আমি এখন বসবাস করছি নিলফামারী জেলার সৈয়দপুরে। এখানে আসার পর পরই আমার
মনে হলো আমি কি বাংলাদেশে আছি? নাকি অন্য কোন দেশে আছি? এখানে যার সাথেই কথা বলি সেই
উর্দূ মিশ্রিত বাংলায় কথা বলে । আর তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে সম্পূর্ন উর্দূতে। যার বিন্দু বিসর্গ
আমি বুঝতে পারি না।
এই সৈয়দপুরের ৬০%মানুষ বিহারী আর ৪০% বাংলাদেশী। এই অঞ্চলে দোকানপাট সব বিহারীদের। যে কিছু
সংখ্যক বাঙ্গালী আছে তারাও ওদের মত উচ্চারনে বাংলা কথা বলে।
চরম এবং পরম দুঃখের কথা এটা যে এই এলাকার বাংলাদেশীরা তাদের ঐ ক্যাক্কাহুহা ভাষাতেই ঝুঁকে যাচ্ছে।
সবচেয়ে বড় কথা আমার ৫ বছরের ছেলেও দেখি আজ সকালে ক্যাক্কাহুয়া হুয়া করছে। আর এই অধম আমি ও
কথা বলছি সব ‘স’ কে ‘ছ’ করে– যেমন ”আসছে” – শব্দটি উচ্চারন করছি “আচ্ছে” বলে! নিজের
কথা নিজেরই কানে লাগছে। ঘর থেকে বের হলেই মনে হয় পার্সপোর্ট ভিসা ছাড়াই অন্য দেশে চলে এসেছি।খুব দু:খ জনক হল বাঙালীরা খুব সহজেই উর্দু শিখে উর্দুতে কথা বলছে। আবার বিহারি বাঙালী বিয়েও হচ্চে।
আর পরম আনন্দের কথা এখানকার বাংলাদেশীদের বিজয় দিবস উৎযাপন । সত্যিই এরা হৃদয় থেকে তা পালন
করে। শিক্ষিত বিহারীরা প্রানপন চেষ্টা করে নিজেকে বাংলাদেশী করার। বিজয় দিবসকে ধারন
করেছে নিজেদের সংস্কৃতির মধ্য। কিন্তু যে হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে বিহারীদের হাতে বাংলাদেশীদের তা এখানকার
একটি বাঙ্গালীও ভোলেনি। তাই তাদের কন্ঠ বার বার চিৎকার করে বলেছে –এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই
রক্তাক্ত সময়।?—–
আমি ও তাদের সাথে গাইলাম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বয়লারের সামনে দাঁড়িয়ে —– যারা মোর ঘর
ভেঙ্গেছে স্মরণ আছে/ সে আমার রক্তে ভেজা দিন/ চেতনায় হানছে আঘাত ————-
মার্চ মাসে ১৯৭১ এ মোট ৩৪জন বাঙ্গালী কর্মচারী/কর্মকর্তাকে জীবন্ত ফেলে দেয়া হয় এই বায়লারে। ফেলে দেয় তাদেরই দীর্ঘ দিনের সহকর্মী যারা বিহারি।
এই ব্লগে আমি লিখব আমার জানা ইতিহাসগুলি একটু একটু করে।
১৫টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এগুলো আমাদের জানা ছিল না , আপনি লিখে আমাদের জানাচ্ছেন বলেই
আমরা এ তথ্যগুলো জানতে পারলাম ।
এতদিন লিখেননি কেন জানতে চাইতেই পারি ।
খসড়া
লিখছি এখন। যদি আপনারা পড়েন তবে লিখব। খেয়াল করুন মন্তব্য নেই তার মানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেউ শুনতে চায় না। প্রেমের উপন্যাস বা কবিতায় তাদের রুচির অভাব নেই।
ফরহাদ ফিদা হুসেইন
নতুন কিছু তথ্য, দারুণ! 🙂
খসড়া
এই তথ্য হাসির নয় আনন্দের নয়। এই তথ্য বেদনার ,গাম্ভীর্যের, অশ্রুর, আগুনের, দেশকে ভালবাসা।
জিসান শা ইকরাম
এদেশ কখনোই ভুলবেনা এই সব নর পশুদের কথা
ঘৃণায় উচ্চারিত হবে এদের নৃশংসতা —
লিখুন আপনি ১৯৭১ এর এদের নির্মমতার কথা
বাঙ্গালীদের জানিয়ে দিন বিহারীদের পশুত্বের কথা ।
শুভ কামনা ।
খসড়া
আপনারা চাইলে লিখব। আমি যা লিখি তার প্রতিটি অক্ষর সত্য। এ ইতিহাস।
আদিব আদ্নান
অবশ্যই লিখবেন ,পাঠকদের জন্য ।
এই প্রথম এগুলো জানলাম , আরও জানতে চাই ।
কোথায় গেলেন!
খসড়া
কোথাও যাইনি আছি থাকব। আপনারা চাইলে লিখব। ধন্যবাদ। পারলে একবার সৈয়দপুরে আসুন । এখানকার প্রতিটি ইঞ্চি জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের বেদনা ও মহিমান্বিত ইতিহাসে সমৃদ্ধ।
ছাইরাছ হেলাল
আমার পায়ের তলায় সরষে কিন্তু ।
হুট-হাট ছুটে চলি ।
লিখতে শুরু করুন ।
আমাদের অজানা কাহিনী ।
খসড়া
ধন্যবাদ হেলাল লিখব আমি আমার মত। এই স্বপ্ন নিয়েই তো স্বপ্নের জাল বুনি। রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ দেখব। কোন রাজাকার বলবে না “তোমার সোলায়মান কই, ওর রক্তে আমি গোসল করব।”
সোলায়মান মারা গেছেন কিন্তু স্বপ্ন রেখে গেছেন প্রজন্মের চোখে। তার প্রজন্ম রাজাকারের বিচার করছে।একদিন কর্যকর হবে রায়।
বনলতা সেন
অজানা ইতিহাস জানতে পেরে আরও এমন করে লেখার
অনুরোধ রাখছি ।
খসড়া
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস খোজাই আমার নেশা। আমি তা অন্তরে ধারন করি। লিখব আপনাদের জন্য। ধন্যবাদ।
প্রিন্স মাহমুদ
আরও কিছু অজানা লেখা লিখুন ।
যাযাবর
লিখুন ভাইয়া , জানতে চাই অজানা অধ্যায় গুলো । -{@
আফ্রি আয়েশা
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আরও লিখুন । আরও জানতে চাই ।