বহুদিন পর লিখলাম। লেখাটা সম্পূর্ন কাল্পনিক। কাহারো জীবনের সাথে মিশে গেলে ক্ষমা করে দিবেন।*
লম্বা ছুটির ফাঁদে দেশ। ইতিমধ্যে ভ্রমন পিঁপাসুরা ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। কেউ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। কেউবা আবার একা একা। রহিম (কাল্পনিক নাম) তার বউ, শ্বাশুড়ী, শ্যালিকা আর শ্যালকের কন্যাকে সাথে নিয়ে ছুটে গেছে সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। ছুটির আমেজে নিজেকে হারিয়ে দেবে শ্বশুড়বাড়ীর জনগুষ্ঠির সাথে। রহিমের বউ পরম তৃপ্তি সহকারে মা-বোনদের আপ্যায়ন করছে। তার কাছে এই ভ্রমনটি মনে হচ্ছে জীবনের পরম পাওয়া। রহিমও শ্বাশুড়ীর আদর আর শ্যালিকাদের দুলাভাই ডাক ও খুঁনসুঁটিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে অচীনপুরের স্বর্গরাজ্যে। সকালে শ্যালিকাদের নিয়ে রহিমের সমুদ্রস্নান আর জলকেলি। আ হা..!! মজাই মজা!! সন্ধ্যার পর বার্মিজ মার্কেটগুলোতে ঢু মেরে মেরে শ্যালিকাদের পছন্দের মনিহার কেনায় মত্ত রহিম। মাঝে মাঝে বউকে বলে তোমার কিছু লাগবে? বউ তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলে নাগো না। আমার কিছু লাগবে না। তুমি তোমার ফাউ গিন্নীদের জন্য করো। আর শুনো..!! মা’কে একটা ঝিনুকের পায়েল কিনে দিও। বার্মিজ মার্কেটে রহিমের পকেট খালি করে বউ প্রবেশ করে সবাইকে নিয়ে পাঁচতারা হোটেলে রাতের খাবারের জন্য। বাহারী খাবারের আদেশ করে শ্যালিকারা। ধুমছে চুটিয়ে গল্প আর আহার চলছে। মাঝে মাঝে খাবারগুলোকে আরো মুখরোচক করার জন্য সফট ড্রিংকসের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে।পাঁচতারা হোটেলের মৃদু আলো আর প্রাশ্চাত্যের গানে রহিম কোথায় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে । রহিমের ৭ বছরের একমাত্র কন্যা ফাতেমা ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। ও কি যেন বলতে যেয়েও বলতে পারছে না। ফাতেমার সুন্দর মুখের দিকে তাকালেই অনুমান করা যায় কি যেন একটা অপূরন রয়ে গেছে ফাতেমার মনে। হঠাৎ রহিমের ফোনে রিংটোন বেঁজে উঠে। রহিমের সেদিকে কোন নজরই নেই। বেশ কয়েকবার রিংটোন বেঁজে উঠার পর ফাতেমা উৎসুক হয়ে বাবার সেলফোনটি হাতে নিয়ে দুরে সরে গিয়ে রিসিভ করার পর অপর প্রান্ত থেকে শব্দ আসে “বাবা রহিম কেমন আছো”?
এত লম্বা একটা ছুটি পাইলা বাড়ীতে আইবা না?
নাতনি বউমাকে লইয়া?
ফাতেমা চকচকা চেহেরায় হাসিমাখা মুখে জবাব দেয় দাদুমনি আমি তোমার ফাতু।
দিদা’ কেমন আছো?
আর বানু ফুপ্পিটা কেমন আছে?
দাদুমনির সেই চিরাচরিত জবাব সবাই ভালো আছি দাদুভাই। তোমার বাবা কই? ফাতেমা সহজ সরল সাবলীল ভঙ্গিমায় জবাব দেয় দাদু আমরা কক্সবাজারে। নানু, খালামনিরা আর টুকটুকি আপ্পি আমাদের সাথে আছে। দাদাভাই,তুমি আর ফুপ্পি আসলে আমার যে কি আনন্দ হতো? তোমাকে বুঝাতেই পারবো না। দাদা নাতনির কথপোকোথন চলছে। হঠাৎ শিকারী পালাস ফিস ঈগলের মত ছোঁ মেরে ফাতেমার হাত থেকে মোবাইল শিকার করে নেয় তার মা’। আর দু’গালে সজোড়ে কষাঘাত। ভয়ে ফাতেমা কান্না জুড়ে দিয়ে বাবাকে বলে তোমাকে দাদুমনি কল দিয়েছিলো। তুমি কল রিসিভ না করায় আমি কথা বলছিলাম। মা’মনি আমাকে মেরেছে। সব শুনে রহিম বলে ঠিক আছে তুমি খাও মা’মনি। অপর প্রান্তে ফাতেমার দাদুমনি যা বুঝার সব বুঝে গেছেন। রহিমের মা আজও অপেক্ষায়। ছেলে, ছেলের বউ আর একমাত্র নাতনী আসবে এই লম্বা ছুটিতে। নিজ হাতে বেলের শরবত বানিয়ে দিবে গ্লাস ভরে রহিমের পরিবারের সবাইকে। নারিকেলের নাড়ু আর চালকুমড়ার মোরব্বা আজও যতনে বোয়ামে ভরে সিকায় ঝুলিয়ে রেখেছেন। নিজের গর্ভের কন্যা বানুকেও ছুঁতে দেয়নি । আজ আমাকে (লেখককে) রহিমের বাবা কল দিয়ে বলেন, রহিম শ্বশুড়বাড়ীর লোকজন সহ বউ কন্যা নিয়ে কক্সবাজার গেছে ঘুরতে। আমারে কিছু কয় নাই। এত মানুষ সাথে গেল ওর একটা মাত্র ছুডু বোইনডারে নিলেও তো পারতো। তোর ভাবী পথ চাইয়া আছে বউ মাইয়া লইয়া রহিম বাড়িত আইবো। আমি ভাইয়ের কথাগুলি শুনলাম। কোন উত্তর দিতে পারলাম না। আপনাদের কোন উত্তর জানা থাকলে আমার ভাই-ভাবীকে জানাবেন।
(চলবে)
২৩টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
কি বলব ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।এত চমৎকার ভাবে এমন একটা বিষয়কে সামনে দাড় করালেন বলার ভাষা নেই।এরা অমানুষ বললেও ভুল হবে এরা মানুষের কাতারেই পড়ে না।নিজ রক্তকে নিজের অস্তিত্বকে যারা ডিনাই করে চলে তারা কখনো মানুষ হতে পারে না।মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল এ সমাজে এমন অমানুষের অভাব নেই।সবার শুভবুদ্ধি উদয় হউক।চলুক গল্পটা।
শামীম চৌধুরী
জ্বী মমি ভাই, আমাদের সমাজে এদের অভাব নেই।
বন্যা লিপি
সমাজের সাবলীল চিত্র। প্রত্যেক পুরুষের উচিত সমান ভারসাম্য বজায় রাখা। এরকম উদাহরনে ভরে আছে সমাজের চিত্র। শুধুই কি বউদের দোষ? একজন পুরুষ স্বামী যদি বউ এবং বাবা মা বোনেদের সমান দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ হন। তবে তা একজন পুরুষেরই ব্যার্থতা বলে মনে করি একান্ত ব্যাক্তিগত পর্যায় থেকে। একজন ঘরের স্ত্রী’র ও উচিত স্বামীটিকে সমানভাবে সাহায্য করা ভারসাম্য বজায় রাখতে। চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন বৈষম্যের দিক গুলো।
শামীম চৌধুরী
বন্যা আপু, আমি ছেলে বা মেয়ে কাউকে দোষারূপ করছি না। চাচ্ছি পারিবারিক চিত্রটা সামাজিক ভাবে তুলে ধরতে। তাতে যে কেউ দোষী হতে পারে তার কর্ম দিয়ে।
সুন্দর মন্তব্য দেবার জন্য ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
এর উত্তর আসলে হয়না। আমরা এদেশের মানুষ এখনো সবাইকে নিয়ে একসাথে বসবাস করতে চাই৷ তারপরেও কিছু কারনে তা সম্ভবপর হয়না। কিছু স্ত্রীর কারনে এমনটা হয়। কিছুটা সেক্রিফাইস করলে আর বুদ্ধিমত্ত্বার প্রয়োগ করলেই এমন অনাকাংখিত অবস্থা এড়ান যায়।
সবাই ভাল থাকুক তার পরিবার পরিজন নিয়ে।
শামীম চৌধুরী
জিসান ভাই,
আমার কাছে মনে হয় এটা আামাদের সামাজিক ব্যাধি।
সাবিনা ইয়াসমিন
রহিম সাহেবের জন্য একরাশ করুনা হচ্ছে। তিনি আসল গিন্নিকে খুশি রাখতে ফাউ গিন্নিদের প্রতি ভালোই মনোযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ভুলে গেছেন তার নিজের শেকড়। আপনার একান্ত অনুভুতি অনেকের অনুভূতিতেই নাড়া দিয়েছে। আপনি একটি পরিবারের নারী ও পুরুষ দুজনের চরিত্রটাই দেখালেন। সন্তান নিজেই যদি তার বাবা মা ভাইবোনের প্রতি যত্নশীল না হয়, তাহলে পরের মেয়ে যত্ন করবে কেন ? রহিম সাহেব নিজের একমাত্র ছোট বোনকে বেড়াতে না নিয়ে গেলেও ,তার স্ত্রী কিন্তু নিজের মা বোনকে নিতে ভুলেনি।
চলুক , আরও পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা 🌹🌹
শামীম চৌধুরী
আপু, আমরা যদি যার যার অবস্থান থেকে নিজের শিকড় নিয়ে একটু চিন্তা করি আর তা যদি একটু হলেও বাস্তবায়ন করি তবে কতই না সুন্দর হয় আমাদের গোটা পরিবার।
ধন্যবাদ আপু।
ইঞ্জা
মনটা খারাপ হয়ে গেলো ভাই। 😢
শামীম চৌধুরী
কেন ভাই? তবে কি আপনার ভাই মন ভালো করার জন্য নয়? হা হা হা
ইঞ্জা
না ভাই তা বলছেন কেন, ব্লগিং জীবনে কত লেখা যে আমরা পড়ি, লেখা পড়ে কখনো অট্টহাসি দিই, আবার কখনো চোখের পানি লুকিয়ে সামলাই, আপনার গল্পটাও তেমনি যা মনকে কাঁদালো।
তৌহিদ
চমৎকার লিখেছেন ভাই, লেখাটি পড়ে আপ্লুত হয়ে গেলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিনা। অনেক সময় আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারিনা।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ তৌহিদ।
শাহরিন
অনেক সুন্দর গল্প, বউ এর মা তো নিজের মায়ের মতই। আমার বিশ্বাস রহিম সাহেবরা প্রতি বছর শাশুরী কে নিয়ে কক্সবাজার যায় না।
বউটা যদি সব ঈদ শাশুড়ীর সাথে করতে পারে তবে রহিমরা একটি ঈদ কেন করতে পারবে না। ধন্যবাদ
শামীম চৌধুরী
যুক্তিযুক্ত কাথা বলেছেন।
রাফি আরাফাত
অনেকদিন পর আপনার আপডেট পেলাম। কিন্তু দিলেন তো মনটা খারাপ করে। আচ্ছা যেহেতু করেই ফেলেছেন তাই আর কিছু বললাম না। ভালো করার দায়িত্বও আপনাকেই দিলাম ভাই। অনেক সুন্দর হয়েছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকবেন ভাই। ধন্যবাদ
শামীম চৌধুরী
রাফি ভাই খুব খুশী হলাম আপনি আমার জগাখিচুড়ি মার্কা কল্পনার অংশীদার হয়েছেন জেনে। আপনিও ভালো থাকবেন।
রাফি আরাফাত
কল্পনা গুলো কিন্তু ভাই জগাখিচুরির মতোই হয়। সবসময় পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ ভাই। ভালো থাকবেন।
শামীম চৌধুরী
আপনিও ভালো থাকবেন। ভালোবাসা নিরন্তর।
ছাইরাছ হেলাল
কাল্পনিক হলেও আমাদের সমাজের বাস্তবতা অনেকটাই এমন,
ধীরে ধীরে লিখুন, পড়ব অবশ্যই।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাই।
আরজু মুক্তা
ভাইয়া,কান্না পেলো।।আমাদের বাস্তব সমাজ।
শামীম চৌধুরী
জ্বী