আমার যত কল্পনাঃ (কল্পনা-০১)

শামীম চৌধুরী ৩০ মে ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ০৬:১৯:১৩অপরাহ্ন গল্প ২৩ মন্তব্য

বহুদিন পর লিখলাম। লেখাটা সম্পূর্ন কাল্পনিক। কাহারো জীবনের সাথে মিশে গেলে ক্ষমা করে দিবেন।*

লম্বা ছুটির ফাঁদে দেশ। ইতিমধ্যে ভ্রমন পিঁপাসুরা ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। কেউ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে।  কেউবা আবার একা একা। রহিম (কাল্পনিক নাম) তার বউ, শ্বাশুড়ী, শ্যালিকা আর শ্যালকের কন্যাকে সাথে নিয়ে ছুটে গেছে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। ছুটির আমেজে নিজেকে হারিয়ে দেবে শ্বশুড়বাড়ীর জনগুষ্ঠির সাথে। রহিমের বউ পরম তৃপ্তি সহকারে মা-বোনদের আপ্যায়ন করছে। তার কাছে এই ভ্রমনটি মনে হচ্ছে জীবনের পরম পাওয়া। রহিমও শ্বাশুড়ীর আদর আর শ্যালিকাদের দুলাভাই ডাক ও খুঁনসুঁটিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে অচীনপুরের স্বর্গরাজ্যে। সকালে শ্যালিকাদের নিয়ে রহিমের সমুদ্রস্নান আর জলকেলি। আ হা..!! মজাই মজা!! সন্ধ্যার পর বার্মিজ মার্কেটগুলোতে ঢু মেরে মেরে শ্যালিকাদের পছন্দের মনিহার কেনায় মত্ত রহিম। মাঝে মাঝে বউকে বলে তোমার কিছু লাগবে? বউ তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলে নাগো না। আমার কিছু লাগবে না। তুমি তোমার ফাউ গিন্নীদের জন্য করো। আর শুনো..!! মা’কে একটা ঝিনুকের পায়েল কিনে দিও। বার্মিজ মার্কেটে রহিমের পকেট খালি করে বউ প্রবেশ করে সবাইকে নিয়ে পাঁচতারা হোটেলে রাতের খাবারের জন্য। বাহারী খাবারের আদেশ করে শ্যালিকারা। ধুমছে চুটিয়ে গল্প আর আহার চলছে। মাঝে মাঝে খাবারগুলোকে আরো মুখরোচক করার জন্য সফট ড্রিংকসের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে।পাঁচতারা হোটেলের মৃদু আলো আর প্রাশ্চাত্যের গানে রহিম কোথায় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে । রহিমের ৭ বছরের একমাত্র কন্যা ফাতেমা ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। ও কি যেন বলতে যেয়েও বলতে পারছে না। ফাতেমার সুন্দর মুখের দিকে তাকালেই অনুমান করা যায় কি যেন একটা অপূরন রয়ে গেছে ফাতেমার মনে। হঠাৎ রহিমের ফোনে রিংটোন বেঁজে উঠে। রহিমের সেদিকে কোন নজরই নেই। বেশ কয়েকবার রিংটোন বেঁজে উঠার পর ফাতেমা উৎসুক হয়ে বাবার সেলফোনটি হাতে নিয়ে দুরে সরে গিয়ে রিসিভ করার পর অপর প্রান্ত থেকে শব্দ আসে “বাবা রহিম কেমন আছো”?

এত লম্বা একটা ছুটি পাইলা বাড়ীতে আইবা না?

নাতনি বউমাকে লইয়া?

ফাতেমা চকচকা চেহেরায় হাসিমাখা মুখে জবাব দেয় দাদুমনি আমি তোমার ফাতু।

দিদা’ কেমন আছো?

আর বানু ফুপ্পিটা কেমন আছে?

দাদুমনির সেই চিরাচরিত জবাব সবাই ভালো আছি দাদুভাই। তোমার বাবা কই? ফাতেমা সহজ সরল সাবলীল ভঙ্গিমায় জবাব দেয় দাদু আমরা কক্সবাজারে। নানু, খালামনিরা আর টুকটুকি আপ্পি আমাদের সাথে আছে। দাদাভাই,তুমি  আর ফুপ্পি আসলে আমার যে কি আনন্দ হতো? তোমাকে বুঝাতেই পারবো না। দাদা নাতনির কথপোকোথন চলছে। হঠাৎ শিকারী পালাস ফিস ঈগলের মত ছোঁ মেরে ফাতেমার হাত থেকে মোবাইল শিকার করে নেয় তার মা’। আর দু’গালে সজোড়ে কষাঘাত। ভয়ে ফাতেমা কান্না জুড়ে দিয়ে বাবাকে বলে তোমাকে দাদুমনি কল দিয়েছিলো। তুমি কল রিসিভ না করায় আমি কথা বলছিলাম। মা’মনি আমাকে মেরেছে। সব শুনে রহিম বলে ঠিক আছে তুমি খাও মা’মনি। অপর প্রান্তে ফাতেমার দাদুমনি যা বুঝার সব বুঝে গেছেন। রহিমের মা আজও অপেক্ষায়। ছেলে, ছেলের বউ আর একমাত্র নাতনী আসবে এই লম্বা ছুটিতে। নিজ হাতে বেলের শরবত বানিয়ে দিবে গ্লাস ভরে রহিমের পরিবারের সবাইকে। নারিকেলের নাড়ু আর চালকুমড়ার মোরব্বা আজও যতনে বোয়ামে ভরে সিকায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। নিজের গর্ভের কন্যা বানুকেও ছুঁতে দেয়নি । আজ আমাকে (লেখককে) রহিমের বাবা কল দিয়ে বলেন, রহিম শ্বশুড়বাড়ীর লোকজন সহ বউ কন্যা নিয়ে কক্সবাজার গেছে ঘুরতে। আমারে কিছু কয় নাই। এত মানুষ সাথে গেল ওর একটা মাত্র ছুডু বোইনডারে নিলেও তো পারতো। তোর ভাবী পথ চাইয়া আছে বউ মাইয়া লইয়া রহিম বাড়িত আইবো। আমি ভাইয়ের কথাগুলি শুনলাম। কোন উত্তর দিতে পারলাম না। আপনাদের কোন উত্তর জানা থাকলে আমার ভাই-ভাবীকে জানাবেন।

(চলবে)

৯১৫জন ৭৭৪জন
0 Shares

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ