আমি এখানে আমার কথা বলছি । পথ চলতে চলতে অভিজ্ঞতায় আমি কি সম্পূর্ণ ? এ-প্রশ্ন আমি সবসময়ই করি নিজেকে, যখন থেকে হৃদয় থেকে মস্তিষ্কে, মস্তিষ্ক থেকে হৃদয়ে এপাশে ওপাশে যাহাই আমাকে আকৃষ্ট করেছে, মোহো জাগিয়েছে, মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করেছে ,আমি সকলের কাছেই থাকবার চেষ্টা করেছি এবং যতটুকু দেবার ততটুকু চেষ্টাও করেছি। আমি কি একাই চেষ্টা করেছি ? এ-প্রশ্নটিও আমি নিজেকে করি । কিন্তু এ-প্রশ্নটি আমি করতে শিখেছি যখন আমি কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছি । যেমন আমার মনে আছে, তখন আমার বয়স কেবল তিরিশ ছুঁয়েছে । রাত তখন প্রায় তিনটা । ঘুম ভেঙ্গে গেল কলিং বেলের আওয়াজে ।আমি বাসায় একা। আমার পরিবার বাবার বাড়ীতে বেড়াতে গেছেনে । বাবাও গেছেন বোনের ওখানে আর ভাই তার পরিবার নিয়ে তার শ্বশুর বাড়ীতে । এইযে আমি একা, আমি কেমন করে একা থাকবো যেখানে আমাদের ‘মা’ মারা গেছেন মাত্র চল্লিশ দিন আগে । পরিবারের সকলেই গেছেন যার যার মনকে ভাল করবার জন্য। প্রত্যেকেরই কিন্তু আপন একজন চলে গেছে । আমি যাই নি । তাহলে কি আমার আপন কেউ যায়নি ? এই যে প্রশ্ন ? অবশ্য সকলেই বলেছিল আমাকেও যেতে । কিন্তু আমি যাইনি । তার কারণ হল যেখানে আমার মা- চলে গেছেন সেখানে আমার মন ভাল করতে কেন বাইরে যেতে হবে ?
দরজা খুলে দেখি, আমার মামাতো ভাই ঈলমান ।আসলে আমার মা, ওর ফুপু ওকে অনেক আদর করতেন । একমাত্র সেই যখন জানতে পেরেছে আমি একা তাই সে সোজা এতো রাতে চলে এসেছে আমার একাকীত্বর সঙ্গী হতে । এখানে আমি আর ইলমান কি আবেগ প্রবণ ? ঠিক তাও নয়। আসলে এক একটি বাস্তবতার চেহারা ভিন্ন ভিন্ন ।
এখানে কি আমার একেবারেই আপন যারা তারা কি স্বার্থপর ? আসলে তাও নয়, কারণ প্রত্যেকের মনের অবস্থান এক হয় না আবার আমার মতন মনও প্রত্যেকের অবস্থানে এক হয় না । এই যে কঠিন বাস্তব একে মেনে নেওয়াই হল বুদ্ধিমানের কাজ । তানা হলে সম্পর্কের গতি পায় না । এখানে কে বা কারা বিশেষ দৃষ্টান্ত রাখল , তাও ভেবে দেখবার দরকার নেই ।
আসলে জীবনকে অত্যন্ত সহজ করে নিতে পেরেছি বলেই কারো পথে বাঁধা হয়ে দারায় নি এবং নিজেকেও অন্যের কাছে ছোট হতেও দিইনি । আসলে জীবনকে সহজ করবার পদ্ধতি হল মনকে উদার রাখা শত কঠিন বাস্তবেও । নিজেকে সবসময় ভাবতে হবে একটি বটবৃক্ষ । এখানে বয়স প্রাধান্য নয় প্রাধান্য হল অন্যকে ছায়া দেওয়া । আমি ছায়া পেলাম কি পেলাম না এটি আমার কাছে কখনোই মুখ্য হয়নি ।
১৫টি মন্তব্য
নীহারিকা জান্নাত
“নিজেকে সবসময় ভাবতে হবে একটি বটবৃক্ষ । এখানে বয়স প্রাধান্য নয় প্রাধান্য হল অন্যকে ছায়া দেওয়া । আমি ছায়া পেলাম কি পেলাম না এটি আমার কাছে কখনোই মুখ্য হয়নি ।”…..দারুন!
এমনভাবে যেন সবাই ভাবতে পারি।
সৈয়দ আলী উল আমিন
জ্বি। আন্তরিক ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
আসলে এক একটি বাস্তবতার চেহারা ভিন্ন ভিন্ন । সুন্দর একটি উপস্থাপন যখন যেখানে, তখন সেখানে মানিয়ে চলা বড়ই একটি মহৎ গুনের নাম। আর সেটি আপনার আছে …।
-{@ শুভেচ্ছা।
নীরা সাদীয়া
অনেকেই উদারতা দেখানোর পাশাপাশি উদারতা প্রত্যাশাও করেন। ভাল লিখেছেন।
সৈয়দ আলী উল আমিন
একদম ঠিক বলেছেন। আন্তরিক ধন্যবাদ।
মেহেরী তাজ
সব সময় নিজে কি পেলাম কি হারাল ভাবতে গেলে অন্য কে কিছু দেওয়ার মত সময়ই থাকবে না……
মানুষের বট বৃক্ষ হয়েই বাঁচা উচিৎ।
সৈয়দ আলী উল আমিন
জ্বি। আন্তরিক ধন্যবাদ ।
নীলাঞ্জনা নীলা
বটবৃক্ষ সবাই হতে পারেনা। কারণ মনের মধ্যে স্বার্থপরতা কাজ করে বেশী। যারা ছায়া দেয় তারাই তো মহান।
সৈয়দ আলী উল আমিন
জ্বি- তবুও আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে। ধন্যবাদ।
অরণ্য
আপনার লেখা ও বোধ আমার ভাল লেগেছে।
ভাল থাকবেন।
সৈয়দ আলী উল আমিন
আন্তরিক ধন্যবাদ ভাই ।
নিতাই বাবু
সম্মানিত দাদা, আপনার ভাবনাই ঠিক।
আপনাকে ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।
সৈয়দ আলী উল আমিন
আপনি ও ভাল থাকবেন ভাই। ধন্যবাদ।
গাজী বুরহান
বাহ! জীবন থেকে নেয়া আরেকটি লেখা পেয়ে গেলাম। লিখতেই থাকুন, আমাদের তো অনেক কিছু জানার আছে।।
সৈয়দ আলী উল আমিন
আমি ধন্য। ধন্যবাদ ভাই।