
জানালার পাশেই একটা টিনের চালাঘর। টিনের চালে ঝমঝম শব্দে সকালের ঘুমটা আজ তাড়াতাড়িই ভেঙে গেলো। চোখ মেলে সরাসরি তাকালো জানালার দিকে। বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। ঘুমের ভেতর কি জানি একটা স্বপ্ন দেখছিলো তরু! ভালো লাগছিলো স্বপ্নটা। কিন্তু এখন মনে করতে পারছে না। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে কেমন যেন বোকা-বোকা লাগে! মাথার ভেতরটা ফাঁকা হয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ডের জন্যে। পাশ ফিরে দেখলো তমাল এখনো ঘুমিয়ে আছে।
তমাল ঘুমালে ওকে অনেক সুন্দর লাগে। সিলিং ফ্যানের বাতাসে একটু বড় চুল গুলো উড়তে থাকে কপালের প্রান্তে। ভীষণ সুন্দর দেখায়। শান্ত এক দেব মূর্তির মতো। অপার্থিব হাসিটা লেগেই থাকে ঠোঁটের কোনে। তখন ওর মুখটা ছুঁয়ে আদর করতে ইচ্ছে হয়। মনের অজান্তেই তরুর ডান হাত এগোতে থাকে ধীরে ধীরে। আলতো হাতে চুলগুলো সরিয়ে দেয়। নাহ, এখন না, আরেকটু ঘুমাক। সারাদিন এত কাজ করে মানুষটা, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেও বিশ্রাম নেয়না। এখন অনির্দিষ্টকালের সরকারি বন্ধের দিনগুলোতে দিনেও ঘুমাতে পারছে।
তরু বিছানা থেকে নেমে জানালার পাশে দাঁড়ায়। অঝোর বৃষ্টিতে প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। রোঁদে পোড়া ধূসর হয়ে যাওয়া গাছ গুলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে ঘন সবুজ হয়ে উঠেছে। এই সময়গুলোতে তরু কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। তমালের সাথে কাটানো দূরন্ত দিনগুলোর ছবি একে একে ভেসে উঠে মনের পর্দায়। আত্মভোলা তমালটা এখন আগের চেয়েও বেশি ভোলাভালা হয়ে গেছে। গতানুগতিক প্রেমিক সে কখনোই ছিলো না। কিন্তু এখন! একদম রুক্ষ, কাঠখোট্টা হাজব্যান্ড বনে গেছে।
– জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছো তরু?
= উম, কিছুনা। তোমার কথাই ভাবছিলাম
– তাই নাকি! কি ভাবছিলে শুনি?
= ভাবছি তুমি কত খড়খড়ে-কটকটে টাইপ হয়ে গেছো,
– মানে! আমি কটকটে হয়ে গেছি? কখন! কিভাবে!?
= হু, ঠিকই বলেছি। আগে ভালোবাসতে আধা লিটার পানিতে এক চিমটি লবন গুলে দেয়া ওরস্যালাইন এর মতো। আর এখন করোনায় আক্রান্ত হবার ভয়ে কুঁকড়ে থাকা পাবলিকের মতন। তোমার ভালোবাসা ছয় ফিট দূরে এসেই থেমে থাকে।
– এসব কি বলছো জানু? আমার মতো প্রেমিক তুমি কই পাবে?
= হুহ! খুঁজলে তো পাবো! তোমার মতো ওয়ান পিস প্রেমিক কে চায় শুনি? আমায় ঠিকঠাক মতো প্রোপজই করলে না আজ পর্যন্ত। এমন প্রেমিক কি আমি চেয়েছিলাম!
– দেখো জানু, প্রতিমাসের বেতন পেয়ে আগে তোমার জন্যে শপিং করি। নিজে এক টিশার্ট পড়ে বছর পার করে দিচ্ছি, প্যান্ট কেনার কথা স্বপ্নেও ভাবিনা। মার্কেটের এক ডজন দোকানে ঘুরে ঘুরে তোমার কসমেটিকস আইটেম কিনে আনি, তবুও বলছো ভালোবাসি না!
= তো! সব হাজব্যান্ডরাই এসব করে। নিজের বউকে সাজাতে এগুলো কিনে দিতে হয়।
– আর ফুটপাতে দাঁড়িয়ে তুমি যখন ভাঁপা পিঠা, দশ টাকা প্লেটের ফুচকা খেতে চাও, আমি ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ঐ ধুলোমাখা অস্বাস্থ্যকর খাবার গুলো তোমাকে কিনে খাওয়াই, ওটা প্রেম না?
= উহু, মোটেও না। তুমি ওগুলো কিনে দাও কারণ, আমার ভাঁপা-ফুচকা খাওয়ার অবসরে নিজে দাঁড়িয়ে চা-সিগারেট খাওয়ার জন্য। সব বুঝি আমি। আমাকে কি তোমার বোকা মনে হয়?
– হু, বুঝেছি। আপনি অনেক বুদ্ধিমতী আর আমি কেবলাকান্ত ওরফে ভোলানাথ।
তমাল আর কিছু না বলে টিশার্ট টা গায়ে দিলো। মোবাইল প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে হাতের আঙুল দিয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বাইরে বেড়িয়ে গেলো। চা টাও খেলো না।
– হুহ, কত রাগ! আমার বয়েই গেছে ডেকে চা খাওয়াতে।
বাইরে বৃষ্টি প্রায় থেমে গেছে। অল্প অল্প কয়েকটা ফোটা, সাথে সূর্যের আলোয় সবুজ গাছগুলো ঝলমলিয়ে উঠেছে। তমাল এখনো ফেরেনি। কই যে গেলো! ঘুম থেকে উঠে কিছুই খায়নি। তরুর মন খুব অস্থির হলো। নিজের উপর খুব রাগ লাগছে। কেন যে অকারণে ঝগড়া করে! তমাল তো এমনই। ভালোবাসে প্রকাশ করতে পারেনা। তরু সব জেনেও কেন যে ঝগড়া করে বেচারার মনে কষ্ট দেয়!
ফোনে রিং হচ্ছে। তমাল ফোন করেছে,
– হ্যালো, তরু আমি ছাদে আছি। তুমি একটু আসবে?
= এই ভর দুপুরে ছাদে কি করছো? তাড়াতাড়ি নীচে চলো, দেখছো না সব কেমন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। আবার বৃষ্টি হবে।
– হোক, এই নাও। দুটোই ফুটেছিলো।
= সেকি! তোমার এত যত্নে লাগানো গাছের দুটো ফুলই ছিঁড়ে ফেলেছো? আমার জন্যে !
– ফুল গাছগুলো তোমার জন্যেই লাগিয়ে ছিলাম। ফুল তোমাকে দিবো নাতো কি করবো?
= কিন্তু এটা ঠিক না। গাছের ফুল গাছেই সুন্দর।
– এখন আর ঝগড়া করিস না জানু। কাল/ পরশু করিস। অনেক ভালোবাসি তোকে, এখন শুধু ভালোবাসতে দে….
ঝরঝর করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির প্রতি ফোঁটায় নতুন পানি। ধুয়ে দিচ্ছে সব কিছু। তরু তমালের মনের মাঝে জমে থাকা মান-অভিমান গুলো মিলিয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ বৃষ্টির ফোঁটায়। রুপ নিয়েছে স্ফটিকের আয়নায়। সেখানে জ্বলজ্বল করছে ভালোবাসার প্রতিবিম্ব।
বৃষ্টির মূর্ছনা এড়িয়ে তমালের বুকে কান পেতে তরু শুনছে তমালের অব্যক্ত কথা…
– জানুরে, আমার মতো করে তোমায় আর কেউ ভালোবাসবে না। আই লাভ ইউ সো মাচ
= আমিও .আই লাভ ইউ মোর..
★ছবি-নেট থেকে।
★ যুগল-৫
৩১টি মন্তব্য
তৌহিদ
প্রথম ☺
চকলেট খাওয়ান ☺☺
সাবিনা ইয়াসমিন
এতো রাতে চকলেট খেলে দাঁতে পোঁকা ধরবেতো!! নিন, ফুল নিয়ে যান 🌹🌹🌹🌹
তৌহিদ
থ্যাংকস আপু।
নৃ মাসুদ রানা
বাহ, রোমান্টিক।
সাবিনা ইয়াসমিন
হু, ধন্যবাদ 🌹🌹
এস.জেড বাবু
বৃষ্টি আমার খুবই প্রিয়- যদিও ঝড় পছন্দ না-
তবুও ওরা আসে একসাথে
জুটি বেঁধে__
//////বৃষ্টির প্রতি ফোঁটায় নতুন পানি। ধুয়ে দিচ্ছে সব কিছু। তরু তমালের মনের মাঝে জমে থাকা মান-অভিমান গুলো মিলিয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ বৃষ্টির ফোঁটায়। রুপ নিয়েছে স্ফটিকের আয়নায়। সেখানে জ্বলজ্বল করছে ভালোবাসার প্রতিবিম্ব।
সব যদি বদলে যেত কোন নতুন জাদুতে – দুনিংযার সব কষ্ট।
মুছে যেত করোনার সর্বশেষ ভাইরাস কনার চিহ্ন-
বিধাতা সবই পারেন- করেন ও সবই।
আমরাও মাটির বুকে কান পেত বলতে চাই বাতাসের কাছে- ভালোবাসি- প্রচন্ড ভালোবাসি এই পৃথিবী।
শুভকামনা
সাবিনা ইয়াসমিন
বৃষ্টি প্রকৃতিকে শুদ্ধ করে। সৃষ্টিকর্তা যদি ইচ্ছে করেন তাহ, কোন এক বরকতময় বৃষ্টিতে এই ভাইরাস দূর হয়ে যাবে।
ধন্যবাদ বাবু ভাই 🌹🌹
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এভাবে বৃষ্টিতে যদি সবকিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যেত, মনের দাগ গুলো, কষ্টগুলো হারিয়ে যেত খুব ভালো লাগতো। খুব সুন্দর , এমন কাঠখোট্টা প্রেমই ভালো । ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। শুভ সকাল
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালো হলেই ভালো। যে যার সাথে মানিয়ে নেয়ার মাঝেই ভালবাসার সার্থকতা।
ধন্যবাদ 🌹🌹
সঞ্জয় মালাকার
চমৎকার রোমান্টিক গল্প পড়ে বেশ ভালো লরগলো দিদি,
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা 🌹🌹
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও দাদা 🌹🌹
তৌহিদ
এমন ভালোবাসা সকলে পায়না, অবশ্য এটা উপলব্ধির বিষয়। সবার প্রকাশভঙ্গী একরকম নয়।
রোমান্টিক গল্প ভালো লেগেছে আপু।
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালবাসা উপলব্ধির বিষয় বলেই হয়তো কেউ পায়, কেউ হারায়।
সুন্দর কমেন্টের জন্যে ধন্যবাদ তৌহিদ ভাই 🌹🌹
রেহানা বীথি
ভালো লাগলো রোমান্টিক গল্প। তবে চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার একটু বেশি হয়ে গেছে যেন! রোঁদে- রোদে, পোঁড়া- পোড়া, ভিঁজে- ভিজে, ভাঁপা- ভাপা। একটু খেয়াল করবেন আপু।
ভালো থাকবেন, শুভকামনা রইল।
সাবিনা ইয়াসমিন
ঠিক করে নিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন বীথি আপু 🌹🌹
সুপায়ন বড়ুয়া
বৃষ্টিভেজা ছাদে তরু – তমালের
রোমান্টিক খুনশুটি ভালই লাগছিল।
চালিয়ে যান আপু।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
হঠাৎ হঠাৎ লিখে ফেলি। আর পারবো কিনা জানিনা । সব সময় অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ দাদা 🌹🌹
প্রদীপ চক্রবর্তী
রোমান্টিক গল্পে এমন ভালোবাসা কজন পায়?
ভালো লেখনী দিদি।
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্পে পাওয়া যায়, বাস্তবতা হয়তো অন্যরকম হয়।
ধন্যবাদ তোমাকে, 🌹🌹
শবনম মোস্তারী
তমাল-তরুর মিষ্টি ভালোবাসার খুনসুটি মন ছুঁয়ে দিল..❤️❤️
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালোবাসা নিও শবনম। ভালো থেকো।
শুভ কামনা 🌹🌹
ছাইরাছ হেলাল
করোনায় জানু-ফানুরা বেশ ফালিয়ে চলছে দেখতে পাচ্ছি।
হাসির ইমো হবে!! ফাইন গল্প বলতে চাই!!
সাবিনা ইয়াসমিন
একটা গল্প লেখার চেষ্টা করেছি।
ধন্যবাদ মহারাজ 🌹🌹
বন্যা লিপি
বৃষ্টির তোড়ে ভেসে গেলাম গো ময়না😊
এমন ভালবাসা কজন পায়? আজীবন আরাধ্য থেকে যায়। খুব খুব খুব ভালো লাগলো বৃষ্টিময় তরু-তমালের ভালবাসার গল্প।
ভালবাসা তোকে ময়না❤❤❤
বিঃদ্রঃ রাগ করোনি তো! আবদারে তুই চলে এলো।
সাবিনা ইয়াসমিন
রাগ করিনি। আত্মার টান অনুভব করেছি। তুই/ তুমি যেকোনো সম্বোধনে ডাকার অধিকার আছে তোমার। যা খুশি ডেকো। ভালো থেকো ❤❤
জিসান শা ইকরাম
বুঝা গেলো যে, মান অভিমান চলে যেতে বৃষ্টি লাগবেই,
তা সমস্ত বছর বৃষ্টি হলে ভালোই হয়, মান অভিমান সব ধুয়ে যাবে রোজ,
এরপর শুধু শান্তি আর শান্তি, ওম শান্তি ওম 🙂
অনেক ভালো লেগেছে এই মিষ্টি প্রেমের গল্প।
মাঝে মাঝে এমন গল্প দিয়েন, পাঠকরা ওর স্যালাইনের মত পান করে তৃপ্ত হতে পারবে।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্পের প্রয়োজনে বৃষ্টি নেমেছে। বাস্তব মান অভিমানের হয়তো অন্য সমাধান থাকে। তবে শান্তির বিকল্প শান্তিই হয়।
ধন্যবাদ আপনাকে,
ভালো থাকবেন 🌹🌹
সুরাইয়া পারভীন
এখন আর ঝগড়া করিস না জানু। কাল/ পরশু করিস। অনেক ভালোবাসি তোকে, এখন শুধু ভালোবাসতে দে… ওরে কি দারুণ রে
এ তো সত্যিই করোনা ভয়ে ভীতু পাঠকের জন্য দুর্দান্ত ওর স্যালাইন
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহাহা, বেশ ভালো লাগলো কমেন্ট পড়ে।
শুভ কামনা সব সময়ের জন্যে ❤❤
হালিম নজরুল
আগে ভালোবাসতে আধা লিটার পানিতে এক চিমটি লবন গুলে দেয়া ওরস্যালাইন এর মতো। আর এখন করোনায় আক্রান্ত হবার ভয়ে কুঁকড়ে থাকা পাবলিকের মতন। তোমার ভালোবাসা ছয় ফিট দূরে এসেই থেমে থাকে।
——————–চমৎকার
সাবিনা ইয়াসমিন
মতামতের জন্যে ধন্যবাদ ভাই 🌹🌹