
তবে এটুকু প্রাপ্য তোমার (3