#প্রতিবন্ধী কি– জানতে হবে, জানাতে হবে, হতে হবে সচেতন ?–১
( অনেক দিন হতে এই বিষয়ে একটা লিখা লিখার জন্য মনে মনে তাগিদ অনুভব করছি। তাই পড়াশুনা করছিলাম এই বিষয় নিয়ে। তারই ফলশ্রুতিতে এই লিখা। পড়বেন এবং সচেতন হবেন এবং সচেতন করবেন এই আমার কাম্য। আর লিখাটা প্রতিবন্ধি দিবসে প্রকাশ করার ইচ্ছে থাকলেও হয়ে উঠেনি।প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বরকে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে।)
পাঠ-১ প্রতিবন্ধী শিশু
একটি সুস্থ শিশু সকলেরই কাম্য। পরিবারে এমন কিছু শিশু দেখা যায় যাদের শারিরীক গঠন স্বাভাবিক নয়, হাত বা পা নাই। কানে শোনে না। ফলে কথা বলতে পারে না। অনেকে চোখে দেখে না বা কম দেখে। বুদ্ধিমত্তা কম, ফলে সামাজিক আচরণ ও ভাব বিনিময় ঠিকমতো করতে পারে না। এরাই প্রতিবন্ধী শিশু। এই প্রতিবন্ধী শিশুরা আমাদের সমাজেরই একজন, তাই এদের সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। প্রতিবন্ধী শিশু সম্পর্কে ধারনা থাকলে তাদের প্রতি সবার ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে, প্রতিবন্ধী শিশুটিও নিজেকে সকলের থেকে আলাদা বা অসহায় মনে করবে না।
>>প্রতিবন্ধতার কারণঃ বিভিন্ন কারণে একটি শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে। যেমন-
১। জন্মের পূর্বকালীন কারণ,
২। শিশু জন্মের সময়ের কারণ,
৩। শিশু জন্মের পরবর্তী কারণ।
১। জন্মের পূর্বকালীন কারণঃ-শিশু যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ও গর্ভের পরিবেশ শিশুর বিকাশকে প্রভাবিত করে। গর্ভাবস্থায় নানা কারনে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যহত হতে পারে এবং প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে। কারণগুলো হচ্ছে-
(ক)মায়ের রোগসমূহ— গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে মা যদি জার্মানহাম, চিকেনপক্স, মাম্পস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, রুবেলা ভাইরাস, এইডস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হন তবে গর্ভস্থ শিশুর উপর তার প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়। এর ফলে শিশু শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ ও মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। এ ছাড়া মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্ত চাপ, কিডনির সমস্যা, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা প্রভৃতি শারীরিক অবস্থায় গর্ভস্থ শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে।
(খ)মায়ের অপুষ্টি— গর্ভবতী মা যদি দীর্ঘদিন যাবৎ রক্তাল্পতায় ভোগেন, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না খান তবে ভ্রুনের গঠনগত বিকলাঙ্গড় দেখা দেয়, মস্তিস্কের বিকাশ ব্যাহত হয়, ফলে শিশু প্রতিবন্ধী হয়।
(গ)ঔষধ গ্রহণ– – গর্ভাবস্থায় মা যদি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ খায়, তা শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। অনেক ঔষধ ভ্রুনের অঙ্গ সৃষ্টিতে বাঁধার সৃষ্টি করে ফলে শিশু যে কোন ধরনের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্ম গ্রহণ করতে পারে।
(ঘ)মায়ের বয়স—- গর্ভধারনের সময় মায়ের বয়স কম বা বেশি দুটিই শিশুর জীবনের জন্য ঝুঁকি পূর্ণ। অপরিণত বয়সে প্রজণন অঙ্গের বিকাশ সম্পূর্ণ হয় না। তাই অপরিণত বয়সে মা হলে ত্র“টিপূর্ণ শিশু জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার বেশি বয়সে অন্ত:ক্ষরা গ্রন্থির স্বাভাবিক কার্যাবলি হ্রাস পায়। তাই ৩৫ বৎসরের পর যে সব মহিলা প্রথম সন্তান জন্ম দেন, সে সব শিশু প্রতিবন্ধী হওেয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
(ঙ)ঘণ ঘণ খিঁচুনি—- গর্ভাবস্থায় মা যদি ঘন ঘন খিঁচুনি রোগে আক্রান্ত হন তবে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে অক্সিজেনের অভাব ঘটে ও তার মস্তিস্কের ক্ষতি করে। ফলে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।
(চ)নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বিবাহ—- আপন মামাত, খালাত, ফুফাত, চাচাত ভাইবোন যাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক আছে তাদের মধ্যে বিবাহ হলে শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(ছ)তেজস্ক্রিয় পদার্থের প্রবেশ—- গর্ভাবস্থায় বিশেষত প্রথম তিন মাস এক্স-রে বা অন্য কোনো ভাবে মায়ের দেহে যদি তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রবেশ করে তবে গর্ভস্থ ভ্রুণের নার্ভতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হয়।
(ছ)মা বাবার রক্তের Rh উপাদান— মা যদি Rh পজেটিভ আর বাবা যদি Rh নেগেটিভ হয় তা হলে গর্ভস্থ সন্তানের Rh পজেটিভ বা নেগেটিভ হতে পারে। মা ও সন্তানের Rh উপাদানের মধ্যে যদি মিল না থাকে তবে তাকে Rh অসংগতা Rh Incompatiability বলা হয়। এতে মৃত সন্তান হয়। আর যদি শিশু বেঁচে যায় তাহলে পক্ষাঘাতগ্রস্থ বা মস্তিস্কের ত্রুটি নিয়ে জন্মায়।
২। শিশু জন্মের সময়ের কারণসমূহ—–
(ক)শিশুর জন্ম সময়কাল দীর্ঘ হলে, শিশুর গলায় নাড়ি পেচানোর কারণে বা শিশু জন্মের পর পরই শ্বাস নিতে অক্ষম হলে অক্সিজেনের স্বল্পতার জন্য মস্তিস্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফলে শিশু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়।
(খ)জন্মের সময় মস্তিস্কে কোনো আঘাত, যেমন- পরে যাওয়া বা মাথায় চাপা লাগা ইত্যাদি প্রতিবন্ধিতার কারণ হতে পারে।
৩। শিশু জন্মের পরবর্তী কারণসমূহ—
(ক)নবজাতক যদি জন্ডিসে আক্রান্ত হয় এবং রক্তে যদি বিলিরুবিনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় তবে মস্তিস্কে কোষের ক্ষতি হয় এবয় শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী হয়।
(খ)শৈশবে শিশু যদি হঠাৎ করে পরে যায়, মস্তিস্কে আঘাত পায় বা শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় তবে শারিরীক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(গ)পরিবেশের বিষাক্ত পদার্থ, যেমন- পোকা মাকর ধ্বংস করার রাসায়নিক পদার্থ, ফ্লোরাইড, আর্সেনিক মিশ্রিত পানি ইত্যাদি শিশুর শরীরে প্রবেশ করলে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(ঘ)শিশুর শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য বিভিন্ন প্রকার পুষ্টিকর উপাদানের প্রয়োজন হয়। পুষ্টিকর উপাদানের অভাবে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যহত হয় এবং শিশু মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারে।
পাঠ-২ প্রতিবন্ধীতা শনাক্তকরণ–
শিশু জন্ম গ্রহনের পর পরই যদি প্রতিবন্ধীতা শনাক্ত করা যায় তবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীতা থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। যেমন- জন্ম গ্রহণের পরই যদি বোঝা যায় শিশুর হাত বা পা বাকানো তবে অনেক সময় ব্যান্ডেজ বা সামান্য ব্যায়ামের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। দেরি হয়ে গেলে শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয় যা কষ্টসাধ্য এবং ব্যয় বহুল। অতি শৈশবে শিশু মধ্যে নিচের উল্লেখিত লক্ষণগুলোর মধ্যে যে কোনো একটি লক্ষণ প্রকাশ পায় তবে বুঝতে হবে শিশুর মধ্যে প্রতিবন্ধীতার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
(ক)শারীরিক প্রতিবন্ধী সনাক্তকরণ— বেশিরভাগ শারীরিক প্রতিবন্ধীতা শিশু জন্মের পর চোখে দেখেই বোঝা যায়। আবার কিছু শারীরিক প্রতিবন্ধীকতা শিশু বেড়ে উঠার সাথে সাথে প্রকাশ পায়।
(খ) ঠোঁট কাটা— উপরের ঠোঁট ঠিকমতো গঠিত হয় না। ঠোঁটে ফাঁকা থাকে। ফলে শিশুর খাদ্য গ্রহণে ও কথা বলতে সমস্যা হয়।
(গ)কাটা তালু— মুখের ভিতরের উপরের দিকে তালুর হাড় ও মাংসপেশী ঠিকমতো গঠিত হয় না। ফলে খাদ্য গ্রহণ, কথা বলাা এবং শোনার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়।
(ঘ)মুগুর পা- একটি বা উভয় পা ভিতর বা পিছন দিকে বাঁকানো থাকে।
(ঙ)স্পাইনা বিফিটা– মেরুদন্ডের হাড়(কশেরুকা) ঠিকমতো জোড়া লাগে না। ফলে মেরুরজ্জু পিঠের দিকে থলির মতো ফুলে উঠে। হাটাচলায় সমস্যা হয়।
(চ) সেরেব্রাল পলসি—- জন্মের সময় শিশুকে অনেক সময় শিথিল বা নেতানো মনে হয়। বয়স বৃদ্ধির সাথে অন্য শিশুদের মতো হাত পা নাড়াচাড়া করতে পারে না। মাথা তোলা, বসা ইত্যাদি খুব ধীর গতিতে হয়। দুধ চুষতে ও গিলতে অসুবিধা হয়।
(ছ)শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের অনুপস্থিতি বা গঠন বিকৃতি— শিশু শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের অনুপস্থিতি বা অসম্পূর্ণতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। অর্থাৎ- হাত পা, আঙ্গুল থাকে না বা গঠন অসম্পূর্ণ থাকে। দেহের গঠনও বিকৃত হতে পারে।
(জ)বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা শনাক্তকরণ—- বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা হচ্ছে এক ধরনের অক্ষমতা এবং এই অক্ষমতাটি স্থায়ী প্রকৃতির। বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতার কোনো চিকিৎসা নাই। তবে যত্ন শিক্ষণের মাধ্যমে অনেক শিশুর আচরণের উন্নয়ন ঘটানো যায়। তাই আমাদের উচিত দ্রুত সনাক্ত করে শিশুর যথাযথ যত্ন ও শিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল আচলণ করা। তবে সব বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা একই ধরনের নয়।
বুদ্ধাঙ্কের উপর ভিত্তি করে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি শনাক্ত করা যায়।
>>বুদ্ধাঙ্ক— বুদ্ধাঙ্ক হচ্ছে ব্যক্তির মানসিক বয়সের সাথে সময়ানুক্রমিক বয়স বা প্রকৃত বয়সের অনুপাত।
@@বুদ্ধাঙ্ক (IQ) = মানসিক বয়স/ প্রকৃত বয়স X১০০
@@ওয়েলসার এবং টারম্যান নামে দুই জন মনোবিজ্ঞানী বুদ্ধাঙ্কের উপর ভিত্তি করে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা নির্ণয় করেছেন।
এই ক্ষেত্রে উনারা আদর্শায়িত বুদ্ধি অভীক্ষা ব্যবহার করেন। এই অভীক্ষায় একজন পরীক্ষক কর্তৃক একজন পরীক্ষণ পাত্রের বুদ্ধি পরিমাপ করা হয়। এইক্ষেত্রে অভীক্ষার অন্তর্ভূক্ত বিষয়গুলো হলো- স্মৃতিশক্তি (Short term memory), শব্দের ব্যবহার (Vocabulary), নৈব্যক্তিক যুক্তি (Abstract Reasoning) , সাধারন তথ্য (General Information), গানিতিক যুক্তি (Numerical Reasoning), পরিমাপক। প্রতিটি সঠিক উত্তরের নম্বর যোগ করে সাফল্যাঙ্ক গণনা করা হয়। পরে তা একটি আদর্শ নমুনার সাথে তুলনা করা হয়। অভীক্ষা গ্রহণের সময় পরীক্ষাণ পাত্রের সমবয়সী একটি বিরাট দলকে আদর্শ নমুনা হিসাবে নির্বাচন করে তাদের গড় মান নির্ধারণ করা হয়। </ (ক্রমশ)
৯টি মন্তব্য
মা মাটি দেশ
খুব সুন্দর একটি শিক্ষনীয় পোষ্ট (y)
ছন্নছাড়া
অনেক প্রয়োজনীয় একটা পোস্ট ……… (y)
আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ …… ।
লীলাবতী
শিক্ষণীয় পোস্ট । ধন্যবাদ আপনাকে । শিরোনামের পূর্বে # এটি দিয়ে শুরু কেন ভাইয়া ?
জি.মাওলা
# tag deye FB te post korecilam. R remove kora hoy ni ….. thanks to all
জিসান শা ইকরাম
ভালো পোস্ট ।
(y)
খসড়া
(y)
স্বপ্ন
(y)
নীলকন্ঠ জয়
শিক্ষণীয় পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ।।
জি.মাওলা
next part must read…… Ther we will see why we stop it ……… Thanks to all ….. & i love u all & miss u