
অনেক রাত হয়েছে ঘুমানো দরকার বলার পরঃ
স্ত্রীঃ
ড্রয়িং রুম গোছালো।
থালা বাসনগুলো ধুয়ে কিচেনে রাখলো।
দরজা বন্ধ আছে কিনা দেখলো।
হাতমুখ ধুয়ে দাঁত ব্রাশ করে ফ্রেশ হলো।
বাতি সব নেভালো।
বিছানায় গিয়ে শুয়ে ভাবলো সকালে উঠে স্বামীর লাঞ্চ বক্স রেডি করতে হবে ভেবে ফোনে এলার্ম দিলো ও কাল কি কি করতে হবে সেটার একটা ছোট নোট করে নিলো!
তারপর ঘুমালো!!
স্বামীঃ
বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল ও নাক ডাকতে শুরু করলো.. (মাঝে মাঝে অন্যকিছুর জন্যও ঘাপটি মেরে বসে থাকে স্বার্থপরের মত। ভাবার প্রয়োজন বোধও করে না তাঁর ইচ্ছা বা চাহিদা)
অপরাহ্ন ভাইয়ের একটি লেখার (কিছুটা পরিবর্ত) এই অংশটা পড়ে চোখে পানি এসে পরেছিলো। আমাদের সমাজের প্রতিটা মা/স্ত্রী এমন কাজই কর যাচ্ছে বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিনিয়ত। আর যেসব নারী কমার্শিয়াল চাকুরী করে বাড়ির এই কাজগুলো সামাল দেন তাদের কথা ভাবলে আমি শিউরে উঠি।
মা’কে ছোটবেলা থেকে এই এক রুটিনই ফলো করতে দেখছি আমি। প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা তিনি। সেই ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে সকলের নাস্তা তৈরি করে। আমার স্কুলের টিফিন, বাবার লাঞ্চবক্স গুছিয়ে তারপর নাকেমুখে খেয়ে নিজের স্কুলে যেতেন প্রতিদিন। এখন প্রমোশন হয়ে সহকারী শিক্ষিকা থেকে প্রধান শিক্ষিকা হয়েছেন কিন্তু বাড়িতে উনার প্রমোশন হয়নি। এখনো সেই একই রুটিনেই আছেন।
জীবনের প্রথম বিশটা বছর কোনো অনুধাবন হয়নি এই বিষয়ে, কখনো বোঝার চেষ্টা করিনি বা আন্দাজও করিনি বাড়িতে যে এত কাজ করতে হয়। প্রথম অনুধাবন করলাম দেশের বাহিরে আসার পর। রান্না, ঘর গোছানো, পার্ট টাইম জব, পড়াশোনা, পরীক্ষা সব একসাথে সামাল দেওয়া মুশকিলই হচ্ছিলো। অন্যদিকে নারী সহপাঠীরা সবই ঠিকমত করে নিচ্ছিলো! ওদের দেখে আমিও চেষ্টা করলাম কিন্তু তারপরেও হিমশিম খেতে হয়। রাতে অনেক দূর্বল লাগে, প্রচন্ড ঘুম আসে। ঠিকমত ক্লাশে যেতে পারি না। বা ক্লাশে ঘুমাই। কিন্তু চেষ্টা চালালাম বেশ কিছুদিন। এখন আমি সময়মত সবকিছুই করতে পারি।
তখনই ভেবেছিলাম পড়াশোনা শেষে বিয়ে করার পরে সব সময় স্ত্রীকে সাহায্য করবো। বিয়ের পাঁচ বছর ভালই চলছিলো কিন্তু ইদানীং আমার যেন কি হয়েছে! খুব টায়ার্ড লাগে বাসায় গিয়ে প্রায়ই কাজ ফাকি দেই, আলসেমিকে প্রাধান্য দিচ্ছি ইদানীং। যেমন সকালে নাস্তা করে রেডিমেইড লাঞ্চ বক্স নিয়ে অফিসে আসি! বাসায় গিয়ে ডার্টি বক্স বেসিনে রেখে গোসল করে, রেডি ডিনার প্লেটের সামনে বসি। খাওয়া শেষে ফোন নিয়ে বা মুভি নিয়ে বসি! এইটা কোনো কথা?😫 বেচারি সারাদিন অফিসের কাজ শেষ করে আবার বাসায় একা একা এই কাজগুলো করে কিছু বলে না। তবে আমি বুঝি নারীদের বেশ ভালই কষ্ট হয় সারাদিন কাজেরই উপর থাকেতো..
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আমরা অর্ডার দিয়েই শেষ! না আমি আর আলসেমিকে প্রাধান্য দিবো না। আগের মত যতটুকুন পারি সাহায্য করবো।
জগতের সকল মা/স্ত্রী/কন্যা সহ সকলেই ভাল থাকুন এটাই প্রত্যাশা❤
২৭টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
মা/স্ত্রী/কন্যা সবাই ভাল থাকুক তা চাই মনে প্রাণে।
তবে কাজ-কর্ম করতে মন চায় না, আলসেমি লাগে খুব!
রেজওয়ান
বেশকিছু দিন আলসেমিকে প্রাধান্য দিচ্ছিলাম আমিও। আর দিবো না ভাই!😎অনেক না হলেও আমাদের টুকটাক সাহায্য করা উচিৎ হয়তো✌
ভাল থাকুন সব সময় ভাই..
তৌহিদ
সুন্দর অনুভাবী লেখা ভাই। এমন করে আমরা ক’জনাইবা ভাবি? তারা সবাই ভালো থাকুন এটাই কাম্য
রেজওয়ান
আসলে আমাদের ভাবা উচিৎ✌নারীরা আসলেই অনেক কষ্ট করে বিনা পারিশ্রমিকে!😓যতটুকু পারি আমরা সাহায্য করবো অন্তত আমরা যেন বলি “সারাদিন অনেকতো করলে একটু রেষ্ট নাও” এতেই সাংসারিক মা জাতি অনেক খুশি হয়!(প্রমাণিত)
তৌহিদ
হ্যা ভাই এটা প্রমাণিত।
ইঞ্জা
বেশ কিছুদিন আগে একটা হাতে আঁকা ছবি দেখেছিলাম, এক মহিলা দুই হাতে দুই বাচ্চা ধরা, বুকে কাপড়ে বাঁধা এক শিশু সন্তান আর পিঠে উনার শক্ত সমর্থ স্বামি আনন্দে লুতুপুতু, ছবিটি বুঝালো নারী কিভাবে সংসারটা সারাদিন টেনে নিয়ে যায় আর স্বামী অফিসের চেয়ারে বসে আরাম করে চাকরি করে, সন্ধ্যায় ফিরে আরাম করে, ক্লাব পার্টি করে, এরপর বাসায় ফিরে খেয়ে দেয়ে ঘুম, আক্ষরিক অর্থে নারী কিন্তু ঘুমানোর আগ পর্যন্ত কাজ করে।
স্যালুট হে নারী।
রেজওয়ান
ছবিটা আমিও দেখেছিলাম ভাইজান। আসলে ওই ছবিটাই এড করতে গিয়ে দেখি ফোন থেকে ডিলিট হয়ে গিয়েছে কিভাবে যেন।😕
ভাল থাকুন সব সময় ভাই✌
ইঞ্জা
ধন্যবাদ এমন লেখা দেওয়ার জন্য খুব খুশি হয়েছি। 😊
বন্যা লিপি
লেখাটার জন্য আপনাকে অভিবাদন। অনুধাবন টুকু পুরুষের মধ্যে আসাটাও একধরনের সাহায্যের মন বাড়িয়ে দেবার মতন আমার কাছে। একটু সহানুভূতি অথবা একটু সদয় দৃষ্টি।প্রত্যেকট নারী,কন্যা, মা’ই তাঁর আপন জগতে গর্বিত হতে বাধ্য।
খুব ভালো লাগলো লেখা।
শুভ কামনা।
রেজওয়ান
আসলেই একটু সহানুভূতি বা একটু ভাল ব্যবহার একজন নারীকে আরো প্রানবন্ত করে তুলে😇আপনিও ভাল থাকুন সব সময় আপু✌
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর একটি পোস্ট রেজয়ান ভাই। আমাদের সবারই ভাবা ও অনুধাবন করা উচিত। আপনি করেন যেন খুশি হলাম। আমি খুব কম করি। কাজে ফাকিও দিই। আপনার মত হয়ার চেস্টা করব। ইনশাল্লাহ।
রেজওয়ান
দোয়া করবেন আমাদের জন্য ভাইজান😇আপনিও সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন সব সময়❤
মোঃ মজিবর রহমান
আল্লাহ সকল মানুস্কে সুস্থ ও ভাল রাখুক। আমিন
নিতাই বাবু
পরের কথা নাইবা বললাম, নিজের স্ত্রীর কথাই বলি! ঘরণী আমার এখনো ভোররাত থেকে রাতের ১টা পর্যন্ত শুধু পরিশ্রমই করে যাচ্ছে। অথচ আমি বান্দা শুধু সামান্য কাজ করেই অস্থির হয়ে যাই। ওকে একটুও সাহায্য করে পারি না। তবুও ও খুশি। এই হলো নারীর বিধান। শত কষ্টের মাঝেও থাকে নিশ্চুপ! স্যালুট মায়ের জাতি নারীদের।
রেজওয়ান
আমি দেখেছি দিন শেষে একটু নরম সুরে যদি বলি “অনেকতো করলে সারাদিন এখন একটু বিশ্রাম নাও” এতেও সাংসারিক নারী খুশি হয়ে যায়। অনেক প্রানবন্ত হয়ে উঠে❤আমিও প্রচুর অলস😜কিন্তু আমাদের উচিৎ টুকিটাকি কাজে সাহায্য করা।✌ভাল ও সুস্থ থাকুন সব সময় ভাই😇
সাবিনা ইয়াসমিন
সবাই যদি এমন করে ভাবতো তাহলে মেয়েদের আর মৃত্যুর পর স্বর্গে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমই হতো। এমন অনুধাবনকারী হাজব্যান্ড সাথে থাকলে সংসারটাই স্বর্গ হয়ে যেতো। আমার সাথে তুমিও ঘরের কাজ করো” এই কথাটি মেয়েরা বলবেনা, তারা চায় তাদের কস্টগুলো তার জীবনসাথী অনুধাবন করুক, এটাই সবচেয়ে বড় হেল্প 🙂
আলসেমি কেটে যাক, শুভ কামনা 🌹🌹
রেজওয়ান
আসলেই আপি “আমার সাথে তুমিও করো” একথাটা সাংসারিক মেয়েরা বলে না কখনো।😐নিরবে সব কাজ করে তবে যদি তাঁদের হাসবেন্ড নিজ ইচ্ছায় বলেও খুব খুশি হয় এবং সাথে এও বলে তোমার কষ্ট করতে হবে না সারাদিন বাহিরে থেকে এসেছ এখন একটু ফ্রেস হয়ে বসো চা/কফি করে দেই😇
আলসামো আসলেই কাটানো দরকার।✌শুভেচ্ছা নিবেন আপি❤
মনির হোসেন মমি
নারী বা মা জাতি সব সময় এ জগতে পরিশ্রমী সেই অনুপাতে আমরা পুরুষরা মুল্যায়ণতো করিই না বরং উল্টো তিরস্কার সহ নানান ভাবে হেনস্ত করে থাকি।
আপনি যে ভাবে তাদের কর্মকান্ডের হিসাব দিলেন তাতেও যেন অনেক কম হয়ে যায়।তারা কখনো একজন পুরুষকে বলবে না বা হুকুম দেবে না তুমি এটা সেটা করছো না কেন? পুরুষ যদি অবসর থাকেন তবে একটু হেল্প করলে উল্টো তারা বহুত খুশি হয়। লেখাটি আপনার লেখাগুলোর মধ্যে সেরা। ওয়েল ডান। শুভ কামনা।
রেজওয়ান
অনেক ধন্যবাদ ভাইজান❤ভালবাসা নিবেন🥰
চাটিগাঁ থেকে বাহার
এতো কষ্ট করার পরও অনেক পুরুষ নারীদের এই কষ্টের স্বীকৃতি দিতে চান না। সহানুভুতি প্রকাশ করেন না। এটা খুবিই অমানবিক মনে হয় আমার কাছে।
রেজওয়ান
শুধুকি তাই?এত কষ্ট করার পরেও অনেক পুরুষই তাচ্ছিল্যের সুরে বলে নারীরা কোনো কাজই পারে না😒
শাহরিন
নারী মমতার গড়া, স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতির জন্য থেমে থাকে না। পুরুষরা একটু সচেতন হলেই বা তাদের সম্মান করলেই সংসার আরো সুখময় হয়ে উঠে। অনেক সুন্দর বিষয়বস্তু।
রেজওয়ান
সত্যি বলেছেন! নারীকে শুধু নারী না ভেবে মানুষ ভাবা শুরু করলেই সংসারে অনেক কাজ সহজ হয়ে যাবে। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকুন সব সময়😇✌
আরজু মুক্তা
এরকম সবাই একটু ভাবুক নারীদের নিয়ে
রেজওয়ান
এভাবে৷ সব পুরুষ ভাবলে জগত সংসার আরো সুন্দর হয়ে উঠবে বোধকরি😇ভাল থাকুন সব সময়✌
মোহাম্মদ দিদার
নারীকে জেনো বিধাতা অলৌকিক ধৈর্যগুন দিয়েপাঠিয়েছে।
সারাদিন সাংসারিক কাজ কর্ম করেও, অকারনে বকাঝকা শুনেও নিরবে সংসার সামলাতে পারে।
রেজওয়ান
আসলেই তাই! এটা তাঁদের এক অসাধারণ ক্ষমতা❤ভাল থাকুন সব সময়😇