
গার্লস স্কুলের সামনে প্রতিদিন একজন লোককে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। লোকটার পায়ে ঘা। আর ফুলে একাকার। রক্ত, পুঁজ আর কষ ঝরে। ছুটির পর কৌতূহল বশতঃ তার পাশ দিয়ে যাই। কিছুই জিজ্ঞেস করা হয় না। কিন্তু মনে মনে প্রশ্ন করি, কেমনে এখানে আসে? কে নিয়ে আসে?
গ্রীষ্মের আর রমযানের ছুটি এবার একসাথে। অনেকদিন স্কুল বন্ধ। সবাই একসাথে কোরআন পড়ি। মাঠে খেলি। মা বলে যতোবার খাবে ততবার ছোটদের ইফতার। ততোটা রোযা। মাঠে গিয়ে ছোটরা হিসেব করে, কয়টা রোযা হলো?
ঈদের পরদিন ভাই বোনেরা মিলে কোক কিনতে গিয়ে, ঠেলাগাড়িতে একজন কে দেখে চেনা চেনা লাগে। একজন মেয়ে তাকে ঠেলে নিয়ে বেড়ায়। আমার ভাই ওকে ২০ টাকা দিয়ে বলে, দুপুরে বাসায় খাস রহমত। বুঝতে পারি ওনার নাম রহমত।
দুপুরের পর মেয়েটার সাথে গল্প করে জানতে পারি ; ওর নাম প্রজাপতি। কী সুন্দর দেখতে ! ও নাকি রহমতকে বিয়ে করছে। কেমনে ? প্রশ্ন করলে বলে,
আফা গো! কে দেখবে এই ভেংরাটাকে? রোযার আগের মাসে ওর পা দুটা কাইটা ফেলে। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে দেখি, বারান্দায় পরে আছে। কেউ নাই। মাছি ভনভন করছে কাটা পায়ের উপর। মাছিগুলোকে তাড়িয়ে আমি সঙ্গি হলাম। কখনো বাসস্টপ, কখনো মানুষের বাড়ি, কখনো অফিসের সামনে। রোদে গাছের তলে। যা টাকা পাই এক প্লেট ভাত কিনি। ওরে খাওয়ায় দেই, নিজেও খাই। কম টাকা হলে আলু ভর্তা। বেশি টাকা হলে ডিম।
বলে, তৃপ্তির হাসি দেয়।
জানেন গো আফা, মাঝে মাঝে ও আমার মাথার উকুন বেছে দেয়। আশেপাশের ছেলে মেয়েরা আসে গল্প করে ম্যালা। টিটকারি ও করে। আমার নাকি রং লাগছে। গায়ের রং আরও ফর্সা হইছে আমার। কেউ কেউ বলে ল্যাংড়াটারে ছেড়ে দে। চল, বিয়ে করি।
আমি আবার এইসব কথায় কান দেইনা। মাঝে মাঝে বলি, তোর কী? তোর চৌদ্দগুষ্টির কী? ঐ ব্যাটাগুলো বুঝছেন আফা : নজর শুধু শইলের দিকে। বিয়া করলে শ্যাষ। আর একটা মাইয়্যা খু্ঁজবো। আমি কথা বাড়াই না। ঠেলা নিয়া আর এক জায়গায় যাই। দিন শেষে কয়েন গণিয়া দেখি, ভালোই রোজগার। গরম হইলে পার্কের মোড়টায় আশ্রয় নেই। রাত বাড়লে পথচারী, প্রেমিক প্রেমিকা সবার চলাচল আস্তে আস্তে শেষ হয়। তখন চাঁদের আলোয় আমাদের প্রেম শুরু হয়। ওর ভাওয়াইয়া গান শুনলে ভাত খাওয়ন লাগে না।
শুনশান নীরবতা আর ল্যাম্পপোস্টের কাব্যিক আলোয় মরা পচা পদদলিত ফুলগুলো সুগন্ধ না ছড়ালেও স্বর্গীয় প্রেমে মাতাল হয়ে ছাপিয়ে দেয় বস্তাপচা প্রেমের কাহিনীগুলোকে।
২৪টি মন্তব্য
সাখাওয়াত হোসেন
চমৎকার গল্প, দারুণ ভালো লাগলো।
আরজু মুক্তা
এরকম মন্তব্য নয়। লেখা পড়ে বিশ্লেষণ করবেন। তখন লেখক হিসেবে আমার লেখাটা সার্থক হবে।
শুভকামনা সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
বাহ্ অসাধারণ!! প্রেম মনের কিন্তু কারও কারও কাছে শারীরিক বলেই আজও এত সমস্যা সমাজে। ভালোবাসা বেঁচে থাকুক আজীবন এমন সুন্দর হয়ে সবার মাঝে। শুভ কামনা ও ভালোবাসা অবিরাম❤️❤️🥰🥰
আরজু মুক্তা
ঠিক বলেছেন। ভালবাসার অর্থ সুন্দর ও মধুর হোক।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
গল্পের শেষের কথাগুলো একদম হৃদয় ছুঁয়ে দিলো। প্রেম এমনি হওয়া উচিত। প্রজাপতিরা এভাবেই সুখ খুঁজে নিক মননে, আত্নায়। চমৎকার অনুগল্প বরাবরের মতই। একরাশ শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো। শুভ রাত্রি
আরজু মুক্তা
আপনাদের মন্তব্য বরাবরি ভালোলাগা। অনুপ্রেরণামুলক। ভালোবাসা সবসময়
তৌহিদ
কেউ ভালোবাসে আর কেউ ভালোবাসাকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেয়। ভালোবাসা বলতে কিচ্ছু নেই সব আবেগের ফুলঝুরি। যে বুঝে সেই মানব।
সুন্দর লেখা। শুভকামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
ভালোবাসার মর্মার্থ বুঝতে হয়। আবেগ দিয়ে এসব চলে না।
শুভকামনা
তৌহিদ
আবেগ ছাড়া ভালোবাসা হয়?
আরজু মুক্তা
আবেগ বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে নয়।
ভালো থাকবেন
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
সত্যি দারুণ কষ্ট কথা লিখেছেন।
শুভকামনা রইল
আরজু মুক্তা
শুভকামনা ভাই। ভালো থাকবেন
মনির হোসেন মমি
এ সব অসহায় মানুষদের দেখলে খুব খারাপ লাগলেও কিছুই করার নেই।জীবন যেখানে যেমন।তবে তাদের মাঝে প্রেম বেশ পাকা।ভালবাসার বন্ধন বেশ মজবুত।
আরজু মুক্তা
ঠিক বলেছেন। শুভকামনা সবসময়
রেজওয়ানা কবির
ভালোবাসা এমনি একটা ব্যাপার যা শুধু মন থেকেই আসে। প্রজাতির মত এমন অনেক মানুষ আছে যারা রহমতের মত মানুষের পচা পা সত্বেও পাশে থাকে, অপরদিকে সমাজের কিছু বিকৃত রুচির মানুষ যারা শুধু টিটকারিই করতে জানে,ভালোবাসতে না।।
আরজু মুক্তা
মানবতা বোধ আর ভালোবাসা সাথে বিবেক থাকা জরুরি।
শুভকামনা
মোঃ খুরশীদ আলম
আজকালকার সভ্য সমাজের দাবীদার তথাকথিত উঁচু ও শিক্ষার ভারে নুইয়েপরা বালক-বালিকাদের জীবনে আজ প্রেম আসে-কাল চলে যায়। কয়েকটা
দিনের ভাললাগার ফসল হয়ে স্মৃতিগুলো ভেসে বেড়ায় ভোটকা গন্ধে পেটের ভিতর। একসময় এই ভালাবসা মলিন হয়ে যায়, আরেকটা ভালবাসা তৈরি হয়, এই জুিঁটিতে চলে নতুন নতুন হিসাব। কিন্তু প্রজাপতি-রহমত জুঁটিতে ভাঙ্গন ঘটেনা সাধারণত। এরা তাদের যা আছে তা আকঁড়ে ধরে বেঁচে থাকে পরস্পর নিবিড় আলিঙ্গনে। বেঁচে থাক রহমতরা ভাবাসার আদর্শ হয়ে।
ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। প্রত্যাশা রেখে গেলাম।
আরজু মুক্তা
একজন লেখকের অনুপ্রেরণা এটাই।
আপনিও ভালো থাকবেন। দোয়া করবেন।
শুভকামনা সবসময়
বোরহানুল ইসলাম লিটন
অল্পতে সুখ অল্পতে শান্তি
তবুও আসে না অন্তরে ভ্রান্তি।
নির্মম বাস্তবতার আলোকে সুন্দর লেখা।
পাঠে সিক্ত হলাম।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম পাতায়।
আরজু মুক্তা
সুখ আপেক্ষিক
শুধু খুঁজে নিতে হয়।
শুভকামনা ভাই
পপি তালুকদার
সুন্দর গল্পের মাঝে জীবনের কঠিন বাস্তবতা তুলে আনা হয়েছে।চমৎকার। শুভকামনা।
আরজু মুক্তা
শুভকামনা জানবেন। সুন্দর মন্তব্য লেখার গতি বাড়ায়
ছাইরাছ হেলাল
অনুগল্প পড়লাম, ভালোই,
কিন্তু কী যেন নেই!! এমন মনে হচ্ছে কেন!!
হতে পারে ঠিক-ঠাক ধরতে পারছি না!!
আরজু মুক্তা
আমি আবার পড়লাম। বুঝলাম না। পয়েন্ট টা বললে ভালো হতো।