গল্প হেঁটে যাচ্ছে হনহনিয়ে তীর-বেগে/সর্পিল গতিতে, যাক না সে এমন করে দূরে কিম্বা কাছে, আর-ও কাছে। সিদ্ধ বা নিষিদ্ধের তোয়াক্কা না করে।
ভোর-বিহান থেকে ক্লান্ত- বিকেলে গল্পের পেট এবার চো চো, পথ-ঘাটের জনহীনতায় ভরকে গিয়ে দারুণ-চাঙ্গা এবার খিদে; প্রত্যাশার ইতালিয়ান কোজিন, কাউন্টারে বসা ঢাউস ভূরি বাগিয়ে আধ-কপালি টাকের গমগমে গলার সদা-হাস্যের ম্যানেজার; এগিয়ে দেয়া নিপাট-হাতের চকচকে কাসার বাটিতে দু’টুকরো আখের গুড় আর টাটকা মচমচে মুড়ি।
জুতমতো বসে আমরা বরং গল্পের কাছে গল্পে-গল্পে গল্প শুনতে চাইতে পারি। অবশ্য এমনটা ভাবার যথেষ্ট কারণ ঘটেনি যে গল্প শোনান/বলার মৌরসি স্বত্ব গল্পের কাছে কী জোর করে গছিয়ে দিয়েছে।
ভাদ্র-গ্রীষ্মে মেঘেদের গুরু গর্জনের ঘনঘটা থাকলেও গনগনে তপ্ততা সাবলীল ক্রুদ্ধতায়গল্পের সাথে গা বাওয়া-বাওয়ি করেই হাঁটে; আনকোরা ছাতা পেখম মেলে স্নিগ্ধতা ছড়ালেও, গল্প এসব ছাতামাতায় সায় না দিয়ে আধা-দিগম্বর-বেশে এগিয়ে যায়! ভাবে, বৃষ্টির ভাজে ভালোবাসার সাথে দেখা হয়ে গেলে জম্পেশ আড্ডা হয়েই যাবে, হয়েছে যেমন আগে-ও।
গল্পের/গল্পদের কোন গল-টল্প থাকে কী না তাও আমরা সামান্য ঝুঁকে আলগোছে উঁকিঝুঁকি দিতেই পারি, আরে উঁকিঝুঁকি আবার কিসের! ক্যাঁক করে চেপে ধরে একটানে খুলে ফেলতে পারি গল্পের লুকনো ভাণ্ডার যা চিরকালীন স্তব্ধতায় যেখানে আগলে রেখেছে ভারার ঘরের কোনে খুনসুটির আচলে বেঁধে।
সেবারে গল্প সরবে-সদলে মাছ ধরতে গিয়েছিল, চিক্কুর পারতে পারতে, সে এক কঠিন/করুন অভিজ্ঞতার গল্প। গগন বিদারী আর্ত-চিৎকারে শুরুতেই সাঙ্গ হয়েছিল মাছ ধরা-ধরি, সামান্য এক কচি-শিঙ্গির এক কাটার ছোঁয়ায়। অনেক চেষ্টা-চরিত্রির করে এ ব্যথার এলাচ কী করে হয়েছিল জানতে পারিনি, শুধু জেনেছি নিম্নাঙ্গে শিঙ্গা নিতে হয়েছিল, এ-ই জেনেছি, ঠিক কোথায় সে শিঙ্গাস্থান তা জানতে পারিনি।
গল্পকে এবার ডেঙ্গু খেয়েছিল, প্রথমে গল্পের সে কী হালুম-ধালুম! কুচ নেহি হোগা বলে উল্লম্ফ নৃত্য, সামান্য পরে-ই পাপদ-ধরণী-তল; বেজায় চ্যাংদোলার পর- ও হম্বি তম্বি, তবে তা শুধুই ক্ষীণ-কলরবে!
গল্পের সাথে হঠাৎ দেখা রাস্তায়, ঘর্মাক্ত-মণ্ডল জামার হাতায় মুছতে মুছতে ছুটছে তো ছুটছে, খপ করে ধরে ফেলে বেত্তান্ত জানতে চাইলে ছলছল মুখচ্ছবি মেলে শুধু বলল তার এক অতি-নিকট-কুটুম্বের হৃদয় খয়া গেছে! এ আর এমন কী! আকছার-ই-তো এমন- খোয়া-খুইয়ি হচ্ছে! ঝাঁ-চকচকে দেখে নূতন একখানা লাগিয়ে /বাগিয়ে নিলেই তো হয়!
ধাই করে আমার বুকে ঘুসি বসিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। নাম জপতে জপতে!
আমারা বরং ইলিশ-ভ্রমণ করি, ঐ যে সে-বারে, যা খেলুম না দাদা, কী বললে! গোটাটা! আরে নাহ্, পাশের বাড়িতে ভাজি হচ্ছিল! তো তাতে কী! যা ঘ্রাণ! এখন- ও মুখে লেগে আছে! ঘ্রাণ আবার বুঝি মুখে লেগে থাকে! ঐ আর-কী! ধুর এ অচল গপ্প বাদ, বাজারে ইলিশ-পেটির চাপে অন্য মাছ পানির দরে বিকচ্ছে।
এর থেকে বরং আমরা বাঘ-সওয়ারী করে আসি, তা মন্দ হয়-না, তা কী সাভানায়! নাকি সুন্দরী-বনে! সাভানার কি দরকার সুন্দরী-বন থাকতে। তবে গিয়েছিলাম সে-বারে, সওয়ারীর মাঝ-পথে নেমে যেতে হয়েছিল, বাঘের গায়ে পচা-মাংসের উৎকট গন্ধে হর হর করে উল্টি হয় গেল। মাঝ-পথে থেমে যাওয়ার বিড়ম্বনা সবাই বুঝতে পারে না, ভুক্ত-ভুগি ছাড়া। না ঘরকা না ঘটকা। বাহ্, এর মধ্যে বাঘ-টাঘ করা সারা!
কৃত্রিম/কপট রাগে গর গর করে গল্প বলে, এবার আমি ঘুমাবো। তা কে আবার নিষেধ দিল! আশপাশে ভুত-পেত্নী-ও দেখছি না। তা যদি কাল ঘুম হয় তা-ও তো সমস্যা দেখছি না! চাইলেই কী আর ঘুমানো যায়!! স্বপ্ন-স্বপ্ন স্বপ্নে এক কুচকুচে কালো ভূতনি (পেতনী/ডাইনি না) শুধু হাসে আর হাসে, শিথিল গাত্র-বসনে!!
২৬টি মন্তব্য
মোস্তাফিজুর খাঁন
😄 খুব ভালো লাগলো,,, ভাই
ছাইরাছ হেলাল
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
নিতাই বাবু
ঠিক তা-ই দাদা। কেউ বুঝে না, কারোর ব্যথা। একমাত্র ভুক্তভোগী ব্যথিত ছাড়া।
ছাইরাছ হেলাল
অন্যের ব্যথা বুঝতে পারা খুব কঠিন কাজ,
এই কঠিন প্যারা সবাই নিতে পারেনা, জানেও না।
নিতাই বাবু
ঠিক তা-ই দাদা।
ছাইরাছ হেলাল
ধন্যবাদ দিলাম।
সাবিনা ইয়াসমিন
পুরো গল্প পরে পড়বো। আগে বলুন ইতালিয়ান ম্যানেজার আখের গুড় আর মুড়ি ক্যামনে দিলো? সেখানে ঐ বাঙলা টোটকা খাবার কোথা এলে এলো?
ছাইরাছ হেলাল
আপনি ঠিক-ই ধরেছেন, তবে একটু লক্ষ্য করে দেখুন, এখানে ম্যানেজারকে না-বোধক ভাবে
উপস্থাপন করা হয়েছে, তাই এখানের যতই মজাদার খাবার থাকুক না কেন গল্পের মন পড়ে রয়েছে
অন্য কোন খানে, নিপাট হাত সেটির প্রতীক।
চৌক্ষের শকুন দারুন কার্যকর! বাপ্রে!
সাবিনা ইয়াসমিন
সেবারে গল্প সরবে-সদলে মাছ ধরতে গিয়েছিল, চিক্কুর পারতে পারতে, সে এক কঠিন/করুন অভিজ্ঞতার গল্প। গগন বিদারী আর্ত-চিৎকারে শুরুতেই সাঙ্গ হয়েছিল মাছ ধরা-ধরি, সামান্য এক কচি-শিঙ্গির এক কাটার ছোঁয়ায়। অনেক চেষ্টা-চরিত্রির করে এ ব্যথার এলাচ কী করে হয়েছিল জানতে পারিনি, শুধু জেনেছি নিম্নাঙ্গে শিঙ্গা নিতে হয়েছিল, এ-ই জেনেছি, ঠিক কোথায় সে শিঙ্গাস্থান তা জানতে পারিনি।
—————————————————
আমরা কি গল্পের এই অংশ নিয়ে কিছুক্ষন হাসাহাসি করবো? না ব্যাথিত হবো বুঝতে পারছিনা। তবে বেশিক্ষন আটকে রাখা যাচ্ছেনা.. কি করবো তাড়াতাড়ি বলুন 🙊🙊🙊🙊
ছাইরাছ হেলাল
হাসুন বা কান্না করুন, যা-ই করুন না কেন সাবধানে করবেন,
দাঁতের যথাযত যত্ন নিয়ে।
আরজু মুক্তা
গল্প সারা বাংলাদেশ ঘুরে এখন ঢাকায় অবস্থান নিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর সংবাদ সম্মেলন করবে। আপনার মতো আমার ঘুম পাইছে, ভাতঘুম। ছুটি থাকলে মজিয়ে ঘুম দেয়া যায়! কি আর করা! আপনি তো আছেনি, পরের ঘটনা জানাইয়েন। গল্প এবার আসমানীদের বাসায় যাবে কি না?
ছাইরাছ হেলাল
গল্প যে কোথায় কখন কীভাবে যায়, তা তো বলে কয়ে যায় না।
হুট-হাট চলে যায়, বয়ে যায় তাও বলা যায়। তবে আসমানীদের বাসায় গেলে মনে হয় আপনাকে
নিয়েই যাবে।
আরজু মুক্তা
ভাইয়া, খানিক্ষণ হওয়ার কথা বানানটা।
অভিধান দেখিয়েন। ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখিয়েন
ছাইরাছ হেলাল
দেখুন আমি তো কোন নির্ভুল মানুষ নই। ভুল, বানান ভুল আমি লিখি,
তবে জানার সীমার মধ্যে চোখ-কান খোলা রেখে চেষ্টা করি, সব সময় তা যে পারি এমন না।
অনেক ধন্যবাদ, বলার জন্য, এমন করে কিছু দেখলে নির্ভয়ে বলবেন, ঝালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করব।
আসলে এই বানান-টি নিয়ে দ্বন্দ্বে আছি, মূল শব্দ ক্ষণিক ও ক্ষণ, এটা থেকে ক্ষাণিকক্ষণ লিখেছি।
হ্যা, ডিকশনারিতে আপনার বলা বানানটি দেখেছি আবার, জানা থাকলেও।
আসলে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কারো সাথে কথা বলতে হবে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
তবে, খানিকক্ষণ হলে ভালো হবে।
ছাইরাছ হেলাল
হতে পারে,
আর-ও জানার চেষ্টা নিচ্ছি। তবে এ শব্দটিও ব্যবহার হতে দেখেছি।
মনির হোসেন মমি
আমারা বরং ইলিশ-ভ্রমণ করি, ঐ যে সে-বারে, যা খেলুম না দাদা, কী বললে! গোটাটা! আরে নাহ্, পাশের বাড়িতে ভাজি হচ্ছিল! তো তাতে কী! যা ঘ্রাণ! এখন- ও মুখে লেগে আছে! ঘ্রাণ আবার বুঝি মুখে লেগে থাকে! ঐ আর-কী! ধুর এ অচল গপ্প বাদ, বাজারে ইলিশ-পেটির চাপে অন্য মাছ পানির দরে বিকচ্ছে।
দুঃখজন হলে সত্য যে এখন আর ইলিশ ভাজাঁ ঘ্রান পাড়া মহল্লাকে পাগল করে না।তেমন সলিট ইলিশের আকাল।গল্প গল্পেরা কখনো এমন ইলিশঁ ভাজার নিমন্ত্রণ জানালে লুফে নেয়া যেত।আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমান আমরা প্রহরীর সাজঁছি।খুব ভাল গল্প।
ছাইরাছ হেলাল
একে বারেই এমন ইলিশ পাওয়া যায় না তা কিন্তু না। কিন্তু সমস্যা হলো এটি ফ্রিজে রেখে দিলে
স্বাদ-গন্ধ আর কিছুই থাকে না। এ যাত্রায় অপারগতা জানান ছাড়া উপায় থাকছে-না।
আরে প্রহরী সাজবেন কেন! আপনারাই আমাদের অতন্দ্র স্বজন।
যাক, এবারে রক্ষা পেয়েছি, কেউ ‘বুঝিনি’ বলছে না।
সত্যি ঘটনা হলো, এটি মানে এই লেখাটি মোটেই নিরীহ গোছের না। বলেই ফেললাম।
মনির হোসেন মমি
হুম। অসংখ্য ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
ধন্যবাদ আপনাকেও।
তৌহিদ
গল্পের তালে তালে গল্পকে গল্পের ভিতর পেঁচিয়ে পাঠকদের যে গল্প শোনালেন সেই গল্প কিন্তু এখন আর গল্প নেই। গল্প চলে এসেছে আড্ডার টেবিলে। ইটালিয়ান কুইজিন না খাইয়ে ভুঁড়িওয়ালা ম্যানেজার খাওয়ালো কিনা গুড় মুড়ি!! আচ্ছা পাজিতো!! শিং মাছ ধরার বিড়ম্বনা থেকে ডেঙ্গু হয়ে গল্প গিয়েছে সুন্দরবনে বাঘ শিকারে!!
এটা কি আড্ডা নাকি গল্পকে গল্পে গল্পে পাঠককে নিজের বাড়ি ঘর দেখালেন?
মাথা ঘুরান্টি দিচ্ছে ভাই!!
ছাইরাছ হেলাল
মাথা ঘুরান্টি দিলে তো হবে না।
এত্ত সহজ গপ্পো দিলাম তাও রেহাই নেই ঘুরান্টি থেকে।
উহা চালু থাকবে।
নিজের বাড়ী-ঘর তো নাই-ই, থাকলে টের পাইতেন।
শাহরিন
এত্ত কঠিন গল্প তো পড়ার বইয়েও পড়ি নাই!! পরিক্ষায় পাশ করতে আরও ৫/৭ বার পড়তে হবে।
ছাইরাছ হেলাল
এগুলো আবজাব লেখা, পুরনো লেখা পড়েছেন, এই-ই অনেক।
কষ্ট করে এতবার পড়ার কিচ্ছু নেই।
ভাল থেকে আমাদের কিছু পড়ার সুযোগ দিন।
শাহরিন
পুরনো আবার কি!!! আমি তো আপনার
সব লেখা মাঝে মাঝেই রিভিসন দেই।
ছাইরাছ হেলাল
কয় কী কয় কী!!
এবার ভ্য় পামু কী না ভাবতেই হয়!