
বাবার কাছে একটা লোক আসে প্রায়ই। জেনেছিলাম, তিনি জেলার অন্য উপজেলার মানুষ। আরো জেনেছিলাম, জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাকে একটা ভুল খবর প্রকাশিত হওয়াতে, তিনি তার সংশোধনী প্রত্যাশায় তথ্য উপাত্ত নিয়ে হাজির হয়েছেন, বাবা যেনো কাজটা করে দেন। সাধারণত বাবার কাছে আসা অধিকাংশ মানুষ চেনা জানা। এ যুবককে অচেনা লাগছে। ২/৩ দিন পরপর আসছেন দেখে বাবাকে জিজ্ঞেস করাতে বাবা সবটা বলেছিলেন। যুবক বাবার দারুণ এ্যাডমায়ার হয়ে গেলেন কয়েকদিনেই টের পেলাম। যুবকের নিজ বাড়ির গাছের ফলফলাদি, মায়ের হাতে বানানো রান্না করা খাবার, পিঠাপুলি লম্বা টিফিন ক্যারিয়ার ভর্তি করে নিয়ে আসেন। সেদিন আমার বিস্ময় ছিলো তুঙ্গে। এত কেন রে বাপ!! ছোট দুই ভাইও দেখি একদিন সন্ধ্যার পরে বেশ পটে গেছে যুবকের গালভরা গল্পে। বান্ধবীর বাসা থেকে ঘরে ঢুকতেই সামনে পরে গেলাম একদমসে! তিনি আমার দিকে তাকালেন একেবারে উদ্দেশ্য মূলক ভাবে। যেন তিনি আমার পরিচয় আমার মুখ থেকে জানতে চান, তোয়াক্কা করলাম না। হয়ত তিনি বুঝে গেছেন। এবং গলায় জোড় টেনে গল্পের হাল ধরলেন সোৎসাহে আবারো। খেয়াল করলাম, তিনি তার বীরত্ব গাথা শোনাচ্ছেন আমার ভাইদের। কিছুদূর শোনার পর আমি আচমকা প্রশ্ন করলাম– ” আপনি রাজনীতি করেন? এম্মা!!! তিনি যেন আকাশে অমাবস্যায় চন্দ্রের আলো দেখতে পেলেন। ভাবখানা এমন করে খলখলিয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বিগলিত হওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। তার এই বিগলিত ভাবখানা আমার সেই ১৭ থেকে ১৮ য় উত্তীর্ণ বছর বয়সী চৈতন্যে বড্ড ধাক্কা দিলো একখানা। কেমন সে ধাক্কা?
ব্যাপারটা এরকম,– ২৫/২৬ বছরের কোনো যুবক এমন ছ্যাবলার মত বেশি কতা কইবে ক্যা? বা পাককলামীপনা দেহাইবে ক্যা? আমি ব্যক্তিত্ব বলতে আইডল মনে করি আমার পিতাকে। আমার চোখ তাঁকে দেখেই বাড়তে শিখেছে চোখের সীমানা। সে যাই হোক।
যুবক প্রগলভা হয়ে ছাত্র রাজনীতির কারন এবং তৎসংলগ্নিয় জড়িয়ে পড়ার কাহিনী ব্যাখা করতে আঁটঘাট বাঁধতে শুরু করেছেন কেবল, আমি দিলাম তাতে জল ঢেলে– ” আসলে আমি রাজনীতি বুঝিও না, আর পছন্দও করিনা। তারওপর আবার ছাত্র রাজনীতি, তো আরো পছন্দ হয়না। এই রাজনীতি করেই ছেলেগুলো জড়িয়ে পড়ে নানারকম কাণ্ডকারখানায়। তারপর সেশনজট তো আছেই।” চক্ষু দুইডা দেইখা মনে হইলো বেলুনে কেউ সুঁই ফুটাইয়া দিছে।
গটগট করে পড়ার ঘরে চলে গেলাম। এরপর আর তেমন সামনে পরি নাই যুব নেতার। বেশ কিছুদিন বাদে টেলিফোন ধরতে বাধ্য হতে হয়েছিলাম। সালাম আদান প্রদানের পরে জানতে চাওয়া সাংবাদিক সাহেব আছেন কিনা? আমার খুব রাগ লাগতো যদি কেউ সকাল ১১ টার পরে ফোন দিয়ে বাবা বাসায় আছেন কিনা জানতে চাইত। কেন রাগ লাগতো? এটা একটা বেকুব টাইপ প্রশ্ন না? আরে !!! সবাই জানে চাঁদ সাহেব সাংবাদিকতার পাশাপাশি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এই সময়ে তাঁকে বাসায় কল করলে পাওয়া যাবে? আমি তেমন ভাবেই উত্তর দিলাম– এই সময়ে আব্বা বাসায় থাকবেন আপনি বুঝলেন কি করে?” :
সরি?? বুঝলাম না, কি বললেন?
মর জ্বালা? বাংলায় কইলাম, তাও কয় ” সরি, কি বললেন?” রাগ এবার চেপে রেখে বললাম-” আব্বা এখন স্কুলে, আপনি স্কুলের নাম্বারে কল করতে পারেন জরুরী দরকার হলে। ”
বাড়তি কথার সুযোগ না দিয়েই খটাস করে রিসিভার নামিয়ে রাখলাম। দু’মাস পেরিয়ে গেছে, আমার ছোট বোনটা হার্ট ডিজিজের দুরারোগ্য ব্যাধিতে দীর্ঘদিন ভুগে এ পৃথিবী থেকে আমায় একা করে ছেড়ে চলে গেছে। বাসায় শোকের আবহ। শুভ চলে যাবার ৬/৭ দিন পরে যুবক এলেন একদিন স্যারকে খুঁজতে। দুর্ভাগ্য বলবো না কি বলব বুঝি নাই। পরবি তো পর আমার সামনেই। –” অ– আপনি? : জি, স্যার নেই?– না, বাসায় নেই তো এখন! : ভাবি? ভাবির সাথে একটু দেখা করতাম! — আম্মার সাথে তো এখন দেখা করাই যাবে না। আমার ছোট বোনটা মারা গেছে আজ ৬/৭ দিনের মত হলো। আম্মা এখনো স্থির হতে পারছেন না। ” বলতে বলতে আমার চোখে পানি। ব্যাটা সেসবে খেয়াল না কর আৎকা আরেক খান কোয়েশ্চেন করে বসলেন , আমি এইবার ঠাডা খাইলুম বেসোম্ভাব! এ ব্যাটারে তো পেরথম দিনেই বেকুব ঠাওর করছি! আইজকা তার হাত্তেনাত্তে পেরমান পাইলাম, কেমনে?? : আপনি কি বললেন? — আমার ছোটবোন মারা গেছে!! : না না ,সেটা না, আপনি স্যারের কি হন? আর স্যারের ওয়াইফকে কি বলে সম্বোধন করলেন? এ ব্যাটা কানে ঠসা নাকি? আমি যথেষ্ঠ শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলি। তারওপর টুকটাক কবিতা পাঠ করি তখন সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামগুলোতে। যথেষ্ঠ সাউন্ড সিস্টেমও ভালো আমার গলার। তো বেকুব ব্যাটার আমাকেই বার বার প্রমাণ দেয়ার কি দরকার? যে বেকুবি প্রদর্শন করিতে হইবে? ততোধিক স্মার্টনেসের সাথে এবং সুযোগ যখন পাইছি, ব্যাটা তরে আরেকটু বেকুবের পানি খাওয়াই আর কি! — শামসুল ইসলাম চাঁদ স্যারকে আব্বা বললাম, আর তাঁর ওয়াইফকে আম্মা বলে সম্বোধন করলাম। আপনার কোনো সমস্যা?” এরপরও বেকুব ব্যাটা বেকুবির চুড়ান্ত না করে ক্ষান্ত হলেন না। : আল্লাহ্……. আপনি স্যারের মেয়ে? মানে ভাবির মেয়ে? আমার ১৭ থেকে ১৮য় উত্তীর্ণ বচ্ছরের চোখ তখন ২৫/২৬ বচ্ছরের বুইড়া দামড়া ব্যাটারে লক্ষন দাস সার্কাসের রঙ মাখা বেটে খাটো কিম্ভূত কিমাকার জোকারের মত লাগতেছিল। তাতে আরো এক লহমা বেকুবের রঙ চড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলেন…..: বিশ্বাস করুণ, আমি ভাবছিলাম আপনি স্যারের শালী হবেন হয়ত, আপনি যে স্যারের মানে- ভাবির মেয়ে! আমার ধারণাতেই ছিলো না । আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না”। এই বেকুব ব্যাটার সামনে আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করার মানে হলো , নিজেকে বেকুব বানানো। দুই ভ্রূর মাঝখানে যথাসম্ভব চামড়া টেনে এনে শ্যেন একখানা দৃষ্টি নিক্ষেপিত করে আমি সামনে থেকে চলে গেলাম।
এর কিছুদিন পর থেকে তিনি উঠে পরে লাগছেন আমার বিয়ের ঘটকালি নিয়ে। আমার মাকে পটিয়ে ফেলেছেন মোটামুটি, পাত্র বিশাল বড়লোক। ঢাকা শহরে পাত্রের বাড়ি গাড়ি আছে। পাত্র একবার মেয়ে দেখতে চায়। কিভাবে দেখানো সম্ভব? পাত্র অতি ব্যস্ততার কারণে এখানে আসতে পারবেন না। ভালো হয়, মেয়েকে নিয়ে ঢাকা গেলে। আমার কানে কথাটা যাওয়ার পরে, আমি বললাম, এত্ত বড়লোক পাত্র গরীব স্কুল মাস্টারের মেয়ে পছন্দ করবেন কেন? সে যাই হোক। মা বাবার সামনে বেশি/ কম কোনোরকম তর্ক বা প্রতিবাদ করার দুঃসাহস ভাবাই যায়নি। ঢাকায় যাবার প্রোগ্রাম ঠিক হলো হুট করেই। ছোট খালার সাথে আমি বেড়াতে ঢাকা এলাম। খালার তখনও ল্যান্ডফোন নেই। বাসা থেকে একটু দূরে এক প্রতিবেশী খালার বাসার ফোন ব্যাবহার করেন ছোট খালা প্রয়োজনে। খুব কাছের দু একজনকে নাম্বারটা দিয়েছেন প্রয়োজনে জরুরী যোগাযোগ করার কারণে। খালার বাসায় ৩/৪দিন অবস্থানের এক পর্যায়ে একদিন সেই বাসা থেকে খবর এলো, একটা ফোন এসেছে খালার বাসায় বেড়াতে আসা লিপি নামে কারো! স্বভাবতই খালা এবং আমার আক্কেল গুড়ুম হবার কথা। হলোও তাই। মা ও যদি ফোন করে থাকে বরিশাল থেকে তো লিপি’র কথা বলবে না। খালার নাম বলবে। লিপির ফোন আসতে পারে এটা অস্বাভাবিক। আমার ছোট খালা দারোগার দারোগা স্বভাবে। জন্মের ডরান ডরাই হের দারোগার লাহান ব্যাবহারের। কপাল কোঁচাকাইয়া, আমারে জিগাইলো, ” তুই কেউরে মুন্নিগো ফোন নাম্বার দিয়া আইছো নাহি?” আমি তহন যে উত্তরই দিইনা কেন তা বিশ্বাসযোগ্য হবার মত যথেষ্ঠ উত্তর আমার কাছে বড় শর্ট পরে যাচ্ছে। আমার একটা স্ট্রাটেজি আছে জন্মের দোষে। সেটা হলো সত্যতা। সেই সত্যতা যখন উচ্চারন করার সময় আসে তখন আমি ভীষণ সাহসী হয়ে উঠি। একেবারে জন্মের ঘাউড়া হয়ে উঠি। গলার আওয়াজ ডেসিবলের স্কেলে সর্বোচ্চ মাত্রায় নিশান ওড়াতে প্রতিপক্ষের দারোগাগিরি জোকের মুখে নুন পড়ার মত হয়। — ” মুন্নি আপাদের ফোন নাম্বার আমি জানি? খালাঃ তয় তোরে ফোন করবে কেডা?– হেয়া তো আমারো প্রশ্ন! চলেন আগে দেখি, আবার ফোন করলেই তো জানা যাবে! ৩ মিনিটের রাস্তা পেরিয়ে ফোনকল রিসিভ করলাম। যথারীতি সালাম আদান প্রদান শেষে, বোঝা গেলো….. এতো সেই বেকুব যুবক!!!! কাহিনী কী? নাম্বার দিলো কো তাঁকে? ঐ যে বলেছিলাম মা”কে পটিয়ে ফেলেছিলেন বড়লোক পাত্রের খোঁজ দিয়ে। মাস্টার মশাইর ওয়াইফ একমাত্র মেয়েকে বড় লোক পাত্রের পছন্দ হওয়ার আশায় আশান্বিত হয়ে ফোন নাম্বারটা দিয়েছেন এই বেকুব যুবককে। তায় আবার অলিখিত দেবর বলে কথা!! ডাকে তো ভাবি নাকি!! তো হিসেব মোতাবেক ভাস্তির বিয়ের এত ভালো চিন্তা করছে দেখে ফোন নাম্বার দেয়াটা নিশ্চয়ই দোষ করেন নি একজন মা!! আমি তো আমি! ডাইরেক্ট এ্যাকশন নিতে চাঁচাছোলা প্রশ্নবাণ– আপনাকে নাম্বার দিলো কে? তথাকথিত বেকুব চাচা(?) ক্যালাইবার লাগছে অন্য সুরে। তোর ক্যালাবার…….? খালার কাছে রিসিভার হ্যান্ডওভার করলাম। খালাকে বিস্তারিত কিছু বললেন। ঠিকানা চাইলেন। বাসায় আসবেন। এবং আবারো ফোনে আমাকে চাইলেন। কপাল কুঁচকে রিসিভার কানে নিলাম….ঃ আপনি কি রাজি আছেন? আমিঃ কিসে রাজি থাকবো? ঃ আমি আপনাকে নিতে আসব। আমার বন্ধুও থাকবে সাথে।আমরা একটু ঘুরতে বেরোব, তারপর কোনো রেস্টুরেন্টে কিছু খাওয়া দাওয়া করলাম। তারপর আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেব! সিরিয়াসলি!!!!!!!!!! আমার মুখে ভাষা, শব্দ কণ্ঠনালী সব স্তব্ধ। বিমূঢ় হয়ে গেছি ব্যাটা বেকুবের দুর্দান্ত পরিকল্পনার ফিরিস্তি শুনে। আমার চোখ আটকে আছে ছোট খালার দিকে। সে চোখে আগুন ঠিকরে বেরোচ্ছে। খালা ইশারা দিচ্ছে সংযত হয়ে কথা বলতে। আমিঃ আপনি আগে বাসায় আসেন। তারপর দেখি কি করা যায়। হঠাৎ বেকুব যুবক উচ্চারন করলেন, ” আপনাকে না!!!আপনি….আপনি….ঃ কি হইছে আমার? কি আপনি আপনি করছেন?ঃ আপনি বোঝেন না? আমিঃ আরে আশ্চর্য!! কি বলতে চাচ্ছেন তাইতো বুঝতেছি না!! বেকুব যুবক ফোন কেটে দিলেন।
সম্বোধনে মা’কে ভাবি আর বাবা’কে ভাই, দাদা, ডেকে যারা অনাত্মীয়র আওতায় আত্মীয় হয়েছেন এমন সংখ্যা শহর জুড়ে ছড়াছড়ি।এবং সত্যিকার অর্থে চাচা ফুফুর সংখ্যায় আমার ভাই বোন বন্ধুর তালিকা সেখানে খুবই খাটো। অবধারিত ভাবেই সবার শাসনীয়, কড়া নজরের আওতায় নিরাপদ বিচরন ছিলো আমার কিছুটা হলেও ছিলো স্বস্তির। নিশ্চিত একটা ভাবনা ছিলো, আমার সাথে তেড়িবেড়ি করার সাহস কেউ দেখাবার সাহস পাবে না। ৫/৬ মাস ধরে এই বেকুব যুবক যাতায়াত করছেন আমার বাসায়, অথচ আজ এ কি বলছে??? কিছুক্ষণের মধ্যে আবারো ফোন, মুন্নি আপা রিসিভ করে কেমন কেমন চোখে আমার দিকে রিসিভার বাড়িয়ে দিলেন। ছোটখালারও চোখ কুঁচকে গেছে ইতিমধ্যে। আমার তো কথাই নেই……রিসিভার কানে ঠেকালাম: আবারো সেই একই কথা…..আপনাকে না……… (?) আমিঃ জি, বলুন আমাকে কি? ঃ আচ্ছা পরে বলবো। আমি আসলে আপনি আমার সাথে আসবেন তো? না হলে এতদূরে আসবো কেন?
আমিঃ আপনি আগে আসেন তো! আমার খালারে কনভিন্স করেন, তারপর দেখা যাবে। তিনি এলেন ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে বলে দেয়া ঠিকানা ঠিকঠাক চিনে চিনে। হাতে করে একগাদা রাজশাহীর লিচুও নিয়ে এলেন। বেচারাকে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেখে আমার হাসি পাচ্ছিলো, ভ্যাবলাকান্তের চেহারা বুঝি এমনই হয় দেখতে? মনে মনে হাজারটা ভাষা রেডি করছি কি বলে তাঁকে তিরস্কার করা যায়! কোনোটাই মনঃপুত হচ্ছে না। খালার সাথে মোটামুটি ফিরিস্তি দিয়ে যাচ্ছেন। বিবাহ যোগ্য পাত্রের। দারোগা খালা আমার নির্বিকার ভঙ্গিতে সব শুনছেন। তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন, – একটু তারাতারি রেডি হন, আমার বন্ধু অপেক্ষা করছে গাড়িতে মেইন রাস্তায়। খালা এবং আমি যারপরনাই অবাক হলাম। আমিঃ আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনার বন্ধু এসেছেন আপনার সাথে? : হ্যাঁ, গাড়িতে অপেক্ষা করছে। আমি এবং খালা দুজনেই জোড় দিলাম, তাঁকে নিয়ে আসার জন্য। বললেন, সে আসবে না। বরং আপনি(আমাকে) একটু তারাতারি রেডি হয়ে আসুন। আমিঃ আগে আপনার বন্ধুকে খালার সাথে দেখা করতে নিয়ে আসেন। তারপর রেডি হই😊 বেকুব যুবক বের হলেন বন্ধুকে নিয়ে আসতে। আমার এবং খালার যথেষ্ঠ সন্দেহ, তিনি আসলে ঘোরাঘুরি করেই ফিরে এসে বলে দিয়েছেন, গাড়ি ছেড়ে আসা যাবেনা বলে তিনি আসেন নি। পাত্র সাহেব নিজেই ড্রাইভারের কাজটা করছিলেন বলে বোঝালেন। খালা আমাকে বুঝিয়ে দিলেন যা বলার আমিই বলব, খালা কিছু বলবেন না। খালার অবশ্যই সঙ্গত কারণেই আপত্তি আছে আমাকে এভাবে ঘুরতে পাঠাতে অচেনা আত্মীয়ের সাথে। খালার আপত্তি তো পরের কথা! আমি খালা আপত্তি না তুললেও ড্যাঙড্যাঙ করে বেরোব এই বেকুব যুবকের প্রস্তাবিত পাত্রের দামী গাড়িতে ঘুরতে? তাও এই বেকুবটা যখন সব নাটের গুরু জেনেও? সরাসরি প্রশ্ন করলাম এবার –” আপনি আমার বাবাকে চেনেন?” বেকুব আরো বেকুব হয়ে গেলো! : এ কথা কেন বলছেন?
— আচ্ছা, বাদ দেন, আপনি যেন কি বলছিলেন ফোনে? আমি কী? ” আপনাকে না….!” বলে কথা শেষ করেন নি। এখন শেষ করেন। কী বলতে চাইছিলেন? ক্যাবলায় দেখি টম্যাটোর আকার ধারণ করলেন! তিনি বললেন, : সেটা না হয় বাইরে ঘুরতে গিয়ে বলা যাবে! আপনি চলুন তো আগে!
— আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনাদের সাথে ঘুরতে বেরোব আপনি বললেন বলে? আপনি তো এখন পর্যন্ত আমার বাবাকেই চেনেন নাই। আমারে চিনবেন কেমনে? আমার বাবারে চিনলে তো আপনি এইরকম প্রস্তাব করার সাহসই করতে পারতেন না! আমি অবাক হচ্ছি যে শুধু তাইনা! আমি ভাবছি আব্বা কী জানে যে আপনি এইরকম ভেবেছেন পাত্রকে আমাকে দেখানো ব্যাপারে? আমার মায়ের কথা বাদই দিলাম।
: আমি আসলে এতকিছু ভাবি নাই
— ভাবা উচিত ছিলো না কী?
: তাহলে আপনি যাচ্ছেন না?
লও ঠ্যালা! এরপরও কোশ্চেন করে ” তাহলে আপনি যাচ্ছেন না” হা করে চোখ দুইটা যথাসম্ভব ইয়াব্বড়ো বানাইয়া তীব্র অপমান সূচক ভঙ্গিতে তাকালাম বেকুব যুবক ওরফে অনাত্মীয় আত্মীয় চাচার দিকে!!!
: তাহলে উঠি আমি। আমি হাঁফ ছাড়লাম। খালার ননদ থাকতো খালার বাসায়। বেকুব যুবক বেরিয়ে যাবার সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরো হাসিতে ভেঙে পড়লো। খালা ঠোঁট টিপে হাসছেন। খালার ভাষ্য–” এ ব্যাক্কলডা জোটছে কোতাইদ্যা?”
বেকুব যুবকের আসলে সাধ ছিলো স্যারের পরিবারর সাথে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরী করার। তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন স্যারের মেয়েকে শালী ভেবে, আর তারপর তার চিন্তা ধাবিত হয়েছে কোন পথে আল্লাহ্ মালুম। দুবছর বাদে ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে লঞ্চে যাচ্ছি। আমি তখন গর্ভবতী। কেবিনের বাইরে ডেকের চেয়ারে বসে ছোট দেবরের সাথে কথা বলছি। পেছন থেকে এক উৎসুক ভদ্রলোক আওয়াজ দিলেন— আরে আপনি?? ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। : আমাকে চিনতে পেরেছেন? দুই চোখের মাঝখানের চামড়ায় ভাঁজ, ঠোঁটের কোনে না চিনতে পারার সলজ্জ হাসি টেনে রেখে চুপ আছি। সে প্রশ্ন করলেন আবারো, এরপর নামটা বললেন – যথারীতি আমার প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তন এলো স্বাভাবিক ভাবে। ইনিয়ে বিনিয়ে বকরবকর করার উৎসাহ দেখাচ্ছেন আমি বিরক্ত হচ্ছি। আমার বর কি করেন, কোথায় থাকি, শর্টকাট জবাব দিচ্ছি বোঝাতে যেন উৎসাহ হারিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। এরপর আর কখনো এই বেকুব যুবকের সাথে আমার দেখা হয়নি বা বাবার বাসাতেও দেখা যায়নি।
এই দীর্ঘ লেখা লেখার কারণ কি? কারণ হয়ত তেমন বড় কিছু না। অনাত্মীয় আত্মীয় হয়ে ওঠে আমাদের নিজেদের আত্মার টানেই। সম্পর্কের মর্যাদা রাখতে হয় সম্মানের সাথে। মোটিভেসনাল স্পিচ আমি যেমন সহ্য করতে পারিনা তেমনি দিতেও পারিনা। ডাকাডাকিতে যদি সম্পর্ক গড়ে ওঠে তো তার গভীরতা বোঝা নিজ নিজ মানসিক বোধের প্রজ্ঞাময় স্থান থেকে। গোধূলী স্বপ্নের একটা মন্তব্য আমাকে এই বিষয়টা নিয়ে ভাবালো। এটা ব্লগ। এখানে আমরা যারা বিষয় ভিত্তিক লেখা দিই, তারা সকলেই লেখক। একে অন্যের লেখা পড়ি, পড়ার পরে পাঠ পরবর্তী অনুভূতি জানাই মন্তব্যে। মন্তব্য এবং প্রতি মন্তব্যের সংস্কৃতি চালু থাকাতে আমরা একে অন্যের ভাই বোন ফুপু চাচা কতকিছু সম্পর্ক পাতিয়ে ফেলেছি এই সোনেলার উঠোনে। মন্তব্যের আঁচে বিতণ্ডাও জড়িয়ে পরেছি অনেক সময়। কারো মন্তব্য পছন্দ হলোনা বলে শব্দের তুবড়িতে চলেছে একে অপরের প্রতি বিরাগভাজনের মত অবস্থা। বাদ দেই এখন এসব। একজন লেখকের লেখায় মন্তব্য করুণ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। বিচারে। লেখা পড়ে আপনার চেতনা কি বলছে সেটা সম্পূর্ণ কখনো কখনো শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব না। যেটুকু বুঝলেন সেটুকু থাকনা আপনার সঞ্চিত জ্ঞানের ভাণ্ডারে! মন্তব্য করুণ লেখাটা কতটুকু মার্জিত হলো, বা লেখার বিষয়ে আপনার মূল ভাবনা কি? সবসময় লেখার পোস্টমর্টেম করেই মন্তব্য করতে হবে এমন তো নয়!
# মনোমুগ্ধকর লেখা
# পড়ে মুগ্ধ হলাম
# সৃজনশীল লেখা
# লেখা পড়ে ভালো লেগেছে
প্লিজ দোহাই লাগে আপনাদের। এ ধরনের মন্তব্য ব্লগে বেমানান। ব্লগে লেখা নিয়ে আলোচনা হবে, লেখার গঠনশৈলী নিয়ে সমালোচনা হবে, লেখার বিষয় নিয়ে তর্কও হতে পারে শুধুমাত্র রহনসহন পর্যায়ে। আমি তর্ক বা সমালোচনা নিতে পারলাম না বলে ব্লগে আর আসবোই না, আর লিখবই না, এমন তো হওয়া উচিত না। লেখা পোষ্ট করার পর মন্তব্য গুণে গুণে লেখকের জনপ্রিয়তা নির্ধারন করা মনোভাব ছাড়ুন সবাই। আমার লেখাটা সপ্তাহের শীর্ষে থাকতে হবে ভেবে বার বার রিফ্রেস দেয়ারও মনোভাব ছাড়ুন। আপনি লিখতে পারছেন এটাই আপনার যোগ্যতা। আপনার লেখা কেউ আগ্রহ নিয়ে পড়ার অপেক্ষা করছে, এটাই আপনার এ্যাচিভমেন্ট। আপনার মন্তব্যও মূল্যবান আপনার লেখার মত। সে মন্তব্য যদি আপনার সৃজনশীল মনের পরিচয় দিতে ব্যার্থ হয়! তাহলেও সোজাসাপ্টা বলে ফেলুন। এখানে আত্মীয়তার খাতির করবেন না কাউকে। আমরা একে অন্যের সহযোগী, সহ-ব্লগার আমারটার সাথে সাথে আপনার লেখার প্রতিও আমার দায়িত্ব আছে লেখাটা কতটুকু আমার বোধ স্পর্শ করলো, আর সেটা থেকে আমি কি শিখতে পারলাম বা লেখাটায় আরো একটু কি যোগ বিয়োগ হলে লেখাটা আরো বেশি মার্জিত মানসম্পন্ন হতে পারতো। প্রতিটি লেখাই হতে পারে মন্তব্যের হরে লেখার রিভিউ।
সবশেষে বলবো অনাত্মীয় আত্মীয় হয়ে উঠতে সময় যেমন লাগে না। তেমনি আত্মীয় অনেক সময় ব্যাবহারের যথেচ্ছাচারে বিবর্জিত সম্পর্কের খোড়া পঙ্গুত্ব বহন করে। লেখকের আত্মীয় লেখকই হতে পারে লেখার পর্যালোচনা ভিত্তিক মন্তব্যের মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে একে অন্যের মন্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব ধারণ করাাও পরিশুদ্ধ মননশীলতার পরিচয়।
আমরা আমরাই তো!!
শুভস্য🌹🌹
শুভ ব্লগিং
২৬টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
অর্ধেক পড়েছি তাই অর্ধেক মন্তব্য
মেয়েরা ছেলেদের বোকা বানাতে সব সময় ওস্তাদ।
বাকী দিব মন্ত্য পইড়া লই…
বন্যা লিপি
প্রথম মন্তব্যের জন্য এত্তগুলা 🌹🌹🌹🌹🌹🌹ফুল আপনার জন্য। পুরাটা পড়ে ভালো করে মন্তব্য করবেন। এটাই আশা করছি😊
মনির হোসেন মমি
পুুরো লেখাটাই পড়লাম।প্রশংসা নয় গর্বিত সোনেলা পরিবার।।লেখাটা কী ভাবে শুরু করলেেন আর শেষ করলেেন কী ভাাবে।লেখকের লেখার কৌশলী দিয়ে পাঠককে পুরো লেখাটা পড়তে বাধ্য করাই লেখকের লেখক হওয়াার স্বার্থকতা।যা আপনি পারেন।
আমি যা বুঝি
আমি যতই পড়িব ততই শিখিব-তাই আমি সহ ব্লগারদের লেখাগুলো পড়েই মনতব্য দেই তবে কবিতার বেলায় আমি মন্তব্যদানে অপরাগ কারন কবিতা আমি কম বুঝি।
আরেকটি বিষয়ে আপনি স্পষ্ট করেছেন তা হল সমালোচনা মন্তব্যে বিরূপ আচরন ধারন করা।এটা আমিও পছনদ করি না।একজন লেখায় লেখকের মনমত মন্তব্য না আসতেই পারে তাই বলে রাগ বা তর্কে ব্লগ বিমুখ হওয়ার কোন যুক্তিদেখিনা।এ ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে মনতব্যে আপনি আমি ঝড়গা করছি তাতে ব্লগের কী দোষ? ব্লগতো সবার জন্য উম্মুক্ত সেই শুরু থেকেই তা না হলে ব্লগ পরিচালনায় ব্লগ কর্তৃপক্ষের অনাত্বীয়রা হতে পারতেন না।
সোনেলা কখনোই পরিবার তন্ত্র ছিলো না আর সামনেও আশা করছি পরিবারতন্ত্র হবে না।
সমসাময়ীক সমস্যা নিয়ে বিষয়টি ক্লিয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।ভাল থাকবেেন।সুস্থ থাকবেন।শুভ ব্লগিং।
বন্যা লিপি
ঝগড়া শুরু হয়ে গেছে অলরেডি। আমি শান্ত থাকার জন্য তাহাজ্জুত নামাজে বসবো এখন। বাকিদের মন্তব্যের জবাব দেব মাথা ঠান্ডা করে। দোয়া করবেন আমার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
# মনোমুগ্ধকর লেখা
# পড়ে মুগ্ধ হলাম
# সৃজনশীল লেখা
# লেখা পড়ে ভালো লেগেছে – এমন মন্তব্য এই পোস্টে দেয়ার সম্ভাবনা আছে 🙂
এমন মন্তব্য কেউ করলে ধরে নিতে হবে সে লেখার এক লাইনও পড়েনি।
বিস্তারিত মন্তব্য নিয়ে আসতেছি।
বন্যা লিপি
অমন মন্তব্য যদি কেউ লেখা না পড়েই দেন, তো সেক্ষেত্রে করার থাকেনা কিছুই, শুধু মাত্র ন্যুনতম ধন্যবাদ জানানো ছাড়া। ধন্যবাদ এই জন্যে যে, কষ্ট করে ওইটুকু মন্তব্য করেছেন বলে।
বিস্তারিত মন্তব্য পাবার অপেক্ষা করছি।
ফয়জুল মহী
সাধারনত (সাধারণত), শংশোধনী(সংশোধনী), জেনো ( যেন), সাধারন (সাধারণ ), দারুন (দারণ)। লেখাটার আট লাইন পড়লাম বাকিটুকু ভোর বেলায় পড়বো।
তৌহিদ
মহী ভাই দারণ নয় ওটা দারুণ। টাইপিং মিস্টেক হতেই পারে।
ফয়জুল মহী
বন্যা লিপি
জানুয়ারী ১৮, ২০২১ at ১২:৫৫ অপরাহ্ন
ভাই, ব্লগে এত ভুল বানান মানায় না। একটু যত্নশীল হোন।
জবাব
আলমগীর সরকার লিটন
জানুয়ারী ১৮, ২০২১ at ১:০১ অপরাহ্ন
কোন বানানগুলো ভুল দেখান না কেনো প্লীজ দেখান
(কথাটা উনাকে বললে ভালো হতো। তারপরও আরো কয়েক জনের মন্তব্য উনার পক্ষে আশা করি। )
বন্যা লিপি
তৌহিদ ভাই, মহী ভাই ৮ লাইন পড়ে ৮লাইনের ৫টি ভুল বানান ধরিয়ে দিয়েছেন। তিনি সম্ভবত লিটন সরকারের পোষ্টে আমার ভুল ধরার বিষয়টা মেনে নিতে পারেন নি, তাই আমার পোষ্টের ভুল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে এলেন। আমি জনাব মহী কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতে কার্পণ্য করছিনা। অন্তত পূর্বাপর মন্তব্যের নিয়ম ভেঙে মন্তব্য তো করেছেন! আরো বলা যায় এই লেখাটার সার্থকতা এটাই।
ঠিক কিনা বলুন তৌহিদ ভাই?
মনির হোসেন মমি
মহী ভাইকে বলছি-অন্য একজনের কমেন্টস টেনে এনে কোন ভেজল সৃষ্টি করা সহ ব্লগার হিসাবে আমাদের কারোর কাম্য নয়।যদি আপনার পোষ্টে কোন অপ্রীতিকর মন্তব্য থাকে তবে সে বিষয়য়ে আপনার বলার অধিকার আছে অন্যথায় পরচর্চা বিষয়টা কী আপনি তা ভালই জানেন।আপনার জন্য শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
ফয়জুল মহী। আমার সারাদিনের সময় ব্যায় করে, ৬/৭ বার লেখাটা পেষ্ট পোষ্ট করতে গিয়ে, বার বার রিলোডের ধাক্কা খাওয়া, সাংসারিক কাজ বিরত রেখে লেখাটার পেছনে লেগে থাকা, নামাজ কাজা হয়ে যাওয়া, এত এত ঝামেলা শেষ করে সন্ধ্যা পার করে যখন পোষ্ট করতে সফল হলাম, তখনই ভেবেছি লেখার ব্যাকিং কি পেতে যাচ্ছি। আমি নিজেও দেখেছি শত ভুলের বানান। আপনি বলতে চাইছেন, নিজের লেখায় যখন এত ভুল, তখন আমি কেন অন্যের ভুল ধরি এইত? আচ্ছা ঠিক আছে। এই আপনার দেখিয়ে দেয়ক ভুল শোধোনোর পরে আর কারো ভুলও ধরব না, আর আমিও শোধরাব না। আমি কি ক আমার বানান ভুল ধরিয়ে দিতে আমি সবাইকে সাদরে দাওয়াত দিয়ে রাখলাম। কারন উপকারটা আমার।
বন্যা লিপি
ফয়জুল মহী# হা হা হা হা…… আপনি গায়ে মাখলেন তো!!! আমি শান্ত আছি এখন। আমি যা বোঝার বুঝে গেছি মিঃ মহী। আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ। বেশি কিছু বলার নাই আমার। লিখতে যাই একটা টাইপ হয় আরেকটা। ভালো থাকবেন সবসময়।
তৌহিদ
লেখাটি সন্ধ্যাতেই পড়েছি, অপেক্ষায় ছিলাম সেইসব সৃজনশীল মন্তব্য দেখার জন্য।
লেখা শুরু করলেন কিভাবে আর শেষ করলেন কোথায়! টাস্কি খায়া গেলাম আপা। এমন লেখা আপনার পক্ষেই সম্ভব।
লেখা নিয়ে কোন কথা নেই কথা বলতে চাই মন্তব্য নিয়ে। আমাদের এখানে যারা লিখছি আমরা অনেকেই ফেসবুক থেকে ব্লগিং জগতে এসেছি। কিন্তু যারা ব্লগকে সিরিয়াসলি নিয়েছেন তারাই এখানে সাবলীল বিচরণ করেছেন। আর যারা ফেসবুকীয় মন্তব্য করে তারা লেখা সম্পর্কে সিরিয়াস নন নিশ্চিত।
ভাবতে অবাক লাগে একলাইনে কিভাবে কেউ মন্তব্য করতে পারে ব্লগে! এরা আসলে ব্লগকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে অনেকেই। এরপর একটা দুইটা বই বের করে মনে করছে বিশাল লেখক। তখন তার আর ব্লগে আসার সময় হচ্ছেনা। মন্তব্য করতে আরও সময় নাই। যেন আসতে হয় তাই আসে।
ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে সারাদিন পড়ে থাকে কিন্তু নিজেদের একটা গ্রুপ আছে সোনেলা সেখানে আসেনা। আসবে কেন, আসলেই যে আপনার মতন উচিত কথা বলার লোকের অভাব হয়না। তাই আসেনা। এরাই হচ্ছে সেইসব সৃজনশীল মন্তব্যকারী।
ব্লগকে ব্লগের মতই ব্যবহার করা উচিত। যারা পারছেনা তাদের শতবার বলার পরেও অনেকে বুঝতে চাইছেনা। তাদের বোধদয় হোক এটাই কাম্য।
চমৎকার একটি বিষয় নিয়ে লিখলেন। মন্তব্যের ঘরে শুভাকাঙ্ক্ষীরা আসুক দেখতে চাই।
**** ব্লগে মন্তব্য পাবার জন্য যদি কেউ লিখেন তাহলে তার এই ধারণা ভুল। আমি আমার লেখাকে বিশ্বব্যাপী পাঠকদের কাছে নিয়ে যেতে চাই যা সোনেলায় ভালো লেখা লিখলে যায়ও। কিন্তু আলুফালু থালু লিখে মন্তব্য আশা করবেন আবার পাঠকদের মনজয় করবেন যারা এমনটা ভাবেন তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তাদের জন্য করুণা!
বন্যা লিপি
@তৌহিদ- আপনার দীর্ঘ পর্যালোচনিক মন্তব্যে সোনেলা ব্লগ উঠোনের বিজ্ঞ ব্লগার গণের শুভ বুদ্ধির উদয় আশা করছি।
এর আগে আরেকটা লেখা লিখেছিলাম, লেখক হব না লিখতে চাই” খেয়াল করে দেখবেন, ে লেখাতেও বিজ্ঞ ব্লগার লেখকদের অনেকেই অনুপস্থিত ছিলেন। এই পোষ্ট ২৪ ঘন্টা পার হয়ে গেছে, দেখুন, মন্তব্যের ঘরে আকাল, পোষ্ট কতজন পড়েছেন তার সংখ্যা জানা গেলেও কে কে পড়ে এড়িয়ে গেছেন যদি জানা যেত তাহলে আমি হয়ত নিশ্চিত বাঁকা হাসি হাসতে পারতাম😊😊
ওই যে বললেন, ব্লগটাকে নিজের সার্থে ব্যাবহার করে, ২/১ খানা বই প্রকাশ করে নিজেকে বড় লেখক ভেবে সোনেলা এড়িয়ে চলে!– বই বের হলেই যদি নিজেকে বড় লেখক ভাবনা আসে মনে, সেরকম লেখক*(?) সম্পর্কে প্রকৃত লেখকদের বক্তব্য জানতে পারলে তাঁদের জন্য বড় ভালো হতো। সমুদ্রের কিনারে দাঁড়িয়ে বালুকণা হাতে নিয়ে নিউটন বলতেন না ” আমি এই বালুকণা পরিমান জ্ঞান ও অর্জন করতে পারিনি” ।
মন্তব্যের ব্যাপারে সুরুচির পরিচয় পাব এ আশা ছাড়ছিনা।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
আত্মার বাঁধনে নাকি আত্মীয় হয়
এ তো দেখছি ছলা কলায় সব হাসিল করতে চায়।
রিপুর তাড়নায় অন্তর অন্ধ হলে সত্যিই তার লাজ শরম থাকে না
যা এই যুবকের মাঝে অনায়াসে পরিলক্ষিত হলো।
মুগ্ধতায় শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম অন্তহীণ।
বন্যা লিপি
আপনিতো এখানে রিপু টেনে নিয়ে এলেন দেখছি! আমি কিন্তু যুবকের নাম উচ্চারন না করে বার বার তাকে এক উপাধিতে আখ্যায়িত করেছি,এবং শেষতক সেভাবেই টেনে নিয়েছি লেখা–” বেকুব যুবক” কিছু মানুষ আছেই এরকম।
মন্তব্যে ধন্যবাদ।
স্বপ্ন নীলা
আসেন একটু যুক্তি-তর্ক করি ——
প্রথমত: আপনি যে লেখা দিয়েছেন তাকে শুধুমাত্র ১টি লেখা দিলে ভাল হতো—- তার মানে আমি বোঝাতে চাইছি যে ব্লগের মন্তব্য বিষয়ক লেখা — কিন্তু আপনি আগে গল্প আকারে লিখে তার নিচে অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। এটা লেখার ভাবার্থকে দ্বিখন্ডিত করে—
দ্বিতীয়ত: এমন অনেক নতুন ব্লগার তাদের লেখা নিয়ে আসেন যে পড়তেও মনে হয় “ আহ্ ! কি লিখলো ! তাদের লেখায় কিছু নির্দেশনা দিয়ে অবশ্যই উৎসাহমূলক শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে সে হয়তো আর ব্লগমুখী হবে না—কারণ ব্লগের বড় বড় ব্লগার ভীরে সে হয়তো আর লিখতেই চাইবে না —–
তৃতীয়ত: অবশ্যই আপনার সাথে আমি একমত যে এক লাইনে লিখলে ব্লগার আসলে কিছুই বুঝলো না —তবে অনেক সময় দেখা যায় ব্যস্ততম এই দুনিয়ায় অনেকে অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকে বা অন্য কোথাও, সেক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য হতেই পারে তবে সে লিখতে পারে যে ব্যস্ততার কারণে স্বল্প মন্তব্য করলাম, পরে আসছি ইত্যাদি —-
চতুর্থত: আপু আমি বুঝতে পেরেছি যে আপনি এই সোনেলা ব্লগটা ভীষন ভালবাসেন— এটা ভেবে আমার ভীষণ ভাল লাগলো–ভীষণ শান্তি লাগলো মনের ভেতর—সাংসারিক কাজে এত ব্যস্ত থাকার পরও আপনি ব্লগের পরিবেশকে সুন্দর করার জন্য আপনার প্রানান্ত চেষ্টা আমাকে সত্যিই অভিভূত করেছে -স্যালুট আপনার জন্যই পাওনা প্রিয় আপু
পঞ্চমত: সকলকে উদ্দেশ্য করে– একটু গঠণমূলক মন্তব্য করুন ! কি আমরা বুঝতে পেরেছি, কেমন আপনার অনুভূতি হয়েছে, কি করলে লেখাটা আরো ভাল হতো, বা এর ব্যপ্তি বিন্যাস কেমন হয়েছে, আপনার যদি ভালই লেগে থাকে তবে কেন ভাল লেগেছে !!——-তবে হ্যা লেখাটা যদি ভাল না লেগে থাকে তবে দয়া করে শুধুই নেগেটিভ মন্তব্য করা হতে বিরত থাকবেন। নেগিভিভ মন্তব্য শুধুই নেগেটিভই বয়ে আনে-এর দ্বারা ইতিবাচক কিছু বয়ে আনতে পারে না—- আর তাই উন্নয়নযোগ্য মন্তব্য করলে সবচেয়ে বেশি ভাল হয় —
ষষ্ট: অনেকে মোবাইল হতে পোস্ট পড়েন এবং মন্তব্য করেন–ল্যাপটপে যেমন টাইপ করতে সহজ হয় কিন্তু মোবাইলে একটু কষ্ট হয়–যাইহোক সেক্ষেত্রে যেটুকু মন্তব্য তা দুইলাইনে একটু গুছিয়ে লিখলেই হয় —-
আপু !!!!!!!! রাশি রাশি শুভকামনা রইল—–সাথে সীমাহীন ভালবাসা —-
বন্যা লিপি
স্বপ্ন নীলা@ প্রথমত, আপনার এই যুক্তির সাথে সহমত পোষন করে দুঃখ প্রকাশ করছি। এভাবে দিখণ্ডিত ভাবব্যঞ্জক লেখা না হলেই ভালো হতো।
দ্বিতীয়তঃ এখানেও আপনার সাথে সহভাবনার শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। অবশ্যই নতুন লেখকদের স্বাগত এবং উৎসাহ দিতে সত্য এবং সঠিক দিকনির্দেশনা মোতাবেক মন্তব্য দেয়ক সকল বিজ্ঞ লেখকদের সহযোগীতা অতিব কাম্য।
তৃতীয়তঃ এই ব্যাপারে আমি অনড়। আমার ব্যাক্তিগত পর্যায় থেকে আমার যোগ্যতা অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব অল্প কথায় বিষয় বুঝে মন্তব্য করার চেষ্টা সবসময় করে আসছি। তবে মাঝে মাঝে যে বিষয়গুলো আমার অনিচ্ছা বা অতি অধিকারের বলে অনেক লেখায় ভুল বানান ধরার বিষয়ে বলে থাকি এই পোষ্টের পরে আর করব না বলে মনস্থির করেছি।
চতুর্থতঃ এখানে কিছু বলছি না। যেমন চলছে চলুক। এলে এলাম, না এলাম। পরিবেশ ভালো করতে হলে সকলের সমমনা হতে হয়, আর আমার ব্যাক্তিগত মতামত, আসলে সমমনা বলে কোনো শব্দকে প্রশ্নবিদ্ধ না করি। সমমনা বলতে কিছু নেই। একটা লেখা সম্পন্ন করতে বসলে সর্বোচ্চ খেয়াল থাকে শব্দের গঠন নিয়ে, তাবৎ চিন্তা ভাবনা তখন লেখাটাকে আকর্ষনীয় করে তোলার, যাতে পাঠক পড়তে আকৃষ্ট হন,এবং পাঠকের মননশীলতায় শব্দের গঠন আলোড়িত করে। আমি যখন পাঠক হই, তখন সেই আলোড়িত বোধ থেকে লেখা পড়ার অনুভূতিটুকু মন্তব্যের ঘরে জানাতে চাই বোধসম্পন্ন অনুভূতির প্রকাশ প্রমান রাখতে। আশা করি বিষয়টা বোঝাতে পেরেছি আপনাকে। আপনার স্যালুট আমি কৃতজ্ঞতা চিত্তে ধারন করে নিলাম মাথায়।
পঞ্চমতঃ এখানে আমার বলার কিছু নেই। আপনার কথাগুলো আমারো কথা, তাই হাতে হাত মেলাচ্ছি সহমতে।
ষষ্ঠঃ কারিগরি ব্যাপারে যার যেমন সুবিধা মোতাবেক ডিভাইজ ব্যাবহার করবেন বা করছেন, বাকিটা আপনার মতামতের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করছি।
অবশেষে ঃ আমি ধন্য আপনার ভালবাসার সীমাহীন অবগাহনে। আপনার বিশ্লষনিক এই মন্তব্য আমার এই লেখাকে মর্যাদা দিলো অতি উচ্চ পর্যায়ের। আপনাকেও স্যালুট, অভিবাদন, ভালবাসা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল একটা চরিত্রের রূপ দেখতে পাচ্ছি। বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় লেখাটা মজাদার ছিলো। অনেকেই এমন ভুল করে থাকে সম্পর্কের নাম দিতে গিয়ে। যেমন আমার বাবার বস আমাকে বাবার পাশে দেখে বোন বানিয়ে বলেছিল , ‘বাবু আপনি বিয়ে করছেন না কেন?’ আমার কলেজ সময়ের প্রাইভেট টিউটর বাবাকে আমার কাকা বানিয়ে দিয়েছিল 🤣🤣🤣। তো অনেকেই না জেনে নিয়েই মন্তব্য করে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়।
রক্তের হোক আর রক্তের নাই হোক যেকোন সম্পর্কের একটা মার্জিন রাখতে হয় সেটা সবাই বুঝে না বা বুঝতে পারে না। অনাত্নীয় ও কখনো কখনো আত্নীয়ের চেয়েও বড় কিছু হতে পারে তার ব্যবহার, সংযম, আপন করে নেয়ার ক্ষমতার কারণে।
লেখাটি কে আপনি যে উপদেশ হিসেবে ব্যবহার করেছেন এটা সত্যিই অনবদ্য লেগেছে। ব্লগীয় মন্তব্য, সম্পর্ক এমনটাই হওয়া উচিত।
বেকুব যুবকের আক্কেলহীন কারবার সবখানেই আছে, ছিল, থাকবে। এটাকে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। খারাপ ভালো নিয়েই আমাদের পথ চলতে হবে।
নিরন্তর শুভকামনা রইলো
বন্যা লিপি
সুপর্না ফাল্গুণী @ এরকম বিরম্বনা অনেক পোহাতে হয়েছে বাবা মায়ের সাথে চলতে গিয়ে। মায়েে সামনেই হয়ত কেউ বলে বসছেন, “আপনারা দুই বোন? মার্কেটে গেছি, দোকানদার বলে বসলেন, বড় আপার চেয়ে ছোট আপার গায়ের রং একটু চাপা, তবু এই রংটা ছোট আপারে খুব মানাবে” আমি তো ঝাঁঝিয়ে উঠি, ” আপনি বড় ছোট বইন পাইলেন কই এখানে?” দোকানদার তব্দা খায় আর কি? এই গত জানুয়ারিতেও এমনটা হয়েছে বাবার বাড়ি। আমার চেয়ে আমার মাকে বরং ছোট লাগে😂😂😂 আর আমার মেয়ের সাথে কোথাও বেরোলে তো…..থাক এত বলতে নেই😊😊
বেকুব লোকজনকে রাগ দেখানোর চেয়ে বরং করুনা দেখানো যেতে পারে……বাবারে তোরা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাক এমন করে, বিনোদনের অনুষঙ্গ পাওয়া যাবে😀😀
শুভ কামনা জানবেন।
আরজু মুক্তা
সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবো।
শুভকামনা
বন্যা লিপি
আরজু মুক্তা@ আমি মাস্টারি সহ্য করতে পারিনা একদম। মাস্টারের ঘরে বড় হইতে হইতে জীবন ত্যাজপাতা হইয়া গেছিলো, আমি শুধু কিছু বিষয়ের ওপরো দৃষ্টিপাত করবার চেষ্টা করেছি মাত্র।
শুভ কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক কথা হল আমি আর কি বলি! আত্নীয়তা, সম্পর্ক তৈরি করা, বিভিন্ন নামে ডাকা এসব ব্লগে ছিল। আমিও দেখে শিখেছি। এও শিখেছি কিভাবে নতুনদের অপমান করা হয়, ছোট করা হয়। আর কাউকে তেল দিয়ে ভরিয়ে ফেলা হয়, যে তেল অল্পদিনের।
নাই মামার চেয়ে কানা মামাই ভালো বলে আমি মনে করি। এক লাইনের মন্তব্যের কারন তিনি ব্যস্ত।, কিংবা ভালো লাগেনি। তার এটা বাদ দেয়ার পাশাপাশি; আমরা তাকে ম্যাসেঞ্জার এ নক দিয়ে বলতে পারি। কিন্তু সরাসরি অপমান করা ঠিক নয়। কারন ভালোবাসা ভালোবাসা দিয়েই আদায় করা যায়॥
আর আপু আপনি নিঃসন্দেহে ভালো লেখেন তবে এ কথা সত্যি আমরা কেউই সঠিক ব্লগার বা লেখক/ কবি কোনটাই না। এসবে অনেক যোগ্যতা লাগে। মন চায় তাই আনন্দে লিখি॥ ভালো থাকবেন।🥰🥰
বন্যা লিপি
রোকসানা খন্দকার রুকু@ আমি উপরের কোনো মন্তব্যে আগেই বলে রেখেছি, ” লেখাটা পোষ্ট করার পরই ধরে নিয়েছি এর ব্যাকিং কি পেতে যাচ্ছি”
সো…..আমি শান্ত থাকছি।
শুভ কামনা আপনার জন্য।
আপনিও ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
এসেছিলাম মন্তব্য করতে, লেখার সাথে সবার মন্তব্য পড়ে তো নতুন করে ভাবনায় পরে গেলাম কি মন্তব্য দেবো!
মন্তব্য নতুন ভাবনায় করতে হবে।