আমরা সম্ভবত সকলেই আমাদের জীবনে কমবেশি মিথ্যার সাথে পরিচিত হয়েছি। কিন্তু একটি প্রশ্ন বিশাল সত্যকে সামনে নিয়ে আসে। সেটা হলো মিথ্যা বলার কারণে বিচিত্র যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় এবং হবে জেনেও কেন আমরা কখনো সখনো মিথ্যা বলতে বাধ্য হই?
এরকম কিছু কারণের কথা বলেছেন মনোবিজ্ঞানীগণ। যেমন: নিজের সম্পর্কে তিক্ত বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়া, নিজের ভুলগুলো স্বীকার করতে না চাওয়া, পরবর্তী পর্যায়ে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটতে পারে এই প্রত্যাশায়ও আমরা অনেকেই মিথ্যে বলে থাকি। আবার অনেক সময় নিজেকে বোকা বা অক্ষম না বানানোর ইচ্ছে থেকেও মিথ্যে বলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। শাস্তি পাবার ভয়ে কিংবা গ্রহণযোগ্যতা হারানোর ভয়েও অনেক সময় মিথ্যে বলতে দেখা যায়। মান সম্মান হারানো কিংবা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে না পারার আশঙ্কা থেকেও মিথ্যা বলার প্রবণতা দেখতে পাওয়া যায়। এই সবগুলো কারণই মিথ্যে বলতে মানুষকে বাধ্য করে বলে মনোবিজ্ঞানীগণ মনে করেন।
একটা বিষয় এখানে লক্ষ্য করার মতো। সেটা হলো, সত্য কথা বলার চেয়ে মিথ্যা বলার জন্যে কিন্তু তুলনামূলকভাবে বেশি চেষ্টা ও চিন্তাভাবনার প্রয়োজন পড়ে। মিথ্যাবাদী মানুষকে প্রথমেই নিজেকে একটা মিথ্যার পরিবেশে স্থাপন করতে হয় অর্থাৎ মিথ্যা বলার উপযুক্ত একটা ক্ষেত্র তৈরি করে নিতে হয় এবং তার ওপর ভিত্তি করেই মিথ্যার চর্চা করতে হয় বা মিথ্যার সাথে জীবনযাপন করতে হয়। তার মানে দাঁড়ায় মিথ্যাবাদীকে প্রথমেই নিজেকে মিথ্যার সাথে মানিয়ে নিতে হয়। আর এটা এমন এক কাজ যার মানসিক চাপ বা যন্ত্রণা তাকে তার সমগ্র জীবন জুড়ে বহন করতে হয়। সেইসাথে তার মিথ্যার কথা ফাঁস হয়ে যায় কিনা এই টেনশনও তাকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায়।
আসলে মিথ্যা বলাটাই যে কেবল একটা সমাজ বিরোধী কাজ বা আচরণ তা নয় বরং যারা মিথ্যা বলে তারা নিজেরাও সাধারণত সমাজ বিরোধী হয়ে যায়। আশ্চর্য হবার কিছু নেই যে, মিথ্যাচার এমন একটি ব্যাধি যা কাজের সম্পর্ক, সামাজিক, পারিবারিক এবং বন্ধুত্বের সম্পর্কের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এছাড়া মিথ্যাচার মানুষের মন এবং আত্মার ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে যার পরিণতিতে এমনকি সমাজেও তার ব্যাপক কুপ্রভাব পড়ে। এসব দিক বিবেচনায় ধর্মীয় শিক্ষার আলোকে মিথ্যা হলো সর্বনিকৃষ্ট গুনাহ এবং বিচিত্র অপকর্মের উৎস। মিথ্যার পথ ধরেই নৈতিকতার অবক্ষয় দেখা দেয়, চারিত্রিক নোংরামি দেখা দেয়-যা সরাসরি কবিরা গুনাহ। মিথ্যা মানুষকে দুনিয়া এবং আখেরাতে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত রাখে।
শামীম , ওমান
১৮-৭-২০১৬
১৯টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
বিজ্ঞানীরা বলে, যেই শিশুরা মিথ্যে কথা বলে, তারা অনেক ব্রেইনি। আফসোস এই যে, তারা এই আইকিউ আর মেধা বেশিভাগ সময় ভুল কাজেই ব্যবহার করে।
ভালো পোস্ট শামীম ভাই। আমরা মিথ্যা যেন পরিহার করে চলতে পারি।
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
ধন্যবাদ।
হুম ঠিক বলেছেন,,,,,,,,,,,,, (y)
মৌনতা রিতু
এই তো জীবনের বাস্তবতা। তবুও মিথ্যাকে এড়িয়ে চলতেই বাঁচতে শিখতে হয়।
একটা কথা আছে, মিথ্যা যখন পুরো পৃথিবী ঘুরে আসে সত্য তখন তার প্যান্টও পরতে শেখে না।
ভাল পোষ্ট, অনেক সুন্দর উপলব্দি।
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
ধন্যবাদ।
আপনি যা বলেছেন তাও কিন্তু সত্য কথা। :v
ব্লগার সজীব
মিথ্যে বলতে বলতে একসময় সত্যের মাঝে থাকার প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে যায় মানুষের। ভাল পোষ্ট।
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
ধন্যবাদ ভাই
অপার্থিব
ভাল পোস্ট। গুছিয়ে মিথ্যা বলতে ভাল কল্পনা শক্তির প্রয়োজন হয়। কাজেই যারা গুছিয়ে মিথ্যা বলতে পারে তাদের এই কল্পনা শক্তিকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। তারা চাইলে এই কল্পনাশক্তিকে অনেক ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা গল্পকার বা উপন্যাসিক দের কথা। প্রতিটি সেরা গল্পকার বা উপন্যাসিক অসাধারণ কল্পনাশক্তির অধিকারী।
আবু খায়ের আনিছ
আমার অবশ্য একটা কথা আছে, যা আমার খুব কাছের মানুষেরা সবাই জানে। আমি প্রচন্ড মিথ্যাবাদী, এই প্রবাদটা দিয়েছে এই লেখালেখি করার জন্যই। যারা লেখক তাদের চেয়ে বড় মিথ্যাবাদী কেউ নাকি হয় না।
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
আপনার সাথে আমি একমত ,
ধন্যবাদ ভাই।
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
#আবু খায়ের আনিছ ভাই , সত্য লেখক হওয়াটা অনেক সাধনার বেপার , তারপর ও আপনার জন্য ,,,,,, দোয়া রইলো
আবু খায়ের আনিছ
ভাই, লেখক মাত্রই কল্পনা প্রবণ,নিজের কল্পনাকে অন্যের কাছে উপস্থাপন করা। এমন কোন লেখক কি আছেন যে কল্পনার আশ্রয় নেন নি?
কিছু লেখা থাকে যা সত্য ঘটনা অবলম্বনে কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ সত্য হতে পারে না, দুয়েকটা মিথ্যার বা কল্পনার আশ্রয় নিতেই হয়।
জিসান শা ইকরাম
ভাল পোষ্ট,
লেখার সাথে সহমত,
সত্য বলে ভাল ভাবে বেঁচে থাকাটা বেশ কঠিন আজকাল।
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
জিসান শা ইকরাম- ভাই ঠিকবলেছেন , ধন্যবাদ ভাই।
আবু খায়ের আনিছ
সত্য সব সময় সচ্ছ, আর সত্য বলতে কোন জড়তা কাজ করে না। মিথ্যা বলতে স্বাভাবিক ভাবেই ঝড়তা কাজ করে, আর যারা নিখুঁত ভাবে মিথ্যে বলতে পারে তারাও যথেষ্ট গুছিয়ে গুছিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলে। সত্য এর মত দ্রুত মিথ্যে বের হয় না।
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
আবু খায়ের আনিছ ভাই সত্যহলো ৫g।
ধন্যবাদ ভাই ।
ছাইরাছ হেলাল
মিথ্যে বলা অনেক কঠিন কাজ,
সত্য সহজ।
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
হুম ভাই, ধন্যবাদ ভাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষ মিথ্যে বলে অল্প হলেও।
যারা বলে আমি মিথ্যে বলিনা, তারা হলো সবচেয়ে বড়ো মিথ্যেবাদী। উদাহরণ? যেমন কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে, কেমন আছেন? সে মানুষ সুখে কিংবা দুঃখে বলবেই, “আমি ভালো আছি।”
শামীম আনোয়ার আল- বেপারী
উদাহরণ টা ভালো লাগলো কিন্তু সবাই বলেনা। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটা মন্তব্য করার জন্য।