সকালে রেল লাইনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম এক স্থানে মানুষের অনেক জটলা । ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখি একটা গর্ভবতী মেয়ে ট্রেনে কাটা পড়েছে । শরীরে লাল বেনারসী জড়ানো । শরীরের নিচের অংশ সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গিয়েছে । মুখটা ভাল ভাবে দেখলাম চেনা চেনা লাগছে !! আরে এটা তো মিতু !! বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠল । ওর রক্ত শূন্য ফ্যাকাসে মুখে একটা শান্তির আভা দেখা যাচ্ছে । মনেহচ্ছে অনেক দিন পর মেয়েটি একটু শান্তিতে ঘুমাচ্ছে ।
পুলিশ আসল বেওয়ারিস লাশ , থানায় নেয়া হল । আমি দারোগা সাহেব কে বললাম মৃতা ব্যাক্তি আমার আমার পরিচিতা আমি ওর পরিবার কে চিনি । দারোগা সাহেব বললেন ঠিক আছে আপনি ওনার বাড়িতে ফোন দিন , এর আগে আপনি এখান থেকে যাবেন না ।
আমি ওর বাড়িতে ফোন দিলাম ।
ওর পরিবারের মানুষ রা আসতে থাকুক। চলুন এই ফাঁকে আমরা একটু ফ্লাস ব্যাকে যাই ।
তিন মাস আগে আমি একটা সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের হাউজ টিউটর ছিলাম । হ্যাঁ ঠিকই ধরছেন মিতু আমার ছাত্রী ছিল । মেয়েটি এমনিতেই লেখাপড়ায় খুব ভাল । একটা নাট্য সংগঠনের সাথে যুক্ত ও ছিল যদিও ওর বাবা এসব মোটেও পছন্দ করতেন না ।
একদিন পড়াতে গিয়ে দেখলাম মিতুর মন খারাপ । মাথা নিচু করে বসে আছে । আমি মনে করলাম হয়ত শরীর খারাপ । কথা না বাড়িয়ে চলেই যাচ্ছিলাম । পিছন থেকে মিতু ডাক দিল
স্যার যাবেন না আপনার সাথে আমার একটু কথা আছে ।
আচ্ছা বল ।
ইদানিং একটা সমস্যা হয়েছে আমার বাড়িতে আমি কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছি না । মা বেঁচে থাকলে হয়ত এমনটা হত না । আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা আমি প্রেগনেন্ট ।
অহ আচ্ছা । তোমার বয় ফ্রেন্ড কি এ ব্যাপারে কিছু জানে ?
আমার বয় ফ্রেন্ড ???
হুম ।
অহ বুঝেছি এবার । স্যার আপনি কি আমাকে এতটাই খারাপ মনে করেন । বিয়ের আগেই আমি বয় ফ্রেন্ডের সাথে ……
সরি আমি আসলে বুঝতে পারছি না । তুমি একটু বিস্তারিত বল ।
আমি আমার এক দুঃসম্পর্কের চাচার কাছে অনেকদিন যাবত অত্যাচারিত হয়েছি এটা তারই ফল ।
এত বড় ঘটনা তুমি তোমার বাবাকে বল নি কেন ?
আমার ঐ চাচাকে বাবা খুব বিশ্বাস করেন । বাবার পর পর দু বার স্ট্রোক হয়েছে । ডাক্তার বলেছেন এবার স্ট্রোক হলে ওনাকে বাঁচানো যাবে না । আমি বাবার মনে কোন দুঃখ দিতে পারব না ।
কিন্তু আমি এখন কি করব ? স্যার আমাকে বাঁচান ।
কথা গুলো শোনার পর মাথার ভিতর বনবন করে ঘুরছিল । মনে হচ্ছিলো ঐ বেজন্মাটাকে ছিঁড়ে ফেলি ।
এরপর আর ওদের বাসায় যাওয়া হয়নি ।
মিতুর বাবা আমাকে বলেছিলেন তোমাকে যেন আমার বাড়ির আশেপাশে না দেখি ।
ওর চাচা আমাকে সন্দেহ করেছিলেন । মিতু ফোন করে আমাকে সতর্ক করে দিয়েছিল ।
স্যার আপনি আমাদের বাড়িতে আর আসবেন না । চাচা আপনাকে খুন করার জন্য লোক ভাড়া করেছে ।
এরপর ঐ সিমটা বন্ধ হয়েছে আর কখনোই ফোনে পাইনি ।
আজ ওর লাশ টা পেলাম ।
এর পরের ঘটনা
পুলিশের কাছে আমার জবানবন্দি দেয়ার পর । গর্ভস্থ শিশুর ডিএনএ পরিক্ষার মাধ্যমে ঐ কুলাঙ্গারের অপরাধ প্রমাণিত হয় । ডাবল মার্ডার অপরাধে ফাঁসির রায় হয় ।
মিতু আর ওর সন্তানের লাশ কবর দিয়ে আসার সময় মিতুর বাবা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন ।
বাবা আমাকে ক্ষমা করো । আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম ।
তোমাকে যদি আগেই বিশ্বাস করতাম তাহলে আমার মেয়েটি বিয়ের আসর থেকে লাশ হয়ে ফিরত না ।
ওনাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমার জানা ছিল না । সদ্য সন্তান হারা পিতাকে সান্ত্বনা দেয়া আমার পক্ষে অসম্ভব ।
মিতুকে কবর দিয়ে আসার সময় মনে হল । ও পিছন থেকে বার বার বলছে স্যার আমাকে বাঁচান আমি বাঁচতে চাই………………
১৮টি মন্তব্য
সিকদার
ভাল হয়েছে ।
সঞ্জয় কুমার
ধন্যবাদ ।
খেয়ালী মেয়ে
এটা কি বাস্তব ঘটনা…?
সঞ্জয় কুমার
না । । এটা জীবন থেকে নেয়া একটি ঘটনা । বাস্তবে এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটে
মেহেরী তাজ
হুহ আমি কিন্তু খুব ভয় পাইছিলাম। ভাবছিলাম বুঝি এটা সত্যি।
যাক আর কিছু বলার নেই। ভালো হয়েছে।
সঞ্জয় কুমার
এই গল্পের চেয়েও খারাপ ঘটনা বাস্তবে ঘটে । ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
মন খারাপ হয়ে গেলো
এমন ঘটনা অনেক আছে…… আমরা জানিনা বা জানানো হয় না।
সঞ্জয় কুমার
একদম তাই
লীলাবতী
এমন ঘটনা বাস্তবেও হয়? মন খারাপ হয়ে গেলো 🙁
সঞ্জয় কুমার
বাস্তব এর চেয়েও নির্মম
অনিকেত নন্দিনী
এমন কতো ঘটনাই রয়ে যায় অগোচরে!
চাচা মামা তো দূরের কথা বাপ-ভাই’র কাছ থেকে অত্যাচারিত হওয়ার কতোশতো কাহিনী লুকিয়ে আছে আমাদের সমাজে।
মন খারাপ করা গল্প। 🙁
সঞ্জয় কুমার
এসব ক্ষেত্রে মেয়েটি প্রচন্ড মানসিক আঘাত প্রাপ্ত হয় । যার ফলাফল ভয়াবহ । পুরুষ দের কে সে শুধু ঘৃণা করতেই শেখে
নীলাঞ্জনা নীলা
আমাদের সমাজে মেয়েরা তার নিজের মানুষের থেকেই অত্যাচারিত হয়। কিন্তু সেসব বলার কোনো জায়গা থাকে না। বাস্তব একটি চিত্র তুলে ধরেছেন গল্পে। আমি সব মেয়েদেরকে বলি এমন কোনো ঘটনা ঘটলে প্রথমেই সে যতোই বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন বাবা-মাকে জানাতে।
আর বাবা-মায়েরা কেন যে ছেলেদের দোষটা দেখেন না। আমার ছেলে ১৩ বছর বয়স। আমি তার সাথে অনেক ফ্রী-ভাবে কথা বলি। মেয়েদেরকে যেনো সম্মান দেয়। ও এমন একটা সমাজে বড়ো হচ্ছে যেখানে ১১ বছর বয়সেই গার্লফ্রেন্ড থাকে। ১৫ বছর বয়সের মেয়েরা মা-ও হয়ে যায়। ওকে তাই সেসব শিক্ষা দেই, যা আমাদের সমাজে মেয়েরাই পায়। ছেলেরা নয়।
সঞ্জয় কুমার
নিঃসন্দেহে আপনি একজন আদর্শ মা । আপনার মতামত কে বিনম্র শ্রদ্ধা
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এ ভাবেই নিশ্চুপে নারীরা অত্যাচারিত হয় যার ফল ভোগ মৃত্যু।
সঞ্জয় কুমার
সহমত
পারভীন সুলতানা
এইত আমাদের চারপাশ । কত কষ্টে একটা মানুষ আত্মহনন করে । ভাল লাগলো জীবন ঘেঁষা গল্প।
সঞ্জয় কুমার
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন