
ছোটবেলায় তেমন দূরন্ত ছিলাম তা বলা যাবেনা কিন্তু কমও ছিলামনা।
স্কুলে প্রবেশের পর প্রতিদিন টিফিন ছুটিতে আম্মার দেওয়া চার আনা (সিকি), আধুলি (পঞ্চাশ পয়সা) নিয়ে উর্দ্ধশ্বাসে দৌড় লাগাতাম স্কুল ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে, সেখান থেকে কনি আঙ্গুলের সমান আলুর চপ, ছোট সিঙ্গারা, সমুচা, আলুর সেন্ডউইচ কিনে খেতাম, স্কুল ছুটির পর আবার দৌড়, স্কুল গেইটের সামনে বিক্রি হতো মজাদার জলপাই, তেতুল, বড়ইর আচার, হতো রঙ্গিন বরফের আইস্ক্রিম, বরফ কুচির গোলা আইস্ক্রিম, এইসব কেনার মধ্যেই সব ধরণের আনন্দ পেতাম।
তখন তো পাঁচ, দশ, চার আনা, আধুলির দিন, কখনোই এক টাকার দরকার হয়নি, আমি সেই সব পয়সা দিয়েই আমার আনন্দ খুঁজে নিতাম।
আমার আব্বার কিন্তু এইসব পছন্দ ছিলোনা, স্কুলে যাওয়ার সময় ঘর থেকেই টিফিন দেওয়া হতো, আম্মার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিলো যেন কোন পয়সা দেওয়া নাহয়, এরপরেও মায়ের মন বলে কথা, লুকিয়ে দিতেন যখন যা পারেন।
দুপুর একটায় স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরতাম, বিকাল চারটায় স্থানিয় পিচ্চিদের ডাক দিতাম টারজান স্টাইলে ওওওওও ওওও করে, এই ডাক শুনেই সব ছেলেপেলেরা যে যেখানেই থাকুক দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমার বাসায় হাজির হতো, আমরা ফুটবল, বোম ফাইট (টেনিস বল দিয়ে যাকে খুশি তাকে মারা), সাত চাড়া (৭টি ফ্লাট ছোট পাথরকে একটার উপর একটা দিয়ে টেনিস বল মেরে ইতস্তত ভেঙ্গে দেওয়া যা এক পক্ষ বল দিয়ে প্রতিপক্ষকে আঘাত করে আউট করবে আর অন্য পক্ষ বল গায়ে লাগতে না দিয়ে ৭ ইটের টুকরোকে আবার একের উপর আরেক বসিয়ে খেলায় জিতবে), এইসব বিভিন্ন ধরণের খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম।
একদিন আমার সাঙ্গপাঙ্গরা এক বাচ্চা কুকুর শাবক নিয়ে এলো আমার কাছে, লাল সাদা শাবকটা আমার বেশ পছন্দ হয়ে গেলো, আমি রাখবোই একে, অন্যদিকে আম্মা ওটারে দেখেই অগ্নিশর্মা।
ছিঃ ছিঃ ছিঃ এই মুহূর্তেই এইটা বিদায় কর, আমি আক মুহূর্ত এইটাকে দেখতে চাইনা।
আমরা ভাই বোন সব এক হয়ে গেলাম, এইটাকে আমরা পুষবো, এইটা ঘরের মধ্যে আসবেনা, এই উঠোনেই পড়ে থাকবে।
অনেক বলে কয়ে রাখার চেষ্টা করলাম সবাই, আম্মা শেষে বললেন, ঠিক আছে বাইরে রাখ, তোদের আব্বা আসলে এর ব্যবস্থা করবো।
আমরা ভাই বোনেরা কুকুর শাবকটাকে ঘর থেকে চুরি করে করে বিস্কুট খাওয়াতে লাগলাম, ও চুকচুক করে খেতে লাগলো।
সন্ধ্যার পর আব্বা আসলে আমরা সবাই ভয়ে জড়সড় হয়ে গেলাম, আব্বা বাইরে কুকুর শাবকটা দেখেই অবাক, বাইরে থেকেই ডাক দিলেন ” ইঞ্জিনিয়ার” বলে।
আমি তো ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে গেলাম, “জ্বি আব্বা”।
এইটা কে এনেছে?
ভয়ে ভয়ে সব বললাম।
কিছু খেতে দিয়েছিস?
বিস্কুট দিয়েছি।
এসবে ওর পেট ভরবে, বেবির মা (আমার বড় বোনকে বেবি ডাকেন সবাই), ওরে দুধ গুলে দাও একটা বাটিতে করে, বলেই ঘরের ভিতর চলে গেলেন।
আমরা ভাই বোনরা সবাই খুশিতে আত্মহারা।
…….. চলবে।
৪৩টি মন্তব্য
আকবর হোসেন রবিন
পরের অংশের অপেক্ষায় …………………
ইঞ্জা
দ্রুতই পাবেন ভাই।
তৌহিদ
ছেলেবেলার স্মৃতিময় লেখা দারুণভাবে উপস্থাপন করছেন দাদা। বাবারা বুঝি এমনই হয়!!
সকল বাবা মা’র জন্য অনেক দোয়া রইলো। সবাই ভালো থাকুন এটাই কাম্য।
ইঞ্জা
এ এমন এক স্মৃতি যা আমি আজীবন ভুলবোনা ভাই।
দোয়া রাখবেন ভাই।
নিতাই বাবু
শ্রদ্ধেয় ইঞ্জ দাদা, আপনার ছোটবেলার কাহিনী আর আমার কাহিনী একইরকম। তবে কিছুটা ফারাক! ফারাক শুধু ধনী আর গরিব। আমি গবিব দাদা। প্রতিদিন স্কুলে যাবার সময় পাঁচ পয়সার জন্য কতনা বায়না ধরেছি। কোনদিন পেতাম, কোনদিন পেতাম না। তখনকার সময়ে এই পাঁচ পয়সার যা মূল্য ছিল, এখনকার দিনে ২৫ টাকার মতো সেই পাঁচ পয়সার সমান হবে বলে আমি মনে করি। তবুও তখনকার পাঁচ পয়সার সেই আনন্দ হবে না।
আর কুকুর নিয়ে এই সোনেলা ব্লগে আমিও একটা পোস্ট করেছিলাম। হয়তো পড়েছেন বলে মনে হয়। সেই পোস্টের শিরোনাম ছিল কুকুরের ভালোবাসা
আপনার এই পোস্টে আবার মন্তব্য নিয়ে ফিরে আসছি। যদি আপনার প্রত্যুত্তর পাই। ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ইঞ্জা দাদা।
ইঞ্জা
ভাই নিজে কখনো ধনী গরীব নিয়ে মাথা ঘামায়নি, আপনার সময় ৫ পয়সা ২৫ টাকার সমান হলেও আমার সময় তা ৫ টাকার কাজ করেছে, আমি ৭৭/৭৮ সালের কথা বলছি দাদা।
আপনার লেখাটি পড়েছি আমি, সেই লেখা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের লেখাটা শুরু করলাম দাদা। 😊
নিতাই বাবু
আপনার সেসময়ও প্রতি কাপ চায়ের মূল্য ১ টাকা থেকে ১.৫০ পয়সা ছিল, দাদা। তাহলে তখনকার ৫ টাকার সমতুল্য দাম এখন কত হতে পারে? এঝন কিন্তু প্রতি কাপ চায়ের মূল্য এলাকা ভেদে ৫ থেকে শুরু করে ৮ টাকা, ১০ টাকাও আছে।
ইঞ্জা
সত্যি তাই দাদা, আমি দুই টাকার চা খেয়েছি ‘৮০ পরেও। 😢
নীরা সাদীয়া
পশুপাখির প্রতি প্রেম…এটা স্বর্গীয়, বলে বোঝানো যাবে নাহ্। এদেরকে ভালোবাসতে পারলে নিজেরই কেমন আনন্দ লাগে।
ও, হ্যাঁ, স্কুলগেটের আচার জলপাই এসব আমারো দারুন প্রিয় ছিলো, কিন্তু কোনদিনই টাকা জুটতো না 😭 ইচ্ছে করেই দিতো না।
তবে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে আমার ছোটবোনকে দিয়েছি, ওর শৈশবটাকে রঙিন করার জন্য।
ইঞ্জা
আপু আমি কত কিছু যে পুষে ছিলাম, এর লিস্ট দেখলে অবাক হবেন, দেশি বিদেশী নামকরা কুকুর, বানর, তীতার, খরগোশ, গিনিপিগ, টিয়া, ময়না সিহ বিভিন্ন জাতের বিদেশী পাখি, বেজি, কবুতর সহ
ইঞ্জা
আরও কত কিনা পুষেছি।
এক সময় বাবা মা কঠিন থাকেন যেন আমরা রোগবালাইতে না ভুগি, এই জন্যই বাবা মারা বাচ্চাদের টাকা পয়সা দিতে চাননা, কিন্তু আপনার মতোই আমি আমার সন্তানদের দিতাম। 😊
আহমেদ ফাহাদ রাকা
অনেক ভালো লাগলো,আমিও একটা কুকুর কে গত ৪ বছর ধরে আমার বাসায় রাখছি,মোট বাচ্চা সংখ্যা হয়েছিল ১৩ টি,তারা সবাই বয়ফ্রেন্ড ও গার্লফ্রেন্ড নিয়ে যে যার মতো ঘর সংসার করছে, শুধু মা কুকুর টি এখনো আছে, কুকুর কে নিয়ে ফেইসবুকে একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম,ভাবছি এখানেও সেটা দিবো।
ইঞ্জা
জেনে খুব খুশি হলাম ভাই, কুকুর আমার খুব পছন্দের, আপনি ঝটপট দিয়ে ফেলুন, আমরাও পড়ি। 😊
আহমেদ ফাহাদ রাকা
দিবো তো অবশ্যই,আর আপনি যেহেতু বলেছেন তখন তো দিতেই হবে
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ভাই
রেহানা বীথি
ছোটবেলার স্মৃতিগুলো এত মধুর, ভোলা যায় না। কারণে অকারণে ভেসে ওঠে চোখের সামনে। খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ইঞ্জা
সত্যি তাই আপু, আমরা ফেলে আসা দিনগুলো মনে করে কিছুটা হলেও সুখ স্মৃতিতে ভুগি, যাকে বলে নস্টালজিয়াতে ভুগা।
দ্রুতই পাবেন আপু।
নাজমুল হুদা
খেলাগুলো অনেক মজার। ছোটকাল যদিও থেমে থাকে না তবুও এর রস ভুলা যায় না।
শৈশবের স্মৃতি চারণ করা মানে নতুন একটা নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি করা।
চলুক …..
ইঞ্জা
সত্যি তাই ভাই, ছেলেবেলার স্মৃতি গুলো রয়ে যায় সুখ স্মৃতি হিসাবে।
ধন্যবাদ। 😊
জিসান শা ইকরাম
মায়া একটি সাংঘাতিক বিষয়,
কখন কিসে মানুষ মায়ায় জড়িয়ে পরে তা মানুষ নিজেই জানে না।
উত্তরার আমার বাসার পাশের ড্রেনে নতুন জন্ম নেয়া তিনটি কুকুরের বাচ্চা সন্ধ্যায় পরে গেল একসাথে।
পথচারীরা যেই যাচ্ছে ওদের কান্না শুনে উঠিয়ে দিচ্ছে আবার পরে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পরে। আপনার ভাবি তিনতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব দেখছিল। রাতে তিনি ঠিক মত ঘুমাতেই পারেননি, গভীর রাতে যদি বাচ্চা তিনটা আবার ড্রেনে পরে যায়, কে তাদের তুলে দেবে?
পরের পর্বের অপেক্ষায়……
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
মায়ার বন্ধনটা এমন এক।বিষয় যা অটোমেটিক হয়ে যায়, যেমন ভাবী মায়ার বন্ধনেই জড়িয়ে পড়েছিলেন বলেই সারা রাত ঘুমাননি, এ নিজে থেকে এসেছেই বলেই মায়ায় জড়িয়ে গেলেন।
ধন্যবাদ ভাইজান, সময়ের অভাবে ছোট আকারে লিখতে হচ্ছে বলে ক্ষমা করবেন।
মনির হোসেন মমি
ভাই জানের সাথের কিছুটা মিল আমারও আছে।বিশেষ করে টারজান খেলাটা। সে সময় অনেকে রশি দিয়ে ঝুলতে গিয়ে মারাও গেছে। অসম্ভব ভাল লাগল স্মৃতি চারণ।চলুক।
ইঞ্জা
আমরা রশিতে ঝুলতামনা, এই ডাক আমাদের সাংকেতিক ডাক ছিলো। 😂
মনির হোসেন মমি
হুম আমরা আমাদের কংস নদীর খালের পাশে বিশাল তেতুল গাছ হতে রশিতে ঝুলে পানিতে ঝাপ দিতাম। বেশ মজা হত।
ইঞ্জা
আহা নদীতে ঝাপ দিতেন, অথচ আমি সাঁতারই জানিনা।
ছাইরাছ হেলাল
লেখায় আব্বার অংশটুকু বেশ চমক সৃষ্টি করেছে।
এমন প্রাণীদের মায়া যে কি জিনিস তা ভুক্তভোগি ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না।
দারুন স্মৃতি চারণ, লোভ লাগে এখন ও শুনলে।
চলবে মানে!!
অবশ্যই চলিবে। শতবার চলিবে।
ইঞ্জা
সত্যি তাই ভাইজান, আব্বাকে আমরা জমের মতো ভয় পেতাম আর তিনিই কিনা মায়ার বন্ধনে জড়িয়ে গেলেন।
ধন্যবাদ ভাইজান, আজই পরের লেখা পাবেন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ছোটবেলার স্মৃতি ভুলে যাওয়ার নয়।
অনেক স্মৃতি আজও চোখে ভাসে, যা ভুলে যাওয়ার নয়।
বেশ চমৎকার সৃজনশীলতার সহিত লেখনী দাদা।
ইঞ্জা
ছোটবেলার স্মৃতি প্রতিটি মানুষকেই নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত করে দাদা, এ স্বাভাবিক। 😊
সাবিনা ইয়াসমিন
আপনি ছোট বেলায় চঞ্চল ছিলেন!! আবার টারজানের স্ট্যাইলে ডাকতেও পারতেন! ক্যামনে কি!! আপনাকে দেখেতো একদমই মনে হয়নি!!
পরের পর্বে বাকি কমেন্ট দিচ্ছি 🙂
ইঞ্জা
ছোটবেলায় টারজান ছিলো প্রিয় মুভির একটি, বয়স আর কত তখন, সাত আট বছর হবে, স্বাভাবিক ভাবেই তখন কতকিছু যে করতাম। 😄
নিতাই বাবু
শ্রদ্ধেয় ইঞ্জা দাদা, এই সেই আমার ভালোবাসার ধলু। এখন ধলু অনেক বড় হয়ে গেছে। থাকে আমার অফিসের সামনের মহল্লায়। আমি রোজ যেই রাস্তা দিয়ে অফিসে আসি, সেই রাস্তায় ও আমর জন্য অপেক্ষায় থাকে। সকালে ওকে অন্তত দুটি বিস্কুট না দিয়ে আর অফিসে যাওয়া যায় না। আমার ভালোবাসা ধলু আজও মনে রেখেছে। কিন্তু অনেক মানুষেই মনে রাখে না, দাদা।
ইঞ্জা
দাদা আপনার ধলুকে দেখে খুব ভালো লাগলো। 😊
চাটিগাঁ থেকে বাহার
এতক্ষণে বুঝলাম কুকুরের ছবি দেয়ার হেতু!
বুঝাই যাচ্ছে আপনার আব্বা ছিলেন দিলদরিয়া মানুষ।
ইঞ্জা
শুধু কি দিলদরিয়া, আমার আব্বা কি ছিলেন তা প্রতি পদে পদে জেনেছি উনার ইন্তেকালের পর। 😢
আরজু মুক্তা
কখন ছুটি হবে, কখন বাজবে, সেই ঘণ্টা।
মিস, ছোটবেলা।
ইঞ্জা
মাঝে মাঝে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হই আপু, সেইসব দিন আর ফিরে আসবেনা।
সাখিয়ারা আক্তার তন্নী
খুব ভালো লিখেছেন,
ইঞ্জা
পরের পর্ব গুলোও পড়লে খুশি হবো আপু। 😊
সুরাইয়া পারভিন
ছোট বেলায় আমি ছিলাম প্রচণ্ড দুরন্ত।ফুটবল ক্রিকেট,যাকে খুশি তাকে পারা সবই খেলতাম।একবার তো ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বল লেগে নাক ফেটে রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত।তারপর মায়ের বকুনি খেয়ে আর কখনো মাঠেই যাওয়া হয়নি
ইঞ্জা
শৈশবটাই আসলে আনন্দের, যৌবনকাল হলো সংগ্রামের আপু।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
ইস! ভাইয়া, সেই শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন একদম। সাতচাড়া খেলেছেন, ডাংগুটি খেলেন নি ভাইয়া?
আপনার এই লেখা পড়ে তো আমারও লিখতে ইচ্ছে করছে। এবারে লিখবো।
ইঞ্জা
ডাংগুলি তো প্রায় খেলতাম আপু, একবার আমাদেরই এক বন্ধু, এমন জোর মার মেরেছে যে একজনের মুখে লাগে, এরপর খেলাটি বাদ পড়ে যায়।
লিখে ফেলুন আপু, অপেক্ষায় রইলাম।