
বউ ফোন দিয়েছিল রাত এগারোটায়। শুধু দেখেছি, রিসিভ করিনি। মনের ভেতর অনেক কথা জমা কিন্তু তাকে বলতে মন চাচ্ছে না। অভিমানে ফুলে আছি। ভেবেছিলাম তিনদিন কথা হয় না হয়তো আবারও ফোন দেবে। বউ বড্ড হিসেবী একবারের বেশী ফোন দিলে যেন তার ফোনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়। আমার তো মন চায় প্রত্যেক কাজের ফাঁকে তাকে ফোন দেই। কিন্তু তা করা যাবে না, বউ আদিখ্যেতা পছন্দ করে না।
গত পরশুদিন তাকে ঠিক এগারোটায় সবুজ বাতিতে পেলাম। নক দিলাম কিন্তু তার তেমন কোন সাড়া পেলাম না। বললাম, তোমার সাথে প্রেম করতে মন চায়। এতো রাতে কার সাথে প্রেম করো? বলে কি জানেন, নিজে নিজের সাথে। আমি আর কথা বাড়াইনি। বউ বেশি কথা বললে রেগে যায়। শুধু আশায় আশায় আমার সবুজ বাতিও জ্বালিয়ে রাখলাম। লাভ হলো না, বউ কখন যে বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়েছে আর জানা হয়নি।
রাগে গত দুদিন আমিও ফোন দেইনি। সেও খোঁজ নেয়নি। আমি কখন রাগ করি বা তাকে চাই তাতে তার কিছু এসে যায় না।
ও হ্যাঁ, আমাদের এখনও বিয়ে হয়নি। আমি অতি ভালোবেসেই বউ ডাকি! বিয়েতো হবেই বউ ডাকতে সমস্যা কি? আমি তো একশত ভাগ রাজী কিন্তু বউ কেন যেন কিছুই বলে না। হয়তো আমি এখনো নিজেকে তার যোগ্য করে তুলতে পারি নি তাই কিছু বলে না। বলে, তোমার কি এটাকে লাইফ বলে? কি জানি, আমি তো লাইফ কম বুঝি!
বউয়ের সাথে কথা না বলে খুব খারাপ লাগছে। খুব অস্থির লাগছে। বুকে কয়েকবার হাত বুলিয়ে দিলাম। মনে পড়ে গেল, এইতো কিছুদিন আগে বউ আমার এখানে এসেছিল। আমরা চুপিচুপি দেখা করেছিলাম। বউ কতোক্ষন শুয়েছিলো আমার বুকে। কি সুন্দর চুলের গন্ধ! যেন এখনও বুকে লেগে আছে। যে কদিন ছিলো কত্তো আপন। যেন আমরা কেউ কাউকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। বিদায় বেলায় মুখ মলিন করে চলে গেলো। আমার কিযে অস্থির লেগেছিলো। মন হয়েছিলো দৌডে গিয়ে আটকে বলি চলো বিয়ে করি। আমি গরীব কিন্তু তোমার জন্য আমার ভালোবাসা এক বুক। দুজনে ডাল- ভাত আধপেট খেয়ে বাকিটুকু না হয় চাঁদের জোসনা খাবো।
এ কথা বললে নির্ঘাত আমার পিটুনি হতো। সে আমার মতো এতো আবেগে চলে না। সমাজকে দেখাতে হবে একজন সমান সমান জীবন সঙ্গী, তার স্ট্যাটাস, জৌলুস দেখে লোকে ভডকে যাবে, তবেই না সংসার। দামী ফ্ল্যাট, বড়লোক বাপের টাকা, এসবই তো বউদের পছন্দ।ভালোবাসা সেখানে মূখ্য নয়। ভালোবাসা থাক বা না থাক এসবই জরুরী। আর এইসব জরুরী জিনিসের যোগান দিতে আমি কোনদিনই পারবো বলে মনে হয় না। আর আমার অতো সতো ভালোও লাগে না।
বউ ও এর জন্য মন কেমন করছে। এদিকে শব্দে ঘুমও আসছে না। করিম ভাই এই মধ্যরাতে চায়ের কেটলি নিয়ে ব্যস্ত। চা না খেলে তার নাকি ঘুম আসেনা। অন্য কারনও আছে, বাচ্চারা ঘুমিয়ে গেলে ভাবীর সাথে তিনি ফোনে গুটুর গুটুর করে প্রেম করেন। তারপর গুনগুন করে চা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
“ ও পাগল মন, মনরে মন কেন এতো কথা বলে,
আশি তোলায় সের হইলে চল্লিশ সেরে মন!
মনে মনে একমন না হইলে মিলবে না ওজন,
ও পাগল মন মনরে,,,,।
এই করিম ভাই ঘুমাইতে দাও। ‘হ হ ঘুমাও। পাগলা প্রেমে পরলে কি ঘুম আসে?’ পনের বছরের সংসার করিম ভাইয়ের। অভাবের কারনে ভাবী গ্রামে থাকে কিন্তু ভালোবাসা যেন মুখোমুখি।
ছাদের কোনায় ইঁদুরটা কি যেন কটর কটর করে কাটছে। এই পুরষ ইঁদুরটা প্রতি মাসেই কটর কটর করে। ঘর বানায় হয়তো। আচ্ছা ইঁদুরেরা কি দেখে প্রেমে পডে? টাকা না মন। যাহ্! এদের তো বাড়ি- ঘর, টাকা- পয়সা কিছুই লাগে না।
শুধু যৌবন প্রাপ্ত হবার পর এই প্রাণীরা সঙ্গী বেছে নেয়।তারপর একসাথে আমৃত্য কাটায়। একজন মরে গেলে অন্যজন বাকিজীবনএকাই কাটায়। আমাদের মানুষের মতো এতো কিছু লাগে না। শুধু ভালোবেসেই প্রতিজ্ঞা করে। তারপর প্রতি মাসে কটর কটর করে ঘর বানায়। সংসার করে, বাচ্চা হয়।
গতমাসে করিম ভাই ইঁদুর দম্পতির বাসা ভেঙ্গে দিয়েছে। লেংটা ছোট ছোট ছটা বাচ্চা। টিপে টিপে মেরে ফেললো। আমরা মানুষরা কতো সহজে হত্যাকারী। অথচ আমরাই নাকি সৃষ্টির সেরা।
এরপর ইঁদুর দম্পতি অনেকদিন সাড়া শব্দ করেনি। হয়তো একে অপরকে জডিয়ে চুপি চুপি কেঁদেছে। ভালোবাসায় শোক ক্ষনস্থায়ী তাই আবার শুরু হয়েছে তাদের ঘর বানানো। এবার আমার ঘরে। বুঝতে পেরেছে বোধহয় মন ভাঙ্গা মানুষের কাছেই আশ্রয় নিতে হবে।
ও বৌয়েরা, তোমাদের এতো লোভ কেন? তোমার বাবার কিছু থাক বা না থাক মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে, ভিক্ষা করে তোমাদের বাবারা যৌতুক দিয়ে লোভী ভাড়া করে। ভালোবাসার বদলে সারাজীবন সে তোমার ভাড়াটে হয়ে কাটায়। তোমাকে ভালো না লাগলেও শরীর ব্যবহার করে। শরীরের ভাঁজে ভাঁজে টাকার গন্ধ খোঁজে। তুমি প্রাণ দিয়েও প্রমাণ হয় না। কোন একদিন লালসায় লাশ হও!
এত দামী ফ্ল্যাট, চকচকে চেহারার বাবার টাকাঅলা দুশ্চরিত্র লম্পট ভালো লাগে কেন তোমাদের? আমার মতো খাঁটি প্রেমিক খোঁজ? যার বিশাল বুকে শুধুই ভালোবাসা। লাম্পট্য সেখানে অনুপস্থিত। কোনদিন তোমাদের লাশ হয়ে ঝুলতে হবে না। দেশ বাসী তোমার চরিত্র হনন করবে না। তোমাকে রক্ষিতা বলবে না।
ও হ্যাঁ, আমার মতো বউ বলার সৎ সাহস এদের নেই। এরা কাপুরুষ তোমাকে বউ স্বীকৃতি দিতে পারার ভয়ে ফ্যানে লটকিয়ে দেবে। তোমার মৃত্যু চিৎকারে নৃত্য করবে। আনন্দ করবে তার সহচরদের নিয়ে। তারপর তোমাকে ফেলে ভিনদেশে পাড়ি জমাবে।
আর আমি তোমার দিকে কেউ চাইলে তার চোখ উপরে ফেলবো। তোমাকে কেউ সামান্য কটুক্তি করলেও আমি তার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হব। তোমাকে স্বীকৃতি দিতে আমার কোন ভয় নেই!
আজ এই লম্পটরা দামি কেন জানো, তোমাদের জন্য! তোমরাই এদের দামী বানিয়ে তুলেছ। অথচ এরা মেধাহীন শরীর সর্বস্ব। হয় নিজের বাবার টাকায় চলে নয়তো তোমার বাবার টাকায় চলে। আমার মত হাঁডভাঙ্গা খাটুনির পরও হাসিমুখে বলতে পারে না “আমি তোমার পাশে আছি বউ তুমি নিশ্চিন্তে চলো। তোমার রাস্তা নির্ভার, তুমি স্বাধীন। এই পুরো পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য তোমার। আমি তোমাকে দামী কোনকিছুতে আটকে রাখবো না। তুমি আমার রক্ষিতা নও, তুমি আমার সম্মান।”
ছবি- নেট থেকে।
১৪টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
প্রেম এখন খুব ই ‘মানবিক’ এবং ‘ব্যক্তিগত’ ও বটে!
গল্পের দেখা সাক্ষাত কী লিটনের ফ্লাটে চলে!!
রোকসানা খন্দকার রুকু
ছি ছি তিনি নাকি ভাসুর! ভাসুরের নাম মুখে নিতে নেই! অসম্মান হয়।
ফয়জুল মহী
আজ এই লম্পটরা দামি তোমাদের জন্য! তোমরাই এদের দামী বানিয়ে তুলেছ। অথচ এরা মেধাহীন শরীর সর্বস্ব। হয় নিজের বাবার টাকায় চলে নয়তো তোমার বাবার টাকায় চলে। আমার মত হাঁডভাঙ্গা খাটুনির পরও হাসিমুখে বলতে পারে না “আমি তোমার পাশে আছি বউ তুমি নিশ্চিন্তে চলো। তোমার রাস্তা নির্ভার, তুমি স্বাধীন। এই পুরো পৃথিবীর সকল সৌন্দর্য তোমার। আমি তোমাকে দামী কোনকিছুতে আটকে রাখবো না। তুমি আমার রক্ষিতা নও, তুমি আমার সম্মান।”
অসাধারণ কথামালা ! শুভ কামনা অন্তহীন…
রোকসানা খন্দকার রুকু
অসংখ্য ধন্যবাদ মহী ভাই। পাশে থাকবার জন্য।
মনির হোসেন মমি
চমৎকার গল্পে বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরলেন।আসলে তাই মানুষ এতো লোভী কেন বুঝিনা ।আর কী বলব আপনিতো সব বলে দিয়েছেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য। শুভ কামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
লোভে পরে ভালোবাসা গুলিয়ে ফেলে।
কিছু করার নেই। টাকার যুগ। পাল্লার একপাশে প্রেম আর একপাশে টাকা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা অশেষ। শুভ কামনা রইলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্পের নায়ক মনে হয় ডিজিটাল প্রেমের কিছুই জানে না। বেচারা এইটাও বুঝলো না এত কড়কড়ে কঠিন বাস্তবতা শুনিয়ে দিলে ভবিষ্যৎ বউ দৌড়ের উপ্রে থাকবে। ইনিয়ে বিনিয়ে পামপট্টির তেলেসমাতি দিয়ে প্রেমিকাকে বউ বানাতে হয়।
ইয়ে, আমারও প্রশ্ন- এত সৎ পবিত্র প্রেমিক তার প্রেমিকা, মানে অবিবাহিত বউয়ের সাথে নিরিবিলি কয়েকদিন কেম্নে পার করলো! সেই সময় কি তার বিবেক-বাহাদুর লকডাউনে ছিলো!?
রোকসানা খন্দকার রুকু
“এইতো কিছুদিন আগে বউ আমার এখানে এসেছিল। আমরা চুপিচুপি দেখা করেছিলাম। বউ কতোক্ষন শুয়েছিলো আমার বুকে। কি সুন্দর চুলের গন্ধ! যেন এখনও বুকে লেগে আছে।”
চুপিচুপি দেখা করা আর চুলের গন্ধ অন্যকিছু নয়। হয়তো ঠিকঠাক বোঝাতে পারিনি। ভাই আপনাদের মতো হাত এখনও পাকেনি। ম্যাসেজ ছিলো মেয়েরা অতিরিক্ত চাওয়ার জন্যই বিপদে পড়ে। যা হোক ফেল মারলাম। গল্প লেখা শেষ।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অতিরিক্ত কোনো কিছু ই ভালো না। বেঁচে থাকার জন্য, একটু ভালো থাকার জন্য টাকার অবশ্যই দরকার সেটা যখন ‘অতি’ যুক্ত হয়ে যায় সমস্যা তখনই সৃষ্টি হয়। এটা ঠিক নারীরাই এসব পুরুষকে মহামূল্যবান করে তোলে নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে। চমৎকার গল্প, বাস্তবতা তুলে ধরার জন্য দারুন পন্থা উপস্থাপন করেছেন। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিদের মতো লোকদের শিকার মেয়েরা কেন হয় অতি উচ্চাভিলাষ। বেশী ভালো থাকার চেষ্টা। সহজ- সরল ছেলেদের পছন্দ না করা।
আপনি ঠিক ধরতে পেরেছেন! ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো দিভাই।
রেজওয়ানা কবির
কঠিন বাস্তবতা, আমার দেয়া সব মন্তব্য উপরে অনেকেই দিয়ে দিয়েছে, আমি শুধু ইঁদুরদের কথা বলি,ইশ! কি ভালো তাদের জীবন, কত ভালোবাসা তাদের একজন মারা গেলে আরেকজন আজীবন একা কাটায়, ইশ! মানুষ ও যদি এমন হত,এরা প্রতি মাসে কুটুর কুটুর করে?ঘর বানায়,,,,?ইঁদূর কাহিনী ভালো লাগল,আর মেসেজ সবতো তুমি তুলেই ধরেছো,শুভকামনা আপু।।।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ও অশেষ কৃতজ্ঞতা যে তোমার ভালো লেগেছে।
শুভ কামনা রইলো।