
আমাদের দেশে এনড্রয়েট মোবাইল আসার সাথে সাথে ইন্টারনেট জগতে এক বিপ্লব ঘটে গিয়েছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এখন নেট ব্রাউজিং করে। এককোটি মানুষের বেশি বর্তমানে প্রবাসের বিভিন্ন দেশে চাকুরী করেন। এই বিপুল সংখক মানুষের সাথে দেশে থাকা পরিবার এর যোগাযোগটা হয় এনড্রয়েট ফোনের মাধ্যমে। এরা কথা বলেন নেট ব্যবহার করে ইমো, ভাইবার, হোয়াটসএপ, লাইন ইত্যাদি এপসের মাধ্যমে ভিডিও এবং অডিও কলের মাধ্যমে। এদের অর্ধেকের বেশি মানুষের আবার ফেইসবুক আইডি আছে।
এসএসসি পাশ করা সমস্ত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষিত বেকার, প্রায় সমস্ত চাকুরীজীবি, মোটামুটি অল্প শিক্ষিত মানুষও আজকাল ফেইসবুকার। আমার ব্রিক ফিল্ডের ম্যানেজার, গাড়ী চালক, সুপারভাইজার, সাধারণ শ্রমিক এর অনেকেরই ফেইসবুকে আইডি আছে। জানা যায় যে প্রায় সাত কোটি জনগন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এরা ইন্টারনেট বলতেই বুঝেন ফেইসবুক।
আমরা কিছুটা গপ্পিস্ট জাতি। সন্ধ্যার পরে গ্রামাঞ্চলের চা এর দোকানে বসে বেহুদা আড্ডা আমরাই দেই। শহুরে হলেও আমরা এই গ্রামের আড্ডা ভুলে যাইনি। শহরের চা এর দোকান ভর্তি লোক একথাই প্রমাণ করে। ভারত ব্যাতিত বিশ্বের অন্য কোথাও এই বেহুদা সময় নষ্ট করতে দেখা যায় না।
গপ্পিস্ট জাতির ফেইসবুক পেয়ে গপ্পো করার জায়গা এখন বিস্তৃত হয়েছে। ফেইসবুক থাকায় বিভিন্ন ভাবে কানেক্ট হয়ে গিয়েছে মানুষ। সেদিন আমার মেঝ ছেলের ফেইসবুক ওয়াল দেখলাম, সে ব্রাউজ করছিল কম্পিউটারে। বিছানায় শুয়ে হঠাৎ স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি আমাদের ব্লগেরই একজন তার এক বন্ধুর মিউচুয়াল ফ্রেন্ড। অবাক হলেও এটিই বাস্তব যে বিভিন্ন ভাবে আমরা একে অন্যের সাথে কানেক্ট হয়ে গিয়েছি।
ফেইসবুক যেহেতু অক্ষরে বিভিন্ন লেখা প্রকাশ হয়, এবং মানুষ গপ্পো পছন্দ করে, তাই কিছু কিছু দুষ্ট লোক ফেইসবুকটাকে মন্দ ভাবে ব্যবহার করার একটা মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে।
ফেইসবুকে গুজব ছড়ানো অত্যন্ত সহজ। পদ্মা ব্রিজে শিশুদের মাথা দরকার, ছেলে ধরা গুজব এই ফেইসবুকেই ছড়ান হয়েছিল, এরপরে লবনের মূল্যবৃদ্ধির গুজবও ফেইসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়েছিল।
যে কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এখন ফেসবুকে পাওয়া যাবে। একই লোক কলা খাবার উপকারিতা থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক সংকট নিয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত প্রকাশ করেন। যে কোনো রোগের পরামর্শ তারা দিতে পারেন। ফেইসবুকের প্রায় সব ইউজার ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ। আমাদের দেশের অধিকাংশ ফেইসবুক ইউজার নাসায় চাকুরী পাবার উপযুক্ত।
অবস্থা এমন যে বর্তমানে যদি রবী ঠাকুর, নজরুল জীবিত থাকতেন, তবে তাদেরও তুলোধুনা করে ছাড়তেন সবাই। সমালোচনা করতে কাউকে ছারেন না এরা।
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ যদি এখন হতো ? গুজব আর ঘরে বসে স্ট্যাটাস প্রসবই করা হতো শুধু, দেশ স্বাধীন হতো কিনা সন্দেহ আছে।
জীবনের প্রতিপদে ফেইসবুক নির্ভরতা এত বেশি যে এক অলস, গুজব, সমালোচনায় , নির্বোধ , অবিশ্বাসী জাতিতে পরিনত হতে চলেছি আমরা।
১৫টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রথম 😊😊
জিসান শা ইকরাম
হু দেখলাম তো ফাস্টু হইছেন।
পুরস্কার লাগবে নাকি?
তাহলে পালাতে হবে 🙂
কমেন্ট কই?
তৌহিদ
ফেসবুক আমাদের অনেক সময় কেড়ে নিচ্ছে। আর জিজিটালাইজেশনের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে অনেকেই নিজের সাথে গুলিয়ে ফেলছে ফেসবুককে।
এটা ঠিক আমরা ইন্টারনেট বলতে শুধু ফেসবুককেই বুঝি। কারন আমাদের জ্ঞান স্বল্পতা। তবু কেউ ব্যবহার করছেন যখন গ্রামেও দেখি, ভালো লাগে কিন্তু।
ফেসবুকে অনেক ভালো কাজও হয়। তবে আমাদের উচিত ফেসবুক এবং নিজেদের সীমাবদ্ধতাগুলিও জানা। তাহলে বিভ্রান্ত হওয়া বা করার থেকে বিরত থাকতে ও রাখতে পারবো।
সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে লিখলেন ভাই। ভালো থাকবেন
জিসান শা ইকরাম
আমাদের যা স্বভাব, যে কোনো ভালো জিনিসকে আমরা খারাপ ভাবে ব্যবহার করি। ফেইসবুকটা বন্ধু এবং ফ্যামিলির মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করে সমাজের এবং রাস্ট্রের মধ্যে ব্যবহার করছি। ভালোর চেয়ে খারাপ হিসেবে ব্যবহার করছি।
তবে ফেইসবুক আমাদের মধ্যে শ্রেনী বৈষম্যের অবসান ঘটিয়েছে 🙂
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
“৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ যদি এখন হতো ? গুজব আর ঘরে বসে স্ট্যাটাস প্রসবই করা হতো সুধু, দেশ স্বাধীন হতো! কিনা সন্দেহ আছে।” …. এই কথাটা মানতে পারছিনা। কারন বর্তমান সময়ের বৃহত্তর আন্দোলন গুলোর সফলতার মুলে কিন্তু ফেসবুকের ভূমিকা কম নয়। অনলাইন বলতে আগে ব্লগ/ ইয়াহু / হোয়াটস এ্যাপ থাকলেও, সাধারণ মানুষের কাছে অনলাইনকে সহজ সাবলীল করেছে ফেসবু। ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক নিরক্ষর ব্যক্তিরাও সমসাময়িক খবর/ পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেয়ে থাকেন। এছাড়া নির্বান্ধব, একাকী মানুষের জন্যে ফেসবুক এসেছে আশীর্বাদ হয়ে। এখানে নিজের ভালো মন্দের পাশাপাশি আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা যায় সহজেই।
প্রায় সাত কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী মানুষের ভিরে দুষ্টের দল কয়েক কোটি থাকবে না, তাই কি হয়! একটা আম গাছের আমে কয়েকটি পোঁকা থাকেই। তাই বলে আম গাছের বদনাম হয় না। 😀😀
জিসান শা ইকরাম
মন্তব্যের প্রথম অংশের জবাব:
ফেইসবুকের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্রুপ ছিল বাঁশেরকেল্লা যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি হিসেবে পরিচিত। এর মেম্বার সং্খ্যা ছিল বিশ লক্ষের বেশি, রাজাকার সমর্থিত গ্রুপ ফেইসবুকে বেশি, এরপর আছে চীন পন্থী বাম যারা ৭১ এ চীনের তথা পকিদের সমর্থন করত। এদের সম্মিলিত অপপ্রচারের সামনে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি টিকতে পারত না। বিভিন্ন সাইট এবং ফেইসবুকে এদের নিয়ন্ত্রন বেশি। অর্থাত নেট যুদ্ধে এদের কাছে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি পরাস্ত হতো।
২য় অংশের জবাব ল্যাপিতে বসে পরে দেবো।
সঞ্জয় মালাকার
ঠিকই বলেছেন ভইজান আমরা গুজব, সমালোচনাময় , নির্বোধ , অবিশ্বাসী জাতিতে পরিনত হতে চলেছি আমরা।
শুভ কামনা ভাইজানা।
রাফি আরাফাত
জীবনের প্রতিপদে ফেইসবুক নির্ভরতা এত বেশি যে এক অলস, গুজব, সমালোচনাময় , নির্বোধ , অবিশ্বাসী জাতিতে পরিনত হতে চলেছি আমরা।
অপ্রিয় হলেও সত্য কথা৷ অনেক ভালো লাগলো। শুভ কামনা।
সুপায়ন বড়ুয়া
“৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ যদি এখন হতো ? গুজব আর ঘরে বসে স্ট্যাটাস প্রসবই করা হতো সুধু, দেশ স্বাধীন হতো কিনা সন্দেহ আছে।”
সবাই থাকে মাথা নত করে
সেকি গল্পের ছলে
নাকি মোবাইলটা ধরে ?
ভালই তো হলো ভাই
শুভ কামনা। ভাল থাকবেন সবসময়।
পর্তুলিকা
ফেসবুক ছাড়া দুনিয়া অচল। আপনি আমি আমরা ফেসবুক বাদ দিতে পারবো না। দুস্টুরা পারবেই না।
নিতাই বাবু
ফেসবুক বর্তমানে মহা কিতাবেও পরিণত হয়েছে। ফেসবুকে যেমন হচ্ছে গুজবের হালখাতা, তেমন হচ্ছে হরিনাম সংকীর্তন, আর মৌলভীদের ওয়াজ মাহফিল। আমার মনে হয় পৃথিবীর আর কোনও দেশে এমনভাবে গুজব আর ধর্মীয় প্রচারাভিযান অন্তত ফেসবুকে চালায় না। যা চালানো হচ্ছে আমাদের দেশেই। এমনও দেখা যায় কিছুদিন আগেও বাটন মোবাইলে ভলিউম বাড়াতে পারেনি। ছুটে এসেছে আমার কাছে। আমি দেখিয়ে দিলাম কীভাবে ভলিউম বাড়ায় কমায়। ক’দিন ধরে টাচস্ক্রীন মোবাইল ব্যবহার করা শুরু করে ফেসবুকে একটা আইডি খুললো। হায়রে ফেসবুক! এখন দেখি ফেসবুকের ঠেলায় কথাই বলতে চায় না। ওঁদের পোস্টে লাইক/কমেন্ট না করলে সরাসরি রাস্তাঘাটেই জিজ্ঞেস করে, কী ব্যাপার, ‘লাইক দেন নাই ক্যা? মন্তব্য এটা দিলেন ক্যা? নির্বাচন করতাছি, আমার মার্কাডা ফেসবুকে দিয়া দিয়েন ইত্যাদি ইত্যাদি। এ হলো আমাদের দেশের শিক্ষিত অশিক্ষিত ফেসবুকারগণ।
ছাইরাছ হেলাল
প্রতিটি বিষয়ের ই ভাল ও মন্দ দিক আছে, আমরা কে কীভাবে কী কী নিচ্ছি সেটিই আমাদের শিক্ষা।
আর এই এডিকশন ইয়াবা থেকেও খারাপ। ওই যে, কে কী বেছে নেবে সেটি তার তার একান্ত আপন বিষয়।
জয়তু ফেসস-বুক্ক!
নৃ মাসুদ রানা
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ যদি এখন হতো ?
সত্যিই…
সুরাইয়া পারভীন
নেট ব্যবহারের ফলে পরিচিত বাড়লেও আন্তরিকতা একেবারেই শূন্যতে এসে পৌঁছেছে। সন্ধ্যায় চা স্টলের প্রাণবন্ত আড্ডা হাসি ঠাট্টা উধাও হয়েছে। কারো প্রতি কারো মায়া মমতা নেই।
আর গুজব!
ফেসবুক গুজবের কারখানা।
চমৎকার প্রকাশ
কামাল উদ্দিন
“লোক কলা খাবার উপকারিতা থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক সংকট নিয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত প্রকাশ করেন। যে কোনো রোগের পরামর্শ তারা দিতে পারেন। ফেইসবুকের প্রায় সব ইউজার ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ। আমাদের দেশের অধিকাংশ ফেইসবুক ইউজার নাসায় চাকুরী পাবার উপযুক্ত।”
………….হাসতে হাসতে চেয়ার উল্টে পড়ে যাওয়ার অবস্থা, তবে কথাগুলোতে বাস্তবতা বর্তমান।