অনিক ফোনটা রেখে ঘড়ির দিকে তাকালো, রাত আটটা বিশ।
ফোনটা আবার তুলে নিয়ে ডায়াল করলো ছায়ার নাম্বারে, কয়েকটা রিং হতেই ছায়া রিসিভ করে হ্যালো বললো।
আমি অনিক।
ওহ বলুন।
আনকেলের জন্য টাকাটা আমি দিতে চাই।
ছায়া ফুঁফিয়ে উঠলো।
কি হলো কোন সমস্যা?
না না, উপকারটা হবে।
তাহলে কখন দিলে ভালো হয় সে কথা বলো হসপিটালের সাথে, আমাকে জানাও।
ওকে, রাখছি।
ওকে, অনিক ফোন ডিস্কানেক্ট করে সিগারেট ধরালো।
পনেরো মিনিট পরে ছায়া রিং দিলে অনিক বললো, হাঁ বলো।
ওরা বলছে আজ টাকা জমা করলেই ওরা কাল সকাল সাতটায় অপারেশন শুরু করবে, জবাবে ছায়া জানালো।
ওকে গুড আমি তাহলে আসছি।
জ্বি, অনিক।
হাঁ বলো।
কি বলে ধন্যবাদ জানাবো?
আমি এইসব আনকেলের জন্য করছি, বলেই অনিক ফোন ডিস্কানেক্ট করে দিলো।
অপর প্রান্তে ছায়া ফোনটার দিকে অপলক চেয়ে রইলো।
অনিক দ্রুত রেডি হয়ে মানিব্যাগটা চেক করে গাড়ীর চাবি নিয়ে বেরিয়ে গেলো, ওর বাসা থেকে হসপিটাল যেতে প্রায় পোনে এক ঘন্টা লাগলো, সে প্রথমেই ছায়াকে ডেকে নিলো পেমেন্ট ডিপার্টমেন্টে, ছায়া কাগজপত্র নিয়েই এলো, সব দেখে চেক করে হসপিটাল বিলিং সেকশন আপাতত বিল করলো চব্বিশ হাজার আটশো পয়ষট্টি ডলার।
অনিক তার ক্রেডিট কার্ড দিলে ওরা তা দিয়েই বিল রিসিভ করে করে কার্ড ফিরিয়ে দিয়ে বাকি ফর্মালিটি পূরণ করে নিলো, এরপর ইংরেজিতে বললো, তোমাদের পেশেন্টের অপারেশন শুরু হবে সার্প সকাল সাতটায়, অল দ্যা বেস্ট।
থ্যাংকস বলে দুজনই এগিয়ে গেলো লিফটের দিকে, লিফটে করে ওরা উপরে এসে ওয়েটিংরুমে বসলো।
আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দেবো জানিনা, আপনি বাবার জন্য এগিয়ে না এলে কি যে হতো ভাবতেই পারছিনা।
ওইসব থাক, আল্লাহ্ আল্লাহ্ করো যেন আনকেল দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
ডাক্তার বলেছে এমন অপারেশন ওদের জন্য পিনাটের (চিনা বাদাম) মতো, বাবা দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।
তাহলে তো খুবই ভালো।
জ্বি।
কফি খাওয়াবে?
ওহ সরি সরি বলে ছায়া দ্রুত গিয়ে কফি নিয়ে এলো, একটা কাপ অনিককে দিয়ে নিজে একটা নিলো।
অনিক কফিতে চুমুক দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো, তোমার হাতে টাকা পয়সা আছে?
ছায়া মাথা নিচু করে রইলো।
হুম বুঝতে পারছি বলেই মানিব্যাগ থেকে পাঁচশো ডলার নিয়ে এগিয়ে দিলো ছায়ার দিকে।
ছায়া হাত বাড়িয়ে নিয়ে আমতা আমতা করে বললো, বাবা সুস্থ হলেই আমি সব দিয়ে দেবো।
ও পরে দেখা যাবে, এখন আনকেলের দিকে খেয়াল রেখো।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই অনিক কল দিলো ছায়াকে, অপর পাশে রিং কয়েকটা পড়তেই ছায়া কান্না জড়িত কণ্ঠে হ্যালো বললো।
কি খবর, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
বাবাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেলো কিছুক্ষণ আগে।
ওহ, তা কতক্ষণ লাগবে কিছু বলেছে?
তা বলেনি, শুনেছি ঘন্টা পাঁচেক লাগে আবার অনেক সময় বেশি লাগে।
ওহ আই সি, আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমি অফিসে একবার ঢু মেরে আসছি।
ঠিক আছে।
অনিক ফোন ডিস্কানেক্ট করে বাথরুমে গেলো।
আধা ঘন্টা পর বেরিয়ে পড়লো অফিসের উদ্দেশ্যে, এবি বায়ো ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রি আইএনসির সিইও এবং পঞ্চাশ পার্সেন্টের মালিক সে, তার আরেকজন পার্টনার জন লেভিন ওর বন্ধু, দুজনে মিলে চার বছর আগে এই ইন্ডাস্ট্রির কাজ শুরু করে, আজ তাদের ব্যবসা বিশ্বের অনেক দেশের সাথে আছে।
ও প্রথমে অফিসে পোঁছেই লেভিনের ক্যাবিনে গেলো, ওখানে কিছুক্ষণ ব্যবসায়িক আলাপ সেরে নিজ ক্যাবিনে গিয়ে সেক্রেটারি লুসিকে আসতে বললো।
লুসি মধ্যবয়সী মহিলা, শুরু থেকে এই কোম্পানিতে আছে।
লুসি প্রবেশ করে কিছু ফাইল তুলে দিলো অনিককে, অনিক ফাইল গুলো চেক করে কয়েকটা সিগনেচার করে ইংরেজিতে বললো, লুসি আমার একটু বেরুতে হবে, মনে হয় লাঞ্চের পর আসবো।
লেভিনকে বলে দিয়েছো?
হাঁ বলেছি, তুমি এক্সপোর্ট ম্যানেজারকে বলো ফিলিপাইনের এলসির কাগজপত্র রেডি করে দ্রুত শীপমেন্টের ব্যবস্থা করতে।
ওকে, আর কিছু?
না, তুমি এখন যেতে পারো।
অনিক তোমার সাথে আমার কথা ছিলো, লুসি বললো।
কি বলো?
আমি একটা ভালো চাকরি পেয়েছি।
কি বলছো?
এখন তুমি আমাকে না দেখলে কে দেখবে বলো?
অনিক লুসিকে মার মতোই পছন্দ করে, লুসিও ওকে ছেলের মতোই করে।
লুসি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে, অনিক অনুযোগ করলো।
মাই সান, ওরা শেভরন।
ওহ রিয়েলি?
হাঁ ওরা আমাকে ভালো বেনেফিট দেবে।
তাই।
এছাড়া তুমি তো যখন খুশি আমার বাসায় চলে আসবেই।
তা ঠিক, তা কবে ছাড়তে চাও?
দুই মাস পর।
ওকে তুমি রিজাইন লেটার দিয়ে রাখো আমার টেবিলে, পরে আমি লেভিনের সাথে কথা বলবো।
ওকে অনিক।
তুমি হ্যাপি?
অনেক।
ওকে তাহলে আমি উঠছি, তুমি কাজ গুলো সারিয়ে নাও।
ওকে সি ইউ।
বাই।
………. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
৩৫টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালো লাগছে পড়ে। পড়তে পড়তে যেটা মনে হলো, পৃথিবীতে আসলেই কিছু মানুষ আছেন যারা, নিজেদের শত ব্যাথা সহ্য করেও হাসিমুখে অপরের সুখ-দুঃখে পাশে থাকেন। অনিকও নিজের মান-অভিমান ভুলে এগিয়ে এসেছে ছায়ার দুর্দিনে। ওদের সম্পর্কের বরফ গলে যাক।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ভাইজান। তাড়াতাড়ি লিখবেন। ভালো থাকুন, শুভ কামনা।
ইঞ্জা
একদম ঠিক বলেছেন আপু কিন্তু অনিক যা করছে তা রওশনের বাবার জিন্য করছে।
চেষ্টা করবো আপু যেন দ্রুতই গল্প দিতে পারি, ধন্যবাদ।
মাহমুদ আল মেহেদী
গল্পের মত আমরাও পাশে আছি গল্পের সুখে দু:খে। পরের পর্বের আশায় আছি ।
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ্ পাশে থাকবেন ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
কথা একটাই, যা কিছু একটু রয়ে-সয়ে ধীরে সুস্থে করতে হবে।
নো তড়িঘড়ি।
চলবে…………………
ইঞ্জা
অবশ্যই ভাইজান, তড়িঘড়ি করলে গল্পই কেচে যেতে পারে, ধন্যবাদ।
মনির হোসেন মমি
অনিক ও ছায়া যেন দুজন দুজনার।ভাল লাগল তাদের সহমর্মিতার পার্ট।চলুক।
ইঞ্জা
কে কার তা এখন বুঝা যাবেনা, গল্প তো মাত্রই শুরু হলো, পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।
বন্যা লিপি
পড়ছি কিন্তু!!! আছি কিন্তু সাথে ছায়ার মতো। ভালো লাগছে ভীষন। এগিয়ে চলুক আপন গতিতে।
ইঞ্জা
অফুরন্ত ধন্যবাদ প্রিয় আপু, খুবই খুশি হলাম। ☺
তৌহিদ
অনিক আসলে অসাধারণ মনের মানুষ। তার লুক্কায়িত প্রেম মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে।
ইঞ্জা
লুকায়িত প্রেম 😲
ভাই কোথাও কি তা প্রকাশ করেছি, একসময় হয়ত ছিলো কিন্তু এখন থাকা কি উচিত?
তৌহিদ
পুরান প্রেম ভোলা কি যায়? সবাই তা পারেনা? রবীন্দ্রনাথও পারেননি।😃😃
ইঞ্জা
😂😁
জিসান শা ইকরাম
পড়তে ভালোই লাগছে ভাইজান,
এমন ভাবে লিখছেন যেন আমাদের সামনেই এসব হচ্ছে, বা সিনেমায় দেখছি 🙂
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাইজান,
চেষ্টা করি যেন উপস্থাপনটা ভালোভাবেই করতে পারি, পাশে থাকবেন প্লিজ।
রিতু জাহান
খুব ভালো মনের পরিচয় দিচ্ছে অনিক। পাশে থাকা বিষয়টা যে কতোবড় একটা সাপোর্ট তা বলার মতো না।
চলুক ভাইজু। বর্ণনা বেশ চলছে।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ প্রিয় আপু, পাশে থেকে অনুপ্রেরিত করার অনুরোধ রইলো।
শুন্য শুন্যালয়
এক মুঠো নয়, ধীরে ধীরে মুঠো মুঠো ভালোবাসা ছড়াবে, তা আমরা এখনই টের পেয়ে গেছি। অবশ্য লেখকের মনে যে কী আছে, টুইস্ট না ঘটিয়ে দেয় 🙂 ভালো হচ্ছে গল্প ইঞ্জা ভাইয়া।
ইঞ্জা
আপু, গল্পের পরিচিতি চলছে মাত্র, ভবিষ্যতে কি টুইস্ট দেবো তাও জানিনা, শুধু জানি টুইস্ট হবেই। 😆
মোঃ মজিবর রহমান
চলিয়ে যান। পড়েছি বেশ কয়েকদিন কিন্তু সোনেলার কাজের জন্য সাইন ইন করে যখন মন্তব্য করতে গিয়েছি আবার ব্লে সাইন ইন কর। তাই দেরি হল।
পরের পর্বের …………………
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, আশা করছি দ্রুতই পাবেন।
জিসান শা ইকরাম
ভাই, সোনেলায় আপনার প্রফাইল পিকচার আপলোড করুন।
খুব খালি খালি লাগছে।
মোঃ মজিবর রহমান
সহময় এটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই
ইঞ্জা
ভাইজান, দ্রুতই চেইঞ্জ করবো।
জিসান শা ইকরাম
এইত এখন আর খালি খালি লাগছে না 🙂
জিসান শা ইকরাম
পরের পর্ব দিন দ্রুত।
ইঞ্জা
ভাইজান আজ দিয়েছি।
রেজওয়ান
অনেক ভাল লাগছে ভাইজান!রাত বাজে ১ টা সকাল ৮ টায় অফিসের জন্য বেরুতে হবে কিন্তু গল্পটা শেষ পর্যন্ত পড়তে ইচ্ছে করছে..😭😭
ইঞ্জা
লহুন ভালো লাগছে তুমি পড়ছো দেখে, ধন্যবাদ।
কামাল উদ্দিন
বাংলাদেশী ছেলে আমেরিকায় বিশাল ব্যবসায়ী। এখনো বিয়ে থা করেনি। এক জীবনে এমনটা হওয়া উচিৎ নয়। তবে সামনে কি হয় দেখার জন্য এগিয়ে তো চলছিই……
ইঞ্জা
যারা ব্রেইনি তারা দেশে বিদেশে সব জায়গাতেই ভালো কিছু করতে পারে, যেমন ধরুন মাত্র ২১/২৩ বছরের ছেলে ফেইসবুক সৃষ্টি করে, আজ দেখুন ও কোথায় আছে।
কামাল উদ্দিন
আমার জীবনটা মনে হচ্ছে ষোল আনাই মিছা
ইঞ্জা
না ভাই কারো জীবনই মিত্যে নয়, সবাই কোথাও না কোথাও লেগে আছে।