
আগে মহাসমারোহে হাঁচি দিয়ে বলা যেতো, ” যাহা দিলাম উজাড় করিয়াই দিলাম ! ” আর এখন ভাইরে, হাঁচিতেও হিসাব নিকাশ। কোথায় দিলাম, কেমনে দিলাম, তাও ভাবতে হয়। আশেপাশের মানুষের সাথে হাঁচির সম্পর্ক এখন দা কুড়াল।
আগে তো সর্দিকাশি বা জ্বর হলে, পানিতে ৮/১০ টা ডুব কিংবা সাঁতার দিয়ে রোদে দাঁড়িয়ে গা মুছতে মুছতে জ্বর চলে যেতো। আব্বা যদি শুনতো আমাদের সর্দি হইছে, তাহলে উনি ২ চামচ মধু, ২ চামচ লেবুর রস, ২ চামচ সরিষার তেল দিয়ে সালসা বানাতো। ঐটা খেযে হায়রে নাকের পরপরানি। সর্দি জ্বরও গায়েব। এতোদিন শুনেছি, ওষুধ খেলে সর্দি সারে সাতদিনে, না খেলে এক সপ্তাহ। অথচ আজ হাঁচি, কাশির কাছে জাতি পর্যুদস্ত। উদায়ুস্ত চলছে টিকে থাকার চেষ্টা। রবীন্দ্রনাথ এটা সেটা খেয়ে সারারাত পুকুরে ডুবে সর্দি লাগাতে চাইতেন। এখন আমরা এসব থেকে পালিয়ে বাঁচি।
সেদিন রাস্তায় দাঁড়ায় আছি। এক মহিলা এসে বললো, ” তুমি কি বাবলুর ভাগ্নি ? ”
” জি, কেনো?”
“কিছু মনে করো না, ওনার নাকি করোনা?”
আপনারাও হইছেন, সর্দি, কাশি হইলেই করোনা। এখন সিজন চেন্জ। তাই সর্দি কাশি।
আবার এক বান্ধবি, সুফিয়া : কাগজ পেঁচায় নাকে সুড়সুড়ি দিয়ে হাঁচি আনতো। এই কাজ করতে ওর খুব মজা লাগতো। করোনাকালে ওর এখন কী অবস্থা, জানি না। আশে পাশের লোকগুলো নিশ্চয় ওর থেকে দূরে।
বাজারে আগুন, ঘরে অশান্তি, পরীক্ষায় গোল্লা কিংবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে যারা প্রায়ইশ বলতো,” মরে গেলেই ভালো ! ” তারা এখন ইমিউনিটি বিল্ড আপে ব্যস্ত।
বায়োলজি বলে, ” Survival for the fittest. ” তাইতো মহাসমারোহে চুটকি বাজিয়ে মাস্ক থুতনির নিচে পরে প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছি।
আজকাল ঘরে ঘরে গায়ক, নায়ক। ফেসবুক লাইভে আসছেন। সেলফিতে কোন কাজ হচ্ছে না। ” কাগজে লিখো না নাম, কাগজ ছিঁড়ে যাবে। ” তাই ওর নাম ফেসবুকেই লিখি। আইডি হ্যাক না হলে রক্ষে। আজীবন নামটি থেকে যাবে টাইম লাইনে।
মিঠু তো কতো চিল্লাইলো, ” হাত ধোও, হাত ধোও। ” বেমালুম ভুলে গেলাম। এখন হ্যান্ড ওয়াস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে হাতে। ” ও হাতে হাত রেখেছি যখনি।” বড় সাহেবও ভালোই হাত কচলাচ্ছেন। কুপোকাত না হলেই হয়। ” তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে লেবু আর লং খেয়ে।” শুধু কি তাই? আদা, দারচিনি, ভিটামিন সি জাতীয় ফলও আছে।
” মাস্ক হামরা পইরবার নই। হামার গুষ্ঠির কেউ মরে নাই। যতো সগ বড়লোকের। যামরা এসির নীচত থাকে। সুদখোর, ঘুষখোর ওদের করোনা। হামরা তো খাটি খাই।” আমাদের সংবাদ কর্মীও কম যান না। ” মাস্ক কই ? ” প্রশ্ন ছুঁড়লেই উপরোক্ত ঝটপট পান খাওয়া উত্তর।
” যখন হামার গ্রামোত ধিম ধিম করি ১০ টা মানুষ মরবে, তখম বুঝবো করোনা আছে। ” পথচারীর জবাব।
” মাস্ক তো সবাই পরছে। আমার মতো দুই একজন না পরলেও হয়।”
রিপোর্টার বললেন, ” তাহলে প্যান্ট খুলুন। প্যান্ট তো অন্য সবাই পরে আছে।
বাঙালি গলাপানি না হওয়া পর্যন্ত কিছুই মানবে না। তাইতো লকডাউনেও ঘোরাঘুরি। ” আমরা লকডাউন মানবো না। আগে চাউলের বস্তা আনি দেন। তারপর মানবো।” আমরা এখন অনেক কিউট জাতি হইছি। অনেক বুঝি।
” সমুদ্রে আসন পেতেছি ভয় কী আর! ”
করোনা বলে, ” মেনে চলো, তবে স্বাগতম ; না হলে ভাগতম।”
প্রেমিক খুব রোমান্টিক হয়ে বললো, ” আমি তোমার সাথে বেঁধেছি আমার প্রাণ…. মনেরও মন্দিরে। ”
প্রেমিকা বলে, ” দূর হও। তফাত যাও। ”
এই তো সেদিন আমার প্রেমিক সকালবেলা ফোন করে বললো, ” হাই জানু !” আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বের হলোনা। হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে গলা বসে গেছে। ঐটা বোঝাবো। কিন্তু তার আগেই ব্রেক আপ।
ফাঁসীর আসামীকে জেল সুপার বললো, ” শেষ ইচ্ছা থাকলে বলতে পারেন। ”
আসামী বলে , “কাল ঈদ। ভালো মন্দ খাওয়ার ইচ্ছা নাই। খুব মন চাচ্ছে একবার আপনার সাথে সকালে কোলাকুলি করবো।”
সুপার বললো, এ আর এমনকি? ঠিক আছে।
মৃত্যুর দিন, আসামী নিচু কণ্ঠে বললো, “স্যার কয়েকদিন ধরে গলা ব্যথা। কোন কিছুর ঘ্রাণ পাচ্ছি না। ”
সুপার এই কথা শুনে পিছনে তিন লাফ দিলো। আসামী ও সমান তালে লাফ দিয়ে সুপারকে জড়ায় ধরে বললো, ” স্যার মৃত্যুর আগে একটা হাঁচি দিতে চাই। ”
২৫টি মন্তব্য
তৌহিদুল ইসলাম
হাঁচি নিয়ে মারাত্মক সিরিকাস অবস্থায় পুরো পৃথিবীর মানুষ। এর পেছনে যুক্তিসংগত কারনও আছে। হাঁচি দিলেই আশেপাশের মানুষ এমন করে তাকায় নিজেকে এলিয়েন মনে হয়।
রম্যে বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। শুভকামনা আপু।
আরজু মুক্তা
হাঁচি কাশি নিয়েই বাঁচি।
ধন্যবাদ ভাই
রোকসানা খন্দকার রুকু
শ্যাশ জামানা বলিয়া কথা, হাচি আলহামদুলিল্লাহ না হয়ে হয়ে গেলো নাউযুবিল্লাহ। কি আর করা তবুও দুরে থেকেই কাছে। কোলাকুলি, জড়াজডির বালাই নেই।
দাওয়াত দিয়ে কেউ যদি শোনে কাশি। গেট খোলার আগেই বলে বাড়িতে নেই। দূর্দান্ত জামানা ইনজয় করছি।
শুভ কামনা আপনার জন্যও । ভালো থাকবেন!!
আরজু মুক্তা
আসলেই কি এক জামানা!
কবে যে সুবাতাস আসবে?
নিরাপদে থাকেন
পপি তালুকদার
হাঁচি নিয়ে সত্যি এক বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে! মানুষের মধ্যে ভয় মনে হয় কমে গেছে বাহিরে বের হলে তার সত্যতা পাওয়া যায়। আর ডায়লগ তো আছে করোনা – টরোনা সব বড়ো লোকের রোগ!
আরজু মুক্তা
ভয় ডর নাই। আবার একটু মেনে চলবে তাও নয়।
করোনা দূর হোক। এটাই কামনা
হালিমা আক্তার
বর্তমানের সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা এই হাঁচি কাশি। আমরা সচেতন নই। করোনা হয় বড়লোকের গরিব কেন মাস্ক
পড়ে ঘুরে বেড়াবে। সমস্যা কি!! বড়লোক বাসা থেকে যখন কাম ছাঁটাই করে দেয় তখন ও করোনার মজা বুঝে না।
আরজু মুক্তা
বোঝাবুঝি নাই। কামও বন্ধ। খালি দোষ সরকারের।
শুভ বুদ্ধি হোক
মোস্তাফিজুর খাঁন
খুব ভালো লেগেছে আপু, যথার্থই বর্ণনা করেছেন ।
ঈদের দিন ঠান্ডা কোমল পানীয় পান করায় সর্দি নামক বিরক্তকর অসুখ বাধিয়ে ফেলেছি । হাঁচি হচ্ছে একটু পর পর, তাই আর বাহিরে যাচ্ছি না ।
আরজু মুক্তা
করোনা না হলেও লোকে বলে তফাত যাও। ভীষণ বিড়ম্বনা।
দ্রুত সুস্থ হোন
বোরহানুল ইসলাম লিটন
হাঁচির শ্বাস
আজ পৃথিবীর ত্রাস।
চলতে শিক্ষা দিচ্ছে করোনা
বাঁচতে শিক্ষা দিচ্ছে করোনা
জানতে শিক্ষা দিচ্ছে করোনা
শুধু শেষে অন্তে বলছে ’তোমরা আমায় ধরো না’
সুন্দর হৃদয়গ্রাহী লেখা। মুগ্ধতায় শুভ কামনা রেখে গেলাম চিরন্তন।
আরজু মুক্তা
করোনা অনেক কিছু শিখাইলো।
নিরাপদে থাকেন
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হাঁচি এখন হিতে বিপরীত হয়ে গেছে, আগে মানুষ হাঁচি দিলে সবাই ভালো বলতো, পারলে গায়ের উপর হাঁচি দিতো 😜😜 আর এখন ভয়ে দৌড়ায়। হাঁচি কাশি হলে মসজিদ, মন্দিরে ও যাওয়া নিষেধ। ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন
আরজু মুক্তা
হাঁচি এখন বিড়ম্বনা।
নিরাপদে থাকুন
ছাইরাছ হেলাল
আপ্নি হাঁচি কাশি যা ইচ্ছে দিন, যত বার ইচ্ছে দিন, নো ম্যাটার,
তবে বাপু আপনি যাই করুন-না কেন, তফাতে করতে হবে।
জীবন খেলে যাচ্ছে লেবু আর লং আর আড়কে।
রম্য সুন্দর হইছে।
আরজু মুক্তা
একদম। সব তফাতে তফাতে।
রম্য ভালো লাগলো জেনে খুশি হলাম।
শুভ কামনা সবসময়
আলমগীর সরকার লিটন
বাস্তবতা ছুঁয়ে গেলো মুক্তা আপু স্যালুট জানাই
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
নিরাপদে থাকুন
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা , দারুন মজারু হইছে।
হাঁচি, কাশির দিনকাল খুবই খারাপ যাচ্ছে।
করোনা এসে সব এলোমেলো করে দিয়েছে। হিসেব করে হাঁচি দিতে হয় আজকাল।
জেল সুপার তো আতংকে মরে যাবে 🙂
রম্য ভালো হইছে।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
সেটাই। জেল সুপারের অবস্থা কাহিল।
রম্য ভালো লাগল জেনে খুশি হলাম।
নিরাপদে থাকুন।
শুভ কামনা
মোহাম্মদ দিদার
হাসছি আর ভাবছি,
আপনার বান্ধবীর সাথে আমার মিলে যাওয়া অভ্যাসটা।
যাই হোক বর্ননা করেছেন যথার্থ।
আরজু মুক্তা
তাই নাকি।
রম্য ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
নার্গিস রশিদ
মজা পেলাম লেখাটা পড়ে। এই কঠিন সময়ে আনন্দও দরকার।
আরজু মুক্তা
জি আপা। এই কঠিনসময় যে কবে যাবে?
নার্গিস রশিদ
” ও ভ্যাল ভেলির মাও, মক বিছনা পাতি দাও, মোর গায়ত আসছে জ্বর , মুই ভাত খাবার নন , মোর কাশত ক্যানে ভয়? ” = করোনা