
রুটিন মেনে চলা কষ্টকর, অন্তত আমি পারিনা। আমার মনে হয় মাঝামাঝে রুটিন ব্রেক হলে জীবনে টেষ্ট ফিরে আসে। এবারের রুটিন ব্রেকের জন্য করোনাকে ধন্যবাদ কারন এবার ঈদে গাদা গাদা রান্নার চাপ নেই। মাঝে মাঝে একাকিত্বও আনন্দের তাই ইচ্ছেমতো ঘুমিয়ে উঠবার পরিকল্পনায় শুয়েছি। কিন্তু আটটা না বাজতেই মামীমা দরজা ভেঙ্গে ফেলার উপক্রম। একগাদা মিষ্টি খাবার গিলতে হবে। ঈদের দিনের মিষ্টি খাবার আমার একদম পছন্দ না। কোনমতে তাকে বিদায় করে দিলাম আবার ঘুম। কিন্তু শান্তি নেই!
বারোটার দিকে পাশের ফ্ল্যাটের সুনয়না এলো। কি রকম বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। অবশ্য সে কান্নাতেও যেন মিশ্রিত এক বন্য সৌন্দর্য।
কেঁদে কেঁদে বলছে- “আপু বলেন তো এমন করে বললে সহ্য হয়। পরশু কেনাকাটায় গিয়েছি আমার লাল- হলুদ এসব রঙ পছন্দ হয়। আতিক সবার সামনেই বলে, তোমার সাথে এসব রঙ যায় না, অন্যটা নাও। আজ সকালে হলুদ ড্রেস পড়েছি সে বলে, “ তোমার আর কোন জামা ছিলো না? এমন করে সাজলে বিকেলে বেড়াতে নিয়ে যাবো না।”
সাতসকালে উঠে ওর জন্য কতো খাবার রান্না করলাম। অথচ খেতে বসে লাচছা সেমাই দেখিয়ে বলে, “ কি সুন্দর কালার দুধে-আলতা।”
বুকের ভেতরটা খচখচ করে উঠলো তবুও হেসে বললাম, “বোকা মেয়ে হয়তো এমনি বলেছে। তুমি অযথাই সন্দেহ করছো।”
না আপু মোটেও এমনি নয়। কাল পাশের বাসার ভাবী এসেছিলো কেনাকাটা দেখাতে। অনেকক্ষন গল্প করলো। তিনি যাবার পরই শুরু হয়েছে। একবার বলেই ফেললো, “ শুনে নিও তো ভাবী কি ক্রিম মাখেন।”
আমাকে কিসে খোঁটা দেয়া যায় তার এই বাহানা। আর ঝগড়া লাগলে পেত্নী, হাঁড়ির তলা, তোর মন কালো ইত্যাদি তো বলেই। অথচ ওর একটা চোখ লক্ষী টেরা আমি তো বলি না। বরং আমার ভালোই লাগে।
শোনো মেয়ে, জামাইদের পাত্তা কম দেবে। সে যা বলবে বলুক। বরং নেগেটিভ হলে বেশি খুশি হবে এবং সাপোর্ট করবে। উল্টো প্যাচে পড়লে দেখবে ঠিক হয়ে যাবে। আর এরপর কলিগদের নিয়ে কেনাকাটায় যাবে কিংবা তাকে নিয়ে গেলেও তার কোনটা পছন্দ জানতে চাইবে না। লাচ্ছা দুধে আলতা বললে বলবে, ”ধন্যবাদ আমি ভালো রাঁধুনি।”
কথায় কথায় কাঁদবে না। ফিজিক্স এর মেয়ে এতো কাঁদো কেন? এতে ব্যাক্তিত্ব নষ্ট হয়। কথায় কথায় রাগও করবে না। তার কাছে প্রত্যাশা কমিয়ে দাও সব ঠিক হবে। তুমি তো নিজেকে চেনো? কোথাও অবমূল্যায়ন হলে তা নিয়ে দুক্খ করে লাভ হয় না। নিজের জগতে ব্যস্ত থাকো, কষ্ট হবে না।
আর তুমি অনেক সুন্দর। তোমার চোখের দিকে ঠিকমতো তাকালে পুরো পৃথিবী অন্ধ হবে, প্রেমে পড়ে যাবে। যেমন- আমি তোমার প্রেমে পড়েছি প্রথম দিনেই।
যাই হোক, একা বোধ করছিলাম। তুমি এসে ভালোই হলো চলো দুজনে খেয়ে নিই। শুটকি রান্না আছে,ডিম আর বেগুন ভাজি চলবে? খেয়ে দেয়ে বিকেলে বেড়াতে যাবো । তখন তোমার অনেকগুলো কবিতা শুনবো। তোমার জামাই খুঁজে খুঁজে হয়রান হবে। দেখা পেলে বাইক নিয়ে রিকসার পিছু পিছু ছুটবে। তুমি তবুও নামবে না।
দুধে- আলতা রংটা আমারও ভীষন পছন্দের। যেমন- আমার মা, শুধু রঙে নয়। মেধা, মনন, সৃজনশীলতা, নাক, চোখ, ফিগার সবমিলিয়ে মাশআল্লাহ।
আর পাশের বাসার ভাবী। যার একমাত্র কাজ কেনাকাটা করা, সবার বাড়ি বেড়ানো আর অন্যের সংসারে অশান্তি লাগানো। তিনিও দুধে-আলতা কিন্তু লম্বা পাঁচ ফুটের বেশি হবেন না। নাকের পাতা বেধরোক মোটা কেউ বোধহয় ভাত উঠিয়ে লাকডির জ্বাল দিয়েছিলো। নাকের মাঝখানটা ট্যাপ খেয়ে গেছে।
অত্যন্ত সুন্দরী এ মহিলার নাম ‘আকতারা বানু’ হলেও তিনি ‘বানু’ থেকে হয়েছেন ‘জানু’। আর ‘আক’ থেকে আখি,পাখি, নয়ন, মনি এসব।‘তারা’ থেকে স্টার,মুন এসব হয়েছেন। স্বামীধন নাকি আরও হাজার নামে ডাকেন তিনি গল্প করেন।
তেলবাজ স্বামী নিজে রেঁধে বউ এর নামে চালান। যেখানে সেখানে অপ্রাসঙ্গিক হলেও বউ এর প্রশংসায় ভাসিয়ে দেন। লোকজন সেটা নিয়ে বেশ হাসাহাসি করলেও বুঝতে পারেন না। ব্যাক্তিত্বহীন স্বামীধন সাজুনি বউ এর বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলে দেন। বউ সেগুলো পোষ্ট করেন ফেসবুকে। প্রথম লাইক তিনিই মারেন এবং স্টিকার কমেন্টেও ভরিয়ে দেন। ফেসবুকের বেহাল পুরুষ সমাজও দশমিনিটে লক্ষলক্ষ লাইক মারে।
পুরো বাড়ি অগোছালো থাকে কাজের মানুষের আসা- যাবার আগে পরে। কেউ বাসায় গেলে শাড়ী গয়নাই বেশি দেখান। বাবুব বাবা ‘বাবু’ কত্তো ভালোবাসে। যেন পুরা রাজ্যই বউয়ের জন্য এনে দিয়েছে।
জানেন ভাবী, ও বলে আমাকে সব মানায়। পৃথিবী কোনদিকে যাচ্ছে কি হচ্ছে তার আগ্রহ নেই। শুধু পারলে পরামর্শ দেয় কি কি ক্রিম মাখবেন আর ফরসা হবেন। তার কিছু ব্রান্ড নাকি ঐশ্বরিয়া ব্যবহার করেন।
ও আল্লাহ, কিসের সাথেকি পান্তা ভাতে ঘি।
কবিতা, গল্পে তার অরুচি শুধু খাবারে বড্ড রুচি। তিনটে কাজের মেয়ের বদৌলতে খেয়ে খেয়ে পেটে চড়ে ঢাকা শহর পুরোই দেখা যায়। তবুও তার শাড়ির প্যাঁচ যায় না। বিশালাকার মেদভুডিটা লোকজনকে দেখাতেই যেন সুখ। তিনি বলেন, মোম সুন্দরী না হলে স্বামীরা ভালোবাসে না।
পুরুষ ও নারী শরীর নিয়েই তার অধিকাংশ গল্প। আরও পরামর্শ দেন স্বামীর সাথে সবসময় গায়ে গা লাগিয়ে চলতে হবে। সপ্তাহের প্রতিদিন ভালোবাসা- বাসী জরুরী তা না হলে সমস্যা।
ও আচ্ছা, তার মোবাইলের কথায় আসি। স্মামীধনের নাম নয় ”লাভ, জানু, জান, বাবু” এসব দিয়ে সেভ করা। কদিন পরপর সেগুলো চেন্জ করেন। কারও সামনে ফোন এলে দেখিয়ে বলেন “ও ফোন করেছে”। যেন পৃথিবী জয় করে ফেলেছেন।
আর এসবে আশেপাশের কৃষ্নকলীদের স্বামীরা বড়ই বিচলিত হন। বউদের ভালোবাসতে দ্বিধায় পড়ে যান।তাদের ঈদ নষ্ট হয়ে যায়। প্রকৃত সূখ যেহেতু শাড়ি- গয়না, টাকা, বাড়ি, গাড়ি, রঙ জৌলুসে নয়। মনকে সুখী করা জরুরী! তাই ঈদকে নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। তাই সারা বিকেল ঘুরবার প্ল্যানে তারা নদীপাড়ের উদ্দেশ্যে বেডিয়ে পরলো। বিকেলের নরম রোদ গায়ে লাগতেই মন ভালো হয়ে গেলো।
নদীপাড়ের বিশালতায় সুনয়না গান গেয়ে ওঠলো “ যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলোরে,,,,,,???
ছবি নেটের
২৪টি মন্তব্য
নবকুমার দাস
বেশ লাগলো দিদিভাই। মজা পেলাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
দাদা একটু বিস্তারিত মন্তব্য করবেন। ব্লগের মন্তব্য এতো ছোট হয় না । ধন্যবাদ।
নবকুমার দাস
পরবর্তী মন্তব্যের সময় বিষয়টি মাথায় রাখবো ও অনুসরণ করব। তবে এক কথায় বলি আপনার লেখা ভালো লাগে। বেশ তরতাজা, স্বাভাবিক ও অকৃত্রিম অভিজ্ঞতার নির্যাসে সমৃদ্ধ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ দাদা
ফয়জুল মহী
চমৎকার লেখা
পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ শান্তি আর সমৃদ্ধি।
ঘরে থাকুন,সুস্থ থাকুন
ঈদ মোবারক 💞
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ মহী ভাইয়া। আপনিও ভালো থাকুন।
হালিমা আক্তার
এ যেন আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র। আমি কি পরব , কি পরলে আমাকে ভালো লাগবে। সেটাও অন্যের ইচ্ছায়। হায় স্বাধীনতা। খুব ভালো লাগলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো আপু। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সমাজের সবচেয়ে ঘৃণ্য বিষয়টি চলে আসলো। অন্যের উপর নিজের মতামত চাপিয়ে দেয়া খুব বাজে লাগে। আমার ভালোলাগা, মন্দ লাগা অন্যের দ্বারা কেন নিয়ন্ত্রিত হবে, কুক্ষিগত হবে? কালো, খাটো এগুলো কি নিজের হাতে!! ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন শুভকামনা অবিরাম
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ দিদিভাই। সুন্দর মন্তব্যে সবসময় অনুপ্রেরণা পাই।
ভালো থাকবেন।
তৌহিদুল ইসলাম
আমাদের সমাজে শ্যামবর্ণ নারীরা এখনো নানাভাবে এসব হীন মানসিকতার স্বীকার হচ্ছে। নিজের পরিবারের মানুষজন পর্যন্ত তাদের নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন। অথচ রুপ আল্লাহর দান। একদিন রুপ চলে যাবে বয়স হলে তখন ভালোবাসাটাই মুখ্য হয়ে রয় সেটি আমরা ভুলে যাই।
চমৎকার অনুভাবী লেখা পড়লাম। ঈদ মোবারক আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন!
আরজু মুক্তা
এসন বললে কি চলে? সমাজ এমনি চায়। আর না সাজলে কিংবা হাল ফ্যাশনের জামা না পরলে ব্র্যান্ড তো মুখ থুবড়ে পরবে। লোক দেখানি হলেও সেজে গুজে ছবি আপলোড করতে হবে। মানসিকতা পাল্টাতে হবে। ঐ সব ছবি দেখে মন খারাপ করা চলবে না। ডিজিটাল যুগ। ডিজিটাল মানসিকতা।
ভালো খাকুক, কোকিল আর কাকগুলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা ঠিক বলেছেন। শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
কবির কবিতায় কৃষ্ণকলি আবেদনময়ী, তবে বাস্তব ভিন্ন। গাত্রবর্ণ নিয়ে অনেকেরই গাত্রদাহ আছে/ থাকে। বাইরের কেউ যে যাই বলুক ভাবুক কাছের মানুষদের চাপিয়ে দেয়া মতামত মানুষকে একা করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। “একা থাকা চরম ইনজয়েবল ”এই ফর্মুলায় সুখী হতে পারলে গুনগুনিয়ে গান গাওয়া-ই যায় 🙂
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
রোকসানা খন্দকার রুকু
ফর্মুলা চালু রইলো। শুভ কামনা ও কৃতজ্ঞতা রইলো।
ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
“আর তুমি অনেক সুন্দর। তোমার চোখের দিকে ঠিকমতো তাকালে পুরো পৃথিবী অন্ধ হবে, প্রেমে পড়ে যাবে। যেমন- আমি তোমার প্রেমে পড়েছি প্রথম দিনেই।”
সম গোত্রীয় প্রেম আপনার সাথে বেশ যায়/যাচ্ছে, ভালোই তো , চালু রাখুন এ শাখাটিও।
তবে এতে তো একলা চলা যাবে না।
নিখুঁত-সুন্দর বর্ণনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
যে কোন সম্পর্ক/ বন্ধুত্ব, প্রেম/ ভালোলাগা থেকেই শুরু হয়। আর এখানে কাউকে খুশি করার জন্য বলাই যেতে পারে!!!
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
পপি তালুকদার
আমাদের সমাজে এমন কিছু নারী আছে যারা সবসময় নিজের ও স্বামীর গল্পের মধ্যে থাকতে পছন্দ করে। না চাইলেও মাঝে মাঝে এদের সাথে মিশতে হয়।এ এক বাস্তব সত্য।গল্পটা ভালো লাগলো।
শুভ রাত্রি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা অশেষ। ভালো থাকবেন।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
যেন নিখুঁত চিত্রায়ণ।
এ দৃশ্য সমজের কিছু অংশ আজও দখল করে আছে।
সুচিন্তনে অনন্য সৃজন।
আন্তরিক শুভ কামনা জানবেন সতত।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা অশেষ। ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
এই সব পুরুষেরা বিয়ের আগে কি চোখ বন্ধ রেখে বিয়ে করে? বিয়ের পরে বউর রঙ নিয়ে এত চিন্তা না করে বিয়ের আগে করলেই হয়।
টিপস গুলো খুবই পছন্দ হইছে, এটি খুবই কার্যকরী এবং ফলপ্রসূ হতে পারে।
ভালো লেগেছে গল্প,
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা। শুভ কামনা রইলো।