
বটেশ্বর বাজারের পাশের অশথ্থ গাছের নিচের চা দোকানটায় সব সময় কম বেশী মানুষ থাকে। ছোট একটা টং ঘর, সামনে বাঁশ দিয়ে বানানো বেঞ্চিটা সব সময়ই নড়বড়ে থাকে। অশথ্থের কয়েকটি শেকড় আঁকিবুকি কেটে এমন ভাবে দোকানটার পাশে সেটে আছে যে, ইচ্ছে করলে ওখানেও কয়েকজন আরাম করে বসা যায়। আগে নাড়ুদা’র ( আসল নাম নারায়ন ) দোকানের চা আমরা খেতাম দুই টাকায়। তারপর জিনিস পত্রের দাম বাড়ার সাথে সাথে চায়ের দাম বেড়ে এখন পাঁচ টাকা। শুধু চা বেচে জীবন চলেনা বলে ইদানিং সন্ধ্যে বেলায় পুড়ি সিঙ্গারা, আলুর চপ, ডিম চপ ইত্যাদিও বিক্রি করে থাকেন। নাড়ুদা’র বয়স কখনো বাড়ে না, আমরা ছোট থাকতে যেমনটি দেখেছিলাম এখনো সেই একই রকম মধ্য বয়সী নাড়ুদা। টং দোকানটা পুবমুখো হওয়ায় শীতের সকালটা রোদ পোহানোর জন্য হলেও গ্রামের অনেক লোক এখানে জড়ো হয়।
ফরিদপুরের একজন গাছি ছিলো, যিনি পাশের গ্রাম রসুলপুর ও কান্দাপাড়া এলাকায় খেজুর গাছগুলো থেকে রস সংগ্রহ করতেন। গ্রামে ঘুরে রস বিক্রি করার পর সব সময়ই কিছুটা রস থেকে যেত। তখন সেই গাছি ( ওনার নামটা জানা নাই ) বটেশ্বর বাজারের নাড়ুদা’র চায়ের টং এর সামনেই এসে বসত বাকি রসটা বিক্রি করার জন্য। তো অনেকে কম টাকায় রস খাওয়ার জন্য এই সময়টায় ওনার কাছে আসতো। কারণ বেলা যতো বাড়ে রসের মান ততোই কমে যায়।
গাছি ব্যাটা আমাকে বেশ খাতির করতো, প্রতি বছর এসেই আমার সাথে দেখা করে বলতো আপনার জন্য অমুক দিন রস নিয়ে আসবো, কতোটা লাগবে বলে দিন। আমিও পৌষ-মাঘে দুই তিন বার ওনার কাছে চাহিদা পেশ করে রস নিতাম। মাঝে মাঝে বিকেল বেলা রস খাওয়ার জন্য বন্ধু বান্ধব নিয়া ওনি যেখানে গাছ কাটে ওখানেও চলে যেতাম। রোগা পাতলা মানুষটা থাকতো কয়েকটি খেজুরের ডাল পাতা দিয়ে বানানো একটা ত্রিভুজের ভেতর, যার ভেতর হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে কোন মতে শোয়া যেতো।
তিন বছর আগে গাছির সাথে যখন শেষ দেখা তখন তিনি কানে বেশ কম শুনতেন আর শরীরটাও বেশ ভাঙ্গা মনে হয়েছিলো। তাও বটেশ্বর এলাকার মানুষদেরকে সেবা দিয়ে গেছেন। কিন্তু গত দুই বছর উনার আর কোন হদিস পাচ্ছিনা। মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না বলে ওনার বাড়ির কোন নাম্বারও জানা নেই আমার। আজ কুয়াশা ভেজা ভোরে একজন রস বিক্রেতাকে দেখে মনের ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠল। জানিনা আমাদের সেই গাছি লোকটা এখন কোথায় কেমন আছে। সারা বছর ভুলে থাকলেও এই পৌষে ছিপ ছিপে গড়নের ঐ মানুষটা মনে পড়ছে ভীষণ। শুধু একটি বার সেই কাধে বার বয়ে চলা মানুষটা দেখতে খুব খুব ইচ্ছে করছে……….
৩৫টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
এক নিমিষে করছি শেষ
পড়তে আমার লাগলো বেশ।
শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, আপনার জন্যও রইল অনেক অনেক শুভ কামনা।
রেজিনা আহমেদ
আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের যেকোনো একটা কাজই আমাদের কাছে স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়,,সারাবছর মনে পড়েনা, কিন্তু একটা বিশেষ দিন তারা আমাদের মন কেড়ে নেয়,, ভালো থাকুক সেই গাছি,
কামাল উদ্দিন
আমার ও সেই প্রত্যাশা সেই গাছি সব সময় ভালো থাকুক……..শুভেচ্ছা জানবেন আপু।
নিতাই বাবু
উনি (গাছি) যদি বেঁচে থাকে, তো একদিন আপনার মনের টানে দেখা হয়ে যাবে। তাই কামনা করছি মহান সৃষ্টিকর্তা যে ওনাকে সহি-সালামতে রাখেন। ব্লগে পৌষ সংক্রান্তি উৎসবে আপনার স্মৃতিচারণ নিয়ে পোস্টখানা কিন্তু দারুণ হয়ে দাদা। শুভেচ্ছা-সহ শুভকামনা থাকলো।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ দাদা, গল্পটল্প লেখা আমার কম্মো নয়। তবু কথা দিয়েছিলাম লেখার চেষ্টা করবো, সেই চেষ্টারই প্রতিফলন এই লেখা। এতোটা ভালো হয়তো হয়নি, তবে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি খুশি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
কিছু কিছু স্মৃতি এমনি । মনে পড়ার জন্য একটা উদ্দেশ্য, ঘটনা থাকে যেখানে জড়িয়ে থাকে কিছুটা আবেগ। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর লিখেছেন। শুভ কামনা রইলো ও শুভ সকাল
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা জানবেন আপু। আমি বলবো এরা একটা অ-গল্প।
কামাল উদ্দিন
এরা = এটা
ইকবাল কবীর
এমন অনেক মানুষই কালে ভদ্রে আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায়। বাই দ্যা ওয়ে আপনি কি নরসিংদীর বটেশ্বর বাজারের কথা বলেছেন নাকি?
কামাল উদ্দিন
গল্পে অনেক নামই থাকে ভাই। তবে বটেশ্বর আমার শ্বশুর বাড়ি। আমার বাড়ি মাধবদীতে। বটেশ্বর কি কখনো যাওয়া হয়েছে ইকবাল ভাই?
ইকবাল কবীর
আপনিতো তাহলে আমার দেশী ভাই।আমার হোম টাউন নরসিংদী। জ্বি বটেশ্বর আমার গ্রামের বাড়ি থেকে ৭/৮ কিলোমিটার দূরে। এখন মিউজিয়াম হচ্ছে অনেক বড় করে। সময় পেলে দেখে আসবেন।
কামাল উদ্দিন
নরসিংদীর কোথায় থাকেন ভাই, চেনা পরিচয় হয়েই যাক।
জিসান শা ইকরাম
কিছু মানুষের শূন্যতা পুরন হয়না,
জিবন্ত স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকে মনের গহীনে।
লেখা ভাল হয়েছে।
কামাল উদ্দিন
ধন্যবাদ ভাই, উৎসাহ পেলাম।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার স্মৃতি চারণ কোথায় যেন নাড়া দিয়ে গেল।
আপনি নাকি লিখতে পারেন না!!!!!
কামাল উদ্দিন
কষ্ট করে কিছুটা লিখার চেষ্টা করলাম ভাই…….শুভ কামনা জানবেন।
ছাইরাছ হেলাল
কষ্ট জারি রাখুন!
কামাল উদ্দিন
কষ্ট জারি রাখতে কষ্ট লাগে 😀
দেবজ্যোতি কাজল
ভাল লাগল
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা জানবেন দাদা
মনির হোসেন মমি
লোকটি সুস্থ থাকুক ভাল থাকুক এই কামনা করছি। লেখাটায় মানবিক দিক প্রকাশ পেল।আসলে এ ভাবে কজনাই বা এমন করে মনে করে স্মৃতির পাতা উল্টাতে গিয়ে।
কামাল উদ্দিন
এমন বেশ কিছু স্মৃতি মাঝে মাঝে মনেতে ভীর করে, সময় সুযোগে লিখে ফেলার চেষ্টা করবো। তবে ঘুছিয়ে লেখার অভ্যাস করাটা সত্যিই অনেক কঠিন।
তৌহিদ
সেই গাছি মানুষটির প্রতি আপনার মমতাই প্রমাণ করে আপনি ভালো মনের মানুষ। স্মৃতিচারণমূলক লেখা ভালো লেগেছে ভাই। পৌষ উৎসব এ লেখা দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
কামাল উদ্দিন
আপনার সাথে ওয়াদা করেছিলাম যে, চেষ্টা করবো। তাই চেষ্টাটা করলাম। অংশগ্রহণ করতে পেরে সত্যিই আমি আনন্দিত……..শুভ রাত্রী।
সুরাইয়া পারভীন
কিছু স্মৃতি কখনোই হয় না বিস্মৃতি। সেই রস বিক্রেতা যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন যেনো।
কামাল উদ্দিন
হুমম, আমিও তাই বলি, সে যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক
সঞ্জয় মালাকার
আশেপাশে এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের যেকোনো একটা কাজই আমাদের কাছে স্মৃতি হয়ে রয়ে যায়,,
চমৎকার লিখেছেন দাদা, বেশ ভালো লাগলো পড়ে।
আপনার জন্য শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
এমন স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে মনটাকে নষ্ট্যালজিক করে তোলে…….ভালো থাকবেন দাদা।
সঞ্জয় মালাকার
আপনিও ভালো থাকবেন দাদা শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
শুভ রাত্রি
সাদিয়া শারমীন
ইশ! আপনার সাথে যদি আবার সেই গাছির দেখা হতো! খুব ভাল লাগলো লেখা।
কামাল উদ্দিন
হুম, দেখা হয়ে গেলে মনটা অনেক ভালো লাগতো, শুভেচ্ছা জানবেন আপু।
এস.জেড বাবু
কিন্তু গত দুই বছর উনার আর কোন হদিস পাচ্ছিনা। মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না বলে ওনার বাড়ির কোন নাম্বারও জানা নেই আমার। আজ কুয়াশা ভেজা ভোরে একজন রস বিক্রেতাকে দেখে মনের ভেতরটা মোচর দিয়ে উঠল।
আমারও ছোট কাকার কথা মনে পড়ে গেল-
গ্রামে গেলে, তিনিই রস নামিয়ে খাওয়াতেন।
আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন।
চমৎকার বিষয়বস্তু নিয়ে দারুন লিখেছেন।
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা জানবেন বাবু ভাই।