মানুষ মরনশীল।
জন্মিলে মরিতে হবে।
আমাদের পবিত্র গ্রন্থ আল-কোরআনেে উল্লেখ আছে “প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে।” কোরআন শরীফের এই আয়াত বহুবার পড়েছি। তারপরও মৃত্যুকে ভয় পাই নাই। কারন মৃত্যু প্রতিটি প্রানীর জন্য অনিবার্য। সকলকে মরতে হবে। তাই কখনো মৃত্যুকে ভয় পেতাম না ।
ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে স্বভাবের ছিলাম। কিশোর জীবনে আমার দুষ্টমির মাত্রা ছিলো চরমে। কারো সাথে বিন্দু পরিমান মতের অমিল হলে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে যেতাম। প্রয়োজনে হাতা-হাতি পর্যন্ত গড়াতো। তার কারন আমি মিথ্যাকে প্রছন্দ করতাম না। আরো বেশী পছন্দ করতাম না কোন বন্ধুর বিরুদ্ধে কোন বন্ধু পরচর্চা বা নিন্দ করলে। প্রতিবাদ করতাম। বলতাম সাহস থাকলে ওর সামনে বল। বন্ধুরা অন্য কারো সাথে মারা-মারিতে জড়িয়ে গেলে নিজেও জড়াতাম। কখনই ভাবিনি আমার উপর আঘাত আসতে পারে। তখনও ভয় পেতাম না সেই আঘাতে মৃত্যু হতে পারে।
বিনা অপরাধে ছোটবেলা থেকে এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পেতাম না। অপরাধ করলে নিজেই স্বীকার করতাম আমি অপরাধী। আর এই আদর্শ নিয়েই এতটা পথ পাড়ি দিলাম। সামনে কতদিন যেতে পারবো জানি না। এ্যাডভেঞ্চার মূলক কোন কাজে জড়ালেও কখনই ভয় পেতাম না মৃত্যুকে। মাথায় মৃত্যুর চিন্তা কখনই আসে নাই।
রাজনীতিতেও ভয় পাইনি। এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কারফিউ ভঙ্গ করে সামনের কাতারে থেকে মিছিল নিয়ে যেতাম। সেনাবাহিনী গুলি করবে আর তাতে মৃত্যু হতে পারে কখনোও এই ভয় কাজ করেনি।
গতকাল সবার কাছে গ্রহনযোগ্য সম্পন্ন, স্পষ্টবাদী,প্রতিবাদী ও সাদা মনের আমার একজন বাল্যবন্ধু আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেল। খবরটা পেয়ে বাকহীন হয়ে রইলাম। আমার লিখনী শক্তি থেমে গেল। এমন শত শত মানুষ বিনা চিকিৎসায় চলে যাচ্ছে মরনব্যাধি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে। আমার ভয় না পাওয়ার তৃতীয় শক্তিকে থমকে দিলো আজমের মৃত্যুতে। আমার ভয় শুরু হলো। আমি ওর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
ইদানিং ফেসবুকে আমার আপন ও প্রিয়জনদের একক ছবি দেখলে আমি ভয় পাই।
করোনা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়েছে খবরটা শুনলে আমি ভয় পাই।
আমি আমার কর্মস্থলে যেতে ভয় পাই। আমার সহযোগীদের সাথে হাত মেলাতে ভয় পাই। তারা গা ঘেঁষে দাঁড়ালে ভয় পাই।
আমি অসচেতন মানুষদেরকে ভয় পাই।
আমি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবো। আমার আক্রান্তে পুরা পরিবার আক্রান্ত হবে। আমি মারা গেলে আমার দাফন-কাফনে তারা শরীক হতে পারবে না। আমার মৃত চেহারাটা কেউ দেখতে পারবে না। পুরা পরিবারকে সমাজের লোকেরা এড়িয়ে চলবে। তাদেরকে ঘরের ভিতর লকডাউন করে রাখবে। এই ভাবনাগুলিকে আমি ভয় পাই।
আমি এখন ভয় পাই। কখনই ভাবিনি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ভয় পাবো। এখন প্রতিনিয়ত সেই ভয় আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। সেই ভয় আমাকে শিহরিত করে তুলছে।
এই কোভিড-১৯ অদৃশ্য ভাইরাসকে আমি ভয় পাই ।
আমি কোনদিন পারবো এই ভয়কে জয় করতে? এর উত্তর আমার জানা নেই।
সবাই ভাল থাকুন। সচেতন থাকুন।
২৫টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
ভয় সবার মাঝেই এসে গিয়েছে ভাই।
স্বাভাবিক মৃত্যু আর করোনায় মৃত্যু এক নয়। কেউ পাশে থাকবে না, পরিবারকে সবাই বয়কট করবে, এই কঠিন সত্যিটা মেনে নেয়ার মত মনের জোর আর নেই।
ভালো থাকবেন শামীম ভাই।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
খুব শীঘ্রই জেন সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে এই বিপদ থেকে মুক্ত করেন। আপনিও ভাল থাকবেন ভাইজান।
ফয়জুল মহী
যথার্থ বলেছেন।
চরম বাস্তবতা
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ মহী ভাই।
ভাল থাকবেন।
বন্যা লিপি
এখন সত্যি ভয় পাই, কারন আমার জন্য আমি কাউকে সংক্রামিত করি কিনা? আমার আপনজনকে আমি সেবা শুশ্রূষা করতে পারবো না, কাছে যেতে পারবো না….এমন গজব আমরা নিজেরাই টেনে এনেছি নিজেদের দোষে। তবু ভয় পাই….ভয় মরনের নয়, শেষ সময়ে কাছে যেতে /থাকতে পারবো না….ভয় ভয় ভয়…..এ ভয় কে জয় করা কি যায় সহজে? কেবল যায় সর্বোচ্চ সতর্কতা সচেতনতা রক্ষা করা। খুব ভালো থাকবেন ভাই।সাবধানে থাকবেন।
শামীম চৌধুরী
জ্বী আপু। আমি মৃত্যুকে এখনও ভয় পাই না। শুধু ভয় যখন মনে আছে করোনায় আক্রান্ত হলে কি কি ঘটবে আমার ও পরিবারের সাথে।
ভাল থাকবেন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মৃত্যু ভয়ংকর, চিরন্তন কিন্তু করোনায় মৃত্যু এরচেয়ে খারাপ কি হতে পারে জানিনা।মরে গেলে কে কি করবে তার যেমন কোন মূল্য নেই , কাউকে পাশে পাবো কি পাবোনা তাও জানবো , বুঝবো কিনা মৃত্যুর পর তাও জানিনা। কিন্তু যারা বেঁচে থাকবে তারা শেষ দেখা, শেষ স্পর্শ করতে পারবে না, কোনো নিয়ম মানতে পারবে না, পরিবার একঘরে হয়ে যাবে এসব ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়। সাবধানে থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো
শামীম চৌধুরী
সেটাই দিদিভাই। আপনার ভাবনা গুলি আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
ভাল থাকবেন সবার সাথে।
সুরাইয়া পারভীন
ভয় যেনো আষ্টেপৃষ্ঠে জাপটে ধরেছে আমাদের। আমিও কখনও ভয় পেতে শিখিনি। তা ইচ্ছে হয়েছে আগপাছ না ভেবেই করেছি। কিন্তু এখন ইচ্ছে করলেও কিছু করতে পারছি না ভয়ে। না ভয় আমার জন্য নয় আমাদের সন্তানের জন্য। আমার আপনজনদের জন্য। জানি না এই আতঙ্ক থেকে আমরা কবে বের হবো?
শামীম চৌধুরী
সচেতনতাই এই আতংকে থেকে ত্রান পাওয়ার একমাত্র পথ।
ভাল থাকবেন আপু।
আরজু মুক্তা
আসলেই ভয় পাই। বাহির থেকে আসলেই মনে হয় জ্বর আসছে।
শামীম চৌধুরী
করোনার ভাবনাটাই এখন সবচেয়ে বড় আতংক প্রতিটি মানুষের।
ভাল থাকবেন আপু।
ছাইরাছ হেলাল
সত্যি সত্যি ভয় পাচ্ছি, অজানা কারণে, আমার অতি নিকটাত্মীয় বেশ কয়েকজন আক্রান্ত,
দূর থেকে ফোন করি, ফোনে পাই, পাই না তাদের, অন্য সময় সামান্য আসুস্থতা হলেও ছুটে যেতাম, যাই না। ভয়ে।
জানি মৃত্যু আমার/কারোর সাথে আপোষ করবে না।
শুধু আল্লাহর কাছে সবার মুক্তির প্রার্থনা করি।
আপনি ভাল থাকবেন ভাই।
শামীম চৌধুরী
রক্তের ভাইকেও বাসায় ডেকে এনে বলতে পারি না ভাই কেমন আছে।
ভাল থাকবেন ভাইজান।
সুপায়ন বড়ুয়া
সারা পৃথিবীর মানুষ ভয় আর আতঙ্ক গ্রস্ত হয়ে পড়েছে
বলা চলে করা হয়েছে।
লাশ দাফনের ব্যাপারটা বলুন এখন বলে সমস্যা নাই
তাহলে পাশ্চাত্য থেকে এই আতঙ্কটা রপ্তানী করা হল।
যেখানে মানুষ মরলে দাফনের লোক থাকেনা।
আমরা ভয় পাই যারা প্রতিদিন বাঁচার সংগ্রাম করে
বা প্রতিদিন মরে তারা পায় না ভয়।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
আপনিও ভাল থাকবেন দাদা।
শুভ কামনা।
নীরা সাদীয়া
কবে যে এর থেকে মুক্তি মিলবে কে জানে?
এত ভয় পেয়ে বাঁচা যায় কি?
শামীম চৌধুরী
একমাত্র সচেতনতাই এই ভয় থেকে বেঁচে থাকার মূল হাতিয়ার।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
সুরাইয়া নার্গিস
লেখাটা পড়ে খারাপ লাগলো..
করোনার জন্য সবার ভয় হয়, আমিও ভয়ে থাকি।
কিছুদিন আগে বড় আপুর শ্বাশুড়ী মারা গেলেন স্ট্রোক করে করে পরিচিত,আশেপাশের বাসার কেউ দেখতে আসে নাই করোনার ভয়ে।
বলতে লজ্জা লাগে আমরা নিজেরা কেউ তাকে দেখতে যেতে পারি নাই কারন সমাজ।
ওনাকে দেখতে গেলে বাসায় ফিরে আমাদের সবাইকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইন থাকতে হবে।
সব শোনার পর যাওয়া হয়নি ভয়ে যদি করোনা হয়। মৃত্যু ভয় নয়,ভয় লাগে যদি আমার জানাজায় কেউ না আসে..!
দোয়া করি আল্লাহ্ পৃথিবীকে করোনা মুক্ত করুন, আমরা স্বাভাবিক মৃত্যু চাই প্রিয়জনের প্রিয় হাতের স্পর্শে শেষ বিদায় চাই..!
শামীম চৌধুরী
সেটাই আপু। মৃত্যুকে সেই ছোটবেলা থেকেই ভয় করি না। ভয় সমাজের মানুষদের অসহযোগীতাকে।
ভাল থাকবেন।
নিতাই বাবু
বর্তমান সময়ে এই প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে এবং নিজের সহধর্মিণীকে ভাড়াটিয়া বাড়ির সকল ভাড়াটিয়াদের বাঁচাতে খুবই সচেতন হয়ে পড়েছি, দাদা। তবুও মনের ভেতর থেকে ভয় দূর করতে পারছি না। একটু শরীর ব্যথা হলেই, মনের ভেতরে করোনা’র সুর বাজতে থাকে। তখনই একটা নাপা এক্সট্রা ট্যাবলেট গিলে ফেলি। এ হলো আমার বর্তমান সময়ের অবস্থা, দাদা।
আপনাদের সকলের আশীর্বাদ প্রার্থী!
শামীম চৌধুরী
ইশ্বর আপনার সহায়ক হোক দাদাভাই। দোয়া রইলো। ভাল থাকুন বৌদি সহ।
নিতাই বাবু
প্রার্থনা করি আপনিও সপরিবারে ভালো থাকুন!
হালিম নজরুল
আমিও ভীষণ ভয় পাই এই ভেবে যে আমার লাশটা আমার স্ত্রী-সন্তান দেখতে পারবে তো!
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রায় প্রতিদিনই শুনতে হচ্ছে কারো না কারো মৃত্যু সংবাদ। নাম জেনে চমকে উঠছি, দুঃখ পাচ্ছি, খারাপ লাগছে, এরপরই ঘিরে ধরছে ভয় গুলো। তারপর কার পালা! এভাবেই ভয় থেকে আমাদের মুক্তি মিলছে না।
দুঃসহ্য সময় পাড়ি দিচ্ছি আমরা, অথচ গন্তব্য অজানা।
আল্লাহ তায়ালা সবার সহায় হোন এটাই প্রার্থনা করি।
শুভ কামনা রইলো শামীম ভাই 🌹🌹