উত্তরা থেকে ফিরেছে নওরিন অফিস শেষে। বাসায় চারবছরের কন্যা আর স্বামী। ৩০ মিনিট ধরে কলিংবেল বাজিয়েই যাচ্ছে। কোনো সাড়া নেই। মোবাইলে রিং হচ্ছে বিরতিহীন ধরছে না। লাগোয়া ফ্লাট বাসিন্দার আর সহ্য হলোনা। দরজা খুলে জানতে চাইলো ব্যাপারটা কি? লাগোয়া মানে লাগোয়া…..!দুই ফ্লাটের দূরত্ব আধাহাত। কেউ কারো পরিচিত নয়। অল্প বয়সী মেয়েটার চোখ লাল। মাস্ক পড়া মুখটা দেখা যাচ্ছে না।
জোড় ধাক্কা একের পর এক। কোনো সাড়া নেই। বাইরে গেলো নাকি অসুস্থ্য হলো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। দাড়োয়ান, সেকেন্ডফ্লোর থেকে আত্মীয়া উঠে এসেছেন।নওরিন সমানে হিচকি দিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। ডুপ্লিকেট চাবিও নেই। চাবি থাকলেও কি হবে? যদি ভেতরে স্বামী বাচ্চা থাকেও? কিন্তু এত ধাক্কা ধাক্কির পরেও কোনো সাড়া নেই কেন? কুম্ভকর্ণের ঘুম হলেও এতক্ষনে ভেঙে যাবার কথা! আশংকা বাড়তেই থাকে। আশংকা ছড়িয়ে পড়ে উপস্থিত সবার মধ্যে।
প্রায় পৌণে একঘন্টা পর মোবাইলের সাড়া পাওয়া গেলো…… ” আপনি কই? ৩০/৪০ মিনিট ধরে দরজা ধাক্কাচ্ছি!
– স্বামী সাহেবের উতকন্ঠিত কন্ঠ-” কি হইছে? আমি তো ঘরে!
নওরিন: আগে দরজা খোলেন।
দরজা খুললো, — জানে পানি এলো নওরিনের।-স্বামী বেচারা হতভম্ব! এত কাণ্ড?–” আমি তো বাথরুমে ছিলাম গোসল করছিলাম আর সামারা’কে গোসল করাচ্ছিলাম…..!! চারবছরের ফুটফুটে সামারা ভেজা চুলে মাকে এসে জড়িয়ে ধরলো কাঁদতে কাঁদতে।
হাত বাড়ালাম কোলে নেবার জন্য, ছুট দিলো আমার ঘরের ভেতরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে। সে লিপস্টিক ছোঁ মেরে নিয়ে ঠোঁটে লাগাতে শুরু করলো। কিছুতেই নওরিন পারছে না ঘরে নিতে।
প্রায় দেড় বছর হয়ে এলো এই বিল্ডিংএ আছি পাশের ঘরে কে কারা থাকে জানিইনা। অথচ প্রতিবেশির চেয়ে বড় আত্মিয় আর কে আছে এই নাগরিক শহরে? মেয়েটাকে বললাম,এরপর যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে বলতে দ্বিধা কোরনা…
৩০টি মন্তব্য
রেজওয়ানা কবির
প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় সবার রাখা উচিত।যেকোনো প্রয়োজনে তাদের আগে পাওয়া যাবে।এরকম ঘটনা সত্যি অনেকের সাথেই ঘট। ভালো লাগল।শুভকামনা।
বন্যা লিপি
মন্তব্যে ধন্যবাদ আপু। এ ঘটনাটি কাল্পনিক নয়। গতকাল বিকেলে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনা। আমি আমার ভাষা শব্দে সাজিয়েছি অণুগল্প বলে চালিয়ে নিলাম।ভালো থাকবেন।
খাদিজাতুল কুবরা
আপু খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখেছেন। আসলেই আমরা প্রতিবেশি বিমুখ হয়ে পড়ছি ক্রমশঃ। অথচ বিপদাপদেে পরমাত্মীয়ের আগে প্রতিবেশি কাজে লাগে।
খুব ভালো লাগলো আপু।
বন্যা লিপি
ভাবছি, প্রতিবেশি’র সিরিজ লিখবো আরো। যেখানে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যাবে। ভালো লাগলো জেনে আমারো ভালো লাগলো।
খাদিজাতুল কুবরা
আপু লিখুন,
দারুণ বিষয় প্রতিবেশির সাথে সুসম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরার প্রয়োজন আছে।
ফয়জুল মহী
লিখনীতে মন উৎফুল্ল হলো ।
বন্যা লিপি
উৎফুল্লতায় আমিও উৎফুল্ল হলাম।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এখনকার প্রতিবেশীরা ঠিক প্রতিবেশী নয় শুধু একটা সাইনবোর্ড। আগেকার মতো আত্নীয়তা খুঁজে পাইনা এদের মাঝে। ছোটবেলায় পিকনিক করতে যেতাম, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতো আর এখন কেউ কারো নাম ও জানিনা। ভালো থাকবেন। শুভ সকাল
বন্যা লিপি
এখন মানুষ সবসময় নেগেটিভ ভাবনা নিয়ে সন্দেহ আর বৈপরিত্যের মনোভাব নিয়ে নিজেরা নিজেরা একা থাকে। এ বিষয় নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছে জাগছে মনে। সাথে থাকুন দিদি। শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
অণুগল্পে স্বগতম।
আরও মনোযোগ দিলে উত্তম ফল লাভ হবে,
পাঠক তার অপেক্ষায়।
বন্যা লিপি
প্রথমে এত্তগুলা লাভ রিএ্যাক্ট নিয়া নেন। যুতসই মন্তব্যের জন্য। আমি এদিকেই লক্ষ্য রাখছিলাম। এই মন্তব্য কার কাছে থেকে আর আশা করা যায়?? গতকাল বিকেলের ঘটে যাওয়া কাহিনী বর্ননা করলাম তৎক্ষনাত ভাবে ফেসবুক পেজে। পোষ্ট করার পর নিজের কাছেই মনে হচ্ছিলো ঘাটতি আছে।
ডাকাত হবার ইচ্ছায় কচুগাছ কাটায় হাত পাকাচ্ছি। সাহচর্যে আশাবাদী হওয়ার দুঃসাহস রাখতেই পারি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
লেখা সবসময় এক গ্রেডে রাখা যায় না বলেই আমার মতামত । এটা ইচ্ছাকৃত নয় উনিশ বিশ হতেই পারে তাই এটাকে আমি সাচ্ছন্দ্যে মেনে নেই। তবে আপুর এই লেখার বিষয় টি ভালো লেগেছে উপস্থাপন টা আরো সময় দিলে অনবদ্য হতো বরাবরের মতই।
বন্যা লিপি
সুপর্না ফাল্গুণী @ আমার কাছে মনে হয়েছে, উপস্থাপনে কিছু ইনফর্মেসনে ঘাটতি রেখে গেছি। ইচ্ছে করলে সম্পাদনা করা যেত, কিন্তু করিনি। ভুল গুলো চোখের সামনে রেখে দেয়ার কিছু বেনিফিট আছে বলে আমি বিশ্বাস করি। সেই বিশ্বাস থেকেই আমি পরবর্তি আয়োজনের দিকে হাত বাড়াব। ছাইরাস হেলালের নিগুঢ় শব্দের আড়ালে যে দিক নির্দেশনা থাকে, সেটা আমার জন্য সহস্র শব্দের ভাঙঙচুর ব্যাখ্যা। আমি বুঝে যাই। আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ।
আলমগীর সরকার লিটন
গল্পজীবনে এরকম ঘটনা হয়েই থাকে তবে রাগ অভিমান একটু থাকে বাস্তবতার মিল আছে অনেক প্রিয় লিপি আপু——–
বন্যা লিপি
একাহিনী পুরো বাস্তব কাহিনী লিটন ভাই। অণুগল্পের নাম দিয়েছি মাত্র। ধন্যবাদ আপনাকে।
আলমগীর সরকার লিটন
জ্বি আপনিও ভাল থাকবেন
শিরিন হক
নাগরীক জীবন মানুষের মধ্য থেকে কেড়ে নিয়েছে হৃদ্রতা আত্মার বন্ধন তবুও আমরা বেঁচে থাকি।
ভালো থেকো মিতা
বন্যা লিপি
তোমার জন্য শুভ কামনা।ভালবাসা।
শামীম চৌধুরী
প্রতিবেশীর সঙ্গে মিলে থাকা যায় যদি সেই প্রতিবেশী সুহৃদ হয়। নইলে প্রতিবেশীর উপর ভরসা শূণ্যহীন। শুরতে পডতে যেয়ে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম কোন দূর্ঘটনা অশনিসংকেত নাতো?
বন্যা লিপি
আমি ও আমার ছেলেও ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এইরকম নাগরিক সভ্যতায় বড় অসহায় লাগে। অথচ এমন হবার কথা নয়।
শামীনুল হক হীরা
অপৃূর্ব প্রিয়কবি।।
বন্যা লিপি
আমারে কবি কইয়েন না হীরা ভাই। ওতে আমার ঘোর আপত্তি। কবিতা লিখতে পারি না। ধন্যবাদ আপনাকে।
রোকসানা খন্দকার রুকু।
আশেপাশের চল্লিশ বাড়ির খোঁজ নেয়া আমাদের জন্য নির্দেশ আছে।আমরা কোথাও সেটা করতে পারিনা।অনেক সময় করতে চাইলেও সমস্যা। তারপরও চেষ্টা করা উচিত।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
এই হাদিস বা পবিত্র কুরআনের নির্দেশ মেনে চলা উচিত আপাত জীবনে প্রত্যেক ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের। কিন্তু হচ্ছে কি? তর্কে গেলাম না। ভালো থাকবেন।শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
আমরা যেখানে থাকি, সেখানে ভর্তাও শেয়ার করি।
ভালো আছি প্রতিবেশি নিয়ে
বন্যা লিপি
প্রতিবেশি সিরিজ লিখব ভাবছব। সেসব পর্বে আরো জানতে পারবা ফু’আম্মা।
তৌহিদ
ইটপাথরের দেয়ালে ঘেরা শহুরে জীবন আমাদের আবেগ অনুভূতিগুলোকে মৃতপ্রায় করে ফেলেছে। সবাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছি।
আপনার লেখায় তা স্পস্টই প্রতীয়মান। আপনি ভালো মানুষ বলেই তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। সবাই এরকমটা নয়।
ভালো থাকুন আপু।
বন্যা লিপি
ভাবতে অবাক লাগে আমার,দেড় বছরে এ বিল্ডিংএর কারো সাথে এখন পর্যন্ত আমার পরিচিতিই হলোনা। লিফটে ওঠানামাতেঃ কেউ কারো কুশল বিনিময় হয়না।
কেউ এগিয়ে এলে আমি নিবেদিত। গায়ে পরে আলাপ করা আমার হয়ে ওঠে না। একবার পরিচিত হয়ে গেলে, এটুকু গ্যারন্টি দিতে পারি। আমার মত ভালো প্রতিবেশি হয়না……।
আকবর হোসেন রবিন
আশেপাশে কেউ মারা গেলে মূলত তখন গ্রাম আর শহর নিয়ে খুব ভাবি। গ্রামে কেউ মারা গেলে চার বাড়ির সবাই চলে আসে। আর শহরে পাশের ঘরে কেউ মরে পড়ে থাকলেও সহজে খবর হয় না। কি অদ্ভুত ব্যাপার।
বন্যা লিপি
ঠিক বলেছেন আপনি । আপনাকে ধন্যবাদ।