
আমার শিশিরকণা,
সোনেলার আনন্দ বেদনার বার্তাবাহক মারফত আজই জানতে পারলাম এখন থেকে সোনেলায় চিঠি বিভাগ চালু হয়েছে। জানি, এতদিন তোমার কাছে চিঠি পৌঁছানোর কোন মাধ্যম না পেয়ে যারপরনাই বঞ্চিত হতে হয়েছে তোমাকে। তাই তোমার কাছে প্রথম চিঠি লেখার এ সুবর্ণসুযোগ আমি কিছুতেই হেয়ালিপনায় হারাতে চাইনি। আমার প্রেমাবেগ আর বিরহবার্তার যাঁতাকলে পিষে তুমি মরিয়া হয়েছো বারংবার। আমার উপস্থিতি তুমি হয়তো বুঝতে পারোনা, আমার স্পর্শ অনুভব করতেও পারোনা। কিন্তু আমি এখান থেকে তোমাকে দেখতে পাই, তোমার দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাই। তোমার বিরহবেদনার অবসান ঘটাতে তাই আজ সোনেলার মাধ্যমেই তোমার কাছে এই চিঠি লিখছি। তুমি যখন এই চিঠি পড়বে, জেনেরেখো অশ্রুসিক্ত নেত্রে আমি ওপর থেকে তোমায় দেখছি আর তোমার আমার ভালোবাসাবাসির স্মৃতিমধুময় সে ক্ষণগুলোর কথা চিন্তা করে আপ্লুত হচ্ছি বারংবার।
প্রিয়তমেষু, এই চিঠির প্রতিটি ভাঁজে শরতের নীল আকাশে ভাসমান মেঘের ভেলায় লুকোচুরি করা সূর্যের আলোরছটাকেও পাঠিয়ে দিলাম তোমার ঠিকানায়। আমি জানি জানালার ধারে এলোকেশী তুমি অপলক নয়নে চেয়ে আছো সামনের লালচে মেঠোপথের দিকে। কবে আসবো কখন আসব সে ভাবনায় দিশেহারা তোমাকে উপর থেকে দেখছি আর ভাবছি কি বোকা তুমি? যে চলে যায় সে কি আর ফিরে আসে? এমন ভালোবাসা পাবার অধিকার যে আমার আর নেই।
প্রিয়তমা, অন্ধ মোহাচ্ছন্নের মিথ্যে আবেশতায় নিমগ্ন ছিলাম আমি। ভাবতাম এপারেই রয়েছে সকল সুখ। তুমি ডেকেছো বারংবার, ফেরাতে চেয়েছো আমায়। পদে পদে জলাঞ্জলি দিয়েছিলে নিজের হৃদয়বীণার মন্ত্রকেও। কিন্তু আমি সেদিন পিছু ফিরতে পারিনি, কেউ পারেওনা। নিজের অজান্তেই আমার জীবনে কারণে আর অকারণে মাঝেমধ্যে কিছু ক্ষ্যাপা ধূমকেতু এসে পড়েছিলো। তুচ্ছ তুচ্ছ প্রলাপের লাগামহীনতায় তারা পুচ্ছে দিয়েছিলো অশান্তির আলাপন। সে অনলে দগ্ধ আজ আমি হয়েছি ছারখার, হয়েছি ভস্মীভূত। তুমি হয়তো দেখতে পারবেনা সে নোনাজল, শুনতেও পারবেনা আমার বিদীর্ণ আহাজারি। পারবেইবা কেমন করে? তারাতো দেয়নি আমার সে কথাগুলো তোমার কাছে পৌঁছাতে।
ওগো জানো, তারা এখানে নিয়ে এসে আমায় কৌতুকের বাক্স উপহার দিয়েছে? র্যাপিং পেপারে মোড়ানো আমি হয়েছি উপহাসের পাত্র। আমার খেয়ালী স্রোতের ধারায় তোমার স্মৃতিরা সব দুঃখের সাগরে ডুবছে আর ভাসছে। তোমার মনে আছে দুজনে মিলে নদীর পাড়ে যে প্রেমযমুনার ঘাট বানিয়েছিলাম তার কথা? সময় পেলে সেখানে এসে মাঝে মধ্যে দাঁড়িও। দেখবে ভালবাসার সেইসব স্মৃতিরা এসে ভীড়ে আছে সেই ঘাটে।
প্রিয়ংবদা , আমি এখানে যে নৌকায় ভাসমান তার ছই নেই গলুই নেই। তবু নৌকাখানিকে যত্নে রেখেছি। তোমার কাছে পৌঁছোবার সেই ভেলাকে আমি সাজিয়েছি আমাকে বলা তোমার পুরনো সে কথামালা দিয়ে। আমি ভালো নেই প্রিয়, আমার যন্ত্রণারা এখানে বিবর্ণ। ব্যথাহীন হয়ে পড়েছে আমার আবেগ অনুভূতিরা। তোমার দোয়েল, শ্যামারা কেমন আছে? তারা কি এখনো গান শোনায়? নাকি আমার বিরহে তারাও কাতর? অপেক্ষায় আছো জানি, কিন্তু আমিও যে মানবসত্তা! অসীমের অংশ দেহে ধারণ করেছিলাম কিছুকাল। সৃষ্টিকে সম্পন্ন করবার জন্যই আমাকে এখানে আসতে হয়েছে। সবাইকেই আসতে হয়। এই অমোঘতা বিসর্জন দেবার শক্তি যে কারোরই নেই।
প্রাণপ্রেয়সী, সুযোগ পেলে একদিন যাব হয়তো তোমার কাছে, স্বশরীরে না হলেও আমার কায়া হয়ে। বাতাসে শিস কেটে সে মর্মর ধ্বনি পৌঁছে দেবো তুমি কান পেতে শুনে নিও। নিজের সাধনাকে বিসর্জন দিয়ে তোমার সীমানায় একবারের জন্য হলেও আমি আসবো প্রিয়। সত্যিই তোমায় নিতে আমি আসবো সেই লালচে মেঠোপথের শেষ সীমানায় সন্ধ্যের জোনাকির আলো হয়ে। সেদিন জানালার ধার ছেড়ে বাইরে এসো কিন্তু?
যদি কখনো অসহায় মনে হয়, যদি কখনো একাকী মনে হয় তোমার দুঃসময়- তুমি স্মরণ করো আমায় আমি আসবো। আর হ্যা, এখন আমার ঠিকানা হয়েছে সোনালি আকাশ। এই ঠিকানায় সোনেলার চিঠি বিভাগে চিঠি লিখলেই আমি ঠিক পেয়ে যাবো। তোমার চিঠির অপেক্ষায় পথচেয়ে রইলাম।
ইতি,
তোমার আমি।
২৮টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
প্রাপ্তি স্বীকার করছি।এতো এতো চমকপ্রদ যার কথা সে কি আর উত্তর না দিয়ে লুকিয়ে থাকতে পারে। নিশ্চয় সে উত্তর দিবে। লেখাটায় ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম।
তৌহিদ
প্রথম চিঠি!! ভাবতেই ভালো লাগছে ভাই। সোনেলায় চিঠি বিভাগে নিজের প্রথম লেখার স্বাক্ষর রেখে গেলাম এটা পরম প্রাপ্তি।
উত্তর পেলে জানবেন নিশ্চয়। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাইটি।
প্রদীপ চক্রবর্তী
একরাশ মুগ্ধতা
ব্লগে প্রথম চিঠি পড়ে।
চিঠিতে এতো দারুণ অলংকার বেশ ভালো লাগলো দাদা।
বেশ অনন্য অন্যরকম লেখনী।
লেখকের সাথে আমিও তাহার চিঠির অপেক্ষায় পথচেয়ে রইলাম।
তৌহিদ
চিঠি পড়ার জন্য ধন্যবাদ প্রদীপ। চিঠির উত্তরের আশায় আমিও আছি।
ভালো থেকো দাদা।
মোঃ মজিবর রহমান
মনের মাঝ থেকে অন্তর নিংড়ানো একটি লেখা। আর এই চাওয়া পুরন না হিয়ে কি পারে।
এই চিঠির অপেক্ষায় রইয়ে গেলাম।
তৌহিদ
বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছি তিনি চিঠি পেয়েছেন। প্রাপ্তি স্বীকার করে নিশ্চই ফেরত পত্র দেবেন। আমিও সে আশাতেই আছি ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
লেখালেখি যখন চালু হল অবশ্যই পাবেন
শুভেচ্ছা রইল।
অশোকা মাহবুবা
ব্লগে চিঠি! বাহ দারুণ তো। আপনার লেখা না পেলে জানতামই না বিষয়টা। মনে হচ্ছে যেন সেই আশি নব্বই এর দশকে ফিরে গেছি। প্রাণপ্রিয়র মুখ ভেবে ভেবে কাগজে কলমে কতকিছু লিখে চলা। আপনার চিঠি পড়তে পড়তে ঠিক সেই অনুভূতিটাই যেন ফিরে এল। চিঠিও এত সুন্দর হয়! ধন্যবাদ অতীতের মিষ্টি স্মৃতিকে একটুখানি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য।
তৌহিদ
চিঠিখানি পড়েছেন জেনে কৃতার্থ হলাম প্রিয় পাঠক। চিঠি বিভাগে জানিয়ে দিন আপনার না বলা কথাগুলো। সোনেলা পৌঁছে দেবে সেই ঠিকানায়।
আসলে নিজেও অনেকদিন কাউকে চিঠি লিখিনি। আজ সুযোগ পেলাম। সত্যি আমি ভাগ্যবান।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।
ছাইরাছ হেলাল
আহারে কলি কালে এ কী হচ্ছে!
চিডি-মিডি দিয়া কান্দাইতে পারবেন না। তয় যেমুন লিখছেন তাতে দিলডা মোচড় দিয়া উঠছে।
অবশ্য উথাল পাথাল ইলে আপনের কিন্তু খবর আছে।
আহা একেবারে স্বর্গ- মর্ত ভেদ করে যাচ্ছে। এগুলা এত্তদিন চাইপ্পা রাখলেন ক্যামনে কে জানে।
এ বিভাগের এতটা জরুরত ছিল বুঝতে পারি নাই।
তৌহিদ
চিঠি বিভাগ চালু করে ভালো একটা উপহার পাঠক এবং লেখকদের দিয়েছে সোনেলা। পুরাতন সেই চিঠির ধারা আবার চালু হোক সবার মাঝে এটাই কাম্য।
দিল মোচড় না দিলে আইজকাইল বউ, প্রেমিকা কারও ভালোবাসা পাওয়া যায়না। বুইজ্জালন এইবার!!
এইবার কন, কারে চিঠি লিখবেন ভাইজান? সোনেলা আপনার চিঠি পৌঁছে দেবে সে ঠিকানায়।
ছাইরাছ হেলাল
আপনি/আপনাদের মত এত সোন্দর চিডি তো ল্যাক্তে পারমু না,
আর পারলেও চিডির তো কোন মানু নাই, তাই আপনাদের চিঠি পড়েই ঘোল খেয়ে সময় কাটাই।
বেশি মারেন চিঠি, দেখিনা কী হয়!
তৌহিদ
এই চিডি যদি সোন্দর হয় তাইলে লায়লা মজনু শিরি ফরহাদের লেকা চিডিগুলানের কি হপে?? শরম দিয়েননা ভাইজান। তয় যারে লিখছি সে পইড়া কয়, আমি নাকি নতুন প্রেমে পড়ছি। লেও ঠ্যালা। কোন দিকে যাই?
আর আপনে পইড়াই সাধ মিটান, বহুত ক্যাচাল থিকা বাইচা যাইবেন ☺☺
হৃদয়ের কথা
আপনার আব্বেগময় চিঠি পড়ে মন পুর্ন হলো ভাইয়া। চিঠি লিখতে আমার খুব শখ। আমিও চিঠি লিখবো ভাইয়া। একটি ব্লগে চিঠি বিভাগ আছে তা ভাবাই যায় না। দারুন সব আইডিয়া সোনেলার মডারেটর, এডমিনদের। শুভেচ্ছা আপনাকে ভাইয়া।
তৌহিদ
সোনেলার সাথে থাকার জন্য আপনাকেও অভিনন্দন। ভালো থাকবেন।
আরজু মুক্তা
চিঠি পড়িয়া এতোটাই মুগ্ধ যে আমিও প্রস্তুতি নিচ্ছি। তয় আপনার মতো হবেনা।
তৌহিদ
আপনারটাই ভালো হবে, আমি নিশ্চিত আপু ☺
সাবিনা ইয়াসমিন
কে বলে চিঠির আবেদন হারিয়ে গেছে! এই চিঠি পড়ার পর কত কত জনের মন উস্কে যাবে চিঠি লিখতে তা আল্লাহই ভালো জানেন!!
শিশিরের কাছে পাঠানো চিঠিখানা আমরা কিন্তু পড়ে ফেলেছি, কি আর করার! পিওন হওয়ার সুবিধা একটু আধটু না নিলে কি হয়! আশা করছি শিশিরের উত্তর খানাও সোনেলার ডাকবাক্সে জমা হবে। ওটাও আমরা পড়বো, তা আগেই বলে রাখছি। 😀😀
ডাকবাক্সের উদ্ভাবন দারুন এক চিঠি দিয়ে শুরু করলেন তৌহিদ ভাই। সোনালী চিঠিতে ভরে উঠুক সোনেলার ডাকঘর। অভিনন্দন আপনাকে। 🌹🌹
তৌহিদ
চিঠির আবেদন আসলেও হারায়নি আপু, যান্ত্রিকতার আড়ালে হারিয়ে গিয়েছে আমাদের আবেক অনুভূতিগুলি।
চিঠির উত্তরের প্রতীক্ষায় আমিও আছি। দেখি কবে আসে। তবে আপনাদের সাথে নিয়েই পড়বো ☺
শুভকামনা জানবেন আপু।
নিতাই বাবু
সোনেলার সোনালি আকাশের ঠিকানায় লেখা চিঠিখানা পড়ে ভাবছি! ভাবছি, লেখকের চিঠি লেখা বা চিঠি পাঠানোর মাধ্যমটা বেশ দারুণ! কারণ, বর্তমানে পোস্ট অফিস অকেজো হয়ে পড়েছে তাই। মেইল মারফত পাঠালেও তার নিশ্চয়তা নেই। তাই সোনেলা মারফত পাঠানোই শ্রে। তাহলে এখন থেকে এই ডিজিটাল যুগে পোস্ট অফিসের ঝামেলায় না গিয়ে সোনেলার মাধ্যমেই চিঠি পাঠাতে হবে। জয়তু সোনেলা। জয় হোক লেখকের।
তৌহিদ
হ্যা দাদা, সোনেলার এই উদ্যোগ ভালো লেগেছে। মনের কথা চিঠিতে লিখে জানিয়ে দেবে সবাই সোনেলায়। চিঠি পৌঁছে যাবে প্রাপকের কাছে।
রেজওয়ান
মতবিনিময়ের মাধ্যমটা বেশ ভাল লাগলো😇 কত্তদিন চিঠি লেখা হয় নাই এই সোস্যালনেটওয়ার্কের যুগে😭
তৌহিদ
লিখে ফেলুন ভাই, প্রাপক অপেক্ষায় আছে।
রেজওয়ান
জি ভাই লেখাতো উচিৎ তবে লিখবো কাকে তা নিয়েই কনফিউজড?🤔
মোহাম্মদ দিদার
এ আবেদন কে রাখবেনা!
সে কি হৃদয়হীনা?
তৌহিদ
হৃদয়হীনারা আকাশে থাকে, তাদের জন্যই চিঠি বিভাগ খোলা হয়েছে। প্রাপক পেয়ে যাবেন।
রেহানা বীথি
কোথায় শিশির? কই….. কই! দেখো হে, আমার ভাই কত আবেগ দিয়ে চিঠিখানা লিখেছে, উত্তর যেন তাড়াতাড়ি পায় সে। তা নাহলে কিন্তু ননদীনি রায়বাঘিনী, মনে থাকে যেন!
তৌহিদ
চিঠি পেয়ে তিনি নীরব হয়ে আছেন। হয়তো ভাবছেন উত্তরে কি লিখবেন চিঠিতে!! তার উত্তরের অপেক্ষায় আছি আপু।