একটি সিএনজি অটো রিক্সা এর দাম সতের লক্ষ টাকা যা একটি ভালো প্রাইভেট কার এর দামের চেয়েও বেশী! গত কয়েকদিন যতটা সিএনজিতে চড়েছি, প্রতিটির চালকের সাথে আলাপ করে জেনেছি সিএনজি ক্রয় করে রাস্তায় নামাতে খরচ হয় ষোল লাখ থেকে আঠার লাখ টাকা। যে কারণে এর জমা দিতে হয় বেশী, মিটারে চললে তেমন টাকা আয় হয় না, তাই চুক্তিতে যেতে বাধ্য এরা।
ক্যাসিনো নিয়ে তুলকালাম ঘটনা দেখে মনে হয় এই দেশের সমস্ত দুর্নীতির উৎস ক্যাসিনো। প্রশাসন কি জানতো না ক্যাসিনো চলে দেশে? মিডিয়ার লোক কি জানতো না? এই মিডিয়া এখন লাইভ দেখায় ক্যাসিনো নিয়ে। এই ক্যাসিনো কি হঠাৎ যাদু মন্ত্রের বলে উঠে এসেছে?
এই ক্যাসিনো চালু বা বন্ধে মধ্যবিত্ত, নিন্ম মধ্যবিত্ত, বা গরীবদের কি লাভ লোকশান হলো? এরা কি কেউ ক্যাসিনো খেলতে যায়?
যাই হোক ক্যাসিনো বন্ধ করে বিশাল এক কর্ম করে ফেলেছেন সরকার। আমরা আদার ব্যাপারী, জাহাজের খবর নিয়ে আমাদের লাভ নেই। আমরা বরং সিএনজি অটো নিয়ে একটু ভাবি।
সিএনজি ঢাকায় মধ্য বিত্তের বাহন। এটি মিটারে চলার কথা। কিন্তু মিটারে চলে না। চুক্তিতে চলতে হয়। কেন মিটারে চলে না, এর কারণ নির্নয়ের জন্য ঢাকাতে গত কয়েকদিনে একটি জরিপ চালাই। তাতে অবাক করার মত কিছু তথ্য পাই।
ভারতে একটি সিএনজি অটোর দাম ভারতীয় ১.৬৫ লাখ রুপী, যা বাংলাদেশি টাকায় ২ লাখ টাকার মত। আমদানী শুল্ক কত এই সিএনজি অটো রিক্সার? কিভাবে এর দাম সতের লক্ষ হয়? জেনেছি বিআরটিএ অফিসেই কয়েক লাখ টাকা দিতে হয় এর লাইসেন্সের জন্য। ঘুষ বাদ দিয়ে সঠিক দামে সিএনজি রাস্তায় নামলে এর ভাড়া অবশ্যই কমবে। মিটারে চলবে সবাই। সতের লাখ টাকা ইনভেস্ট করে এর মালিক অবশ্যই বেশী টাকা জমা নিবে রোজ এটিই স্বাভাবিক।
এসব খোঁজ নেয়ার দিকে নজর নেই কারো। রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র হরণে ব্যস্ত প্রশাসন এদিকটা খোঁজ নিতে লজ্জা পাচ্ছেন।
বাস প্রসঙ্গ
গত কিছুদিন যাবত হঠাৎ নজরে এলো যে ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী জন পরিবহন গাড়ি গুলোর একটি গাড়িতেও পিছনে টার্নিং লাইট নেই, এমন কি টারিং লাইট লাগানোর কোন ব্যবস্থাই নেই। আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তিরা হয়ত দেখতে পান গাড়ির পিছনের টার্নিং লাইট, আমরা দেখতে পাই না। তাঁদের চোখ আলাদা আমাদের চেয়ে। এসব একটু দেখা হয় যখন একটি গাড়ি বেপরোয়া চলাচলের কারণে কোন পথচারী নিহত হলে। কিছুদিন ধরপাকড় চলে, তারপর যেমন ছিল তেমনি চলে। এই যে টার্নিং লাইট বিহীন গাড়ি এর ফিটনেস সনদও তো বিআরটিএ দেয়। বিনা ঘুষে দেয়? হয়ত বিআরটিএ অফিসে ঘুষ নেয়াটা তাঁদের নাগরিক অধিকারের মধ্যে পরে, তাই তাঁদের দিকে কারো দৃষ্টি নেই।
একটি উন্নত দেশে পরিনত হবার নমুনা আমরা চোখের সামনেই দেখি।
২৪টি মন্তব্য
নিতাই বাবু
দুর্নীতি আর ঘুষনীতিতেই আমরা উন্নত। এছাড়া আর কোনকিছুতেই আমরা এখনো উন্নত হতে পারিনি। জন্ম থেকেই আমরা আমাদে বদনীতিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা দাদা, এই ক্ষেত্রে আমরা বহু উন্নত।
আকবর হোসেন রবিন
এই বিষয়ে ভেবেছি, কিন্তু লিখতে পারি নাই। লিখলেও আপনার মতো এতো সুন্দর করে লিখতে পারতাম না। আপনি অনেক তথ্য দিয়ে লিখেছেন। অজানা কিছু জানতে পারলাম। সাথে কষ্টও পেয়েছি দুনীর্তি দেখে।
ব্যাটারি চালিত কতোগুলো রিক্সা আছে। যেগুলো মেইন সড়কে উঠতে পারেনা। অলিগলিতে চলে। রিক্সা গুলোর দাম ৮০ হাজার টাকা। রিক্সা চালক রিক্সার মালিককে দেয় প্রতিদিন ৬০০ টাকা। মালিক এই ৬০০ টাকা থেকে প্রতিদিন পুলিশ কে দেয় ২২০ টাকা। যেদিন দেয়না, এর পরদিন থেকে তার রিক্সা রাস্তায় নামাতে পারেনা। আমার হালিশহর থানায় প্রায় ৮০০ রিক্সা আছে। তাহলে চিন্তা করেন পুলিশ প্রতিদিন কতো টাকা করে শুধু এই ব্যাটারি চালিত রিক্সা থেকে নিচ্ছে। অবশ্য পুলিশ নিজে এসে নেয় না, এই কাজের জন্য আলাদা লোক রাখে। ওই লোক গুলোকে দেখি কোন কাজকাম করেনা, অথচ জমিদারের মতো চলাফেরা করে। এসব দেখলে খুব কষ্ট হয়…..বাট কিছুই বলতে পারিনা, করতে পারিনা। নিজের প্রতি নিজেরও ঘৃণা হয়।
জিসান শা ইকরাম
ট্রাফিক পুলিশ প্রতিটি জেলা শহরের প্রবেশ মুখে বসে থাকে, প্রতিটি ট্রাক, ভ্যান থেকে এরা টাকা নেয়।
প্রতি জানবাহনের জন্য আলাদা রেট আছে। পরিবহন খাতে যে দুর্নিতি তার হিসেব হয় না কখনো।
মনির হোসেন মমি
ভাইজান আমি একটি গাড়ীর মালিককে জিগাইলাম আজ কত টাকা ভাড়া হতে ইনকাম হল সে একটি টিপ দিয়ে বুঝালাম ৫০০০ টাকার ভাড়ার মধ্যে আমি ১২০০ টাকা পেলাম সবাই ড্রাইভার রাস্তায় চালায় শেষ।পুরো এ-ই লাইনটা ২নম্বর।
জিসান শা ইকরাম
এটিই প্রতিষ্ঠিত নিয়ম হয়ে গিয়েছে।
তৌহিদ
দেশের অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানের কতিপয় দুর্নীতিবাজদের জন্য বদনাম হচ্ছে আর ভোগান্তি হচ্ছে সবার। আমদানিকৃত ইঞ্জিনিগাড়ির উচ্চ মুল্যের কারনে তারা মিটারে চলতে চায়না। জমা দিতে হয় মালিককে আবার নিজের সংসারতো আছেই। সানান্য লাইসেন্স করতে গেলে দালালদের অত্যাচারে অতীষ্ট হতে হয়। এসবই কর্তারা জানেন। কেউ কিছু না ঘটলে কিছুই বলেনা। কারন টাকার ভাগ সবার পকেটেই যায়।
কি এক অদ্ভুত সিস্টেম আমাদের!! লজ্জা হয়।
জিসান শা ইকরাম
আমরা এই অবৈধ নিয়মের কাছে জিম্মি হয়ে আছি।
মোঃ মজিবর রহমান
কিছুই বলার নেই নিতি যেখানে ফেলনা সেখানে দুরনিতিই অন্যতম হাতিয়ার।
জিসান শা ইকরাম
কোনো সেক্টর দুর্নীতির বাইরে নেই।
মোঃ মজিবর রহমান
ঠিক ভাই
ইঞ্জা
সিএনজি নিয়ে দূর্নীতি সম্পর্কে আমার বিশেষ অভিজ্ঞতা আছে ভাইজান, এবং এই দূর্নীতি বেশ চমকপ্রদ, এ কোটি টাকার বাণিজ্য বলায় যায়।
সময় করে এই বিষয় নিয়ে লিখবো।
জিসান শা ইকরাম
এই বানিজ্যের ভুক্তভোগী জনগন, কিছু করার নেই আসলে।
লিখবেন অবশ্যই।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
সিএনজি টেক্সী কীভাবে ১৭ লক্ষ টাকা হয় হিসাবটি বুঝলাম না! আমি একটি কিনেছিলাম নাম্বারসহ আড়াই কী সাড়ে তিন লাখ টাকা। নতুন নিলে বড় জোড় পাঁচ সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার মতো…. রেজি:স্ট্রেশনসহ আরো ৫০ হাজার। অবশ্য প্রাইভেট, কারণ শহরাঞ্চলে পাবলিক রেজি: বন্ধ।
আমি সবুজ কালারের তিন চাকা সিএনসি টেক্সীর কথা বলছি, যেটি আপনার ছবিতে দেয়া আছে।
জিসান শা ইকরাম
মূল্য ব্যাতীত ১২-১৪ লাখ টাকা লাগে আজকাল কাগজ সহ রাস্তায় নামতে,
আমিও এই সবুজ কালারের সিএনজির কথা বলছি।
ছাইরাছ হেলাল
গোচরে অগোচরে কত কিছুই না হচ্ছে।
এর শেষ কোথায় কে জানে!
জিসান শা ইকরাম
এর শেষ নেই কোথাও, এটি চলমান।
আরজু মুক্তা
আমিও রাস্তায় চলতে গিয়ে সিএনজি ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করি। দাম শুনেও অবাক হই। তিনবছর আগেও ৭/৮ লাখ টাকা ছিলো।
হায়রে দূর্নীতি।
জিসান শা ইকরাম
এখন ১৬-১৮ লাখ খরচ হয়।
সাখিয়ারা আক্তার তন্নী
সব সম্ভব আমার সোনার বাংলায়,
শুধু ভালো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব।
জিসান শা ইকরাম
ভালো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা আসলেই অসম্ভব।
সঞ্জয় মালাকার
ভাইজান…
দুর্নীতি আর ঘুষনীতিতেই আমরা উন্নত সরকার পরিপূর্ণ, গরীবমরলে কার কি আসেযায়, ঘরে বসেই তো সরকারের কালোটাকা আয়।। শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
এসব না থাকলে বাংলাদেশ সত্যিই সোনার বাংলায় পরিনত হতো।
শুভ কামনা।
সঞ্জয় মালাকার
ধন্যবাদ ভাইজানা শুভেচ্ছা অফুরন্ত।