
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, আগে থেকেই বলা হয়েছিলো দুপুর একটা নাগাদ পুরানা পল্টনের হোটেল মেট্রোপলিটন এর দ্বিতীয় তলায় একটা রেস্টুরেন্টে সোনেলা ব্লগ পরিবারের বাৎসরিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে। গত পৌষ মাসে সোনেলা পরিবার পৌষ সংক্রান্তি উৎসব নামে ব্লগারদের নিয়ে একটি সাহিত্য বিষয়ক কম্পিটিশন আয়োজন করে। সেখানে আমার একটা কবিতা দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে যার জন্য ব্লগ কতৃপক্ষ আমাকেসহ অন্যান্য বিজয়ীদেরকে উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করবেন।
একজন লেখকের কাছে এই মুহূর্তটা আসলেই খুব আনন্দের যখন তাঁকে তাঁর লেখার জন্য সম্মানিত করা হয়। কিন্তু আমি যেন অন্য কোথাও আটকে ছিলাম। এই সম্মাননা অনুষ্ঠান, এই মিলনমেলা সবকিছু ছাপিয়ে আমার মন যেন অন্য কোথাও ছুটে যাচ্ছিল। এই মিলনমেলায় আমি এমন কিছু খুঁজে পেতে চেয়েছিলাম যার সংস্পর্শে আমি হয়তো এর চেয়েও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননায় সম্মানিত হতে পারবো।
আমি এক টুকরো কষ্টিপাথর খুঁজছিলাম। যাঁর ছোঁয়ায় আমি প্রকাশ করতে পারবো আমার অবিকশিত প্রতিভা। যাঁর আলতো সংস্পর্শে আমার সুপ্ত সম্ভাবনা জাগ্রত হবে।
আর তিনি হয়তো এতো দিন আমার অনেক কাছেই লুকিয়ে ছিলেন। অথবা আমি নিজেই তাঁর কাছাকাছি থেকেও চিনতে পারিনি। আজ তিনিও আসছেন এই মিলনমেলায়।
আমি আমার সকল কর্মব্যাস্ততার ছুটি দিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম সেদিন, দুপুর দুইটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম কাঙ্খিত গন্তব্যে। অবশ্য আমি যথাসময়ে পৌঁছাতে পারিনি। কিছুটা লেট ছিলাম। তারপরেও সবাই খুব আন্তরিকতার সাথেই গ্রহণ করেছিলো। আমি কৃতজ্ঞ সোনেলা পরিবারের সকল সু-সম্মানিত সদস্যের আন্তরিকতার জন্য।
যাই হোক ওখানে পৌঁছে আমি হাতে গোনা তিন চারজন ব্যতীত আর কাউকে চিনতে পারলাম না। সোনেলা ব্লগের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা জিসান শা ইকরাম ভাইয়া, সুপায়ন বড়ুয়া দাদাভাই, বন্ধু সুরাইয়া পারভীন, নৃ মাসুদ রানা ভাই, এই কজন কে দেখা মাত্রই চিনে ফেললাম। আর যাঁকে কাছে থেকে দেখার জন্য সব কাজ ফেলে ছুটে গিয়েছিলাম তাঁকেই চিনতে একটু সময় লাগলো।
মহারাজ, জিসান ভাইয়ার বাম পাশে ফর্সা লম্বা রাশভারী গম্ভীর চেহারার যে মানুষটা ক্যাপ মাথায় দিয়ে বসে আছেন উনাকে দেখিয়ে সুরাইয়া আমাকে বললো উনিই তোর প্রিয় মহারাজ। আমি একপলক দেখবো বলে তাকিয়ে ছিলাম, কিন্তু চোখ আর সরছিলো না। কি এক অদৃশ্য জাদুর টানে আমি বিমোহিত হয়ে যাচ্ছিলাম। সে আমি বলে প্রকাশ করতে পারবো না।
একটা সময় আমার পরিচয় পর্বে নিজের কথা শেষ করে মহারাজের সাথে কিছু কথা শেয়ার করলাম। মহারাজের কাছ থেকে কিছু বের করে আনতে চাইলাম। ভেবেছিলাম একটু সময় পেলে আরো অনেক কথা বলবো, অনেক উপদেশ শুনবো। আমার মহারাজের শব্দ সম্ভার সত্যিই এতোটা বিশাল যে সেটা অক্সফোর্ডের চেয়েও কোন অংশে কম নয়।
মহারাজা পুরো প্রোগ্রামে আমাকে তিনি “আমার কবি” বলেই ডেকেছেন। একবারও আমাদের কবি বলেন নি। এবং আমি একটা বিষয় খুব খেয়াল করলাম উপস্থিত এতো জন সদস্যের মধ্যে মহারাজ আমাকে স্পেশাল ট্রিট করলেন। আমি সত্যিই আপ্লুত। আমি যারপর নাই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।
ক্রেস্ট বিতরণ শেষে খাওয়া-দাওয়া পর্বে এসেও তিনি আমার স্পেশাল কেয়ার নিলেন। আমার স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষ উদ্দ্যেগ প্রকাশ করলেন। তারপর অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এসে আমি সুযোগ পেলাম মহারাজের পাশে দাঁড়িয়ে একটা ছবি তোলার। স্মৃতিতে চিরভাস্বর হয়ে থাকলো একটা দিন। একটা বিশেষ সময়, যদি কখনো দ্বিতীয়বারের মতো কোথাও কোন পুরষ্কার জিতে নিই, তবে সেটা আমার মহারাজের নামেই অগ্রিম উৎসর্গ করে রাখলাম।
এই অনুষ্ঠানে যাদেরকে খুব বেশি মিস করেছি, তারা হলেন তৌহিদ ভাইয়া, আর সাবিনা ইয়াসমিন আপু। আর যে প্রিয়জন না থাকলে আমি এই পরিবার তথা এই মহারাজের সান্নিধ্যে কখনোই আসতে পারতাম না সে হলো প্রিয় বন্ধু সুরাইয়া পারভীন। তাই আমি আমার এই সম্মাননার পুরো কৃতিত্বটাই সুরাইয়া পারভীনকে দিলাম।
৩৮টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এতদিন জানতাম কবি/লেখকরা বানিয়ে-টানিয়ে ফুলিয়ে-ফাপিয়ে বলে!
এখন তা সত্যি সত্যি-ই সত্যি মনে হচ্ছে!
ত্রিস্তান
হা হা হা, এ যে আমার পরম পাওয়া মহারাজ। আমি ধন্য।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসাধারণ লিখেছেন এতোদিনের অদৃশ্য জনকে নিয়ে। যিনি নিজের লেখায় সবার কাছে অধরা কিন্তু খুব আপনজন অন্যের বেলায়। তাকে দেখার সাধ আমার ও ছিল। যখন তিনি তার পরিচয় দিলেন আমিও দেখলাম একজন কবিরাজ, মহারাজ। ভেবেছিলাম খুব রাশভারী, মুডি হবেন। এতটা অমায়িক, আন্তরিক সত্যিই উনি মহারাজ কবিতায়, ব্যবহারে। অনন্য দাদা আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
ত্রিস্তান
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। কিন্তু দুঃখের বিষয় আপনার সাথে কোন আলাপ হলো না । আমি সত্যিই দুঃখিত আপু।
ইঞ্জা
যাক তাহলে আপনার মহারাজ এবং আমাদের প্রিয় কুবিরাজের দেখা পেলেন, আনন্দও ডাবল, অভিনন্দন ভাই, আরেকটা বিষয়ে খটকা রয়ে গেল্প, আমি ইঞ্জাকে কি আপনি আগে কোথাও দেখেননি, আমার তো মনে হয় দেখেছেন, পরিচয়ও ছিলো। 😏
ত্রিস্তান
আমি দুঃখিত দাদাভাই। সাথে সাথে লজ্জিতও। আপনাকে তো আমি আগে থেকেই চিনতাম। অথচ বেমালুম ভুলে গেলাম। এই জন্যই মহারাজাকে আরো একবার ধন্যবাদ দেবো, কারণ উনি আমার অস্থিরতাটা ঠিকই ধরেছিলেন। একান্তে আমাকে যে উপদেশ পরামর্শ দিয়েছিলেন তার মূল কথাটাই ছিলো আমার এই অস্থিরতা। ইনশাআল্লাহ এর পর থেকে আর কখনো ভুলবো না আমার প্রাণপ্রিয় ইঞ্জা দাদাভাই কে।
ইঞ্জা
মজা করেছি ভাই, আমি জানতাম আপনার অস্থিরতা আপনার মহারাজ, আমাদের কুবিরাজকে নিয়ে, ভালো থাকুন ভাই।
সুপায়ন বড়ুয়া
ওয়াও ! কবি মানুষ লেখায় ও পটু
এবার তার প্রমান পেলাম।
শুভ কামনা।
ত্রিস্তান
অনেক অনেক ভালোলাগা দাদাভাই। আপনাদের মতো গুণীজনদের আসরে ঠাঁই করে দেওয়ার জন্য। কৃতজ্ঞতা অনিমেষ 😍
ফয়জুল মহী
চমৎকার , মুগ্ধ।
ত্রিস্তান
অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদাভাই 😍
কামাল উদ্দিন
কোন একদিন মহারাজের দরবারে আমিও উপস্থিত থেকে ওনার সান্নিধ্য পাবার অপেক্ষায় থাকলাম।
ত্রিস্তান
শুভ কামনা রইলো দাদাভাই। মহারাজ সত্যিই মহারাজ। আমি কৃতজ্ঞ উনার অকৃত্রিম স্নেহাশিস পেয়ে।
কামাল উদ্দিন
হুমম, আমিও অপেক্ষায়…..
হালিম নজরুল
চমৎকার অনুভূতি
ত্রিস্তান
অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদাভাই 😍
মনির হোসেন মমি
কার মন কখন কোথায় হারায় তা বলা যায় না তবে হীঁরে হীঁরেকে চিনবে এটাই স্বাভাবিক। দুই কবির জন্য রইল শুভ কামনা।আপনাকে পেয়ে আমরাও ধন্য।
ত্রিস্তান
অনেক অনেক ভালোলাগা দাদাভাই। আপনাদের সহচার্য্য সহমর্মিতা কখনোই ভুলে থাকা যায় না।
নিতাই বাবু
সোনেলা পরিবারের কবিতা রাজ মাহারাজকে শুভেচ্ছা। সাথে পোস্টদাতার জন্য থাকলো শুভকামনা!
ত্রিস্তান
অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদাভাই। ভালো থাকবেন সবসময় 😍
Shahadat
অভিনন্দন রইলো প্রিয় ভাই❤❤
ত্রিস্তান
শুভেচ্ছা নিরন্তর দাদাভাই 😍
ইসিয়াক
ভালো লাগা রেখে গেলাম।
শুভকামনা।
ত্রিস্তান
অনেক অনেক শুভকামনা ভাইয়া ❤️
নাসির সারওয়ার
আহারে! আমার যদি একখান ছবি থাকতো তাহার সাথে! !
স্মৃতি থাকুক সাজানো গোছা্নো।
ত্রিস্তান
ভালোবাসা অনিমেষ ❤️
ছাইরাছ হেলাল
শুনতে পাই, তিনি শুধুই কবিদের/কবিতাদের,
বুঝতেই পারছেন যাহারা কবি/কবিতা পরিত্যাগ করেছেন…………হে হ হে !!!!
নাসির সারওয়ার
কবিতাতো অনেক হলো। এবার ভাবছি বিজ্ঞান নিয়ে এসে সবাইকে টাস্কি লাগিয়ে দেবো!
ছাইরাছ হেলাল
সহে না এত দেরি!
শুরু করে দিন, পড়াশোনা আমরাও ঝালিয়ে নেই।
চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে একটু কচলা-কচলি করি।
অন্য বিজ্ঞান হলেও সমস্যা হবে না, বুঝতেই পারছেন!
জিসান শা ইকরাম
অত্যন্ত আন্তরিক লেখাটি পড়ে মুগ্ধ হলাম।
শ্রদ্ধা ভালোবাসা এমন করেই জন্মায়।
আমরাও খুব খুশি হয়েছি মিলন মেলায় আপনাকে পেয়ে। পরিচয় পর্বে মহারাজের সাথে আপনার প্রশ্নোত্তর বেশ উপভোগ্য ছিল।
এই মিলনমেলার সৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে।
শুভ কামনা।
ত্রিস্তান
অনেক অনেক শ্রদ্ধা ভালোবাসা কৃতজ্ঞতা শ্রদ্ধেয় জিসান ভাইয়াকে। প্রকৃত অর্থে আপনি না থাকলে হয়তো আজকের এত সুন্দর একটা দিন আমার জীবনে কখনোই আসতো না। ভালোবাসা নিরন্তর।
নাজমুল হুদা
মহারাজাদের রাজ্যে একদিন আমিও আসতে চাই।
রাজ্যের সব রাজাদের ভালোবাসা ঝুড়িতে তুলে অনুপ্রেরণার সাগরের বুক ভিজিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
জয় হোক সোনেলার সকল মহারাজাদের ❤️❤️
ত্রিস্তান
আসতে তো হবেই। সোনেলা হচ্ছে সেই পুরাতন ব্রম্মপুত্রের মতো, শত সহস্র মোহনার আদি-অন্ত ধারক এই সোনেলা ব্লগ। অনেক অনেক শুভকামনা প্রিয়।
নিতাই বাবু
অনলাইনভিত্তিক দিনলিপি সাইট ব্লগে, আর বর্তমান বেশিরভাগ মানুষের জীবন মরণ ফেসবুক দুনিয়ার ছদ্মনাম ব্যবহারকারীরা শরীর ঘেঁষে থাকলেও পরিচয় না দেওয়া পর্যন্ত ছদ্মনামধী ব্যক্তিকে কেউ চিনতে পারে না। আর কেউ পারবে বলেও মনে হয় না। সোনেলা ব্লগে লেখালেখির মাঝে এমন অনেক ছদ্মনাম চোখে পড়ে। সেসব ছদ্মনামধারী ব্যক্তিকে নিয়ে অনেকসময় ভাবি! আর নিজে নিজেকে জিজ্ঞেস করি কে এই বর্ষীয়ান ব্যক্তি? কিন্তু তারপরও প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারি না। তাই সামনে থেকেও খুবই কাছের মানুষটি থেকে যায় অপরিচিত! তেমনই একজন আমাদের সোনেলা ব্লগের প্রাণপ্রিয় শ্রদ্ধেয় লেখক সম্মানিত অনন্য অর্নব দাদা। তিনিই মনে হয় সোনেলা ব্লগে ত্রিস্তান নামে পরিচিত। ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী।
ত্রিস্তান
হা হা হা 😀 প্রকৃত জহুরীর চোখ নিয়ে যে তাকায় তাঁর আর কষ্টিপাথর দরকার হয় না। অনেক ধন্যবাদ দাদাভাই। কিন্তু ছদ্মনাম নিয়েও আর বাঁচতে পারলাম না। আবার হয়তো ফিরে যাবো আসল নামে।
তৌহিদ
হেলাল ভাই সত্যিই কষ্টিপাথর। এমন মানুষের সান্নিধ্য পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। আপনি পেয়েছেন দেখে হিংসে হচ্ছে! আপনাদের সবাইকে আমিও মিস করেছি। দেখা হবে ইনশাল্লাহ।
ভালো থাকবেন ভাই।
ত্রিস্তান
আমি কিছুদিন আগে বেদুইন শব্দটা নিয়ে কয়েকটা লেখা পোস্ট করেছিলাম। আর তখন দেখলাম মহারাজ কিভাবে একজন লেখকের ভেতর থেকে তার লেখনী স্বত্বাকে টেনে বের করার ব্যবস্থা করেন। আসলেই জীবন আর জীবিকার তাগিদে হয়তো একটু দূরে সরতে হয়েছে। কিন্তু আশা করছি খুব শীঘ্রই মহারাজের কাছে আবারো নিজেকে সোপর্দ করে দিতে পারবো।
আপনাকে আর ভাবীকে অনেক মিস করেছি। আশা করছি পরের মিলন মেলায় ইনশাআল্লাহ দেখা হবে।
তৌহিদ
ইনশাআল্লাহ দেখা হবে ভাই।