
সারারাত নির্ঘুম কেটে গেলো মা মেয়ের। দূরের মসজিদ থেকে ভেসে আসছে মিষ্টি মধুর আযানের সুর। সুনয়না ফজরের নামাজ পড়ে ছাদে গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশে তখনও আলোর আভা ফোটেনি। রাত্রির অন্ধকারের মায়া ছাড়তে পারছে না বলেই হয়তো এখনো অনেকটা অন্ধকার। অন্ধকারের বুক চিরে তেজস্বী সোনালী সূর্য উদিত হতে আরো খানিকটা সময় লাগবে। দীর্ঘ রাত্রি জাগরণের ফলে চোখে অসহ্য যন্ত্রণা হলেও ভোরের এই নির্জন নিস্তব্ধ সময়টা বেশ উপভোগ করছে সুনয়না। আহ্! ভোরের নির্মল বিশুদ্ধ বাতাসে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে, শীতল হচ্ছে মন। একটু একটু করে পাখিদের কলরব ভেসে আসছে
দু একটা পাখি মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়াউড়ি করছে ইচ্ছে মতোন। একটু একটু করে পূর্বাকাশে প্রথম সূর্যোদয়ের দৃশ্য চোখে পড়তেই অদ্ভুত আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো সুনয়না। তারও আজ ভীষণ পাখি হতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করেছে পাখির মতো ডানা মেলে মুক্ত আকাশে উড়তে। মনে মনে ভাবছে ইশ্ যদি পাখি হতাম ইচ্ছে মতো উড়তাম, ঘুরতাম, ছুটতাম।
দেখতে দেখতেই সূর্য সম্পূর্ণ রুপে উদিত হলো। আজকের দিনের শুধুটা দারুণ হলো।
একটু পর সেঁজুতি দু’মগ কফি নিয়ে ছাদে উঠে এলো। একটা মগ মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে সেঁজুতি বললো…
-শুভ সকাল মামুনি।
-শুভ সকাল সোনা। কখন উঠলে?
-তুমি যখন উঠেছো তখনই।
-তাহলে আগে ছাদে এলে না কেনো! এতো সুন্দর সকাল মা- মেয়ে একসাথে উপভোগ করতে পারতাম।
-নামাজ পড়ে একটু বই খুলে দেখছিলাম। তারপর নাস্তা বানিয়ে রেখে কফি করে আনলাম।
-তুমি নাস্তা বানাতে গেলে কেনো সোনা! আমিই তো নিচে যাচ্ছিলাম। গিয়ে বানাতাম
-আচ্ছা মামুনি তুমি কি আমাকে এভাবে ননির পুতুল করে রাখবে, কাজ কর্ম কিছু শিখতে দেবে না?
-ওরে আমার পাকা বুড়ি! আমি জানি তো আমার মেয়েটা অনেক কর্মঠ, পরিশ্রমী আর অনেক বুদ্ধিমতী।
-হয়েছে হয়েছে খুব হয়েছে বাড়িয়ে বলা। মামুনি আজ আমি একটু তাড়াতাড়ি বের হবো। ক্লাস আছে এগারোটায় কিন্তু আমার একটু অন্য কাজ আছে।
-আমি কী তোমাকে ড্রপ করে দেবো?
-না মামুনি রিক্সা নিয়ে যাবো। বললাম না কাজ আছে। রিক্সায় সুবিধা হবে।
-জানি না বাবা, কী এমন কাজ তোমার যে রিক্সায়ই যেতে হবে!
সেঁজুতির মনে মগজে একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। যে পাঠিয়েছে চিঠি তাকে খুঁজে পাবে তো! এই এতো বড় শহরে কোনো একজনকে খোঁজা আর খরের গাদায় সুঁচ খোঁজা একই ব্যাপার। সেঁজুতি জানে তবুও সে হাল ছাড়তে রাজী নয়।
সেঁজুতি মনে মনে ভাবছে কি বুদ্ধু আমরা! প্যাকেটের গায়ে না ছিল কারো নাম ঠিকানা, না ছিলো কোনো কুরিয়ার সার্ভিসের নাম। এটা যদি সাথে সাথে খেয়াল করতাম তবে তখনই এই রহস্যের উদঘাটন করা যেতো। সে যা হোক কিছুতেই হাল ছাড়তে রাজী নই আমি। যে ছেলেটা এসেছিল প্যাকেট নিয়ে তাকে পেলেও অনেক জট খোলা যাবে। সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই কোনো পথ দেখাবেন। রিক্সা নিয়েই যতোটা সম্ভব খোঁজার চেষ্টা করবো সেই ছেলেটাকে।
সেঁজুতি রিক্সা চালককে সকাল আটটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত ঘুরবে বলে রিক্সায় উঠে বসলো। চালক তার আপন গতিতেই রিক্সা চালিয়ে যাচ্ছেন সাথে গুন গুন করে গান গাইছেন। সেঁজুতি এমন করে এদিন ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে যেনো মনে হচ্ছে বাজপাখি তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শিকারী খুঁজছে। সেঁজুতি পাগলের মতো হন্ন্যে হয়ে খুঁজছে সেই মানুষটিকে যাকে সে কয়েক মুহূর্ত দেখেছে মাত্র। কয়েক মুহূর্ত হলেও ছেলেটিকে সে বেশ মনে রেখেছে। মেয়েটির স্মরণ শক্তি বেশ তুখোড়। এটুকুকে সম্বল করে সে শূন্যে না মহাশূন্যের পথে পাড়ি জমিয়েছে। পুরো আড়াই ঘন্টা ঘোরাঘুরি করে সে ক্যাম্পাসে এসে রিক্সা থেকে নেমে পড়লো। বাড়তি কিছু টাকা সহ ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে আনমনে ঢুকছে ক্যাম্পাসে। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে আসা এক ছেলে ধাক্কা খেলো সেঁজুতির সাথে। ধাক্কাটা এতোটায় জোরে ছিল যে সেঁজুতির কাঁধ থেকে ব্যাগটা ছিটকে পড়ে গেলো…
ছবি-আমার
১২টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
সেঁজুতি রিক্সা করে ঘুরে বেড়ানোর আর পত্র প্রেরককে
খুঁজে বেড়ানোটা ভারী মজা লাগছে।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
মজার বটে দাদা
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময় দাদা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এভাবে কাউকে খুঁজে পাওয়া টা অসাধ্য যদি না ঈশ্বর সহায় হোন। শুভ কামনা রইলো সেঁজুতির জন্য। ধাক্কা লাগলো যার সাথে সে …..! ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভ কামনা রইলো
সুরাইয়া পারভীন
জ্বী কেবল মাত্র ঈশ্বরই সহায়
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি দিদিভাই
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময়
ছাইরাছ হেলাল
খড়ের গাঁদায় সুঁচ না খুঁজে ধাক্কা খুঁজলে রিকশা ভাড়া বেঁচে যেত।
মেয়ে গোয়েন্দা !!
সুরাইয়া পারভীন
আহা! মেয়ে গয়েন্দা
কী করে জানবে কেউ দেবে ধাক্কা?
হা হা হা হা হা হা
ভালো বলেছেন কিন্তু
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
আরজু মুক্তা
শেষ পর্যন্ত মেয়েই প্রেমে পরে নাকি, দেখার বিষয়।
গল্প এগিয়ে চলুক
সুরাইয়া পারভীন
আসলে সেটাই দেখার
কী থেকে কী হয়ে যায়?
মায়ের প্রিয়জন খুঁজতে গিয়ে
নিজেই নিজের আপনজন খুঁজে নেয়।
কৃতজ্ঞতা সহ আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন আপু
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সবসময়
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর গল্প পড়লাম অনেক শুভ কামনা রইল
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়
তৌহিদ
এভাবে রিক্সা নিয়ে পত্র লেখককে খোঁজার মধ্যে টেনশনের একধরনের মজাও আছে কিন্তু!
চলুক গল্প।
সুরাইয়া পারভীন
একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন
ভালো থাকবেন সবসময়