ফেসবুক সম্মন্ধে স্বরবর্ন ব্যঞ্জনবর্নের একটা অক্ষরের সাথেও নিদেন পক্ষে কোনোরকম জ্ঞান ছিলোনা। ছেলে মেয়ে অনেক আগে থেকেই যুক্ত আছে! মাঝে মাঝে এটা সেটা দেখাতো, পড়ে শোনাতো!
বাবা যেবার প্রথম মোবাইল ফোন কিনে দিয়েছিলেন! দু’হাজার ৫’অথবা ৬’এর দিকে… কল রিসিভ এবং কল করা টুকুও শিখেছি আব্বার কাছ থেকেই। নাম সেভ্ করার জন্যও মেয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে বেশ অনেকদিন ধরে। মেসেজ ওপেন করাও সহজ ছিলো। কঠিন লাগতো মেসেজ রিপ্লাই করা বা প্রয়োজনে কাউকে মেসেজ লেখা।
প্রায়ই মোবাইল সেট ভুলে বাসায় রেখেই বাইরে চলে যেতাম। ছেলে মেয়ে নিয়ে প্রচুর স্কুল কোচিংএ দৌড়াদৌড়ি করতে হতো। হয়তো কোনো প্রয়োজনে কাছের মানুষ কল দিয়েছে। ফোন বেজে বেজে বন্ধ হয়ে গ্যাছে। অপর প্রান্তের মানুষটা দুঃশ্চিন্তায় পরে গেছেন। একবার ঈদুল আজহার আগের দিন এমন হলো…..! আব্বা ক্রমাগত কল করে যাচ্ছেন, কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। আব্বা হাই প্রেসারের মানুষ! নানা রকম দুশ্চিন্তায় প্রেসার বেড়ে গেছে। আম্মাও অস্থির আব্বা’র অবস্থা দেখে। আমি সাহেবের সাথে শপিংএ বের হয়েছি। মোবাইল ব্যাগের ভেতর। মার্কেটের অসহ্য রকম ভীড়ে রিংটোন কানে পৌঁছুয়নি। তোলপার করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। দেবরের বাসায় ফোন দিয়ে খবর নিয়ে জেনেছেন বাইরে আছি। বাসায় ফিরে কল ব্যাক করতেই একগাদা বকাঝকা শুনতে হয়েছে…. “ফোনটা রাখো কি জন্য সাথে? ”
আত্মীয় স্বজন ছাড়া আর কেউই ছিলোনা তেমন নাম্বারে। একটাই স্কুলের বান্ধবি ছিলো শুধু।
হঠাৎ একদিন এক মেসেজ এলো। লে ঠ্যালা!! চিনিনা, জানিনা নাম্বার থেকে। ভাবার্থ এমন ছিলো! তিনি আমায় লক্ষ্য করেন সবসময়! অবস্থা তো জ্ঞানের ডাব্বা!! কলও করলেন একদিন…. উল্টে ঝাড়ি খেলো! আবারো আরেকদিন মেসেজ…..পাশের ফ্লাটের ছেলেটাকে দিয়ে মেসেজ লিখালাম… “ফের যদি মেসেজ করার চেষ্টা করেন, তো নাম্বার ব্লক্ করে দেবার প্রসেসটা জানা আছে।”
পরে জানা গেলো তিনি আর কেউ নন, আমার অতি কাছের স্বজন!
আরেকটা মজার কাহিনী এখানে উল্লেখ করার লোভ সামলাতে পারছিনা।
মেয়ে তখন ক্লাশ এইটে পরে, বড় ছেলে ক্লাশ ফাইভে, ছোট ছেলে মাত্র কে,জি ওয়ানে। একরাত আটটা সাড়ে আটটা নাগাদ একটা কল এলো অপরিচিত নম্বর থেকে। মেয়ের বান্ধবিদের নাম না দেখলে বা নানা,নানু,খালাদের নাম না দেখলে ধরেনা। আমাকে এনে দিলো…..যথারিতী হ্যালো বলেই জানতে চাওয়া, কে, কোত্থেকে, কাকে চাই?
–” আপনাকেই চাই!”
বুঝলাম, ইহাকে এইবার খাড়ই(মাছ রাখার এক ধরনের বিশেষ, বাঁশের তৈরী পাত্র)তে নিয়ে খাঁচতে হবে। ঠান্ডা মেজাজে কথোপকথন চালাচ্ছি।
—“তাই? আমাকে চাচ্ছেন? তো বলেন, আমি কে?” জবাব কি দেবে ভেবে না পেয়ে, তড়িঘড়ি করে বললো—“শোনো (অবাক হইয়াও, হইতে বিরত থাকলাম,আপনি থেকে এক ধাক্কায় “তুমি”তে নেমে আসলেন, ভদ্র(?)লোক।)
আমি এখন একটু বিজি আছি, তুমি রাত ১২ টার পর ফোন দিও”….. বলেই কল কেটে দিলো। ফেনটা হাতে ধরে, মুখ খানাকে এ বিগত হা করে তাকাইয়া থাকলাম! মেয়ে পাশে থেকে প্রশ্ন করছে ” কি হয়েছে আম্মু? কে ফোন দিলো?”
অট্ট হাসি হাসবো না কি প্রচন্ড রাগ দেখাবো বুঝে উঠতে পারলাম না। বললাম সব মেয়েকে। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে মেয়ে। শুতে যাবার প্রস্ততি নিচ্ছি! ওয়াশ রুমে গিয়েছি। যথারিতী কল এলো। মেয়ে এবার ইচ্ছে করেই রিসিভ করলো। মেযে হাসি চেপে রেখে বললো “……আপনি বোধহয় আমার আম্মুকে কল করেছেন, নিন কথা বলুন….. ”
ফেনটা ধরতেই যেন শাশনের সুরে ধমকে উঠলো তথাকথিত ভদ্রলোক(?)।
—-তোমাকে না বললাম ১২ টায় কল দিতে! আচ্ছা বলোতো ফেনটা কে ধরেছিলো প্রথমে? অতীব ঠান্ডা মস্তিস্কে জবাব দিতে শুরু করলাম —–১, আমার তো ঠ্যাকা পরেনাই যে আপনাকে আমি ১২টায় ফেন দিবো!
—ভালোবাসা থাকলে একটু আধটু ঠেকা থাকতে হয়! বলল না তো, প্রথমে ফোনটা কে রিসিভ করেছিলো?
—-আমার মেয়ে।
—–তাই?
—হ্যাঁ, আপনার নাম কি? থাকেন কোথায়?” একে একে বলে গেলেন। বোঝাই যাচ্ছিলো, সব ভূয়া। ধীরে এগোচ্ছি। বললেন ব্যাবসা করেন ফার্মগেটের আশেপাসেই থাকেন। সন্দেহ দুর করতে আবারো প্রশ্নঃ —আচ্ছা তোমার কয় বাচ্চা? ধীর কন্ঠে—তিন বাচ্চা,এক মেয়ে দুই ছেলে, মেয়েটা এইটে পড়ে।ছেলে দু’টোর কথাও বললাম। তাহার গলায় টের পেলাম বরফ জমে গেছে!—-ওওওও, তা তোমার হাসবেন্ড কি করেন?
নির্লিপ্ত কন্ঠে —-ডিবিতে আছেন।
ডিবিতে চাকরি করেন? আচ্ছা নাম কি বলোতো? আমিও তো পুলিশে আছি! চিনতেও পারি।
বোঝোনাই তো বাছাধন! এইবার বোঝো!পাঠকগন বিনীত নিবেদন করছি কিছু মনে করবেন না হুবুহু বর্ননার খাতিরে গালিগালাজ গুলো এখানে লিখতে বাধ্য হচ্ছি।
—–ওই কু–র বাচ্চা, শুয়ো—বাচ্চা, তুই জানো তুই কোথায় ফোন দিছো? এতক্ষন। ধরে তোর চাপাবাজি অনেক সহ্য করছি। একটু আগে কইলি ব্যাবসা করোস্,এক পল্টিতেই পুলিশে জয়েন করছোস্? তোরে খুঁইজ্জা বাইর করতে 1,2,র ব্যাপার জানোস তুই। আন্দাজে নাম্বার টিপ্পা মেয়ে মানুষের গলা পাইলেই তগো পিরিত উতলাইয়া ওঠে??
ফের যদি এই নাম্বারে কল করিস তো এরপরে মাঠে নামবে ডিবি তোরে খুঁইজ্জা বাইর করতে। ” একটানা কথা গুলো বলে লাইন কেটে দিলাম। এরকম বিরম্বনা সেসময়ে কম বেশি অনেকের সাথেই ঘটেছে।
সময় বদলেছে, বদলেছে মোবাইল সিম এবং নাম্বার সিকিউরিটির নান অনুষঙ্গ।
ফেসবুক সম্পর্কেও এখন একই রকম বিরম্বনা পোহাতে হয় অনেকের। একটা আইডি এ্যাক্টিভ করতেই নানা জন বন্ধুত্বের আবদার নিয়ে হাজির হন। বিচক্ষিনতার পরিচয় দিয়ে যাচাই বাছাই করেই লিষ্টে বন্ধু গ্রহন করি অনেকেই। এই ফেসবুকের কারনেই অনেক অপ্রিতীকর ঘটনা ঘটে চলেছে প্রাত্যহিক জীবনে। প্রথম দিকে একমাত্র পরিচিত জন এবং আত্মীয় স্বজন ছাড়া কাউকেই নেয়া হতোনা। একে একে শিখে পড়ে আইডি পর্যবেক্ষন করে নিরাপদ মনে হলে তবেই এ্যাড করা। কথায় বলে….. মুখ দেখে কি যায় চেনা, মুখটা তো নয় মনের আয়না ”
খুব অল্প সময়েই যত না লিষ্টে পরিচিত অপরিচিত জন যুক্ত করেছি! ২ভাগের একভাগ ততটাই সোওৎসাহে বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি। এখানকার অপশনটা ভীষণ ভাবে সুবিধাময়। বৈকল্য মনের পরিচয় দেখা বা সহ্য করার কোনোই প্রয়োজন নেই। বন্ধু যোগ হতেই দরকারি অদরকারি কথা হলেও হতে পারে। যখনই প্রসঙ্গ চলে আসে বিপরিতধর্মি!! তখনই বোঝা হয়ে পরে এমন সুহৃদ বন্ধত্বে।
“আপনাকে ভালো লাগে “আপনি এত সুন্দর কেন”? আপনার লেখার ভক্ত হতে হতে আপনারও প্রেমে পরে গেছি” ব্লা ব্লা ব্লা….. বয়সে ছোট অথচ পাকনামীতে সরেস। একশ কাঠি বাড়ন্ত! “আপনাকে গভীর ভাবে ফিল্ করি ” আপনার সাথে প্রেম করতে চাই” “প্রেম কি খারাপ কিছু?” এগোরে ব্লক্ মাইরা পরানডা ভেজেনা। মনের খায়েশ মিডাইয়া ঠাঁটাইয়া কানের নিচে বাজাইতে না পারার কষ্ট আজীবন পোড়াবে।
সাধু সাবধান।।।
বিঃদ্রঃ একটা মনের মতো লিখতে চেয়েও হয়ে ওঠেনা। এক লেখা লিখতে ১৪ বার লেখা ছেড়ে উঠতে হয়। অসঙ্গতির জন্য মার্জনা প্রাপ্তি।
২৩টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
লিখতে জানলে যে কোনো বিষয় নিয়েই লেখা যায়,
তোমার এই লেখা তার প্রমান।
খুব সুন্দর এবং শাবলিল ভাবে উপস্থাপন করেছ।
মোবাইস ফোন, ফেইসবুক যেমন অত্যন্ত জরুরী, তেমনি এর বিরম্বনাও আছে।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
অনুপ্রানিত হই বারবার। কৃতজ্ঞতা রইলো।
তৌহিদ
লেখায় শিক্ষণীয় আছে অনেক কিছু। ধন্যবাদ প্রাপ্য আপনার। শেষের কথাগুলো মনে গেঁথে গেলো।
শুভকামনা জানবেন আপা।
বন্যা লিপি
আপনাকে শুভেচ্ছা শুভ কামনা, তৌহিদ ভাই।
সঞ্জয় মালাকার
শিক্ষনীয় কথা গুলো লিখেছেন
পড়ে আনেক ভালো লেগেছে!
শেষ কথাগুলো মন জুড়িয়ে গেলো।
বন্যা লিপি
দাদা, মনের ক্ষোভ প্রকাশ সবখানে সমান ভাবে করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। আপনাকে ধন্যবাদ লেখা পড়েছেন। শুভ কামনা জানবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহাহা, আপনার লেখার ভক্ত হতে হতে আপনারও প্রেমে পড়ে গেছি 😂😂
আপনাকে গভীরভাবে ফিল করি……. ফিল করা কি জিনিস ঐ গাধাটার কোনো ধারনাই নেই। কারন তোমাকে ফিল করলে তার কানের নীচে তুমি যে বাজনা বাজাতে চেয়েছো, ঐটাও সে ফিল করতো।
লেখা পড়ে বেশ মজা পেয়েছি বন্যা। এমন করে আরও লিখবে। সব সময় সিরিয়াস বিষয় নিয়ে জটিল করে লিখতে হয়না। গল্পের ছলে, মজা করেও শিক্ষনীয় পোস্ট লেখা যায়, এই লেখাটি তেমন একটা উদাহরণ। ভালো থেকো সব সময়। ভালোবাসা নিও ❤❤
বন্যা লিপি
আমাদের অঞ্চলে কিছু প্রবাদ আছে জানো!! “ধ্যাতক খাউগ্যা গো যতোই কচু দেও কইবে, দুগ্গা চিঙ্গইর মাছ দেলে ভালো অইতে “” অর্থাৎ যতই তুমি আরোপিকে গাল মন্দ করোনা কেন, তাতে সে আরো মজা লোটার চেষ্টায় থাকে। গত দু’দিন আগের এক এমন এক পরিস্থিতী’র স্বীকার হতে হলো। এগুলারে যা কিছু বলবা, কিচ্ছু হয়না এদের। তুমি মজা পেয়েছো জেনে সত্যি মনে হচ্ছে লিখতে পেরেছি কিছু একটা।
ভালোবাসা তোমার প্রতি ❤❤❤ভালো থেকো সবসময়।
ছাইরাছ হেলাল
জানার শেষ নেই,
তাই ফেসবুক জানার কোন ইচ্ছেও নেই।
বন্যা লিপি
ভালো থাকবেন সবসময়, শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
কতো অজানারে জানালে তুমি
কতো ঘরকে করিলে পর।।
বন্যা লিপি
একদম……! আন্তরিক শুভেচ্ছা জানবেন। সবসময় ভালো থাকবেন 🌺🌺
আরজু মুক্তা
শুভকামনা
নাজমুল হুদা
দারুণ শিক্ষণীয় গল্প বাস্তবতার মিশেলে!
বন্যা লিপি
জী,একদম, শুভেচ্ছা শুভ কামনা জানবেন।
মনির হোসেন মমি
হা হা হা ঐ বেচারা কি জনমের তরে পলায়ছিলো? হ্যা ইদানিং অনেকে ফেবুক বন্ধু আউট হয়েছে তবে যা হয়েছে তা ভালই হয়েছে।লেখাটা খুব ভাল লাগল।ভাল থাকবেন।
বন্যা লিপি
তারপরও কযেকবার বিরক্ত করার জন্যে মিসকল দিয়েছিলো। গা করিনি। দু’দিন বাদে একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। মোবাইল হ্যারাসমেন্ট শুধু নারে ভাই। ল্যান্ড ফোনের বিরম্বনাও ছিলো আমাদের সেই সময়ে যথেষ্ঠ। সেইটার কাহিনী তো আরো মজার!! এখনো আমি একা একা হাসি…. বেচারা!!! লেখা ভালো লেগেছে জেনে অনুপ্রানিত হলাম ভাই। কৃতজ্ঞতা জানবেন। ভালো থাকবেন সবসময়। শুভেচ্ছা 🌼🌼
শাহরিন
চরম বাস্তব। এমন ঘটনা কোন মেয়ের সাথে হয়নি সেটা হতেই পারে না।
বন্যা লিপি
কেউ প্রকাশ করে কেউ করেনা। অনেকেই বিপরিত মনোভাব পোষন করেন। কেনরে ভাই? যার যার অবস্থানটুকু পরিচ্চন্ন থাকা জরুরী। শুভেচ্ছা নিরন্তর 💮💮💮💮
রেহানা বীথি
এই বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। খুব ভালো লাগলো আপনার লেখাটা।
বন্যা লিপি
অনুপ্রানিত হলেম বিস্তর!! শুভেচ্ছা জানবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
নিপুণভাবে লেখনী।
বেশ ভালো লাগলো পড়ে।
শুভকামনা দিদি।
বন্যা লিপি
বানানে বিস্তর ভুল থেকে যায়, অনিচ্ছাকৃত ভাবে। ভালো লাগলে অনুপ্রানিত হই ভীষণ। নিরন্তর শুভ কামনা জানবেন দাদা।