
ফজরের নামাজের পর একটু শুয়ে আলস্য, আড়মোড়া, ওম ওম নিতে ভালোই লাগে। তা যদি হয় শীতের সকাল তাহলে তো পোয়া বারো। কম্বলের তলায় ঢুকে কফি খেতে মন চায়। এমন ওম ওম সকালে চিৎকারে, কান্নায় ধড়ফড়িয়ে বিছানা ছাড়াটা বড় কষ্টের; আবার না উঠলেও নয়।
পাশের বাড়ির সবচেয়ে সূখী দম্পতির সাতসকালে তুমুল মারামারি। স্বামীর হাতে লাঠি,” আজ তোকে ছাড়বোনা, তোকে মেরেই ফেলব”। ঘটনা কি?
কাল বেশ রাতেই খোকন বাড়িতে ফিরেছে কারন পাশের মাঠে মাহফিল ছিল। ৬.৬ তাপমাত্রায় বক্তা-শ্রোতা সবাই হিম। আশেপাশের বাড়ির বৃদ্ধ- মহিলারা যাদের ঠান্ডার সমস্যা তারাও কান পেতে। ভালো লাগে শুনতে অনেক অজানা তথ্য জানা যায়।
খোকন সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে। আজ বেশ বেলা দেখে বউ ডাকছে,” খোকন ওঠ না , খাবার খাও আমার সংসারের মেলা কাজ আছে”।
অন্যদিনও এভাবেই ডাকে। তাতে কিছু হয়না। আজ এমন ডাকে খোকন ভীষন ক্ষেপে গেল। বউ হো হো করে গডিয়ে হাসছে, ” তোমারে কি ভুতে ধরল, কি বল? পাঁচ বছর ধরে তো নাম ধরেই ডাকি, আইজ কও নাম ধরে ডাকবনা”
পিত্তি জ্বলে গেল আরও। আবার মশকরা করে। সহ্য করা যায় না।
” শোন বিলকিস আমারে নাম ধরে ডাকবা না, কালকে ওয়াজে হুজুরে বলছে, স্বামীকে নাম ধরে ডাকলে অসম্মান করা হয়”।
আবারও সেই হাসি,” কও কি;আমার এতদিনের অভ্যাস। আমি বদলাইতে পারমু না। আমরা তো সমবয়সী, আমার নামে ডাকতে ভালো লাগে। তাছাড়া তুমি আমার সবথেকে আপন। একই বিছানা যেহেতু আমাদের দুজনের। তোমার গায়ে পা তুলে দেই, ঠান্ডায় জডিয়ে তোমার বুকে শুই, হুটোপুটি খাই। নামে কি এসে যায়, পাগলে পাইছে তোমারে।”
খোকন হঠাৎ করে পুরুষ হয়ে উঠল। এক কথায় দুইকথায় মারামারি। আজ বাপের নাম ভুলিয়েই ছাড়বে। মরিয়ম কেঁদে অস্থির যে মানুষটা জীবনে গায়ে হাত তোলে নাই আজ সে এমন; আর এ সংসারে থাকবেই না।
ভালো কথা বাপের নামে মনে হল, নাম তো মানুষের আইডেনটিটি। নাম ধরে ডাকা ব্যক্তির পার্সোনালিটি বহন করে। ইসলামে কোথাও নিষেধাজ্ঞাও নেই। মহানবী (সা:) স্ত্রী দের নিয়ে খেলাধুলা সহ নানা মশকরা করতেন। আয়েশা (রা:) তাঁর হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে নাম উল্লেখ করে বলেছেন। তাহলে স্বামীর নাম ধরে ডাকা অন্যায় কেন? অসম্মান কেন? এখন আবার অনেক বউ স্বামীর চেয়ে বয়সেও বড়। তাহলে এগুলো তৈরি করা, মনগড়া কথার দায় কার? অযথা সংসারে অশান্তির দায় কার?
“বোঝে তাঁই, যাঁই সাথে থাকে, যাঁই ঘর বাস করে।”
” দুনিয়ার সকল জোড়ার জোড়ায় মিলিয়া তবে দ্যাখো শোভা হয়।
গড়ন ধরন তার আয়নার ছবির মতন যদি এক মতো হয়,
তবে সেই জোড়া ভাঙ্গিতে দেখা যায় মালেকুল মউতকে কান্দিতে”।
-সৈয়দ শামছুল হক।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের হাতে পতাকা চার কোনা লাল বৃত্তের। বেশি শীত তো তাই দেখার সময় হয়নি। দর্জি গোলের বদলে চারকোনা দিয়েছে। দায় কার, দর্জির না শিক্ষকদের?
আমার একটা ছোট্ট ঘটনায় আসি,
আমি বিয়াম ফাউন্ডেশন স্কুল এন্ড কলেজে কেবল চাকুরীতে যোগদান করেছি। প্লে- কেজির ক্লাস টিচার হিসেবে। একদিন রাত দশটা নাগাদ ফোন এল এক মায়ের। আমার অতি প্রিয় ছাত্র “প্রেম” ওর মা ফোন দিয়েছে। তার বাচ্চা কিছুতেই কান্না থামাচ্ছেনা এবং কিছু খাচ্ছে ও না।
ঘটনা কি? সকালের ক্লাসে আমি ভুল বানানে সঠিক/টিক দিয়েছি। Fourty আসলে হবে Forty. বাচ্চারা বিশ্বাসী এবং কাউকে প্রিয় ভাবলে তার অন্ধ ভক্ত হয়ে যায়। আমি যেহেতু তার অতি পছন্দের শিক্ষক। তাই মা যতই বলুক আমার Fourty বানান ভুল। সে কিছুতেই মেনে নিচ্ছে না, বিশ্বাসও করছেনা। বরং আমাকে কেন খারাপ বলল এটা নিয়ে তুমুল কান্ড” মা তুমি কিছুই জানো না মিস্ সঠিক ছিল”। আমি হতভম্ব। আমি সেদিনের অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলে অতি লজ্জিত এবং আমার ভুলে ক্ষমাপ্রার্থী। কারন এ দায় আমার।
আল্লাহ আমাদের উপর কিছু দায়, দায়িত্ব দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা কিংবা দায়িত্ব দেননি। আমাদের যাদের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছেন। তাদের উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে সেটার সঠিক ব্যবহার করা। তা না হলে এটি বিরাট বড় খারাপ ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় যার মাশুল গুনতে হয় অনেক বেশী। ভুল তথ্য, ভুল উপস্থাপন, সকল ভুল ভুলই! অযথা মনগড়া সুবিধার জন্য কোনকিছু উপস্থাপন ঠিক নয়। এটা নাগরিক দায়িত্বের বরখেলাপ।
আর মন বড় বিচিত্র জিনিস। বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই বিশ্বাস করে বসে। ভালোবাসা কিংবা ভীতি দুটোতেই তার ম্যানিয়া। মুসলমান হিসেবে ধর্ম ভীতি অসম্ভব। তাই আমরা ভুল হলেও নিজেদের ধর্মীয় ভীতিতে কিংবা সঠিক জ্ঞানের অভাবে ঠিক হিসেবে মেনে নেই। আর সেটা নিজের জীবনে বিরাট ভুলের রাজত্বে পরিনত হয়। তাই আমরা সবসময় তারাহুরো না করে সঠিক বিষয় উপস্থাপনের চেষ্টা করব।🌹🌹
(যাই হোক আমার মহিলা পাঠকগণ, স্বামীকে সম্মান করবেন। আর রাতে ঘুমালে হাত-পা সাবধানে রাখবেন, গায়ের উপর তুলে দেবেননা। আর বেশি ঠান্ডায় “বাবু” তোমার বুকে শুই কিংবা লেপ্টা- লেপ্টি করতে করতে গায়ের উপর উঠে পড়বেন না। সম্মান নষ্ট হবে? চুমু খেতে মন চাইলে সম্মানের সাথে খাবেন। নাম ধরে তো ডাকবেনই না, বয়সে ছোট হলেও না, কাভি নেহি।)😜😜
২৩টি মন্তব্য
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
ভালো লাগল রম্য রচনাটা
শুভকামনা রইল
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
চাঁদে কাউকে দেখা গেছে শুনেই যদি কেউ চাঁদ ধরতে যেতে চায় তাহলে অবশ্য করার কিচ্ছু নেই।
আর শীতকালীন সাবধানতা খুব জরুরী!! করোনা কাল বলে কথা!!
রোকসানা খন্দকার রুকু
কিচ্ছু বুঝতে পারলাম না ভাইয়া।
ছাইরাছ হেলাল
প্রথমটুকু বাদ থাকুক, একটু বলি, সাইদি সাহেব কে চাঁদে দেখা গিয়েছিল, এই কথা আমরা বিশ্বাস করেছি।
তাই ওয়াজ শুনে পিটুনি তো খেতেই হবে!!
করোনা কালে হুটোপুটির ত্রিকা বাৎলে দিলে ভাল হতো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ওইতো প্রিয় মানুষ থেকে দুরে দুরে, সম্মানের সহিত ব্যবহার হল করোনা তরিকা। ধরি মাছ না ছুঁই পানি😜😜
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন।🥰🥰
ফয়জুল মহী
“অনিন্দ্য সুন্দর রচনায় মুগ্ধ !
ভালোবাসা সবসময়”
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার জন্যও শুভকামনা ও কৃতজ্ঞতা সবসময়। ভালো থাকবেন।🌹🌹
বোরহানুল ইসলাম লিটন
খুব সুন্দর সাজানো গোছানো উপস্থাপন।
রম্য হলেও শিক্ষণীয়।
বেশ মুগ্ধতায় শুভেচ্ছা রেখে গেলাম একরাশ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো॥
তৌহিদ
মানব মন বড় বিচিত্র। এ কারনেই কাঁথা কম্বলের ওয়াজ গরমের দিনেও এপ্লাই করতে যাই। কাজের কাম কিছুই হয়না। অন্যকে প্রলুব্ধ করার ক্ষমতা নিয়ে যারা ভুলভাল বক্তৃতা দেন তারা সঠিক কথা বললে এদেশে অন্যায় অনাচার সব চলে যেত।
সুন্দর অনুভাবী লেখা। আপনিও ভালো থাকুন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমার কোরআন হাদিস কিংবা আলেমদের নিয়ে কোন কটুক্তি কিংবা বিদ্যেষ নেই কিন্তু না জেনে কেন তারা ভুল ওয়াজ করে, মনগড়া কথা বলে আসর জমায়। তাদের জন্যই এ লেখা।
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন।
তৌহিদ
কথাতো সেটাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
রম্য লেখায় সমসাময়িক সমস্যা গুলো প্রতিটিই তুলে ধরলেন আপু। ওয়াজ মাহফিলের কল্যাণে সুফল, পতাকার অবমাননা, শিক্ষকদের দায় নিয়ে চমৎকার উপস্থাপন আপু। স্বামীর সাথে দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি খুব মজার ছিল।
রম্য আপুর জন্য নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
রোকসানা খন্দকার রুকু
আমাদের সবার(রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আলেম ওলামা, শিক্ষক,এমনকি ছোট্ট দায়িত্বে থাকা মানুষটিও) জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেটি অবশ্যই সঠিক ভাবে উপস্থাপন করা দরকার।
আপনার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হই দিদিভাই। ভালোবাসা রইলো😍😍
আরজু মুক্তা
ভাগ্যিস করোনা অনেক কিছু শিখালো।
কতোগুলো লোক আছে, না পড়েই পণ্ডিত। আর সমাজে এদের জ্বালা বেশি
রোকসানা খন্দকার রুকু
হুম সেটাই। ধন্যবাদ। অনেক কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা রইল।❤️❤️
প্রদীপ চক্রবর্তী
বেশ লাগলো রম্য লেখনী।
এত সুন্দর করে রম্যময় করে তুললেন, দিদি।
অনেক মজার বিষয়।
এছাড়া শেষের লাইনগুলো জাক্কাস😂
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। সত্যিকারের রম্য। আমাদের যে কি দুরঅবস্হা। সমাজের কোনায় কোনায় সমস্যা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা।😍😍
খাদিজাতুল কুবরা
দারুণ এক রম্য পড়লাম।
কথাগুলো সত্যি, কেনযে অকারণে জল ঘোলা করে মানুষ! বেশি সম্মান আর নেতৃত্বের লোভে অবলা নারীকূলকেই নিশানা বানায়। তবে এখন তো তথ্য প্রযুক্তির যুগ ভুল তথ্য বেশির ভাগ মানুষই নেবেনা।
সবার সু
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ🥰🥰
খাদিজাতুল কুবরা
সবার সুবোধ জাগ্রত হোক।
শেষের দিকের উপদেশগুলো বান্দা যেন নিজেও মানে সে উপদেশ আমি দিলাম।
আর যদি সুসংবাদ শুনি তাহলে ঠিক আছে।
যা খুশি করতে পার রম্যরাণী।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা হা। তুমিও দেখছি ভালোই রম্য জানো। অসাধারণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ প্রিয় বন্ধু। ভালোবাসা নিও।🥰🥰❤️❤️