
নদী মরে গেলে দুই তীরের জনজীবনে নিশ্চলতা সৃষ্টি হয়। দখল প্রক্রিয়ার কারণে যেভাবে নদী মারা যাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে নদীমাতৃক বলা যাবে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে বুড়িগঙ্গা, কর্ণফুলী, সুরমা, কীর্তনখোলা, রূপসা ভূমি আগ্রাসনে পড়েছে শহর তীরবর্তী প্রায় ৭০টি নদী। কেবল নদী নয়, শহরের ভেতর বা পাশের খালগুলো অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। নদী থেকে ভূমি সৃষ্টির জন্য নেওয়া হচ্ছে বিচিত্র সব কলাকৌশল। সৃষ্টি করা হচ্ছে কৃত্রিম চর।
নদীর ওপর আগ্রাসনের কারণে আগামী দিনগুলোতে পরিবেশসহ সার্বিক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটবে। ফলে সামান্য বৃষ্টি ও বর্ষণে জলাবদ্ধতা, পানি-বর্জ্য নিষ্কাশনে সমস্যাই শুধু দেখা দেবে না, বন্যাও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। সেই সঙ্গে শহর-বন্দরে মারাত্মক নদীভাঙন দেখা দেবে। এ ছাড়া নৌ–চলাচল পথ সংকুচিত হয়ে একটি বড় শহর বা বন্দর গুরুত্বহীন হয়ে যাবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম। দ্রুত নগরায়ণ নদী দখলের অন্যতম কারণ। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এবং প্রজাতন্ত্রের স্বার্থে নদী দখলের এই প্রতিযোগিতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। দৃশ্যত হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায় বাস্তবায়িত হলে অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে নদীগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
সারাদেশে ৪৯১৬২ নদী দখল । তথ্য মন্ত্রনালয়ের ভাষ্যমতে ৪৪ হাজার। মহানন্দা, ব্রহ্মপুত্র, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, সুরমা, ইছামতি, পদ্মা, করতোয়া, কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষা, মেঘনা, চিত্রা নদীগুলো দখলদারদের দখলে।
চেয়ারম্যান ড: মুজিবুর রহমান হাওলাদার জানিয়েছেন, তারা ৫৮টি জেলায় নদী দখলের চিত্র দেখেছেন।
প্রভাবশালীরাই নদী দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা, এমনকি শিল্প কারখানা তৈরি করেছে, এমন চিত্র তারা বেশি পেয়েছেন।
ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতেই একেবারে নদীর ভিতরের জায়গা দখল করে ডক ইয়ার্ড করা হয়েছে। এরকম ৩৩টি ডক ইয়ার্ড চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি বলছেন, দেশের অনেক নদী এভাবেই প্রভাবশালীরা দখলে রেখেছে।
পরিবেশ এবং নদী নিয়ে আন্দোলনকারী সংগঠন বাপার আবু নাসের বলছিলেন, সারাদেশে বহুবার নদ নদীর অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে, কিন্তু সেভাবে কোন লাভ হয়নি।
“এতদিন ধরে অবৈধ দখলদার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। আবার তারা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এটা উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা হয়েছে।”
মি: নাসের মনে করছেন, অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে তাদের নির্বাচন করার এবং ঋণ পাওয়ার অযোগ্য করার ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। এটা আংশিক বাস্তবায়ন হলেও সেটা কার্যকর বিষয় হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আদালত নদী রক্ষা কমিশনকে নদ-নদী, খাল-বিল এবং জলাশয়ের আইনগত অভিভাবক ঘোষণা করে আইন সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আদালতের রায় পর্যালোচনা করে আইন কঠোর করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশে অবৈধ দখলদাররা প্রভাবশালী এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ক্ষমতা সীমিত।
দূষণ এবং অবৈধ দখলের হাত থেকে নদ-নদী, খাল-বিল বা জলাশয় রক্ষায় বিভিন্ন সময় নানান পদক্ষেপের কথা এসেছে। কিন্তু বাস্তবায়ন কতটা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।
এবার আদালত সারাদেশে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করে তা জনসমক্ষে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে।
দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল এবং জলাশয়ের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশও এসেছে।
নদী নিয়ে রিট মামলার পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলছিলেন, অবৈধ দখলদারদের নির্বাচন করার এবং ব্যাংকের ঋণ পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণার বিষয়কে তারা মাইলফলক হিসেবে দেখছেন।
তবে তিনি বলেছেন, “নদী রক্ষা কমিশনের ব্যাপারে ২০১৩ সালে যে আইন করা হয়েছে, তাতে কমিশনের হাতে তেমন কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি। কমিশন শুধু সুপারিশ করা ছাড়া কিছু বাস্তবায়ন করতে পারে না।”
চেয়ারম্যান ড: মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলছিলেন, অবৈধ দখলমুক্ত করার ব্যাপারে তারা সাধারণত সুপারিশ করেন থাকেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, সারাদেশে তালিকা তৈরির কাজ তারা করছেন। তাতে তারা দেখছেন, অবৈধ দখলদাররা প্রভাবশালী।
আমরা কি সবাই মিলে আমাদের নদী মাতৃক দেশটাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারিনা? আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর পরিবেশবান্ধব দেশ উপহার দিতে পারিনা?
২৭টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এ তো দস্যুতা, আইনের কঠোরতম ব্যাবহার-ই প্রতিকারের একমাত্র উপায়।
ভিন্নতর বিষয় নিয়ে আপনি ভাবছেন দেখে ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন সবসময়। সুন্দর সুন্দর মন্তব্য দিয়ে পাশে থাকুন।
সাবিনা ইয়াসমিন
, “নদী রক্ষা কমিশনের ব্যাপারে ২০১৩ সালে যে আইন করা হয়েছে, তাতে কমিশনের হাতে তেমন কোনো ক্ষমতা দেয়া হয়নি। কমিশন শুধু সুপারিশ করা ছাড়া কিছু বাস্তবায়ন করতে পারে না।”…..
আইনেই যদি ফাঁকি থাকে তাহলে এর বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব। দখলদাররা প্রভাবশালী, তারা এমনিতেই সব ম্যানেজ করতে পারে, তার উপর সঠিক আইন প্রয়োগের ব্যবস্থাটাও দুর্বল!
পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় নদীর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দেশবাসীদেরই সচেতন ও সোচ্চার হতে হবে।
খুব ভালো পোস্ট দিয়েছেন দিদি।
শুভ কামনা অবিরত 🌹🌹
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ আপু 💓💓 ভালোবাসা রইল
সুরাইয়া পারভীন
নদীমাতৃক দেশে নদী নেই ভাবতেই যেনো বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদীর বিকল্প কিছু নেই। আইনের কঠোর পদক্ষেপই পারে এই অবস্থা থেকে নদীকে রক্ষা করতে, নদীমাতৃক দেশের সৌন্দর্য রক্ষা করতে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকুন
মনির হোসেন মমি
নদী দখলদার উচ্ছেদ বহুকালের চলমান প্রক্রিয়া।একবার দখল হয় আবার টাকার বিনিময়ে যা ছিলো তাই হয়ে যায়।তবে বর্তমানে যে দখলদার পূর্ণরোদ্ধার চলছে তা এবার মনে হয় স্থায়ী হবে। চমৎকার তথ্যপূর্ণ লেখা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া
তৌহিদ
নদীখেকোদের রোষানলে পরে দেশের অনেক নদী আজ কালের গর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীর সৌন্দর্যরুপ যে কি জিনিস তা আমরা ভুলে যাচ্ছি। পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। আইনের ফাঁক গলে বেড়িয়ে যাচ্ছে দস্যুরা।
তবে নদী রক্ষায় সরকার বর্তমানে যে উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজ করছে তা প্রশংসনীয়। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক এটাই কাম্য।
খুব ভালো পোস্ট দিয়েছেন। শুভকামনা জানবেন আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া
আরজু মুক্তা
নদী খেকোরা আইনের ফাঁক গলে চলে যায়। তারপর নদী হয় ভবন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ঠিক বলেছেন আপু। ধন্যবাদ
সুপায়ন বড়ুয়া
অসাধারন . চালিয়ে যান
শুভ কামনা
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পাশে থাকুন।ধন্যবাদ দাদা। শুভ কামনা। বড়দিনের শুভেচ্ছা
কামাল উদ্দিন
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পাশেই আমার বাড়ি। শৈশবের দিন গুলো কেটেছে এই নদে দাপাদাপি করে, মাছ ধরে। এখন সেটা সরু একটা নালায় পরিণত হয়েছে, যা দিয়ে আমাদের বাবুরহাটের ডাইং ফ্যাক্টরির রঙিন ও বিষাক্ত পানি ক্ষীণ স্রোতধারাই প্রবাহমান। খুব কষ্ট হয় এসব দেখলে। কিন্তু আশার খবর হলো ইদানিং নতুন করে নদী খনন চলছে, দুই পাড়ে শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান, দেখা যাক কি হয়।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ বড়দিন
কামাল উদ্দিন
শুভ বড়দিন
ইসিয়াক
চমৎকার তথ্যপূর্ণ লেখা। শুভকামনা জানবেন ।
বড়দিনের শুভেচ্ছা রইলো্ ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনাকে ও ধন্যবাদ।বড়দিনের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
নিতাই বাবু
একদিন-না-একদিন সব নদী খেকোদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হবে।
নদ-নদী, খাল-ছড়াসহ প্রাকৃতিক জলাশয় উদ্ধারে সারা দেশে এক যোগে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে দেশের ৬৪টি জেলায় এ অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন উচ্ছেদ অভিযান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।এখানে দেখুন!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধন্যবাদ দাদা
নুরহোসেন
নদীর কোন ঘৃনা নাই তাই নীরবে সবাই তার অপব্যবহার করছে!
সরকারের উচিৎ নদী বাঁচাতে কঠোর ব্যবস্হা নেওয়া।
সচেতন মুলক পোস্ট দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকুন
মাহবুবুল আলম
প্রায়ই কোনো না কোনো নদীর মৃত্যুর খবর শুনি। যা সত্যিই হতাশার। নদী হলো মানুষের প্রাণপ্রবাহ। সে নদীই যদি না বাঁচে তবে মানুষ বাঁচবে কী করে!!
লেখাটি ভাল লাগলো। শুভেচ্ছা অবিরাম!
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনাকে ও ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা
জিসান শা ইকরাম
সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে অনেক শক্তিশালী একটি লেখা লিখলে ছোটদি। তুমি যে এসব সমস্যা নিয়ে ভাবো তা জেনে ভাল লাগলো।
এমন লেখা আরো চাই।
ধন্যবাদ এমন লেখার জন্য।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আপনার অমূল্য মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দাদা ভাই। আশা করি আপনাদের অনুপ্রেরণায় আগামীতে এমন লেখা আরো লিখবো। শুভ কামনা রইলো