
জীবনের গল্প-১৭-এর শেষাংশ:☛ তখন ঠাকুরবাড়ির সবাইর এমনই থমথমে অবস্থা ছিলো। কিন্তু না, সেদিন তেমন কোন খারাপ পরিস্থিতিতে আমার পড়তে হয়নি। খুব সুন্দরভাবে আমি একাই নয়াবাড়ি গ্রামের ঠাকুরবাড়িতে জামাই-আদরে দুইদিন থেকে নারায়ণগঞ্জ ফিরে আসি।
বাসায় আসার পর আমার বড় দিদি জিজ্ঞেস করলো, কোথায় গিয়েছিলি।’ সত্যি কথাই বললাম, ‘বিক্রমপুর গিয়েছিলাম।’ বড় দিদি জিজ্ঞেস করলো, ‘কেন গিয়েছিলি? ওখানে কি মেয়ে পছন্দ করেছিস? মেয়ে পছন্দ হয়ে থাকলে বল, আমরা দেখতে যাবো।’ বললাম, ‘সময় হোক, পরে বলবো।’ দিদি আর কিছু বললো না। নিজের বাসায় চলে গেলো। এরপর মা বললো, ‘আমি একটা মেয়ের কথা শুনেছি। মেয়েটি নাকি সুন্দর! মেয়ে সুন্দর হলে তোর সাথে মানাবে খুব!’ মাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মেয়েদের বাড়ি কোথায়?’ মা বললেন, ‘মেয়েদের বাড়ি নাকি নরসিংদী। তোর জোৎস্না দিদির জামাই যেখানে আবার বিয়ে করেছে, সাখানে। মেয়ে পক্ষ থেকে বেশকিছু টাকা-পয়সাও নাকি দিতে পারবে।’ আমার ওই ভগ্নিপতির নাম সুনীল। বললাম, ‘আমার বোন মরা ভাগ্নিটাকে পূজা উপলক্ষে একটা সুতার বাট্টা দিতে পারে না, অথচ এখানে এসে আমার বিয়ের ব্যাপারে নাক গলায়? আমার সাথে দেখা হলেই হয়। তখনই মজাটা দেখাবো।’
আমার কথা শুনে আমার মা আর ভয়ে আর কিছুই বলেনি, চুপ হয়ে গেলো। এদিন আর নিজের কাজের জাগায় গেলাম না, সন্ধ্যার আগে চলে গেলাম কিল্লার পুল ফাইন টেক্সটাইল মিলে। কলমের সাথে দেখা করলাম। বিস্তারিত সব ঘটনা বললাম। কালাম জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘আদরযত্ন কেমন করেছে ওস্তাদ?’ বললাম, ‘ভালোই করেছে।’ আমার কথা শুনে কালাম বললো, ‘তাহলে তো এখন আর কারোর সাথে যাওয়ার দরকার হবে না। আপনি একাই যথেষ্ট,ওস্তাদ! কালামের সাথে দেখা করে কানাইর সাথে দেখা করলাম। দুইজনে অনেকক্ষণ ঘোরা-ফেরা করলাম। তারপর আমি চলে গেলাম নিজের বাসায়, কানাই ওর বাসায় চলে গেলো।
পরদিন সকালে আমি মিলে গেলাম। কাজ করলাম। এর দুইমাস পর ওয়েল টেক্স থেকে বাৎসরিক ছুটির ৩,০০০/= টাকা টাকা একসাথে পেলাম। ৩,০০০/=টাকা হতে পেয়ে এর দুইদিন পরই দুইদিনের ছুটির আবেদন করলাম। ছুটি পাস হলে, মাকে কিছু টাকা দিয়ে আবার চলে গেলাম নয়াবাড়ি গ্রামের ঠাকুরবাড়িতে। এভাবে দুই-তিন দিনের ছুটি পেলেই একা-একা চলে যেতাম নয়াবাড়ি গ্রামে। একসময় গ্রামের অনেকেই বিয়ে ছাড়া আসা-যাওয়া দেখে ছিছি করতে লাগলো। সবার ধারণা আমি ফাঁকিবাজ! এমনও বলতে লাগলো, ‘ছেলেটা কি সত্যিই বিয়ে করবো? নাকি শুধুই মিছে মজা করার জন্য আসা-যাওয়া আসা-যাওয়া করছে!’ মানুষের কথাগুলো আমার কানে আসলো। আমি মেয়ের বাবা মা’কে নিশ্চিত থাকতে বললাম। আমি তাদের আশস্ত করলাম, ‘লোকে যা-ই বলে বলুক তাতে আপনারা মন খারাপ করবেন না। আমি অর্চনাকে বিয়ে করবই।’
একসময় নয়াবাড়ি আসা-যাওয়ার ব্যাপারটা আমার বড় দাদার কানে গেলো। বড়দাদা মাকে জানালো। মা বড় দাদাকে তাড়াতাড়ি বিয়ের কথাবার্তা পাকাপাকি করতে বললো। মায়ের কথায় বড়দাদা ফাইন টেক্সটাইল মিলের কালামকে বললো, ‘তুমি বাড়ি গিয়ে মেয়ের বাবাকে নারায়ণগঞ্জ আসতে বন বলবে।’ বড় দাদার কথা শুনে কালাম বাড়ি গিয়ে মেয়ের বাবাকে সবকিছু খুলে বললে, একদিন মেয়ের বাবা উনার ছোট ছেলেকে সাথে নিয়ে আমাদের বাসায় আসে। তারপর বাসায় খাওয়া-দাওয়ার পর তাদের নিয়ে যাওয়া হয়, কিল্লার পুল ফাইন টেক্সটাইল মিলে; বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল করার জন্য। করণ, ফাইন টেক্সটাইল মিলের বেশিরভাগ শ্রমিকই ছিলো সুবচনী এলাকার, তাই। সন্ধ্যার পর ফাইন টেক্সটাইল মিলের ভেতরে অফিসরুমে সবাই বিয়ের আলোচনায় বসলো। মিলের ম্যানেজারও সেখানে উপস্থিত ছিলো। সবাই বসে কীভাবে সুন্দর হবে সেসব বিষয়ে আপাল আলোচনা করতে লাগলো।
আমার বড় দাদার দাবি-দাওয়ার মধ্যে সোনা-দানা কিছুই নেই, মেয়ের বাবা যা পারে তা-ই মেনে নিবে। কিন্তু বিয়ের আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ৫,০০০/= টাকা নগদ দিতে হবে।কিন্তু এতে মেয়ের বাবা নারাজ! মেয়ের বাবা ৩,০০০/= টাকার বেশি দিতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। আমার বড় দাদাও ৫,০০০/= টাকার কম হবে না বলে জানিয়ে দেয়। এভাবে দর-কষাকষি করতে করতে রাত প্রায় ১২ টার মতো বেজে যায়। উভয়োপক্ষের কেউ যখন কাউকে ছাড় দিচ্ছিল না, তখন আমি লোক মারফত কালামকে বাইরে ডেকে আনলাম। কালামকে বললাম, ‘আমার বড় দাদাকে বুঝিয়ে বলতে, যাতে ৩,০০০/= টাকাই রাজি হয়। আমার কথা শুনে কালাম আমার কথা বলে বড় দাদাকে রাজি করায়। এরপর বাঁধলো বরযাত্রী নিয়ে।
আমার বড় দাদার কথা ১০০ জন বরযাত্রী যাবে এবং আসা-যাওয়ার ভাড়া পুরোটা মেয়ে পক্ষে বহন করতে হবে। এতে মেয়ের বাবা রাজি হচ্ছিল না। মেয়ের বাবার কথা, বরযাত্রী যাবে ৫০ জনের বেশি যাতে না হয়। আর আসা এবং যাওয়া কোনটার ভাড়াই দিতে পারবে না। এতে আমার দাদাও রাজি হচ্ছিল না। তারপর সবার অনুরোধে মেয়ের বাবা যাওয়া বাবদ গাড়িভাড়া ১,০০০/= দিতে পারবে বলে সম্মতি দেয়। এতেও আমার বড় দাদা যখন রাজি হচ্ছিল না, তখন আমি কালামকে আবার ডেকে আনি। কালামকে বললাম, ‘মেয়ের বাবাকে ১,৫০০/= টাকা রাজি হতে বলো। ১,০০০/= টাকা মেয়ের বাবা দিবে, আর বাকি ৫০০/=টাকা আমি গোপনে তোমার কাছে দিয়ে দিবো, তুমি মেয়ের বাবার হাতে দিয়ে দিবে। আমার কথামতো কালাম তাই করলো। মেয়ের বাবাও কলমের কথামতো রাজি হয়ে গেলো। বিয়ের দিনতারিখ ঠিক হলো। এরপর বাঁধলো বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে।
আমার বড় দাদা টাউনের ভাড়া বাড়িতে কোনপ্রকার নিয়মকানুন করবে না। যা করার মেয়েদের বাড়িতেই করতে হবে। তখন সবার প্রশ্ন, তাহলে বিয়ের আগের দিন যে ছেলে পক্ষের কিছু নিয়মকানুন থাকে, সেসব নিয়মগুলো কীভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে? তখন আমার বড় দাদা বললো, ‘বিয়ের আগের দিন সকালে ছেলে মেয়ের বাড়িতে চলে যাবে, অধিবাসের নিয়ম পালনের জন্য। আর বিয়ের দিন বরযাত্রীদের নিয়ে ঠিক সময়মতো বিয়েবাড়িতে আমরা উপস্থিত হয়ে যাবে। এতে মেয়ের বাবা রাজি হয়ে গেলো। এবার বাঁধলো আড়াইউল্লা বা ফিরাউল্টা নিয়ে। আমার বড় দাদা বললো, ‘বিয়ের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন হলে বরযাত্রীদের নিয়ে আমি চলে আসবে। আর আমার ছোট ভাই আড়াইউল্লা বা ফিরাউল্টার নিয়ম পালন করে বিয়ের দুইদিন পর নতুন বউ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ চলে আসবো।’ আমার বড় দাদার কথা মেয়ের বাবা মেনে নিলো। যৌতুক বাবদ ৩,০০০/= টাকা, আর বরযাত্রীদের গাড়িভাড়া বাবদ ১,৫০০/=টাকা মেয়ে বাবা বিয়ের দুইদিন আগে যেভাবেই হোক ফাইন টেক্সটাইল মিলেই পৌঁছে দিবে। বিয়ের কথাবার্তা পাকা-পাকি হলো। বিয়ের দিন ধার্য করা হলো, ১ আষাঢ় ১৩৯৩ বঙ্গাব্দ।
কিন্তু রাত অনেক হওযাতে পাটিপত্র (সাদা কাগজে অথবা স্ট্যাম্প) করার সুযোগ ছিলো না। তাছাড়া তখন উপস্থিত সবাইর মাঝে মিষ্টি বিতরণ করার মতো উপায়ও ছিলো না। তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিলো পরদিন একজন পুরোহিত দিয়ে পটিপত্র করে বিয়ের জোকার (উলুধ্বনি) দিতে। সবার কথামতো তা-ই করা হলো। মেয়ের বাবাকে বড়দাদা সাথে করে বাসায় নিয়ে গেলো। পরদিন সন্ধ্যাবেলা একজন পুরোহিত দ্বারা পাটিপত্র করে ভাড়া বাড়ির সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। রাতে ফাইন টেক্সটাইল মিলেও কিছু মিষ্টি বিতরণ করা হলো। এর পরদিন সকালে মেয়ের বাবাকে ফতুল্লা লঞ্চঘাট পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হলে, মেয়ের বাবা বাড়িতে চলে যায়।
এদিকে বড়দাদা আমাকে সাথে নিয়ে আমার বড় ভগ্নিপতির সাথে বিয়ের বিষয়-আশয় নিয়ে আলোচনায় বসলো। জামাইবাবু আমাকে মোটামুটি ১০,০০০/= টাকার একটা হিসাব দেখিয়ে বললো, ‘বরযাত্রীদের আসা-যাওয়া-সহ বিয়ের আগে পরে এই টাকা খরচ হতে পারে। এখন তুমি এই ১০,০০০/= টাকা যেভাবেই হোক অন্তত বিয়ের চার-পাঁচ দিন আগে বড় দাদার কাছে দিয়ে রাখবে।’ আমি জামাই বাবুকে বললাম, ‘আমাকে এক সপ্তাহ সময় দিতে হবে।’ তখন বিয়ের বাকি আছে ছিলো ১৪/১৫ দিন। আমার কথা শুনে জামাইবাবু বললো, ‘ঠিক আছে, তুমি এই ক’দিনের মধ্যে টাকা জোগাড় করো। এর বেশি যদি কিছু লাগে তা আমি দেখবো।’
পরদিন ওয়াল টেক্স মিলে গেলাম। কাজের মাঝেই মিলের শ্রমিক নেতাদের সাথে বিয়ের ব্যাপারে আলাপ করলাম। টাকা লাগবে, তাও বললাম। মিলের নেতারা আমাকে বললো, ‘আপনি ১৫,০০০/=হাজার টাকা অগ্রীম চেয়ে একটা দরখাস্ত লিখে অফিসে জমা দিন, এরপর আমরা দেখছি।’ তাদের কথামতো আমি তাই করলাম। ১৫,০০০/=টাকা অগ্রীম চেয়ে একটা দরখাস্ত লিখে অফিসে জমা দিলাম। পরদিন মিলের মালিক নিয়াজ সাহেব মিলে আসলে, মিলের ম্যানেজার সহ শ্রমিক নেতারা মালিকের সাথে আমার অগ্রীম চাওয়া ১৫,০০০/=হাজার টাকার ব্যাপারে আলাপ করলো। এরপর মালিক নিয়াজ সাহেব ১০,০০০/=টাকা দিতে চাইলে, মিলের নেতারা আমাকে জানালে, আমি এতে রাজি হলাম না। আমি ১৫,০০০/= টাকার কম হবে না বলে জানিয়ে দিলাম।
শেষতক শ্রমিক নেতারা মিলের মালিক ম্যানেজারের সাথে আলাপ আলোচনা করে ১৪,০০০/=টাকা মঞ্জুর করে। এর একদিন পরেই মিল থেকে আমি ১৪,০০০/=টাকা হাতে পেয়ে, মিলের সবাইকে বিয়ের নেমন্তন্ন করলাম। মিলের মালিক নিয়াজ সাহেব ও ম্যানেজার সাহেবকেও নিমন্ত্রণ করলাম। কিন্তু মিল মালিক ম্যানেজার তাঁরা কেউ বিয়েতে যাবে না বলে আমাকে জানিয়ে দেয়। আমি তাঁদের আর বিশেষভাবে অনুরোধ না করে, বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে ৭,০০০/=টাকা মায়ের কাছে দিলাম, জামাইবাবুর কাছে পৌঁছে দিতে। আর বাদ-বাকি ৭,০০০/=টাকা আমার কাছে রেখে দিলাম, আমার নিজের খরচের জন্য। বিয়ের বাকি আছে আরও ১০/১২ দিন। পরদিন বিকালবেলা ফাইন টেক্সটাইল মিলে গিয়ে আমার বড়দাদার সাথে বুঝলাম। ওয়েল টেক্স মিলের সবাইকে নিমন্ত্রণ করেছি, তাও জানালাম। তারপর বড়দাদা ওয়েল টেক্স মিলের মতো কিল্লার পুল ফাইন টেক্সটাইল মিলের সবাইকে নিমন্ত্রণ করলো। এতে দুই মিলের লোক হলো, ৪০-৪৫ জনের মতো। নিজেদের আত্মীয়স্বজন-সহ বরযাত্রীর সংখ্যা হয়ে গেলো ৬০ জনের মতো। বিয়ের দিন দুই-চার-পাঁচ জন এদিক-সেদিক হলেও, কোনও সমস্যা হবে মনে করে– বড়দাদা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে যা-কিছু লাগে তা যোগাড় করতে থাকে। আমিও নিয়মিত মিলের কাজ করতে থাকি।
একসময় বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলে, ৭দিন ছুটি চেয়ে একটা দরখাস্ত লিখে মিলে জমা দিই। ৭দিন ছুটি মঞ্জুর হলো। দুইদিন পরই বিয়ে। বিয়ের একদিন আগে নিজের বাসার কিছু নিয়মকাজ সেরে কানাইকে সাথে নিয়ে মেয়েদের বাড়িতে উদ্দেশে রওনা দিলাম। লঞ্চ থেকে সুবচনী ঘাটে নেমে বাজার থেকে মিষ্টি পান সুপারি কিনে নয়াবাড়ি গ্রামে কালামদের বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। কালামদের বাড়ি থেকে কালামের বড় ভাই, ভাবী, বোন-সহ আরও কয়েকজন মিলে মেয়েদের বাড়িতে গেলাম। এরপর মেয়ের বাড়ি থেকেই হিন্দু বিয়ের ছেলে পক্ষের যা নিয়ম করা দরকার, সবকিছু করা হলো। সেদিন রাতে আমি আর কানাই কালামদের বাড়িতে থাকলাম। পরদিন বিয়ের দিন ১ আষাঢ় ১৩৯৩ বাংলা। বিকাল হতে না হতেই ওয়েল টেক্স, ফাইন টেক্সটাইল মিলের লোকজন-সহ নিজেদের আত্মীয়স্বজন সবাই সুবচনী বাজারে এসে জড়ো হলো।
খবর পেয়ে মেয়ের বাড়ি থেকে লোক গিয়ে চার-পাঁচটা নৌকা করে তাদের বিয়ে বাড়িতে আনা হলো। বিয়ের বাড়ি লোকে লোকারণ্য হলো। মেয়ে পক্ষ থেকে আগত বরযাত্রীদের মিষ্টিমুখ করারানো হলো। বিয়ের লগ্ন রাত ১০.৩০ মিনিট। সময়মতো ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সাতপাক ঘুরে বিয়ের কার্যসম্পাদন সম্পন্ন হলো। বিয়ের পরদিন বরযাত্রী-সহ আমার আত্মীয়স্বজন সবাই নারায়ণগঞ্জ চলে আসলো। মেয়ের বাড়িতে আড়াই দিনের নিয়ম পালন করার জন্য থেকে গেলাম, আমি আর কানাই। একসময় আড়াইউল্লা নিয়ম করে কানাই, কালাম-সহ নতুন বউয়ের সাথে তার ছোট ভাইকে নিয়ে আমি চলে আসি নারায়ণগঞ্জ নন্দিপাড়া নিজের বাসায়। এর দুইদিন পরই বৌভাত অনুষ্ঠান। বউভাত অনুষ্ঠানে দুই মিলের লোক-সহ প্রায় ১০০জন লোকের আয়োজন করা হয়। এরপর থেকে চলতে লাগলো, স্বামী-স্ত্রীর সংসার।
চলবে…
৩৩টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
জীবনকে কখনো কখনো খুব সিরিয়াসলি নিতে হয়। জীবন নদীর মতো বয়ে যায়, একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে, সুখ দুঃখের পালাবদল হয়। জীবন আসলে সফলতা ব্যর্থতার সাতকাহন, কান্না হাসির কবিতা। নানান মানুষ এর নানান কান্ড! ভালো খারাপ এর ঝালমুড়ি ,আর এটা মেশানোর উপাদানের পরিমাণের উপর নির্ভর করে জীবনের ভালো কিংবা মন্দ। তাতে জীবনের কিছু যায় আসে না, জীবন তার নিজের নিয়মে বয়ে যায়। নদী যেমন একসময় সাগর মহাসাগরে মিশে জীবনও তেমনি একদিন শেষ হয় বা আরো বড় করে শুরু হয় মহাকালের মহাস্রোতে। তাই জীবনকে বয়ে যেতে দিন । তবে হ্যাঁ নিজের মন ভালো রাখতে চেষ্টা করতে হবে, পরিস্কার রাখতে হবে, কারো উপকার করতে না পারলেও সমস্যা নাই কিন্তু জেনেশুনে আপনার দ্বারা যেন কারো কোন ক্ষতি না হয়। মহাকালের জীবনে গিয়ে হয়তো আপনাকে জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হতে পারে আপনার জীবনের ভালো খারাপের হিসাবপত্র নিয়ে । তাই জীবনকে সেই মোতাবেক সাজিয়ে তুলতে হবে।
নিতাই বাবু
চমৎকার উপদেশমূলক মন্তব্য দাদা। জীবন নিয়ে সুন্দর বিশ্লেষণ! আপনার উপদেশমূলক মন্তব্যের মতোই আমার নিজের জীবনটাকে গড়তে চেয়েছিলাম, দাদা। আরও সুন্দরভাবে জীবনটাকে মানুষের সেবায় পরিচালনা করে চেয়েছিলাম। কিন্তু অর্থনীতির দুরাবস্থার কারণে আর পেরে উঠতে পারিনি। তবুও সবসময় সৎপথে চলার জন্য চেষ্টা অব্যহত রাখছি।
সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি শ্রদ্ধেয় দাদা। আশা করি ভালো থাকবেন।
কামাল উদ্দিন
আপনার জীবনের আরো কিছু অংশ জানা হয়ে গেলো। কিন্তু আড়াইউল্লা বা ফিরাউল্টা মেয়ের বাড়িতে থেকেই করা সম্ভব সেটা কিন্তু বেশ একটা অভিনব বিষয় মনে হলো আমার কাছে। তাছাড়া বিয়ের আগের নিয়ম কানুন গুলো নিজ বাড়িতে না করে শ্বশুর বাড়িতে করাটাও অবশ্যই ব্যতিক্রমী লাগলো। যাক ভালোয় ভালোয় বিয়েটা সেরে ফেলেছেন এটাই হলো বড় কথা……..এগিয়ে যান সাথেই আছি।
নিতাই বাবু
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা। দাদা, আড়াইউল্লা বা ফিরাউল্টা মেয়ের বাড়িতে থেকেই করা হয়েছে কেবলমাত্র আসা-যাওয়ার সমস্যা ও ব্যয়বহুলতার কারণে। আর বিয়ের আগের নিয়মগুলো মেয়েদের ওখানে করা হয়েছে, নিজের ভাড়া বাসা হওয়াতে। আর হ্যাঁ, যাঁর কিছুই নেই বা কেহ থাকে না, তাঁর কি কোনকিছু আটকে থাকে, দাদা? একভাবে-না-একভাবে হচ্ছেই। জীবন থেমে থাকে না, দাদা। ধর্মীয় নিয়মের জন্যও কোনকিছু আটকে থাকে না। আমার বিয়েটাকে একরকম চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। এতে আমি পরাজিত হইনি। বরং সফল হয়েছি।
সাথে থাকার জন্য অজস্র ধন্যবাদ জানাচ্ছি শ্রদ্ধেয় দাদা।
কামাল উদ্দিন
হুমম, ঠিক বলেছেন দাদা, জীবন কোন কিছুতেই আটকে থাকে না, এগিয়ে যান, সাথেই আছি।
নিতাই বাবু
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা। শুভকামনা থাকলো।
আলমগীর সরকার লিটন
অনেক সুন্দর লেখেতেছেন প্রিয় কবি নিতাই দা
নিতাই বাবু
সাথে আছেন দেখে ভালো লাগছে, শ্রদ্ধেয় কবি লিটন দাদা। আশা করি সাথে থাকবেন। শুভকামনা থাকলো।
ছাইরাছ হেলাল
যাক, অবশেষে আপনি মারা গেলেন!!
নিতাই বাবু
সত্যিই একরকম মারাই গেলাম, শ্রদ্ধেয় কবি মহারাজ। তবে সেই থেকে এখনো একসাথেই আছি, মিলেমিশে সংসার করছি। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় কবি মহারাজ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বাপরে বাপ বিয়ের কি ঝামেলা! বৌদিকে আনার জন্য বিয়ের আগেই শ্বশুর বাড়ির প্রতি কি দরদ। শেষপর্যন্ত ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে গেলো। খুব আনন্দের সংবাদ। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
নিতাই বাবু
আমার বিয়েটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ছিলাম, দিদি। আমি সফল হয়েছি। আর বিয়ের নিয়মকাজও কোনকিছু বাদ রাখিনি। হিন্দু ধর্মীয় রীতিতে সাতপাক ঘুরে সেই মেয়েটাকেই জীবনসঙ্গী করেছি। এখনো মিলেমিশে ভালো আছি। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দিদি। আশা করি ভালো থাকবেন।
খাদিজাতুল কুবরা
দাদা এটুকু বুঝলাম বৌদিকে অর্জন করতে আপনাকে অনেক ঝক্কি পোহাতে হলো।
তারপর ও ভালোবাসার ঘর বাঁধা হলো এটাই বড়ো কথা।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ দিদি, আমার বিয়েটাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ছিলাম। তাতে মনে হয় আমি সফল হয়েছি। আর বিয়ের নিয়মকাজও কোনকিছু বাদ রাখিনি। হিন্দু ধর্মীয় রীতিতে সাতপাক ঘুরে সেই মেয়েটাকেই জীবনসঙ্গী করেছি। এখনো মিলেমিশে ভালো আছি। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দিদি। আশা করি ভালো থাকবেন।
ইঞ্জা
অভিনন্দন দাদা, শেষ পর্যন্ত বিয়ে হলো, আমাদের মিতো আপনাদেরও বিয়ে নিয়ে দেন দরবার হয় তাহলে, বেশ বেশ।
সাথে আছি ওস্তাদ।
নিতাই বাবু
অবশ্যই হয় দাদা। একটু বেশি ছাড়া কম হয় না নিশ্চয়! কিন্তু আজকাল শহরের বাড়িতে বেশি একটা ঝামেলা পোহাতে অনেকেই চায় না। সবাই শর্টকাটেই ঝামেলা মুক্ত হতে চায়। আমিও কিন্তু শর্টকাটে ঝামেলা মুক্ত হয়েছি।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদের সাথে শুভকামনাও থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
ইঞ্জা
জ্বি দাদা সত্যই বলেছেন, ঝামেলা সব বিয়ের বেলায় হয় কম বেশ।
নিতাই বাবু
প্রত্যুত্তরের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি শ্রদ্ধেয় দাদা।
শামীম চৌধুরী
আপনাদের বিয়েতে তো লগ্ন ছাড়া বিয়ে হয় না। বিয়ে নিয়ে দেন দরবার দেখছি সব ধর্মেই আছে। যাক এগিয়ে যান দাদা। সঙ্গে আছি। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ দাদা, আমাদের ধর্মীয় কোনও নিয়ম লগ্ন ছাড়া হয় না। আর বিয়ে তো লগ্ন ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। আমার বিয়ের লগ্ন ছিলো, রাত ১০.৩০ মিনিটের সময়, দাদা।
আর হ্যাঁ,আপনি আপনার সব পোস্টেই নিয়মিত। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সাথে শুভকামনা থাকলো।
সুপায়ন বড়ুয়া
অভিনন্দন দাদা, শেষ পর্যন্ত বিয়ে হলো,
বিয়ে নিয়ে দেন দরবার এটার হয় না শেষ
সুখে থাকুন বন্ধু, শুভ কামনা অশেষ !
নিতাই বাবু
হ্যাঁ দাদা, অনেক সাধনার বিয়ে আমার। যাকে নিয়ে প্রতিদিন মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম। সুখে আছি দাদা। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাথে শুভকামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
আপনাকে ও ধন্যবাদ। শুভ কামনা।
তৌহিদ
এতো পুরা হুলুস্থুল কান্ড! তবে আপনার বিয়েতে আপনার নিজের মহানুভবতা জেনে ভালো লাগলো। বিয়ে মানেই মেয়ের বাবার উপরে একধরনের বোঝা চেপে যায়।
সুখী হোন সবসময়, এটাই প্রার্থণা দাদা। শুভকামনা সবসময়।
নিতাই বাবু
হ্যাঁ দাদা, দুইটা মিলের মানুষ! পুরো বিয়েবাড়িতে হুলুস্থুল! আমি নিজেই আমার শ্বশুরকে অনেক হ্যাল্প করেছিলাম। তাই আমার শ্বশুর শাশুড়ি আমাকে খুবই ভালো জানতো।
শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
আরজু মুক্তা
শেষ পর্যন্ত আকাশের চাঁদ পেলেন।
বৌদি ভালো আছে তো?
নিতাই বাবু
আপনাদের সকলের আশীর্বাদ থাকলে কি খারাপ থাকতে পারে? খুবই ভালো আছে দিদি। সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাথে শুভকামনা থাকলো।
সঞ্জয় মালাকার
দাদা এ-পর্বের –
বিয়ের বিষয়গুলো একদম আমার বিয়ের মতো হয়ে গেলো,
আপনার গল্পের কথা, আমার জীবনের অতীত গুলো জাগায় ,
নতুন করে স্বপ্ন দেখায় কিছু একটা করার।
কি সুভাগ্য আপনার, ভালোবাসায় সফলতা।
তবে আমার বেলায় ভালোবাসা ছিলো না, যা হবার তা বিয়ের পরে জন্মেছে,।
ধন্যবাদ দাদা শুভ কামনা।
নিতাই বাবু
দাদা, এক জোবনের সাথে আরও দশটা জীবনের মিল খুঁজে পাওয়া যায় ঠিক, কিন্তু আমার মতো অধম্য জীবনের সাথে কারোই মিল নেই বলে আমি মনে করি। আমার জীবনটা কেমন যেন এক অন্যরকম মনে হয়। কিন্তু মনের দিক দিয়ে আমি রাজা মহারাজার মতো নিজেকে ভাবি। কারোর কাছে মাথা নত করতে শিখিনি।
শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
সঞ্জয় মালাকার
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা,
দাদা, গরীর হতে পারি, কিন্ত কখনো কারো কাছে কখনো মাথা নত করিনি, আর কখনো করবো না যতদিন বাঁচাবো ।
ভালো থাকবেন সব সময়।
নিতাই বাবু
এটা আমার মনের কথা, দাদা। প্রয়োজনে আরও কঠিন পরিশ্রম করতে রাজি, কিন্তু ১০ টাকার জন্য নিজের বোনের কাছেও যাই না।
সাবিনা ইয়াসমিন
বিয়ের প্রতিটি ধাপ জানা গেলো। বিয়ে মানে শুধু দুজন মানুষের এক হওয়ার গল্প নয়, বিয়ের মাধ্যমে দুটি পরিবারের মাঝেও বন্ধন সৃষ্টি হয়। বৌদির পরিবারকে সাপোর্ট করে আপনি নিজের পরিবারের সাপোর্ট করেছেন।
স্মৃতিকথা চলুক, পড়ছি 🙂
ভালো থাকুন। শুভ কামনা রইলো দাদা 🌹🌹
নিতাই বাবু
সাথে আছেন দেখে ভালো লাগছে দিদি। লিখতেও ইচ্ছে করে। শুভকামনা থাকলো। আশা করি ভালো থাকবেন।