
মৃত্তিকার কোলে জন্মে দোল খেয়েছি অশ্বথ শেকড় ঝুলে।
হাঁটতে শিখেছি অশ্বথের ডালে আঙুল ছুঁয়ে।
হাতেখড়ি থেকে প্রাইমারি__
এক এক করে বিদ্যাপিঠের শেষ প্রাঙ্গন দাপিয়েছি অশ্বথের ছায়ায়।
রোদ-বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝার সাধ্য কি আমার ছায়া মাড়ায়!
একদিন জোয়ার ভাটার খেলায় অশ্বথের শেকড় আঁকড়ে রাখতে পারেনি আর।
ভাসতে ভাসতে ঠাঁই হলো কাঠের পাটাতনে,
যেদিকে তাকাই অথৈ,
মাথার উপর থাকা সেই বোধিসত্ত্ব স্থির স্থিতধী কোথায়?
চোখের জল ছলকে উঠলে ট্যালিপ্যাথিতে শুনতাম অশ্বথের আকুল ডাক __
আয় ফিরে আয়!
স্বার্থপর আঠালো পোকার মতো খুবলে খেয়েছি ছাল বাকল।
কিছুকাল পর নিজের মধ্যে দেখি ছায়া অবিকল!
ধীরে ধীরে অশ্বথের কশেরুকাতে জন্মায় লসিকা মজ্জা,
আমি টের ও পাইনি আমার অশ্বথের সার খেয়ে নিয়েছে ঘুন পোকা।
হঠাৎ করে আমার অশ্বথ হেলে পড়লো অনন্ত ঘুমে।
ছুটে গিয়ে স্পর্শ করলাম নিস্তব্ধ নিথর শীতল দেহ!
অথচ শীত কাটতো আমার এ পাঁজরের ওমে।
আমার চিৎকার শিৎকার, কল্প রাজ্যের সোনার কাঠি
কোন কিছুই ভাঙতে পারেনি সেই কালঘুম।
রিখটার স্কেলে দশ মাত্রার ভূমিকম্পের কম্পনে চূর্ণ বিচূর্ণ হলো আমার ভেতর বাহির!
জীবন তাপ উত্তাপে গলে গলে শক্ত ধাতুতে পরিণত হওয়ার কৌশল শিখিয়ে __
অশ্বথ বিলীন স্মৃতি গর্ভে।
কাঠখড় রোদে পুড়ে তাম্রবর্ণ হয়ে নিঃশব্দে খুঁজি আর বুঝি অশ্বথের প্রতিরুপ আমি।
২৫টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
অশ্বথ খুঁজতে খুঁজতে তার প্রতিরূপ হয়ে নিজেই নিজের মত করে ছুঁতে পারা কঠিন হলেও
অসম্ভব নয়, স্মৃতি হাতড়ে /হাঁকড়ে খুব সুন্দর কবিতা।
কবিতা -প্রাণ হলে যা হয়!!
আমি নুতন একটি এক্সটেনশন ব্যাবহার করে বাংলা লিখি, তাই টাইপিং মিস্টেক হয়।
খাদিজাতুল কুবরা
যখনই অস্থিরতা আসে মনে মনে সেই সুপারম্যান /সুপারহিরোকে খুঁজি,
যে আমার সকল সমস্যার সমাধান এক তুড়িতে করে দিতো। মেয়েরা বাবা মা কে মৃত্যুর আগেই অনেকটা হারিয়ে ফেলে।
নিজেও মা হয়ে সেই দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ভুলে যেতে হয় সবস্মৃতিগুলো।
অশেষ ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানবেন ভাইয়া।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রেরণা পেলাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কিভাবে লেখেন? টিউশান দেওয়ার সময় থাকলে একটু দেন ম্যাডাম। কিছু শিখি। বিস্তারিত মন্তব্য করার সাধ্য নেই। জীবনমুখী কবিতা। অনেক ভালো লাগলো।
শুভ কামনা।
খাদিজাতুল কুবরা
রুকু আপু কি যে বলেন!
আপনি কতো ভালো লিখেন!
আমি তো আপনার মতো লিখতে পারিনা।
আসলে সেই অশ্বথ আমার বাবা। উৎসাহের জায়গাটা সেখানেই। তিনি খুব স্বপ্নবাজ মানুষ ছিলেন। বড় সন্তান হওয়ার সুবাদে ভীষণ ভালোবাসতেন কিন্তু প্রকাশ করতেন না । বুঝেছিলাম বিয়ের পর। তখনতো বাধ্য হয়ে দূরে থেকেছি। এভাবেই একদিন না ফেরার দেশে চলে গেছেন। এখন আমিও বাবার ভূমিকায়।
সবসময় অনুপ্রাণিত করার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানবেন প্রিয়!
আরজু মুক্তা
অশ্বত্থ গাছ মহীরুহ হয়ে সংসারে সব করে। আমরাও তার কাছে শিক্ষা নিই। প্রকৃতি ই তো বাবা মা। কখনো বড় গাছ কখনো ছোট গাছ হয়ে থাকি সংসারে। সবারি মূল্য আছে। আমরাই অপারগ বুঝতে।
খাদিজাতুল কুবরা
হ্যাঁ আপু ঠিকই বলেছেন। সংসারতো সকলকে নিয়েই।
অনেক ধন্যবাদ
সুপায়ন বড়ুয়া
“হঠাৎ করে আমার অশ্বথ হেলে পড়লো অনন্ত ঘুমে।
ছুটে গিয়ে স্পর্শ করলাম নিস্তব্ধ নিথর শীতল দেহ!”
ওয়াও !
আসুন অশ্বথের যত্ন নিই
অকালে যাতে ঝরে না যায়
রোগে শোখে না ভুগে অবহেলায়।
ভাল লাগল। শুভ কামনা।
খাদিজাতুল কুবরা
কষ্টটা তো সেখানেই দাদা মেয়েদের খুব কম সুযোগ থাকে বাবা মায়ের যত্ন নেওয়ার। আমার মনে হয় স্বামী স্ত্রী উভয়ই উভয়ের বাবা মায়ের প্রতি যত্নশীল হন তাহলে হয়তো আক্ষেপের জায়গা তৈরি হয়না।
ধন্যবাদ দাদা সুন্দর মন্তব্যের জন্য
সুপায়ন বড়ুয়া
তাহলে আপু আপনার থিমটা ধরতে পেরেছি।
ঠিক বলেছেন আপু স্বামী স্ত্রী দুজনের যত্ন নেয়া উচিত।
শুভ কামনা।
খাদিজাতুল কুবরা
হ্যাঁ দাদা ঠিক ধরেছেন। মেয়েরা বাবা মাকে দেখুক যত্ন নিক স্বামী এবং তার পরিবার সেটা চায়না। আবার স্ত্রী স্বামীর অলক্ষ্যে কিংবা সমক্ষে তার বাবা মায়ের প্রতি অবজ্ঞা অবহেলা করে এর কোনটাই কাম্য নয়।
পরস্পরের বাবা মার প্রতি যত্নশীল হতে হবে। তাহলে বিদ্যাশ্রমের মতো অধ্যায়ের প্রয়োজন হবে না।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এমন একটি অশ্বথ সবার জীবনেই থাকে তবে তাকে আগলে রাখতে কজনে পারে ! সময়ের নিয়মে, পরিস্থিতির কারণে তাদের জন্য সবকিছু পুরোপুরি করা সম্ভব হয়না। তারা যখন হারিয়ে যায় তখন কত মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে জানা নেই তবে বুঝতে পারি রিখটার স্কেলেও সেটা পরিমাপ সম্ভব নয়। অসাধারণ লিখেন আপনি। শুভ কামনা রইলো অবিরাম
খাদিজাতুল কুবরা
দিদি ভাই বাবা খুব শাসন করতেন। বিরক্ত হতাম।
অথচ আমরা দুজনেই একে অপরের পরিপূরক ছিলাম। বুঝতে পেরেছি যখন বাবাকে ছেড়ে শশুরবাড়ি এসেছি। কয়েক বছর পরই তিনি চলে গেছেন। পড়ার অভ্যেস পেয়েছি বাবার থেকে। লুকিয়ে প্রথম তাঁর বই পড়েছি।
বাবাকে আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি।
বাবার শীতল কপাল স্পর্শ করার কষ্ট বোঝানো সম্ভব নয়।
খাদিজাতুল কুবরা
আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানবেন প্রিয় দিদি ভাই সবসময় অনুপ্রাণিত করার জন্যে।
ইসিয়াক
দারুণ লাগলো আপনার কবিতাটি। শুভকামনা।
খাদিজাতুল কুবরা
আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানবেন ভাইয়া।
ভালো থাকুন সবসময়।
প্রথমবার মন্তব্য পেয়ে অনুপ্রাণিত হলাম।
শামীম চৌধুরী
অশ্বথ ও বট গাছের মধ্যে বিস্তর ফারাক। অশ্বথ শুধু নিজের শিকড় মাটিতে আঁকড়ে রেখে নিজেকে বলবান করে তুলে। আর বট গাছ চারিদিকে ছড়াবে। বটের শিকড় উপরিস্থ।
দারুন লাগলো কবিতাটা।
খাদিজাতুল কুবরা
আপনার মন্তব্য একদম ঠিক। অশ্বথ গাছের একটা ছবি পেয়েছি কিন্তু ছোট করতে না পেরে এই ছবিটি দিয়েছি।
পড়ে মূল্যবান মন্তব্য করে অনুপ্রানিত করার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
হালিম নজরুল
চমৎকার শব্দমালার কারুকাজ। ভাল লাগল।
খাদিজাতুল কুবরা
ভালো লেগেছে জেনে অনুপ্রেরণা পেলাম ভাইয়া।
অনেক ধন্যবাদ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
কাঠখড় রোদে পুড়ে তাম্রবর্ণ হয়ে নিঃশব্দে খুঁজি আর বুঝি অশ্বথের প্রতিরুপ আমি।
এ যেন প্রতিরূপে আত্মদান!
এমন বৃক্ষের ছায়া সকলের জীবনে প্রয়োজন।
.
ভালো লাগলো,দিদি।
আপনার ভাবনার প্রকাশ।
খাদিজাতুল কুবরা
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। কিছুদিন আগে আপনার বাবার অসুস্থতার খবর শুনে উদ্বিগ্ন হয়েছিলাম। বাবাকে হারিয়েছি তাই জানি বাবা কী ছিলেন।
ভালো থাকুন সবসময় বাবা মায়ের যত্ন নিন।
আমার মা এখনো আছেন।
আমার দুটি ছানা আছে।
রেহানা বীথি
অশ্বত্থের ছায়ার মতো শীতলতা আর কোথাও নেই। শেকড় আকড়ে থাকার দিন সবারই শেষ হয়ে যায়, বুকের ভেতর জমে থাকে স্মৃতির শক্ত গাঁথুনি।
মনটা বড় আকুল হল আপু।
আমার অশ্বত্থ ভালো নেই মোটেও। মনে সবসময় ছায়াটুকু হারানোর ভয় নিয়ে কাটছে সময়।
খাদিজাতুল কুবরা
আপু বাবা মায়ের সাথে মেয়েরা বেশিদিন থাকতে পারেনা। এটাই নিয়ম। এই নিয়মটির কাছে ভালোবাসা অসহায় মায়ার বাঁধন জীর্ণশীর্ণ।
আপনার বাবার জন্য অনেক শুভকামনা। দুশ্চিন্তা করবেননা।আল্লাহ পাক উনাকে নেকহায়াত দান করুন।
তৌহিদ
অশ্বথের মহীরুহ নিজের মাঝেই ধারণ করে নিজেকে বলীয়ানরূপে প্রকাশ করার এই ব্যঞ্জনায় আমি নিজেই কিছুটা সাহস সঞ্চয় করলাম আপু। জগতের জরাবেদনা সব ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারার এই শক্তি অশ্বথের ছায়ায় সবার মাঝেই ছড়িয়ে পড়ুক এটাই প্রার্থনা।
অনবদ্য লেখনী। শুভকামনা সবসময়।
খাদিজাতুল কুবরা
এতো সুন্দর মন্তব্যের পর কী বলবো!
বাবা নিজহাতে শিখিয়েছেন একলা কেমন করে চলতে হবে। বড় ভাই ছিলো না তাই। আজ বাবা নেই কিন্তু বাবার দিকনির্দেশনা গুলোই সাথে আছে।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া পড়ে উৎসাহ দেওয়ার জন্য।