
গুলমার্গ, জম্মু এন্ড কাশ্মীর উপত্যকার বারমুলা জেলার অন্তর্গত। যা পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র ৮ কিঃ মিঃ দূরে। কাশ্মীরের সুলতান ইউসুফ শাহ্ চক ১৫৮১ সালে আসেন এই ফুলে সাজানো পাহাড়ী উপত্যকায়। কাশ্মীরি ভাষায় গুল মানে ফুল পাহাড়ের ঢালে ফুলের বাহার দেখে তিনি এর নাম রাখেন গুলমার্গ বা ফুলের উপত্যকা।
গুলমার্গ কাশ্মীরের অন্যতম আকর্যণীয় স্থান, এখানেই রয়েছে পৃথিবীর উচ্চতম ‘গণ্ডোলা’ তথা কেবল কার। আমাদের কাশ্মীর ভ্রমণের একটা পার্ট ছিলো গুলমার্গে গিয়ে গন্ডোলায় চড়ে বরফ ঢাকা পীরপঞ্জাল রেঞ্জে পা রাখা। সকাল ১০টার দিকে সম্ভবত আমরা গুলমার্গে প্রবেশ করি। তাড়াতাড়ি হোটেলে চেকইন করার পরই গন্ডোলা রাইড বা কেবল কার বন্ধের দুঃসংবাদটা পাই হোটেল রিসিপশনিষ্টের কাছ থেকে। পরে আবার জানতে পারলাম ফেইজ ০১ চালু আছে, (ফেইজ ০১ যায় গুলমার্গ থেকে কংডোরি পর্যন্ত, ফেইজ ০২ যায় কংডোরি থেকে আফারওয়াত পিক পর্যন্ত। আর ফেইজ ০৩ তথা চেয়ার লিফট যায় কংডোরি থেকে মেরি সোল্ডার পর্যন্ত।) কি আর করা ভাবলাম ০১এ চড়ে কংডোরি পর্যন্তই যাই, যতটুকু দেখা যায় ততটুকুই লাভ। কিন্তু দুঃসংবাদের ষোল কলা পূর্ণ হলো গন্ডোলা রাইডের অফিসে গিয়ে জানতে পারলাম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩/৪ দিন বন্ধ থাকবে।
কি আর করা শেষে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম ‘পনি রাইড’ অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে গুলমার্গ ঘুরে দেখব। পাহাড়ি পাথুরে পথে ঘোড়ায় চড়ে বেড়ানোটা বেশ বিপদ জনক মনে হয়েছে আমার কাছে, তবে খুব মজা পেয়েছি। সব থেকে বড় কথা হলো ঘোড়ায় চড়ার বা ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করার বেশ কিছু কলাকৌশল শিখে এসেছি। ওদের সাথে আমাদের কন্ট্রাক্ট ছিলো ৬টা দর্শনীয় স্পট দেখাবে, কোনটা কি দেখিয়েছে বা কয়টা দেখিয়েছে তা আমার এখন আর মনে নাই, তবে সব কিছু যে অসম্ভব ভালো লেগেছে এটা বলতে পারি নির্দিধায়, এবার আমার ক্যামেরায় দেখি গুলমার্গের কিছু অংশ।
(২) গুলমার্গে যখন আমরা করি তখন তোলা ছবি, টেক্সি ড্রাইভাররা তাদের গাড়ি রেখে রোদ পোহাচ্ছে।
(৩) আলপাইন রাইড, গুলমার্গে আমাদের এক রাতের ঠিকানা।
(৪) স্বপ্নের গন্ডোলা রাইড, তবে স্বপ্ন সফল হয়নি।
(৫) ওই চুড়ার দিকে তাকিয়ে তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা আমাদের।
(৬) শুরু হলো আমাদের পনি রাইড।
(৭/৮) পাইন বনের ভেতর দিয়ে পাথুরে চলতে চলতে যখন ক্লান্ত হচ্ছিলাম তখন নিজেরা নিজেদের কিছু স্মৃতিও এমন ভাবে ধারণ করে রেখেছিলাম।
(৯/১০) পাহাড়ের ভেতরে এমন কিছু অচেনা ফলও দেখেছিলাম, এগুলো সম্ভবত খাওয়া যায় না।
(১১/১২) এগুলো সম্ভবত গুলমার্গের প্রাশসনিক বাড়িঘর।
(১৩/১৪) অসম্ভব সুন্দর এই জায়গাটা সম্ভবত কংডোর বা কংডোরি উপত্যকা।
(১৫) কাশ্মীরের ঐতিহ্যবাহী পোষাকে নিজেকে সাজানো যায় এখানে।
(১৬) দূরের বরফ ঢাকা ঐ চুড়া থেকে হিম বাতাস এসে আমাদেরকে কাঁপিয়ে দিচ্ছিল ক্ষণে ক্ষণে।
(১৭) এক সময় সূর্য্যি মামা তার বিদায়ী আলো বিলিয়ে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিলো।
(১৮) আমরা পাহাড়ি পথ ছেড়ে এবার পিচ ঢালা পথ ধরে আলপাইন রাইডের দিকে ছুটে চললাম।
(১৯/২০) রাতের তাপমাত্রা সম্ভবত ছিলো ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস, পরদিন ভোরে আলপাইন রাইডের লনে আমাদেরকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানিয়েছিলো ফুল উপত্যকার এই ফুলগুলো।
৩৩টি মন্তব্য
নীরা সাদীয়া
বাহ্, দারুন৷ তবে কেবল কার জিনিসটা কি বুঝলাম না।
কামাল উদ্দিন
কেবল কার হলো তার দিয়ে ঝুলে যাওয়া ছোট্ট কার বিশেষ। যাতে চড়ে মানুষ দ্রুত পাহাড়ের কঠিন উচ্চতা পারি দিতে পারে। শুভ কামনা জানবেন আপু।
ইঞ্জা
পাহাড় থেকে পাহাড়ে, বস নিচ থেকে পাহাড়ে মোটা তারের সাহায্যে বক্স টাইপের কিছু থাকে যাকে কেবল কার বলে, যা ইলেক্ট্রিক মোটরের সাহায্যে টেনে নিয়ে যায় এপার ওপার, একেই বলে কেবল কার।
সিঙ্গাপুর এবং মালেশিয়াতে চড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার।
কামাল উদ্দিন
ইঞ্জিনিয়ারদের মতো ভালো জবাব আমরা দিবো কেমন করে? ধন্যবাদ ইঞ্জিনিয়ার ভাই।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই
হালিম নজরুল
অনেক কিছু জানলাম, দেখলাম। ধন্যবাদ ভাই।
কামাল উদ্দিন
আপনাকেও ধন্যবাদ নজরুল ভাই।
সুরাইয়া পারভীন
আহ! যেনো স্বর্গ দর্শন হলো আপনার পোস্টের মাধ্যমে। সত্যিই অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য। দেখলে মন শান্তি ও চোখ জুড়িয়ে যায়।
সবগুলো ছবি দারুণ
কামাল উদ্দিন
কাশ্মীর আবার কবে ওপেন হবে কে জানে? ওখানে আরো কিছু যায়গা আমার দেখার সখটা আমার এখনো পূরণ হয়নি আপু……শুভ কমনা সব সময়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অচেনা ফলগুলো খুব ভালো লেগেছে। অসাধারণ ট্যুর হয়েছে। স্বপ্ন পূরণ না হবার জন্য কষ্ট লাগলো। শুভ কামনা রইলো ভবিষ্যতের জন্য
কামাল উদ্দিন
ওখানে আরো দুইবার যাওয়ার আশা ছিল আপু, একবার এপ্রিলে টিউলিপের সময় অন্যবার ডিসেম্বর বা জানুয়ারির বরফের সময়।
মনির হোসেন মমি
দেখা হয়ে গেল সব।খুব ভাল লাগল।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ মমি ভাই, আপনি মনে হয় এখন অনেক ব্যস্ত
ফয়জুল মহী
অতি সহজ সরল ও নন্দিত ভাবে উপস্থাপন ।
কামাল উদ্দিন
হুমম
সাবিনা ইয়াসমিন
কাশ্মীর অসাধারণ সুন্দর একটা দেশ। যারা এই দেশটিতে ভ্রমণ করেছেন, তাদেরকে আমার অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে হয়। কেন মনে হবে না! পৃথিবীর স্বর্গ বলা হয় যে দেশটিকে সেখানে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়!
সব গুলো ছবি খুব সুন্দর। ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে চোখ সার্থক হলো। লাল টুকটুকে ফলগুলোকে আমি লাল আম ভেবেছিলাম 🙂
ভালো লাগলো পড়ে। আরও ভালো লাগলো আপনার লেখার পরিবর্তন দেখে। ক্রমে ক্রমে আপনি বিস্তারিত লেখা লিখতে শুরু করেছেন। এতে এখন ছবি দেখার পাশাপাশি পড়েও আনন্দ পাচ্ছি।
ভালো থাকুন,
শুভ কামনা 🌹🌹
সব গুলো ঘোড়াই কি পনি ছিলো?
কামাল উদ্দিন
আপনাদের কথায়ই কিছুটা লেখার চেষ্টা করি আপু। আমি জানি ঘোড়াকে পনি বলে সব ঘোড়াকে না বলার কি কোন কারণ আছে?
………ভালো থাকবেন সব সময়।
সুপায়ন বড়ুয়া
ও মাই গড দেখার মতো ছবি
চোখ জুড়িয়ে যায় ভাই
মন জুড়িয়ে যায়।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
শুভ কামনা আপনারও জন্য দাদা
ছাইরাছ হেলাল
যাওয়ার ইচ্ছে কিন্তু যেতে পারিনি সেটির নাম কাশ্মীর।
আক্ষেপ থেকেই গেছে, তবে কাশ্মীর নিয়ে এত পড়েছি তা মন হয় যারা অখান থেকে ঘুরে এসেছে তারাও তা জানে না।
আপনার ছবি দেখে অনেক ভাল লাগল।
কামাল উদ্দিন
ওখানে যদি আবার অবরুদ্ধ অবস্থা উঠে যায় তাহলে হয়তো আবার যাওা সম্ভব হয়ে উঠবে, আমারও যাওয়ার ইচ্ছে আছে ওকানে, সবই যে এখনো দেখার বাকী।
ইঞ্জা
গুল মার্গ, তথা কাশ্মীর দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি, কিন্তু আপনার লেখা এবং ছবিতে সেই স্বাদ কিছুটা হলেও মিটলো ভাই, এ জন্য ধন্যবাদ।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাই, হয়তো এক সময় ঠিকই আপনি যাবেন
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ
জিসান শা ইকরাম
আহারে স্বপ্নের ক্যাবল কার 🙁
পনি রাইড আছে, তা এই প্রথম জানলাম।
কাস্মীর কখনো যাওয়া হবে কিনা জানিনা।
ভ্রমন পোস্ট ভাল হয়েছে খুব।
কামাল উদ্দিন
কাশ্মীর আগে তো সুস্থ্য হোক, মোদি তো কাশ্মীরকে মৃতপুরি বানিয়ে রেখেছে।
তৌহিদ
এজন্যই কাশ্মীরকে স্বর্গরাজ্য বলা হয়। অসাধারণ সব ছবি। কেবলকারে আমার উঠার খুব ইচ্ছে।
কামাল উদ্দিন
বাংলাদেশেই অনেক যায়গায় কেবল কার আছে তৌহিদ ভাই……শুভ কামনা জানবেন।
নিতাই বাবু
বলতে পারি জীবন আপনার স্বার্থক হয়েছে ভ্রমণের জন্য। সত্যি আপনি একজন ভ্রমণপিপাসু ! চবি আর লেখায় সত্যি এক অনন্য পোস্ট! শুভকামনা থাকলো দাদা।
কামাল উদ্দিন
হয়তো হয়েছে, কিন্তু আমাদের কারোই তো কোন বিষয়ে চাহিডার শে নাই……ভালো থাকবেন সব সময়।
সঞ্জয় মালাকার
দাদা,যেনো স্বর্গ দর্শন হলো আপনার পোস্টের মাধ্যমে।
আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো🌹🌹
কামাল উদ্দিন
ওটাকে তো মর্তের স্বর্গই বলে দাদা
সঞ্জয় মালাকার
ধন্যবাদ দাদা, ভালো থাকবেন