পিঠেপিঠে ভাই বোন আমরা।কতটা যে আদর করে আমাকে তা আপনারা জানেন আশাকরি।।আপুর জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে।এমবিএ শেষ করার পর এখন এ বিষয়ে আরো পড়াশুনার জন্য দেশের বাইরে যাবার ইচ্ছে আপুর।আমাকে গোপনে বলেছেন এখন বিয়ে করবে না। কিছু কর্ম কৌশল নির্ধারন করতে হবে বিয়ে ঠেকাতে।আব্বু আম্মুকে বলা যাবেনা এসব।প্রথম প্রথম এখন বিয়ে করবো না বললেও আমার বুদ্ধিতে কৌশল পাল্টে গিয়েছে। আমি অবশ্য এজন্য ভালোই কনসালটেন্সি ফিস পাচ্ছি :p
*আপু আমার কিছু টাকা দরকার ছিল,কিন্তু তোর কাছে তো বলে লাভ নেই,এত টাকা তোর কাছে তো নেই।
** কত লাগবে তোর?
*পাঁচশত
** এই নে
* তুই এত টাকা কোথায় পাস বলতো?
** আমি ইউনিতে গিয়ে খরচ করি নাকি তোর মত?আমার সব টাকা থেকে যায়।
* { মনে মনে } তুই খরচ না করে ভালোই করেছ আপু।

যাই হোক পাত্র আসা শুরু করলো আমাদের বাসায়।পাত্রের অবিভাবক সহ,আপুকেও দেখতে। গোপন পরিকল্পনা হচ্ছে,আমার রুম থেকে ড্রইং রুম দেখা যায়।রুমের জানালা বন্ধ করে,লাইট অফ করে দিয়ে দরজা কিছুটা খুলে ড্রইং রুমের দিকে তাকিয়ে থাকলে রুমের ভিতর দেখা যায় না।পরীক্ষা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।পাত্র আসবে,আপু এখানে বসে আগে গভীর ভাবে পাত্রকে দেখবে।আমাদের কাজের মেয়ে মনোয়ারা খুবি ইস্মার্ট।সে তাঁর ভালো ড্রেস পরে, কিছুটা সাজুগুজু করে পাত্র এন্ড এসোসিয়েটদের জন্য নাস্তা নিয়ে যাবে এবং পাত্রের একেবারে সামনে যাবে যে কোন ভাবে।

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী পাত্রঃ
আসলেন আমাদের বাসায়।দেখতে বেশ সুন্দর।বিয়ের পরে আপুকে নিয়ে যাবেন অষ্ট্রেলিয়ায়।আমার মনে হচ্ছে প্রথম পাত্রকেই আপু পছন্দ করে ফেলবে।আপু ওয়াচ রুমে বসে দেখছে।মনোয়ারা হালকা নাস্তা নিয়ে এলো।আমি একটি বিশেষ কারনে পাত্রের পিছনে দাঁড়ানো।
আপু আসল কিছুক্ষণ পরে।আপুকেও খুবি সুন্দর লাগছে। পাত্র পাত্রী দেখা পর্ব শেষ।রাতে আপু খাবার টেবিলে বসে মতামত জানাবেন।
খাবার টেবিল,আপু বললেন এই পাত্র বাতিল।কেন কেন? আপুর উত্তর ও চরিত্রহীন।
সবাই থমকে গেছে।আম্মু বললেন এ তুই কি বলছো মা?
মনোয়ারাকে বলতে বললেন আপু। মনোয়ারা এসে বললো’ খাবার দেয়ার সময় আমি পাত্রের চোখের দিকে তাকিয়েছি।পাত্র তখন তাঁর দুই হাত দিয়ে চোখ মোছার ছলে আংগুলের ফাক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়েছে।সে দৃষ্টি ভালো না। ‘
আপু বিজয়ের হাসি হেসে ‘ মেয়েদের সিক্সথ সেন্স এ অনেক কিছু ধরা পরে,যে লোক কাজের মেয়ের দিকে এমন করে তাকায় তাকে আমি পছন্দ করতে পারিনা’।
পাত্র বাতিল।

দেশেই থাকা একজন সিভিল প্রকৌশলিঃ
বেশ স্মার্ট।ভালো বেতনে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে জব করে। পুর্বের মতই সব কিছু করা হল। সবার কাছে ভালোই লাগলো।শুধু তাঁর জামার কালার টা একটু চড়া রঙয়ের।খাবার টেবিলে মনোয়ারা খুবি প্রশংসা করলো তার।জামার রঙটা মনোয়ারার সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে,কত সুন্দর রঙিন জামা,জামাইয়ের সাথে আপাকে বানাবে খুব।
আপুর কথাঃ তোমাদের কাছে কেমন লেগেছে জামার রঙ?
আমরা সবাই বলি যে মোটামুটি।
আপুঃ যে লোকটার জামার রঙ বাসার কাজের লোকের শুধু পছন্দ,তাকে আমি বিয়ে করবো না।
আম্মুঃ বিয়ের পর রঙ ঠিক করে দিবি তুই।
আপুঃ এত বছরে তাঁর এই রুচি হয়েছে,বিয়ের পরে যে রুচি পাল্টাবে তাঁর গ্যারান্টি কি?
পাত্র বাতিল।

আমেরিকা প্রবাসী পাত্রঃ
সবাই আগ্রহী এই পাত্রের প্রতি।আপু যেহেতু আমেরিকা যেতে চান পড়াশুনা করতে,এই পাত্রই হবে ফিট।  দেখা দেখির পরে খাবার টেবিল।
আপুঃ সবই ঠিক ছিল,কিন্তু এর শরীরে ঘামের গন্ধ, ওয়াক।
আম্মুঃ তুই তো কত দূরে বসা,ঘামের গন্ধ পেলি কিভাবে?
আপুঃ সজীব তাঁর পিছনে দাঁড়ানো ছিল,পেয়েছে।
বলাবাহুল্য এই কাজটির জন্য আমি পাত্রের পিছনে দাড়াতাম 🙂
পাত্র বাতিল।

এমনি ভাবে সব পাত্র বিদায়।
কারো মাথায় টাক
কেউ দাঁত মাজে না
কেউ গ্লাসে পানি খাবার সময় ডক ডক করে শব্দ
কফি খাবার সময় শব্দ
কেউ সবার সামনে মুখ হা করে হাই দেয়
কারো প্যান্টের বেল্টের চামড়া উঠে গিয়েছে
ইত্যাদি ইত্যাদি কারনে অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়ে যাচ্ছেন ।

আপুর এমন বিচিত্র অযুহাতে আমিও মুগ্ধ হয়ে গেছি।আপু প্রেমও করেনা।করলে আমাকে জানাতো।
সর্বশেষ খবরঃ
আপুর ল্যাপটপ টি এখন রাতে আমি ব্যবহার করি :p কসালটেন্সি ফি 😀

৭০৮৯জন ৬২১০জন
0 Shares

৫৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ