
ধর্ম বর্ণ ভাষার প্রকারভেদ নিয়েই এ পৃথিবীতে মানুষের বসবাস।এই জগৎ সৃষ্টির স্রষ্টা একজন কিন্তু এ জগতের মানুষ স্রষ্টাকে ভাগ করেন ধর্মের বিভিন্ন ভাবধাম্ভিকতায়।কেউ আল্লাহ কেউ ঈশ্বর কেউ ভগবান কেউ বা বৌদ্ধিস।তারপর পৃথিবীতে সকল ধর্মেই মানব জীবনের সকল নিয়ম কানুন ভাল মন্দ মানা-অমানা সব উল্লেখ করা আছে।তা কেউ আমরা মানছি,কেউ আবার মানছি না।পৃথিবীর মোহে পড়ে পাগল হয়ে আমরা ধর্মের বিধি নিষেধকে পাস কাটিয়ে যাচ্ছি অনবরত।।কিন্তু তবুও বিশ্বাস করতে হবে ধর্মীও অনুশাসনের বাণীগুলো ঘটনা বহুল পৃথিবীর অনেক ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আছে।তেমনি আজকের টপ অফ দা হিষ্ট্রি লভেল করোনা ভাইরাস ২০১৯।চীনের এই ভাইরাসটির জন্ম আছে এর বিনাসে প্রতিকার এখনো কোন ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পারেনি।ইসলাম ধর্মের মতে যেখানে পাপ বেশী বা অন্যায় অত্যাচারের মাত্রা অসহনীয় মাত্রায় ঘটে তখনি স্রষ্টা দূরাগ্য রোগ দিয়ে এক গজব নাজিল করে বুঝিয়ে দেন পাপাচার হতে দূরে থাকতে।
মানব জীবনের খাদ্য তালিকায় ইসলাম ধর্ম হালাল হারাম এর বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দিয়েছেন।কিন্তু পৃথিবীর মানুষ আমরা মানছি কই!মানব দেহে যত সব ক্ষতিকর বস্তু ভক্ষণেই আমরা অভ্যাস্ত বেশী।
যতটুকু জানা যায় সম্ভবত করোনা ভাইরাসটি বাদুর হতে উৎপত্তি।তা যাই হোক পৃথিবীর শেষ জামানায় এসে একের পর এক অবিশ্বাস চমকপ্রদ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে এটাই স্বাভাবিক।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুধু চীনে এই পর্যন্ত মারা গেছেন হাজারের অধিক প্রায় ১৩০০/১৪০০ আর আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০/৬০ হাজার।এতো চীনা সরকারের ঘোষিত মৃত ও আক্রান্ত সংখ্যার পরিসংখ্যান কিন্তু এছাড়াও বর্বর চীন সরকার আরো অগণিত মৃত ব্যাক্তির লাশ পুড়িয়ে ফেলছেন তার কোন হিসাব নেই।যে হারে চীনে একের পর এক প্রদেশের সাথে বেইজিং এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে তাতে তাদের তথ্যের সত্যতা থাকাটা অস্বাভাবীক।বিশ্বের বহু দেশ চীনের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছেন।
করোনা ভইরাসে চীন আজ পুরো বিশ্ব হতে প্রায় বিচ্ছিন্ন অথচ পৃথিবীর পাচটি পরাশক্তির একটি চীন।স্বাভাবিক ভাবে চীনের অর্থনিতীতে কোন আঘাত এলে পুরো বিশ্বে তার প্রভাব পড়বে।বাংলাদেশও এর বাহিরে নয় বিশেষ করে তৈরী পোষাক খাত।নব্বইয়ের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে জনগনের কর্মসংস্থান লাঘবে নির্ভরশীল তেমন কোন খাতই ছিলো না যা বিপুল সংখ্যক বেকাত্ব ঘোচানো যায়।গার্মেন্টস এর প্রসারে এ দেশে শুধু পুরুষদের কর্মসংস্থানই বাড়েনি বিস্মিত ভাবে বেড়েছে নারীদের কর্ম সংস্থান।
১৯৭৭-৭৮ সালে মাত্র দুটি গার্মেন্টস কারখানা দিয়ে এ শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮০ সালের পাট শিল্পকে পিছনে ফেলে আশির দশকের শেষের দিকে গার্মেন্টস শিল্প দেশের অর্থনীতিতে শীর্ষস্থান দখল করে নেয়। ১৯৯৯ সালে এ শিল্পে সরাসরি কর্মসংস্থান হয় ১.৪ মিলিয়নের বেশী যেখানে শতকরা ৮০% ই নারী শ্রমিক। এর মধ্যে ১৯৯০ সালেই কর্মসংস্থান হয় প্রায় পাচ লক্ষ লোক এবং ২০১৫ সালে প্রায় চল্লিশ লক্ষ লোকের কর্ম সংস্থান ঘটে।দেশের মোট বৈদেশীক রপ্তানী আয় ৩১ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যার মধ্যে গার্মেন্টস সেক্টর হতে আয় হয় প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলার সুতরাং দেশের মোট অর্থনৈতিক আয়ের ৭৫ ভাগই আসে গার্মেন্টস শিল্প হতে যা বর্তমানে নিন্মমুখীতে ক্রমশতঃ বিরাজমান।
দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার বরাত দিয়ে ১৯৯০ হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এই পচিশ বছরের এক সমীক্ষায় জানা যায় ১৯৯০-৯৫ সাল পর্যন্ত এ খাতে দেশের অর্থনিতীতে প্রবৃদ্ধি ছিলো ২৯.০৭ শতাংশ আর পরের পাচ বছর ১৯৯৫-২০০০ সালে প্রবৃদ্ধি নেমে দাড়ায় প্রায় ৫.৯২ শতাংশে এবং ২০০০-০৫ এ এটা আরো কমে দাড়ায় ৪.৫৬ শতাংশে।২০০৫-১০ সালে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়লেও ২০১০ সালের পর হতে প্রবৃদ্ধির হার কমে ১.০২ শতাংশে এসে দাড়ায়।
এ শিল্পে প্রবৃদ্ধির কমে যাওয়ার পিছনে রয়েছে অসংখ্য কারন কিন্তু ভাবনার বিষয় হল গার্মেন্টস শিল্পের প্রবৃদ্ধি ক্রমান্নয়ে এমন নিন্মগতির ফলে অসংখ্য গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়াটা। বিজিএমইএ এর ভাষ্য মতে গত ছয় মাসে প্রায় ৬৯টি রেজিঃকৃত গার্মেন্টস বন্ধ হয়েছে।চলতি অর্থবছরে রপ্তানী কমে গিয়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭.৬৪ শতাংশ কমে গেছে।এর প্রভাব গিয়ে পড়ে কর্মসংস্থানে বিশেষ করে নারী বেকরত্ব দেশকে ভাবিয়ে তুলবে।যখন নারীদের কর্মসংস্থানের অঢেল সুযোগ ছিলো তখন নারীরা নিজেদের আত্ম পরিচয়ে বাচতে শিখে।তার সাথে তার পুরো পরিবার বেচে যায় অন্ন বস্ত্রের অভাব হতে।নারীরা পুরুষ শাষিত এ সমাজে মাথা উচু করে বাচতে শিখে।
গার্মেন্টস শিল্পের সাথে জড়িত হয় অসংখ্য নিট ওভেন এক্সেসরিজ সংস্থাগুলো যেখানে প্রায় লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়।অন্যদিকে শিপম্যান্টে জড়িত ব্যাংকিং শিপিং পরিবহন খাতেও কর্মসংস্থান বাড়তে থাকে।এ শিল্পের ধসে এ সব ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়তে শুরু করবে।
এতো গেল আমাদের নিজ স্বার্থ,বিচক্ষণতা,সরকারের উদাসনীতি,অবহেলা সুদূরপরিদর্শী কর্মপরিকল্পনায় গার্মেন্টস শিল্পে ধসের কিঞ্চিৎ নমুনা কিন্তু বর্তমানে এ শিল্পটি পুরোপুরি ধসে পথে এগুচ্ছে চীনের করোনা ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাবে।করোনা ভাইরাসের কারনে দেশের উৎপাদিত বস্ত্রখাতের বস্ত্রের শিপম্যান্টের শেষ ফিনিশিং চার্ট এক্সেসরিস এর বেশ সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
গার্মেন্টস শিল্পের কাচামালের জন্য পুরোপুরি নির্ভর চীনের উপর।নানান সমস্যার মাঝেও প্রায় দেশের গার্মেন্টসগুলোতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার পরিমান কাচামাল আমদানী হয় চীন হতে।সেই অনুপাতে গার্মেন্টস মালিকরাও এলসি খোলেন।কিন্তু গত একমাস এক্সেসরিজ নিয়ে তেমন কোন জাহাজ চীন হতে চট্রগ্রাম বন্দরে না আসায় শিল্প মালিকরা বেশ চিন্তিত। ফেব্রুয়ারী মাসটা কোন রকম ভাবে শিপম্যান্ট দিলেও মার্চ মাসেও এ অবস্থা বিরাজমান থাকে তবে গার্মেন্টস শিল্প সহ চীন নির্ভর দেশের অর্থনীতিতে মারাত্বক বিরূপ প্রভাব পড়বে।
চীনের করোনা ভাইরাস এর ক্ষতির দিকটা এক সময় হয়তো আর থাকবে না কিন্তু দেশের তৈরী পোষাক শিল্পে যে ধস নেমেছে তার মোকাবেলা করাটাই সরকারের এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে।এ শিল্পের ধস নামার অর্থই হল বেকারত্ব বেড়ে গিয়ে সাধারন মানুষের আয়ের পথ রুদ্ধ হওয়া যা একটি উঠতি মধ্য উন্নত দেশে আয় রোজগারের জন্য হুমকি স্বরূপ।উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া,খরচ অনুপাতে বায়ারের কাছ হতে তেমন কোন প্রাইস না পাওয়ায়,শ্রমিকদের অসহিষ্ণু মনোভাব, ইত্যাদির কারনে গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হতে থাকে।বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী- দেশের কারখানা সংখ্যা ছিলো ৫,৮৭৬ টি যা কমে দাড়িয়েছে ৪৬২১টিতে।এই গত চার বছরে কারখানা বন্ধ হয়েছে নথিকৃত প্রায় হাজারের অধিক প্রায় ১২৫৫টি,অনথিকৃত সংখ্যাতো গণনার বাহিরে।উৎপাদন ব্যায় বেড়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ।আর ইউরোপ আমেরিকায় পোশাকের দাম কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ।চাহিদা কমেছে ৮ শতাংশ।এ অবস্থায় এ শিল্পকে বাচাতে সরকারে এখনি প্রয়োজন যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়া।
——————————-
তথ্য ও ছবি
দেশের জাতীয় পত্রিকাগুলো
উইকিপি,অনলাইন অন্যান্য মাধ্যম
১৫টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। বিষয়টি সত্যিই ভাবনার বিষয়। সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নিলে অর্থনীতির চরম বিপর্যয় ঘটবে। আশা করি দ্রুত এ থেকে পরিত্রাণ পেয়ে অর্থনীতি র চাকা ঘুরে দাঁড়াবে। শুভ কামনা রইলো
মনির হোসেন মমি
সূচিন্তিত মতবাদদানে দিদিকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
ছাইরাছ হেলাল
যে ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন আসন্ন সময়ের তাতে অবশ্যই শঙ্কিত বোধ করছি।
অনেক ধন্যবাদ।
মনির হোসেন মমি
বেশী না সামান্য তথ্য তবে আশার কথা হল সরকার আটকে যাওয়া ঐ সব গার্মেন্টসের এক্সেসরিজগুলো পেতে চীন সরকারের সাথে বিশেষ ভাবে যোগাযোগ করে ফলপ্রসু হয়েছেন।তবে আশংকা কিন্তু কমছে না। গার্মেন্টস শিল্প ধসের পিছনে আরো যে কারনগুলো আছে তাও সরকারকে ভাবতে হবে। ধন্যবাদ প্রিয়।
আরজু মুক্তা
এটা তো খুবই ভয়াবহ। আপডেট জেনে চিন্তিত হলাম।
মনির হোসেন মমি
হুম অসংখ্য ধন্যবাদ আপুটি।
মোঃ মজিবর রহমান
আমাদের দেশের সরকারের নিলজ্জ আর ভারতের চাপে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের পথেই না এটাও আমাদের জন্য করোনার মতই ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে।
গত কয়েকদিন পুর্বে বিজিএম ই সভাপতি বলেছেন এই বছরেই বন্ধ হবে ৩২০০ মত কারখানা। তাতে বুঝা যায় আমাদের দেশের অবস্থা করোনার মতই বেকারের চাপ[এ মানুষ অসহায় হবে।
দেশের অবস্থানের একটি সুন্দর পোস্ট মনির ভাই। অশে্যষ ধন্যবাদ।
নিতাই বাবু
সারাবিশ্ব গণচীনের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখলে চীন একঘরে পড়ে থাকবে। আর আমাদের সারাবিশ্বে দেশের গার্মেন্ট শিল্পের পোশাকের চাহিদা বেড়ে যাবে। কারণ বর্তমানে সারাবিশ্বের তৈরি পোশাকের চাহিদার অর্ধেক গণচীন থেকে সামাল দেওয়া হয়। তা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা লাভবান হতে পারি। ভয় থেকে যাচ্ছে নভেল কোরোনা ভাইরাসের। তবে এখনো আমাদের দেশ এ থেকে মুক্ত অবস্থায় আছে বলে মনে করি।
আপনার তথ্যবহুল আলোচনা ভালো লাগলো এবং অনেককিছু জানা হলো। ধন্যবাদ দাদা।
ফয়জুল মহী
আপনার তথ্যবহুল আলোচনা ভালো লাগলো ,অনেক কিছু জানা হলো।
রেহানা বীথি
ভীষণ চিন্তার বিষয়। সময়োপযোগী তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটির জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
কামাল উদ্দিন
গতকালকের পত্রিকায় দেখলাম ৯৬ শতাংশ রসুন আমদানী হয় চীন থেকে, রসুনের দাম মনে হয় এবার ৫০০ পার করবে।
হালিম নজরুল
বিষয়টি খুবই আশংকার, সতর্ক থাকা জরুরি।
সুপায়ন বড়ুয়া
ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য
করোনার উপর বিশদ ব্যাখ্যা তুলে ধরার জন্য।
গ্লোভাল ভিলেজের এই যুগে কোন এক প্রান্তে গজব নাজিল হলে তার প্রতিক্রিয়া সর্বত্র পড়ে যা আপনার লেখনীর মাঝে উঠে আসছে। গার্মেন্টস শিল্পের বিপর্যয় হলে তার ভয়াবহতা করোনা থেকে কম হবে।
ইসিয়াক
ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য একটি পোষ্ট। সময়োপযোগী তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটির জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
তৌহিদ
পোস্ট আগেই পড়েছি মন্তব্য করা হয়নি ভাই। বিষয়টি কিন্তু আসলেই ভাবনার। আমাদের দেশ ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। করোনা যেভাবে সেখানে আঘাত করেছে তা আমাদের জন্য অভিশাপ হয়েই দেখা দেবে।
সুন্দর পোস্ট ভাই।