ইংরেজী নামঃ Spoon billed-Sandpiper.

বাংলা নামঃ চামুচঠোঁটি চা-পাখি/কোদাইল্লা চা-পাখি

বৈজ্ঞানিক নামঃ Eurynorhynchus pygmeus.

আকারঃ এ পাখির দৈর্ঘ্য ১৭ সেন্টিমিটার, ডানা ১০ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.২ সেন্টিমিটার, ঠোঁটের চামচের মতো অংশ ১.১ সেন্টিমিটার, পা ২.১ সেন্টিমিটার ও লেজ ৩.৮ সেন্টিমিটার। এর উপরের অংশের রঙ অনেকটা ফিকে ধূসর ও নিচের অংশটা সাদা। আকারে চড়ুই পাখির থেকেও ছোট।

খাদ্যঃ ভেজা বালি-কাঁদার ওপরের স্তর থেকে এরা খাদ্য সংগ্রহ করে। এদের খাদ্যের তালিকায় আছে নানা জাতের অমেরুদণ্ডী প্রাণী।

স্বভাব ও প্রজনন কালঃ শেওলা বা খাটো উইলো গাছে ঢাকা প্রান্তরের মাটিতে ঘাস, পাতা, শেওলার বাসা বানিয়ে এগুলো ডিম পাড়ে। একসঙ্গে চারটি পর্যন্ত ডিম দেয়। ২০ দিনের মাথায় ডিম থেকে ছানা বের হয় এবং চার সপ্তাহের মাথায় ছানা বাসা ছেড়ে উড়তে শেখে। মে থেকে সেপ্টম্বর মাস পর্যন্ত প্রজনন করে থাকে।

বাসস্থানঃ এদের আবাসস্থল উত্তরপূর্ব রাশিয়া বিশেষত সাইবেরিয়াতে।

বর্ণনাঃ এক জাতের ছোটো পাখি। সৈকতের কাদা-পানি হতে পোকা ধরার জন্য চড়ই আকারের এ পাখিটির চঞ্চু চামচের মত। এই পাখিটি সম্পূর্ন পরিযায়ী ও উপকূলীয় পাখি। যার জন্য এর আরেক নাম সৈকত পাখি। লোকালয়ে এদের না আসার কারন খাদ্যের অভাব। মাসে মাত্র ৩৫০ ডলারের বিনিময়ে কিছু জ্ঞানপাপাীরা গবেষনা নামক মিথ্যে বুলি ছড়িয়ে পরিযায়ী এই পাখির উপর নির্বিচারে অত্যাচার করছে।
এই স্পুনবিল স্যান্ডপাইপার IUCN এর ভাষ্যমতে ডেঞ্জার জোন লাল তালিকায় আছে। বিলুপ্তির পথে। সারা পৃথিবীতে এদের সংখ্যা মাত্র প্রায় ১০০ জোড়ার মত অর্থাৎ দুইশত।
আমাদের দেশে এই জ্ঞানপাপীরা সামান্য অর্থলোভে পড়ে গবেষেনার নামে যে কাজটি করছে সেটি হলো পাখিটিকে খুঁজে বের করে তার পায়ে রিং পড়িয়ে দেয়া।
একবার ভাবুনতো?
আপনাকে ৪/৫জন লোক যদি দৌঁড়ে আটক করে তবে আপনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য তার সাথে ধস্তাধস্তিতে লিপ্ত হবেন। তাতে করে আপনার শারিরীক শক্তি ক্ষয় হবে। এক পর্যায়ে আপনি সেই ৪/৫জন লোকের সামনে দূর্বল হয়ে যাবেন ও আত্মসমর্পন করবেন।
তদ্রুপ এই অর্থলোভীরা উপকূল এলাকায় স্পুনবিল পাখির উপর এমনই ভাবে নির্বিচারে অত্যাচার করে থাকে। যা আমরা হয়তো খালি চোখে দেখিনা। তারা কারেন্ট জাল বিছিয়ে রাখে। সেই জালে পাখিগুলি আঁটকা পড়ে। পরে সেই পাখিগুলিকে নেট বা জাল থেকে অমানবিক কায়দায় খুলে নিয়ে এনে পায়ে রিং পড়িয়ে দেয়।
এই রিং পড়ানোর সময় পাখিটিকে দুহাতের তালুতে সর্বস্ব শক্তি প্রয়োগ করে চেপে ধরে রাখে। যার ফলে পাখির সাথে এই স্ব-ঘোষিত গবেষক নামক অমানুষদের ধস্তা-ধস্তি হয়। তাতে করে অনেক সময় এই পাখিগুলি আতংকে বা শারিরীক ভাবে দূর্বল হয়ে মারাও যায়। এই অমানুষগুলি কোন এক বিদেশী সংস্থার দালাল হয়ে যে কাজটি করছে তাতে করে প্রকৃতিতে বিচরন করা ও খাদ্য গ্রহনের জন্য হাজার হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে আসা পাখিগুলি হুমকীর সম্মুখীন হচ্ছে। ভয়ে যত্র তত্র উড়া-উড়ি করে তারা তাদের খাবার সংগ্রহ করতে না পারায় শরীরে পুষ্টি হারাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে নির্দিষ্ট সময়ে যখন তার নিজস্ব আবাসস্থলে ফেরত যাবে পাখিগুলি তখন পথিমধ্যে অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। যার জন্য শতভাগ দায়ী এই স্ব-ঘোষিত গবেষকরা। এরা মূলত আসে আমাদের দেশে খাদ্য গ্রহনের জন্য। শীত প্রধান দেশ যেহেতু তাদের বাসস্থান তাই শীতের সময় তাদের দেশে পর্যাপ্ত খাবার পায় না। কারন তখন খাবার বরফে আবৃত থাকে। পরিযায়ী পখিগুলি আমাদের দেশে প্রজনন করে না।

আমি ছবিটি গত ১৮ই জানুয়ারী’২০১৯ নিঝুমদ্বীপ উপকূলের দমারচর হাতিয়া থেকে তুলেছি।

এই পাখি সহ সকল বণ্যপ্রাণী ও পাখি শিকার করা, মারা ও খাঁচায় বন্দী করা বণ্যপ্রাণী সংরক্ষন আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। প্রকৃতিতে অবাধ বিচরন এদের মৌলিক অধিকার।

সময় নিয়ে পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

১৭৩২জন ১৫৪৪জন

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ