
” আজ তোমার চুলটা বাঁধা হয়নি ঠিক মতো! ”
ওর কথা শুনে আয়নায় ফিরে তাকালাম। ক্ল্যাপস ব্যান্ডটা দিতে গিয়ে অকারণে চুলগুচ্ছ ফুলে গেছে। ঝটপট ঠিক করে বের হলাম। ৮:৩০ বাজে।
” তুৃমি কিন্তু বড্ড দেরি করে ফেললে? তেলও পুরাও নি ! ”
ওহ – হো! তাই তো!
স্নিকারস পরে ভেসপা স্টার্ট দিলাম। মনোযোগ ধরে রাখতে পারছি না। কতো কথা মনে পরছে ! নিধি যখন তিন মাস। তখন ও সাত আসমানে পাড়ি জমায়। স্বল্প সময়ের ভালোবাসা এমনি বন্ধনহীন গ্রন্থি দিয়ে বেঁধে রেখেছে যে, মনের অজান্তে ওর সাথে কথোপকথন শুরু হয়।
বিয়েটা ঢাক ঢোল পিটিয়ে তিনদিনের মাথায় হয়েছিলো। অপরিচিত থেকে পরিচিতির বেশে আসতে বেশি সময় নেইনি। রোমান্টিকতার বাহার ছিলো।
বাবা মায়ের বড় মেয়ে বলে ছাড় দিতে দিতে নিজেকে পাখির ডানায় ভর করে আকাশ দেখিনি কখনো ! ময়ূরের নীল রং পছন্দের তালিকায় থাকলেও ; শো রুমে গিয়ে একটা বড় নিঃশ্বাস গোপনে বাইরের কার্বন ডাই অক্সাইডের সাথে মিশে, নিজের বেদনার বিষক্রিয়াটা কমিয়েছে। উদাসী বিকেলে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুকে চুমুকে আড্ডা জমেনি। বরং কফির চামচে জীবন মেপেছি।
পড়া শেষ করে চাকরি ! বাবার সংসারে সাথী হলাম। ভাইবোনদের আবদার পূরণ করলেই মনে হয়, নিজেরটা হয়ে গেলো।
রাফসান, কেমনে জানি বুঝে গেলো, হৃদয়ের গোপন কুঠুরির কথাগুলো। নীল, সাদা, কালো রং এর ড্রেস গুলো শোভা পেতে লাগলো আলমীরাতে। পছন্দের লিপস্টিক! বাহারি নেইলপালিশ। ওর মনে হয় সিক্সথ সেন্স বেশি ছিলো। না হলে ——–!
যাক ! সুখ পাখি বন্দি থাকেনা। আর আমার দুখের সাথে সন্ধি দলিলে পাকাপোক্ত হলো। নিধিকে নিয়ে আমার সংগ্রামী পথ চলা শুরু ঢাকা শহরে।
ঘ্যাঁস করে বাইক থেমে গেলো মাঝ পথে। আসলেই তেল পুরতে ভুলে গেছি। জীবন ঠেলার মতো বাইক ঠেলা শুরু করলাম। আচ্ছা, রাফসান কেমনে জানে, আমি যে তেল পুরিনি!
ঢাকার অলিগলিও সাত সকালে ব্যস্ত হয়ে পরে। করোনার কারণে লেবুওয়ালার হাঁকডাক বাড়ছে। নিধির স্কুল পেরোতেই মনে হলো ; কতোদিন মুখরিত হয়না ঐ সবুজ মাঠটি! ফুসকা, চটপটি, চানাচুরওয়ালারা কি করছে? রিংটোনের শব্দে, চমকে দেখি ; ৪ টা মিসকল।
মেয়ের ফোন। মা, তুমি পৌঁছিয়েছো?
না, বাবা! ৫ মিনিট লাগবে।
পৌঁছে ফোন দিও।
আবার ফোন! তিতাসের!!!!
কি রে, তোর কোন খবর নাই!
জানিস তো একলাই সব করতে হয়! তুই ও ফোন দিস না!
তুইও বেমালুম ভুলে গেছিস। গত পরশু আমার জন্মদিন গেলো। এই প্রথম তুই উইস করলি না।
নিজের উপর রাগ হলো। আজকাল সব ভুলে বসে আছি। শোন, আমি পথে। অফিসে পৌঁছে ফোন দিবো। কিছু না বলে, ও লাইনটা কেটে দিলো।
অফিসে পৌঁছে কফির অর্ডার দিয়ে কাজ গুছাতে লাগলাম। বৃষ্টির ঝাপটা দেখে মনে হলো, কফিতে চুমুক দেই। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে, নির্মল সবুজ প্রকৃতিতে ডুব দিলাম। আরে আমি এতোক্ষণ, কার কথা ভাবছিলাম। রাফসান, তিতাস! এরা তো কবেই না ফেরার দেশে চলে গেছে।
ঢাকার এসি রুম। অন্ধকার বাসা। স্মৃতিরাও অন্ধকারে থাকতে চায়। দিন রাতের হিসাব আকাশ দেখে হয় না ! ঘড়ি কথা বলে। ভর দুপুরে আলো জ্বালাতে হয়। আমরাও হুমড়ি খাই। নিকষ কালো, গভীর অন্ধকার ধোঁয়ার মতো কুন্ডলি পাকিয়ে গ্রাস করে।
” কি এতো ভাবছো ? কফিটা তো শেষ করো! “
৩৪টি মন্তব্য
উর্বশী
এতো দেখছি আমার জীবনের গল্পের কিছু অংশ। কোথায় যেন মিল আছে।দারুন জীবন মুখী লেখা অন্তত আর কাছে।
যাপিত জীবনে স্মৃতিরাও ঘুরে বেড়ায় বেলা– অবেলায়।নিয়মের বেড়াজালে বন্দী হয়ে থাকেনা। খুব ভাল লাগলো আপু।
অফুরান শুভ কামনা অবিরাম।
আরজু মুক্তা
আপনাদের ভালো লাগা মানে লেখাটা স্বার্থক। জীবনটাই এমন। বাঁকে বাঁকে কোথাও না কোথাও মিলে যায়।
শুভকামনা।
মনির হোসেন মমি
জীবন রংয়ের আলো আধাঁরের খেলায় মানুষ যেন অসহায়।কাজের ফাকে আনমনে কত স্মৃতিই না উকিঁ দেয়-কিছুটা মনের শান্তি কিছুটা আফসোসে ছেয়ে যায় মন।।অনুগল্প মাশাল্লাহ্ ভাল হচ্ছে।
আরজু মুক্তা
সবটাই আপনাদের অনুপ্রেরণায়।
জীবনটাই আলো আঁধারের খেলা।
শুভকামনা ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
বাছাই-শব্দের প্রয়োগ ও বিস্তার, ছোট্ট বাক্য (বরং কফির চামচে জীবন মেপেছি) থেকে বড় বাক্যে নিয়ে
ছোট গল্পের প্রকৃত স্বাদ এনে দিয়েছেন। সহজ ছিল না। ক্যামনে লেখে কে জানে!!
লোভ হচ্ছে লিখে ফেলার!! কিন্তু সবার জন্য সব না।
এই ব্লগে একজন লিখতো এক শব্দে বাক্য, দু’শব্দে, তিন শব্দের বাক্যে।
চালু রাখেন, আপনি সফল হয়ে-ই আছেন।
আরজু মুক্তা
উৎসাহ, আর অনুপ্রেরণা পেলে কিছুটা এগুনো সম্ভব।
আপনার সুন্দর কমেন্ট নিশ্চয় আর একটি গল্প লেখার আশাবাদ জাগাবে।
শুভকামনা সবসময়
ফয়জুল মহী
প্রীতিজনক স্নিগ্ধোজ্জ্বল
নন্দিত অনুভূতি চলনসই প্রকাশ
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বেলা অবেলায়।
খুবি সুন্দর একটা গল্প উপহার দিলেন।
ছোটগল্পে শব্দের ব্যবহার অসাধারণ, দিদি।
আরজু মুক্তা
আপনাদের অনুপ্রেরণায়।
ভালো থাকবেন
সুপায়ন বড়ুয়া
সুখ পাখি বন্দি থাকেনা। আর আমার দুখের সাথে সন্ধি দলিলে পাকাপোক্ত হলো। নিধিকে নিয়ে আমার সংগ্রামী পথ চলা শুরু ঢাকা শহরে।
জীবন যুদ্ধের কঠিন বাস্তবতা অবলীলায় সুন্দর করে তুলে ধরলেন। ভালই লাগলো। শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
জি দাদা।
জীবন মানেই সংগ্রাম।
শুভকামনা
তৌহিদ
এরই নাম জীবন। বেলা অবেলার হাত ধরে কেটে যায় মুহুর্তগুলি।
চমৎকার লিখেছেন আপু।
আরজু মুক্তা
বেলা আর অবেলা পালাক্রমে আসে।
শুভকামনা ভাই
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পুরো গল্টটাই অসাধারণ।
“বাবা মায়ের বড় মেয়ে বলে ছাড় দিতে দিতে নিজেকে পাখির ডানায় ভর করে আকাশ দেখিনি কখনো ! ময়ূরের নীল রং পছন্দের তালিকায় থাকলেও ; শো রুমে গিয়ে একটা বড় নিঃশ্বাস গোপনে বাইরের কার্বন ডাই অক্সাইডের সাথে মিশে, নিজের বেদনার বিষক্রিয়াটা কমিয়েছে। উদাসী বিকেলে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুকে চুমুকে আড্ডা জমেনি। বরং কফির চামচে জীবন মেপেছি।”- এই প্যারাটা অসম্ভব ভালো লেগেছে আপু। বাস্তবতার কঠিন রং রূপ তুলে ধরেছেন ছোট গল্পে। আপনার হাতে জাদু আছে আপু। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
আরজু মুক্তা
আপনাদের ভালো লাগা, আর আমার কলমের গতি একসুত্রে বাধা। জাদু নেই। কিন্তু আপনাদের সুন্দর সুন্দর কমেন্টে আশাবাদ ফিরে পাই। জীবনটাই সংগ্রামের।
আপনিও ভালো থাকবেন।
শুভকামনা
বন্যা লিপি
একটা বাস্তবতায় নিস্পেসিত মেয়েবেলা থেকে একজন পরিপূর্ণ নারী হয়ে উঠতে উঠতে মাঝখানে বয়ে গেছে অধরা কিছু প্রজাপতির উড়াউড়ি। রাফসান এসে জীবনকে ভালবাসায় ভরিয়ে দেবার আগেই অজানায় হারিয়ে গেছে কন্যাসন্তানের দায়িত্ব ধরিয়ে দিয়ে। একজন বন্ধু তিতাসও থাকেনি নিয়তির অমোঘ নিয়মে। জল্পনার ঘোরটোপে তবু এদের সাথে নিয়ে প্রতিদিন ভেসপার চাবি স্টার্ট দেয়া। কফির চামচে এক চামচ জীবন।(হেলাল সাহেবের এমন উক্তি বড্ড পছন্দ হলো) আপনি ছোট গল্প, অণুগল্পে সিদ্ধহস্ত। দুর্দান্ত।
আরজু মুক্তা
মন্তব্য পড়ে আমি আপ্লুত। গল্প চলুক গল্পের মতো।
ভালোবাসা অবিরাম।
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর এক গল্প পাঠ করলাম মনে ভরে গেলো অনেক শুভেচ্ছা রইল মুক্তা আপু
আরজু মুক্তা
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
ভালো থাকবেন
রোকসানা খন্দকার রুকু
এমন চমৎকার লিখনিতে মন্তব্য করার পর নিজেকে মারতে ইচ্ছে করে। কেন জানেন মন্তব্য লেখকের মত না হোক কাছাকাছি যাওয়া উচিত।
দুতিনবার পড়েও ভাবের ভাষা খুঁজে পেলাম না। আমার ভাষা তো পানি বরাবর।
হেলাল ভাইয়া ঠিকই বলেছেন ক্যামনে লিখেন। অভিবাদন আপনাকে। শুভ কামনা। শুভ সকাল।
আরজু মুক্তা
আপনাদের অনুপ্রেরণা পেলে কলম গতি পায়।
ভালো থাকবেন।
শুভকামনা
রেজওয়ানা কবির
লেখাটি পড়ে একটা গানের কথা মনে পড়ে গেল।পুরো গানের লিরিক তুলে দিলাম আপু💙
“অন্ধকার ঘরে, কাগজের টুকরো ছিঁড়ে
কেটে যায় আমার সময়
তুমি গেছো চলে
যাওনি বিস্মৃতির অতলে
যেমন শুকনো ফুল বইয়ের মাঝে রয়ে যায়
রেখেছিলাম তোমায় আমার হৃদয় গভীরে
তবু চলে গেলে এই সাজানো বাগান ছেড়ে
আমি রয়েছি তোমার অপেক্ষায়…
নিকষ কালো এই আঁধারে
স্মৃতিরা সব খেলা করে
রয় শুধু নির্জনতা
নির্জনতায় আমি একা
একবার শুধু চোখ মেলো
দেখো আজ পথে জ্বালি আলো
তুমি আবার আসবে ফিরে
বিশ্বাসটুকু দু’হাতে আঁকড়ে ধরে।
কিছু পুরোনো গান
কিছু পুরোনো ছবির অ্যালবাম
এসবই আমার সাথী হয়ে রয়
কাকডাকা ভোরে
যখন সূর্য ঢুকে ঘরে
কালো পর্দায় বাধা পেয়ে সরে যায়
আমার এ জগত বড় আগলে রাখে আমায়
তবু মাঝে মাঝে মনে হয়
মৃত্যুই কি শ্রেয় নয়
আমি রয়েছি তোমার অপেক্ষায়
নিকষ কালো এই আঁধারে
স্মৃতিরা সব খেলা করে
রয় শুধু নির্জনতা
নির্জনতায় আমি একা
একবার শুধু চোখ মেলো
দেখো আজ পথে জ্বালি আলো
তুমি আবার আসবে ফিরে
বিশ্বাসটুকু দু’হাতে আঁকড়ে ধরে
আমার সব গান ধূলোয় মিশে যেতে চায়
অস্তিত্বের প্রয়োজনে
চাই তোমাকে এখানে
আমি রয়েছি তোমার অপেক্ষায়
নিকষ কালো এই আঁধারে
স্মৃতিরা সব খেলা করে
রয় শুধু নির্জনতা
নির্জনতায় আমি একা
একবার শুধু চোখ মেলো
দেখো আজ পথে জ্বালি আলো
তুমি আবার আসবে ফিরে
বিশ্বাসটুকু দু’হাতে আঁকড়ে ধরে”।
আরজু মুক্তা
আপি, এটা কার গান?
জীবনটাই এমন। আলো আঁধারের খেলা। বিশ্বাসটুকু নিয়ে বেঁচে থাকা।
শুভকামনা আপনার জন্য।
রেজওয়ানা কবির
আপু এটা পেপার রাইম নামক ব্যান্ডের গা ন।১৯৯৬ সালে প্রথম এই গান বের হয় এই গানের সাথে সুইসাইড ভিডিও আছে। তবে এখন অনেক শিল্পীই এই গান গায়।
আরজু মুক্তা
পেপার রাইমের গান শুনলাম। ভালো লাগলো
শামীম চৌধুরী
আপনার গাল্পিক ভাষা,শব্দ চয়নে ব্যাবহারে সত্যি সত্যিই ছোট গল্পের স্বাদ পেলাম।
চমৎকার গল্পটি।
শুভ কামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
এতো সুন্দর কমেন্ট! মাথা পেতে নিলাম।
গল্প ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
শুভকামনা।
ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
যারা দায়িত্ব নেয় তারা নিজেকে ভুলে যায়,
পিষ্ট হতে থাকে ইচ্ছে গুলো।
তারপরেও মনের গহীনে থাকা মানুষদের সাথে কথা বলি আমরা নিজেকে ফিরে পাবার যাতনায়।
আজকাল খুবই ভালো লিখছো।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
ঠিক বলেছেন। দায়িত্ব নিলে নিজের ইচ্ছা আর থাকে না।
ধন্যবাদ অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য।
সুস্থতা কামনা করছি।
রোকন রিপন
ভালো লিখেছেন আপু ।
আরজু মুক্তা
শুভকামনা
আব্দুল্লাহ আল তানিম
এই ব্লগে এসে নতুন অ্যাকাউন্ট খুললাম। আপুর লেখাগুলো পড়লাম। মাশা-আল্লাহ বেশ চমৎকার ভালো লাগলো।
আরজু মুক্তা
আমি অভিভূত।
দোয়া করবেন। কলম যেনো চলে।