“খোরাক” শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। একেকজনের খোরাক একেকরকম। কারো চোখের খোরাক কারো মনের খোরাক। এই খোরাক মেটানোও খুব কষ্টসাধ্য কেননা মানুষের চাহিদার শেষ নেই। মানুষ যা চায় তা যতক্ষন পর্যন্ত না পায় ততক্ষন পর্ষন্ত সেই চাওয়ার পিছনে ছুটতেই থাকে, ছুটতে ছুটতে একটা সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে,কিন্তু ছুটতেই থাকে,,,, খোরাক মেটানো বলে কথা। কিন্তু অনেকেই সেই সাধের খোরাকের দেখা আদৌ পায় না। আবার অনেকে এই দূর্লভ খোরাকের দেখা পেয়েও হারিয়ে ফেলে। মাঝে মাঝে ভাবতে অবাক লাগে, এতকিছু আছে কিন্তু মনে হয় কিছুই নেই । খোরাক এক আলাদিন এর আশ্চর্য প্রদীপ মনে হয়,যে প্রদীপের আলোতে আমরা দিশেহারা হয়ে যাই। কিন্তু সেই নিয়ন আলোর আলো ও যে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে এক মুহূর্তে সব চুরমার করে দেয় তা কেউ বোঝে না। তখন তারা মেতে ওঠে খোরাক পুরনের উন্মাদনায় গা ভাসিয়ে দেয়। হায়রে খোরাক, কারো চোখের খোরাক,কারো মনের খোরাক আবার কারো দুটোরই খোরাক। এই দুই খোরাকই ভয়ানক। কারন যা চোখে বা সামনাসামনি দেখতে ভালো লাগে তা প্রতিনিয়ত যদি চোখের সামনে না দেখতে পাওয়া যায় তবে ভয়ানক যন্ত্রনায় মানুষ কাতরাতে থাকে। এ যেন অনেকটা গলা কাটা মুরগীর মত। মুরগী জবাই করলে প্রচুর রক্তক্ষরন হয় কিন্তু মানুষ ভেঙ্গেচুরে চুরমার হয়,খোরাকের দেখা পাওয়া ঢের দেরী। চোখের খোরাক হল,যেমন কাউকে আপনার ভালো লাগে, প্রতিদিন যদি তাকে কোন কারনে চোখের সামনে না দেখতে পারি,তখন চোখের খোরাক মেটাতে না পারার যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকেন। এ কাতরানোর জ্বালা সেই বোঝে যে এই পরিস্থিতিতে পড়ে। আবার কারো ভালোবাসা বা ভালোলাগার খোরাক নেই আছে শুধু অর্থলোভের খোরাক,একে বলে অর্থলোভের খোরাক । টাকা যত বেশী,আরও তত চাই।
এবার আসি মনের খোরাকের কথায়, সাধারণত চোখের খোরাকের মাধ্যমেই আসে মনের খোরাক। কারন কাউকে ভালোলাগলে তাকে যখন দেখতে ইচ্ছে হয় তখন তা চোখের খোরাক, আর যখন তাকে শুধু দেখা না একেবারে নিজের করে পেতে ইচ্ছে করে তখন তা হয় মনের খোরাক। চোখের খোরাক না মিটলেও সেই না পাওয়াটা মানুষ ধীরে ধীরে ভুলে যায়। তবে মনের খোরাক না মিটলে মানুষ আর নিজের মধ্যে থাকে না, হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলে, অনেক ভুল করে,ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, এমনকি এক নিমিষেই নিজের আমিটাকে এমনভাবে শেষ করে যে সেই শেষ থেকে শুরু করা আদৌ সহজ কাজ নয়। শেষ থেকে যে আবার শুরু করে সেই। জয়ী হয় আর যে শুরু করতে পারে না সে হারিয়ে ফেলে নিজের সত্ত্বাকে।নিজেই আর নিজেকে তখন চিনতে পারে না শুধু নিজেরই নিজেকে প্রশ্ন করে,,,,,,এই আমি সেই আমি???? এই প্রশ্নে নিজেই নিজেকে জর্জরিত করে ফেলে। শুধুমাত্র একটা শব্দ “খোরাক “।
খোরাক মানুষের জীবনে থাকবেই, তাকে ঘীরে অনেক স্বপ্নও থাকবে কিন্তু সেই খোরাককে পাওয়ার আশা করা যাবে না। মনকে এমনভাবে কম্পিউটারের প্রোগ্রামিংএর মত সেটিংং করতে হবে যে খোরাক সেটা মনের বা চোখেরই হোক সেটা নিজের মধ্যেই থাক,তার স্বকীয়তাও থাক, শুধুমাত্র নিজের মাঝে। যদি না মেটে খোরাক তাতে আফসোসের কিছু নেই। হয়ত সেটা আপনার ভাগ্যেেই নেই এই ভেবে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করুন আর পৃথিবীতে কোন কিছু পাওয়ার আশাই করবেন না,তবেই সুখী হবেন। যখনই আশা করবেন তা যদি না পান তবে জীবনটা হবে জলে ভাসা পদ্মের মত,যেখানেও থাকবে ছলনা।
তাই,,,,,, যা আপনার ছিল তা যতই এই মুহূর্তে পরিস্থিতি বা যেকোনো প্রতিকূলতার প্রতারণায় কাছে না থাকুক, তা যদি সত্যি আপনার হয় সেটা সকল বাঁধা পেড়িয়ে আপনার কাছে ফিরে আসবেই। আর যা আপনি শত চেষ্টা করেই ধরে রাখুন না কেন? তা আর ফিরে আসবে না কেননা তা আপনার কখনোই ছিল না ,,,,, এটাই বাস্তবতা। আর খোরাক খোরাকের জায়গায় থাক,শুধু আমরা চিন্তাচেতনার পরিবর্তন করি,ভালো থাকি,শান্তিতে থাকি।
আজ এই পর্যন্ত,সবাই ভালো থাকবেন।।।
২৫টি মন্তব্য
রোকসানা খন্দকার রুকু
তোমার না “আবেগ ও মনের অলিগলি” লেখার কথা ছিল? আমি তো এইসব বুঝিনা। বুঝতেও চাই না। কারন “এইটুকু আমার মন যদি ভেঙে যায়!!!!! কি হবে?”
আবার আসব।
রেজওয়ানা কবির
হুম লিখার কথা ছিল,কিন্তু যতবার লিখতে চাই ততবারই কলম থেমে যায়,তাই লিখতে পারি নাই। তবে লিখব,,,,
আলমগীর সরকার লিটন
এই খোরাক থেকেই অনেক সময় অঘটন ঘটে যায় সুন্দর লেখেছেন কবির আপু
রেজওয়ানা কবির
হুম ভাইয়া, ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
যেকোনো খোরাকই মানুষের মৌলিক চাহিদার সাথে যুক্ত। ভালো থাকার জন্য নিজেকে প্রত্যাশাহীন/ অনুভূতিহীন করে রাখাটাও একধরনের খোরাক। চাহিদা বাস্তবসম্মত হলে খোরাক আপনাআপনিই জুটে যায়। আমরা যাই-ই করিনা কেন সবই খোরাক হিসেবে বিবেচিত। আবারও খুব সুন্দর একটা পোস্ট উপহার দিলেন। ধন্যবাদ ও শুভ কামনা 🌹🌹
রেজওয়ানা কবির
আপনার মন্তব্যেও কৃথার্থ হলাম। সত্যি আমরা যাই করি না কেন সবই খোরাক,কথাটা ভালো লাগল। ভালো থাকবেন,শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভালো থাকার জন্য নিজেকে প্রত্যাশাহীন/ অনুভূতিহীন করে রাখাটাও একধরনের খোরাক।***
জানতাম না। আমি ভাবতাম আমি বোধহয় এরবাইরে। মানে যেটা করছি সবটাতেই খোরাক আছেই।
রেজওয়ানা কবির
ভালো থাকার জন্য নিজেকে প্রত্যাশাহীন/ অনুভূতিহীন করে রাখাটাও একধরনের খোরাক।***খুব সুন্দর একটা কথা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
‘খোরাক’ নিয়ে দারুণ একটি লেখা লিখে ফেললেন। আমাদের চাহিদা গুলোই ‘খোরাক’ , বেঁচে থাকার জন্য যা যা দরকার তার সবই তো ‘খোরাক’। চাহিদা টা বেশি হলেই সমস্যা সৃষ্টি হয় অবশ্যই মনের খোরাক , চোখের খোরাক, ভালোবাসার খোরাক সবার জন্যই দরকার । নিরাপদে থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ প্রিয় আপু,ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন।ভালোবাসা অবিরাম।
সুপায়ন বড়ুয়া
চাহিদা ও উপযোগীতা এই পার্থক্যটুকু পড়েছিলাম।
যা পাওয়ার যোগ্য তাহাই চাহিদা।
ছেলেবেলায় ছোট বাইসাইকেল আমার শক ছিল বাবা পুরন করেছে। যদি বলতাম কার তাহলে হয়তো খেলনাই আনতো। তার বেশী চাহিদা পর্যায়ে পড়ে না।
চোখের মনের খোরাক যদি আদায় যোগ্য হলে ঠিক আছে। তা না হলে সেটা খোরাক নয়।
ধন্যবাদ। শুভ কামনা।
রেজওয়ানা কবির
ভাইয়া এগুলো তো অর্থনীতির ভাষা।ধন্যবাদ, আমি যা লিখেছি শুধু নিজের কথা। ভালো থাকবেন।
ছাইরাছ হেলাল
খোরাক নিয়ে সুন্দর বিশ্লেষন আপনার।
চাহিদা আমাদের হয়/থাকে, তা সে মনে হোক বা অন্য কোন।
এটি কে/কার কীভাবে মিটাবে/মিটবে সেটি ই আসল মানুষ্যত্বের পরীক্ষা।
রেজওয়ানা কবির
ঠিক বলেছেন ভাইয়া। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন৷
আরজু মুক্তা
খোরাকের ইংলিশ যদি হয় স্যাটিসফ্যাকশন, তাহলে নিজের চাহিদা অনুসারে তা হওয়া উচিত। তাহলে অন্তত হতাশা আসবেনা।
ভালো লাগলো খোরাক
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু, শুভকামনা।
তৌহিদ
খোরাক আমাদের চাওয়াপাওয়ার পূর্ণতা অপূর্ণতাকেই বোঝায়। মনের সুখ শান্তি এতে জড়িত। এই শান্তির আশায় ঘটে যায় নানাবিধ অঘটন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে খোরাকের চাহিদা মেটাতে কিছু নরপশুর রুপ দেখছি আমরা।
চমৎকার লিখেছেন আপু। শুভকামনা সবসময়।
রেজওয়ানা কবির
ঠিক বলেছেন ভাইয়া। ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।
সুরাইয়া পারভীন
শেষের প্যারা দারুণ। এটা চিরন্তন সত্য যা আমার তা কাছে না থাকলেও আমার আর যা আমার নয় তা কাছে থাকলেও আমার নয়। কতিপয় মানুষ নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও মেক্সিমাম মানুষ ই এ কাজে অপারগ। যার ফলশ্রুতিতে কষ্ট দুঃখ হতাশা যন্ত্রণা পুষতে হয় মানুষ।
সুন্দর পোস্ট করেছেন
ধন্যবাদ অশেষ
রেজওয়ানা কবির
ধন্যবাদ আপু।শুভকামনা অবিরাম।
পপি তালুকদার
খোরাক নিয়ে অনেক ভালো লিখলেন।আসলে সব কিছুতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করাটা হলো প্রকৃত মানুষের কাজ তার ব্যতিক্রম হলে তা মানবিক পর্যায় থাকে না।
রেজওয়ানা কবির
হুম ধন্যবাদ আপু।শুভকামনা, ভালো থাকবেন।
রেহানা বীথি
অতিক্ষুদ্র এক একটি ইচ্ছে, যা চেতন কিংবা অবচেতনে আকাঙ্ক্ষায় থাকে, সবই খোরাক। যতক্ষণ জীবন ততক্ষণ চাহিদা, খোরাক মেটানোর অদম্য বাসনা।
ভীষণ সুন্দর একটি পোস্ট আপু।
শামীম চৌধুরী
একেক জনের খোরাক একের ধরনের। তবে খোরাক যেন হয় হালাল।
উর্বশী
সুন্দর পোষ্ট।ছোট, বড় যে কোনো চাহিদার পরিপূর্ণতাই তো খোরাক। মানষিকতা অনুযায়ী, মানুষ ভেদে এর বিকাশ ঘটে।বেঁচে থাকার অদম্য কাজ করে এই খোরাক। আসলে এটা লিখে শেষ হবে না পাতার পর পাতা ভরেযাবে।যে কোনো কাজে নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরী। হতাশা নামক জিনিস কাছে আসবেনা।
অনেক ভাল লিখেন,লিখেছেন, এবং ভবিষ্যতেও ভাল লিখবেন অফুরান শুভ কামনা রইলো।