
সকাল সকাল নেট অন করে পোস্ট ইন্জা ভাইজানের মা নেই। ভীষন কষ্ট পেলাম। আমাদের যাদের মা-বাবা এখনও বেঁচে আছেন আমরা সত্যিই ভাগ্যবান। শীত এসে গেছে, তার উপর করোনা প্রকোপ তাই বুড়ো বাবা-মায়ের একটু বেশি যত্ন নেয়া প্রয়োজন। নিজেরা আমরা বাইরে থেকে এসে অবশ্যই তাদের কাছে যাবার আগে করনীয় কাজগুলো করে নেব। বয়স হবার জন্য তারা শিশুদের মত হয়ে যান, উদ্ভট আচরন করেন তাই আমরা বাচ্চাদের যেমন যত্ন করি তেমনি যত্ন করব। গল্প করব, বেড়াতে নিয়ে যাব, সঙ্গ দেব। জীবনভর তারা আমাদের জন্য কষ্ট করেন শেষ বয়সটুকুতে না হয় আমরাও বাবা-মা হয়ে যাই তাদের!
আমার বাবা নেই; মা বেঁচে আছেন। মাকে নিয়ে লিখলে এ জীবনেও আর শেষ হবে না। মায়ের বয়স আশির উপরে। শরীরে আর আগের মত শক্তি নেই। তবে এখনও দূর্দান্ত প্রতাপশালী, আত্নমর্যাদাবোধ এবং বেশ অহংকারী সবটাই রয়ে গেছে। যেমন- ছেলেরা একটু বাড়াবাড়ি করলে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার চরম হুমকি দেন। কারন সম্পত্তি সব তার নামেই। আবার আমার কাছে তিনি থাকেন এটা মানতে নারাজ। অন্য ভাইবোন নিতে এলে বলেন,
– ও সংসার কিছু বোঝেনা, পাগল-টাগল, অগোছালো তাই পাহারা দেবার জন্য থাকি। আমাকে ওর প্রয়োজন। আমি হাসি আর বেশি বেশি পাগলামী করি যাতে আমাকে ছেড়ে অন্যত্র না যায়। অনেকের কাছে বাবা-মা বিরক্তিকর হলেও আমি বেশ ইনজয় করি।
লিখতে বসেছি যেহেতু রম্য তাই আজ মায়ের সাথে ঘটে যাওয়া কয়েকটা রম্যই শেয়ার করি-
মেজ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে মা হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি আর একবার মেয়ে দেখবেন। আব্বা আর বড়ভাইয়ার উপরে কোন ভরসা নেই। তো যথারীতি মা নিজেই আবার মেয়ে দেখতে গেলেন। তার আন্দাজ একদম ঠিকঠাক হয়েছে। মেয়ে মানে হবু ভাবীর সব ঠিক থাকলেও রং কালো। অহংকারী ভদ্রমহিলা কালো মানুষ দুচোখ্খে দেখতে পারেন না। টেনশানে একাকার হয়ে টলতে টলতে বাসায় চলে এলেন। বাসায় এসে দেখা গেল তার পা খালি। মানে স্যান্ডেল মেয়ের বাসায় ফেলে চলে এসেছেন।🤪🤪🤪
আমি কালো এটা তার বিরাট দুঃখের একটা অংশ। আমার বাবা ফরসা না এবং আমরা ভাইবোনরা সবাই বাপের মত। মায়ের ভাই বোনের ছেলে-মেয়েরা সব সোনম কাপুর, ঐশ্বরিয়া। মজা না, সত্যি সবাই অনেক সুন্দর।রঙ একেবারে দুধে আলতা। মা সারাক্ষন আমাকে ফর্সা বানানোর অনেক টিপস্ দেন। আমার সময় থাকলেও অলস কিংবা এটাই ভালো লাগে তাই কিছুই করিনা। সামান্য ফেসিয়াল করেই আমার জ্বর আসে। সেদিন বাইরে থেকে ফিরে দেখি একটা বাটিতে কি যেন নিয়ে মা বেশ খুশি খুশি। ভয়ে আমার কপাল কুঁচকে গেল।আমায় এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– শারমিন এসেছিল তার কাছে জেনে নিলাম কি কি মাখলে ফর্সা হয়। এই নে মেখে দেখ। নাছোর বান্দা তাই মুখে হাতে পায়ে লাগিয়ে বসে আছি। মিনিট খানেক পরে শুরু হল
– ” ও বাবাগো, মাগো কে আছ বাঁচাও”। মা তুমি এইটা কি বানাইছ এত জ্বলে কেন?
তার নিরুত্তাপ উত্তর- একটু জ্বললে কিছু হবেনা মা। ফর্সা হবি, একটু সহ্য কর। মরিচ বাটনায় বেটেছি তো তাই একটু জ্বলছে!!😭😭😭
দুধে আলতা রং না পেলেও মায়ের পরিবার থেকে কানা খেতাব পেয়েছি। মা নিজেও চশমা পরেন। চশমা হারানোটা যথেষ্ট ঝামেলার। এটা যারা চশমা পরে থাকেন তারা ভালো বুঝতে পারবেন। তাই ডাবল চশমা রাখা ভালো। সেদিন মায়ের চশমা হারিয়ে গেছে। কোথাও পাওয়া যায়নি। আমাকে ফোন করেছে। আমি এক্সট্রা চশমাটা কোথায় রেখেছি বলে দিলাম। একটা ক্লাস বাদ দিয়ে বাসায় ফিরলাম। মাকে দেখে আমি থ মেরে গেলাম। যথারীতি তার কানের পাশের দড়ি গলায় আর চশমা পিঠের দিকে ঝুলে আছে। চশমা পিঠে ঝুলিয়ে তিনি খুঁজে খুঁজে হয়রান। নির্বিকারে উত্তর- ফালতু দড়ির কারনেই এত সমস্যা। না হলে ঠিকই খুঁজে পেতেন।🤪🤪🤪
দুধঅলা এক এক দিন এক এক সময় দুধ দিতে আসে। সেদিন অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে মাকে টাকা দিয়ে বাইরে গেলাম। দুধঅলাকে ফোনে জানিয়ে দিলাম মার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাকিটা যেন ফেরত দেয়। কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে মাকে দুধ গরম করে খেতে দিলাম।
– মা টাকা ফেরত দিয়েছে?
– হ্যাঁ ভালো কথা মনে করেছিস। দুধ রাখতে গিয়ে টাকাটাও ফ্রিজের ভেতর রেখেছি। নিয়ে নিস।
– মা পেলাম না। আমার একটা ফ্রিজ ঈদের জন্য বন্ধ থাকে। ভাবলাম হয়ত সেটাতে রেখেছে। গিয়ে পাশের বন্ধ ফ্রিজের ভেতরে খোঁজা খুঁজি করে ফেরত এলাম।
– তুই তো কানা। তারউপর পাগল। কয়দিন একটু ভালো ছিলি আবার পাগলে পাইছে।
– আরে বন্ধ ফ্রিজের ভেতরে খুঁজলাম তো নাই। আচ্ছা থাক পরে হবে।
– চল আমার সাথে। হিরহির করে নিয়ে গেলেন। ঘটাস করে চালু ফ্রিজের নরমাল থেকে টাকা বের করে দিলেন। টাকা ঠান্ডা হয়ে জমে যাবার উপক্রম।
– আচ্ছা মা, যে চালু ফ্রিজের ভেতর টাকা রাখে সে পাগল না যে খুঁজে পায়না সে পাগল।
– যে খুঁজে পায়না সে পাগল। আমি হতভম্ব।😜😜😜
আর একদিনের ঘটনা-
ল্যাপটপের মাউসটা খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি না।
– মা দেখেছ আমার মাউসটা।
– নাহ্। তোর ওইসব নিয়ে আমি কি করব। অগোছালো, উদাসীন লোকদের জিনিসে আমি হাত দেইনা। দেখ গিয়ে কোথায় ফেলেছিস।
– হ্যাঁ তাইতো। কোথায় যে রাখলাম কাজ করতাম। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পেলাম না। ভেবেই নিলাম হয়ত আমিই ফেলেছি কোথাও। একদিন রান্না করার আগে ফ্রিজ খুলে মাছ বের করছি। কালোমত কি যেন দেখা যায় দুধের বোতলের নিচে। টানাটানি করে বের করে দেখি আমার সেই প্রিয় মাউস।
– মা এটা ফ্রিজে কেন?
– ও এটা মাউস! আগে না লেজ ছিল। আমি ভাবলাম ছিঁড়ে গেছে আর কাজে দেবেনা, তাই দুধের বোতলটা পরে যাচ্ছিল বলে খুঁটি দিয়েছি।😇😇😇
নিজে এতকিছু করেও সব ভালোর দাবিদার। হ্যাঁ তিনি অল্প পড়াশুনা করলেও প্রচুর বই পড়েছেন, অনেক জানেন। গানের গলা সুন্দর। দুটো গান খুব বেশি গাইতে শুনি- “খোকা ঘুমোলো পাড়া জুরোলো বরগি এল দেশে বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে”।
” আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল, সকলি ফুরায়ে যায় মা। এ পৃথিবীর কেউ ভালেতো বাসেনা। এ পৃথিবী ভালো বাসিতে জানেনা, যেথায় আছে শুধু ভালো বাসাবাসি সেথা যেতে মন,,,,এ গান গাওয়ার সময় চোখের কোনে পানি জমে। হয়ত আমরা কেউই তার কষ্ট আজও বুঝতে পারিনি। প্রত্যেকটি মানুষেরই কিছু ছোট ছোট কষ্টের, যন্ত্রণার জায়গা থাকে সে তা কাউকেই বলেনা।
আসুন সবাই বাবা-মায়ের সঙ্গ দেই, তাদের ভালোবাসি, পাশে থাকি।
সবাইকে শুভরাত্রি। 🌹🌹🌹
ছবি- আমার মা।
২৫টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
সুন্দর সাবলীল প্রকাশ। সার্থক রূপকাশ্রিত লেখা l
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আগে হাইস্যা নেই । চমৎকার চমৎকার আপু। বাবা-মা বুড়া হলে কি যে করে বাচ্চাদের মতো! বাচ্চাদের সামলানো সহজ মনে হয় আমার কাছে। দারুন লেখা। নিরন্তর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
দিদিভাই ঠিকই বলেছেন। তারপরও শান্তি অনুভূত হয়। ভালো লাগে। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও ভালোবাসা অবিরাম।💙💙
ছাইরাছ হেলাল
আসলে মা -বাবাি মা-বাবা, এর বিকল্প কিচ্ছু নেই।
যতই হাসাহাসি করি, দিন শেষে তাদের কোলে-ই মাথা রাখি।
আপনি কী পরিমান ফর্সা হলেন তা কিন্তু আমাদের জানাতে ভুলে গেছেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ঠিক তাই বাবা-মা শেষ ঠিকানা।
আর ফর্সা হবার ব্যাপার- কয়লা যতই ধোয়া হোক বাকিটা না বলি। শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
আমার আর কেউ । সবাই দিয়েছে পাড়ি। আপনাদের আছে সেবা করুন। আমি ইঞ্জয় করলাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। তাদের জন্য দোয়া রইল।
শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
মা এর সাথে ঘটে যাওয়া কিছু মজার এবং হাসির ঘটনা পড়ে হাসতে হাসতে শেষ হবার পালা আমার।
মেয়ে দেখতে গিয়ে স্যান্ডেল রেখে আসা, মরিচ বাটার পাটায় মুখে লাগানো ফর্সা করার ক্রিম বানানো, টাকা ফ্রিজে রাখা, চশমা পিঠে থাকা, মাউস ফ্রিজে রাখা, এসব চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। যেন দেখতে পেলাম বাস্তবেই।
মা এর বিকল্প কখনোই হয় না,
আপনার মা এর জন্য অন্তহীন শ্রদ্ধা এবং শুভ কামনা।
লেখা অনেক অনেক ভালো হয়েছে প্রিয় ব্লগার।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইল ভাইয়া।
সুন্দর মন্তব্য করবেন তাহলে সাহস পাই লিখতে। যদিও আপনাদের মত হয়না তারপরও চেষ্টা করতে পারি।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
মায়েরা এমনি। সব মায়েরা ভালো থাকুক। সুস্থ থাকুন।
প্রোপিকটা এবার একটু ঘুরে দিয়েন। দেখি কেমন ফর্সা লাগছে।
আপনার মা কে সালাম জানাইয়েন।
শুভকামনা সবসময়
রোকসানা খন্দকার রুকু
আচ্ছা বললেন যখন ফেলতে তো পারিনা। দেখব কেমন ফর্সা হই। সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ও ভালোবাসা🌹🌹
রেজওয়ানা কবির
যাই কমেন্ট করি না কেন? মনে তৃপ্তি পাই না, মনে হয় কম হয়ে যাবে। আন্টির ফ্রিজে মাউস রাখা, দারুন মজা পেলাম, টাকাতো বরফে কুপকাত আহা! দারুনভাবে লিখেছ, হাসতে হাসতে পাগলপ্রায়। আর এইজন্যই তুমি ফর্সা হয়েছ আপি😋😋আমিও তবে আন্টির পদ্বতি এপ্লাই করব। অনেক অনেক ভালো থাক, শুভকামনা।
রেজওয়ানা কবির
আর হ্যা,পৃথিবীর সব বাবা মাকে আমার ভালোবাসা শ্রদ্ধা, সবাই যেখানেই থাক ভালো থাক,এই কামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ফর্সা হইছি না😜😜। মজা নেয়ার জায়গা পাইলা না। আচ্ছা আম্মাকে বলে তোমার জন্য জ্বলন্ত প্যাক বানায় নিয়ে যাব। টের পাবা। শুভ কামনা রইলো।
আলমগীর সরকার লিটন
ভালই লেখেছেন রুকু আপু অনেক শুভেচ্ছা জানাই
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো।🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
মা এর বিকল্প নেই।
মা অন্তর্যামী।
সকলের মা বাবা ভালো থাকুক।
.
ভালো লাগলো আপনার রম্য পড়ে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা।
শুভ কামনা রইলো।
শুভ সকাল॥🌹🌹
মনির হোসেন মমি
মা’কে নিয়ে অনেক লেখাই পড়েছি কিন্তু এমন বন্ধুসুলভ মা’কে নিয়ে লেখা প্রথম পড়লাম। ফ্রিজে টাকা মাউস রাখাটা মায়ের সরলতার প্রকাশ।মাকে যত দিন পারেন বুকে আগলে রাখুন -মা হারানোর যন্ত্রণা ব্যাথা অনুশোচনা কতটা কষ্টের তা আমি বুঝি।আপনার মায়ের দীর্ঘায়ু কামনা করছি। পরলোকগত জগতের সকল মায়েরা শান্তিতে থাকুক এই কামনাা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হুম মা অনেক মজার ঘটনা ঘটায়। আমি ভীষন ইনজয় করি।
দেখে কিন্তু মোটেও বোঝার উপায় নাই। ছবিতে কি শান্ত।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া। শুভ সকাল।🌹🌹
তৌহিদ
মায়ের ভালোবাসার বিকল্প আর কিছুই হয়না। আসলে প্রত্যেক মা ই তার মেয়েদের মাঝে নিজেকে খুঁজে পেতে চান।
মায়ের জন্য দোয়া রইলো। চমৎকার সব ঘটনায় খুব হাসি পাচ্ছে আমারও। ভালো থাকুন আপু।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হাসাতে পেরে ধন্য হলাম ভাই।
শুভ কামনা আপনার জন্যও।
শুভ সকাল।🌹🌹
হালিম নজরুল
পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি রইল অসীম শ্রদ্ধা
রোকসানা খন্দকার রুকু
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
শুভ কামনা রইলো।
ভালো থাকবেন।