
হায়, মেয়েটা কী করলো? এতো সরঞ্জাম দেয়া হয়। এন,জি,ও র আপারা বুঝায় ; তাও তোরা বুঝিস না ! কেনো যে এমন ঘটনা ঘটাইলি ?
রূপালি বলে, বুঝলাম না কোন ব্যাডায় এমন কাজ করলো? আমি তো সাবধানী ছিলাম।
” তুই হয় এ্যাবসন করা ; না হলে কই যাস যা। আমার ব্যবসা নষ্ট করাস না।
রূপালি ভাবে, ” এই বাচ্চার তো কোন দোষ নাই। তাকে কেমনে জীবন্ত কবর দেই। ”
এক রাতের অন্ধকারে ‘ পল্লী থেকে পালায় চলে আসে। শহরের এই গলি, সেই গলি! কোনখানে আশ্রয় মেলে না। এখানকার পুরুষের চোখ আরও খারাপ।
তার আর সহ্য হয় না। সময় যতো যায় শরীর ততো ভারী হয়। পায়ে রস নামে। সামনে যাকে পায় ডাকে। কেউ সাড়া দেয় না।
” এই যে শুনছেন!!”
সৌমিক ঘাড় ঘুরে দেখে, এক মেয়ে আকুল স্বরে ডাকছে। ” কি জন্য ডাকো? ”
“আমারে একটু ধরবেন। উঠে দাঁড়াতে পারছিনা।”
” ওহ্ তুমি? তোমাদের কাজ জানা আছে। ”
” সেটা ঠিক আছে। আমার অবস্থাটা দেখছেন। এই অবস্থায় কেউ নিতে চায় না।”
কি মনে করে সৌমিক বললো, ” হাঁটতে পারবে ? তাহলে চলো।”
আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসলো। একটু গরম দুধ খেতে দিলো। মেয়েটার ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে কেমন জানি মায়া জন্মালো।
চোখ বন্ধ করে সৌমিক ভাবছে, ” আমারও একটা মেয়ের দরকার। দরজা খুলে দিবে। বৃষ্টিতে ভিজলে মাথা মুছে দিবে। বাড়ি ফিরতে দেরি হলে, চোখ দুটোতে আষাঢ় নামাবে। কখনও একটা রঙিন কাপড় পরে লাল টিপ দিয়ে সেজে আমায় অবাক করবে।”
“বাবা গো আর পারছিনা! কই গেলেন? ডাক্তার ডাকেন।”
রূপলির আর্ত চিৎকারে, সৌমিক দৌড়ে গিয়ে দেখে ডেলিভারি পেইন উঠছে। রাস্তায় বের হলো ; এতো রাতে ডাক্তার পেলো না।
” ডাক্তার তো পেলাম না! ”
” ডাক্তার লাগবে না। গরম পানি, ব্লেড নিয়ে আসেন। ”
“বাসায় ব্লেড নাই!”
যা আছে তাই আনেন।
” ওহ্! আল্লাহু গো।
রূপালির তীব্র চিৎকারে মাটি কম্পিত হচ্ছে।
” হা করে দেখছেন কি? বিছানায় আসেন। টাইন্যা বের করেন। ”
একটা সূর্যের মুখ বের হলো।
মেয়ে হয়েছে ! ছুরি দিয়ে রূপালি নাড়ি কাটলো।
সৌমিক বললো, নাম দিলাম ” অপরাজিতা। ”
সৌমিকের দিন ভালোই কাটছে। সারাদিন কাজ করে যা পায় ; তা দিয়ে খাবার আর খেলনা কিনে। কান্না করলে দুধ গরম করে খাওয়ায়। কোলে করে গান শোনাতে শোনাতে ঘুম দিয়ে দেয়।
তিন মাস যাওয়ার পর রূপালি বলে, ” আমার যাওয়ার টাইম হইছে। মেয়েকে আপনি পছন্দ করছেন, আপনিই রাখেন। আমি মাঝে মাঝে এসে, দেখে যাবো।”
” না গেলে হয় না! ঐ পেশা তো ভালো না। অন্ধকার জীবন। আমি তোমারে বিয়ে করবো। আর অপরাজিতা তো আমার মেয়ে। ”
“নাহ্। তা হয় না। বুঝ হওয়ার পর এ পেশায় জড়িত হইছি। এখন ঐটা নেশা হইছে। ”
” তুমি আর একটু চিন্তা করো রূপালি। আমি কাজে যাই।”
সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে দেখে, রূপালি নাই। বাচ্চাটার পাশে একটা চিঠি।
” আপনি আমার মেয়েটারে ভালোবাসেন এটাই বড়। অপরাজিতা সুন্দর জীবন নিয়ে বেড়ে উঠুক। আপনার পাগলামি আমার ভালো লাগছে। কিন্তু স্বচ্ছ আয়নায় ঘষা লাগাতে চাই না। ভালো চাকরি পাননি। ভালো জায়গায় হয়তো থাকেন না। সবাই আকাশে উড়তে পারে না। উড়ন্ত রঙিন বেলুনগুলোর জায়গা হয়তো সবার মনে হয় না। তবে, আপনি মনের অজান্তে, সংগোপনে রঙ ছড়িয়ে দিলেন। ”
২০টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
যাস্ট ওয়াও!! বেচাবিক্রির মাঝখানের একটা সত্যাদর্শন আয়না থাকে রুপালিদের মতো মেয়ে মানুষের। অপরাজিতা জন্ম দেয়া যায়, সৌমিকের মত মানুষের জন্য ঘরের দুয়ার আগলে অপেক্ষা করা যায়না। এর আরেক নাম বোধ।
আরজু মুক্তা
মানুষ যতো মত ততো। কর্মও আলাদা।
সুন্দর মন্তব্যে আমি অনুপ্রাণিত।
শুভকামনা
মোঃ মজিবর রহমান
যার ভাবনা তাঁর। সৌমিকের ভাবনায় এক আর রুপালীর ভাবনায় এক। একসুত্রে গাঁথা হয়নি বিধায় ভংগুর।
বাস্তবেও সৌমিক আছে বাস্তবেও রুপালী আছে নেহাত খুব কম।
দারুন অনুগল্প।
শুভ ব্লগিং।
আরজু মুক্তা
মানুষের মধ্যে বিবেক থাকা জরুরি।
শুভকামনা ভাই।
শুভ ব্লগিং
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বন্যা আপুর মন্তব্যের সাথে একমত । উনি এতো সুন্দর করে বললেন যে আমি আর কিছু বলতে চাচ্ছি না। রূপালী রা পথেই পড়ে রয় ওরা কারো গলার মালা হতে পারে না বা চায় না। সৌমিকদের জন্য একাকীত্বের কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না
তৌহিদ
এরকম বিবেক সবার নেই। রুপালিরা ক্ষয়ে যায় তবু নিজের একপিন্ড রক্তকে কলংকিত হতে দিতে চায় না।
ভাবাবেগী লেখায় আপ্লুত হলাম আপু। নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইলো।
আরজু মুক্তা
জি দিদি।
আপনার মন্তব্য আমার প্রেরণা।
শুভকামনা
রোকসানা খন্দকার রুকু
অসাধারণ! কি অদ্ভুত করে ফুটিয়ে তুলতে পারেন।
ভীষন ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইলো শুভ নববর্ষ।🌹🌹❤️❤️
আরজু মুক্তা
আপনাদের ভালো লাগলেই লেখা সার্থক।
শুভেচ্ছা অহর্নিশ।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
খুব সুন্দর লাগলো লেখাটি।
সমাজে অনেক রূপালী আছে যাদের জীবন এভাবেই চলে যায়
কিন্তু অপরাজিতা রা পিতৃ স্নেহের এমন সৌমিকের দেখা হয়তো পায় না।
ভীষণ মুগ্ধতায় শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম অন্তহীণ।
আরজু মুক্তা
ভালো লাগলেই লেখা সার্থক। কলম চলবেই।।
শুভেচ্ছা অহর্নিশ।
তৌহিদ
এরকম বিবেক সবার নেই। রুপালিরা ক্ষয়ে যায় তবু নিজের একপিন্ড রক্তকে কলংকিত হতে দিতে চায় না।
ভাবাবেগী লেখায় আপ্লুত হলাম আপু। নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইলো।
আরজু মুক্তা
মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগা কাজ করলো।
শুভকামনা সবসময়
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর লেখেছেন মুক্তা আপু অনেক শুভেচ্ছা রইল
আরজু মুক্তা
ভালো থাকবেন।
শুভকামনা সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
অনেক অনেক দিন পরে হলেও গ্লপ পড়ে ভালই লাগলো ।
আরজু মুক্তা
এরকম মন্তব্য বরাবরি অনুপ্রেরণামূলক।
ভালো থাকবেন। শুভকামনা
খাদিজাতুল কুবরা
চমকপ্রদ গল্প পড়ে খুব ভালো লাগলো। রুপালিরা এভাবেই হারিয়ে অন্ধকার গহ্বরে স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়।
গল্পের মানবিক সৌমিকরা যেন বাস্তবেও একটি নিষ্পাপ শিশুর দায়িত্ব নিতে কুণ্ঠিত না হয় সেটাই প্রত্যাশা।
নববর্ষের শুভেচ্ছা রইল আপু
আরজু মুক্তা
এটাই মেসেজ থাকলো গল্পে।
ভালো থাকবেন সবসময়।
খাদিজাতুল কুবরা
হারিয়ে যায়