
গুজবে গুজবে দিন যাচ্ছে আজকাল, এই গুজবে কান দেওয়ারও মানুষ কম নেই এই দেশে, আবার কোন সিরিয়াস বিষয়কে গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়ার মানুষও কম নেই এই দেশে, উদাহরণ স্বরুপ আমাদের ঢাকার সিটি কর্পোরেশন মেয়রদ্বয়ের কথা বলতে পারি, দেখলেননা কিভাবে মহামারী ডেঙ্গুকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়ে ছিলেন উনারা যা খুবই দুঃখজনক এবং ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
আজ আমি এসেছি কিছু পুরাতন নতুন গুজব নিয়ে যা আমাদের দেশে বেশ ডালপালা গজিয়েছিল বা গজিয়েছে।
আমি তখন বেশ ছোটো, যথাসম্ভব ‘৭৫ পরবর্তী সময়ের ঘটনা।
চারিদিকে শোরগোল পড়ে গেলো, কিছু একটা বিড়ালের রূপ ধরে মানুষকে আক্রমণ করছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসছে এমন ধরণের ঘটনার, কেউ বলছে টেনে নিয়ে গেছে, টেনে নিয়ে যাওয়ার সময় মানুষ গিয়ে উদ্ধার করেছে, কখনো নিহত বা আহতের খবরও আসছে, চট্টগ্রামে তো শোরগোল পড়ে গেছে, অনেকে বিড়াল মেরেও হাত পাকা করছে।
এমতাবস্থায় এক সন্ধ্যায় আমাদের পাশের বাসা থেকে আত্মচিৎকারের শব্দে সবাই হাজির, কি হলো কি হলো?
জানা গেলো পাশের বাসার মেয়েটা (১৬/১৭ বয়স হবে) এক কালো বিড়াল দেখেছে, যে কিনা ওর দিকে তাকিয়ে ফোসফাস করছিলো, এই দেখে মেয়েটার আত্মচিৎকার বেড়িয়েছে আর আশেপাশের অনেকের ত্রাহি অবস্থা।
বুঝেন অবস্থা।
এতো গেলো আমাদের ছোটোবেলার ঘটনা, এখন আসুন আজকালকার গুজব নিয়ে, যার উল্লেখযোগ্য কিছু গুজবের কথা বলি, যদিও গুজবের দেশে গুজবের অভাব নেই, যেমন মনে করুন বিখ্যাত কেউ হাসপাতালে চিকিসার জন্য ভর্তি হলেই উনি মারা গেছেন এমন গুজব হরহামেশাই হচ্ছে, যেমন সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ ইন্তেকাল করার আগেই এমন গুজব রটেছিলো।
কল্লা কাটার গুজবঃ
আহারে এই কল্লা কাটা গুজব, এমন গুজব আমরা ছেলেবেলাতেও প্রচুর শুনতাম, এ গুজবের প্রধান টার্গেট থাকতো যেকোন ধরণের বড় ব্রীজ তৈরির সময়কে।
যেমন এখন এই গুজবের টার্গেট ছিলো পদ্মা ব্রীজ, এই গুজবের ডালপালা গজাতে না গজাতেই এলো নতুন গুজব ছেলেধরা, এই ছেলে ধরা গুজবকে কেন্দ্র করে বাড্ডাতে নিরীহ রেনুকে পিঠিয়ে মেরে ফেলা হলো, চট্টগ্রামে কয়েকজনকে পিটানো হলো, নারায়নগঞ্জ, নেত্রকোনা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বেশ অনেকেই আহত নিহত হলো, এইসবই আমি বলবো গণধোলাই নয়, সবই ক্লিন মার্ডার, এমন গুজব শুধু মাত্র দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এবং সরকারকে বিপাকে ফেলানোর জন্যই করা হয়েছে বলেই আমার মনে হয়।
হারপিকঃ
এখন একদম লেটেস্ট গুজব হলো, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে আগামী শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকা শহরের সবাই নিজ নিজ বাথরুমের পানি যাওয়ার পথে ৫০০ গ্রাম ওজনের হারপিক অথবা ব্লিচিং পাউডার ঢেলে দিয়ে পানি ছেড়ে দিন, এতে সকল মশা, মশার লার্ভা মরে সাফ হয়ে যাবে।
আমি বলি কি, মশা মরবেনা তো ছাই হবে, আরে ফাজিলের ফাজিল আমরা ঢাকাবাসি যদি এই কাজ একযোগে করে তাহলে তো পুরা ঢাকা এবমগ এর আশেপাশের সকল জীববৈচিত্র ধবংসের মুখে পড়ে যাবে, এছাড়া আমাদের সুপেয় পানি বিষাক্ত হয়ে যাবে, আমরা তখন জীবন ধারণের জন্য পানি পাবোনা।
আবার এও বলছে জুমার নামাজের পর ফেলার জন্য, আরেহ বেয়াক্কেল জুমার নামাজের পর করতে হবে কেন, কেন আগে বা অন্যদিনে নয়?
আমরা হুজুগে বাঙ্গালী তো সবাই সবাইকে জানান দিচ্ছে, আমি সাবধান করছি, ভুলেও এমন করতে যাবেননা, এতে আমাদের সবার জীবন সংশয় হয়ে যাবে।
পরিশেষে আমার অনুরোধ থাকবে, প্লিজ আপনারা এমন সব গুজবে কান দেবেননা, এইসব গুজবের কোন ভিত্তি নেই, বরঞ্চ এইসব গুজবের কারণে নিজের এবং অন্যের জীবন নিয়ে টানাটানি হয়, মানুষের ক্ষতি হয়।
পারলে আশেপাশের মানুষকে বুঝান এইসব গুজবে কান না দেওয়ার জন্য, যত গুজবে কান দেবেন, ততই আপনাদেরই ক্ষতি।
সুতরাং সাধু সাবধান।
২২টি মন্তব্য
শাফিন আহমেদ
চিলে কান নিয়েছে ভেবে আমরা চিলের পেছনেই ছুটি , এর থেকে উদ্ধারের জন্য নিজেদের সচেতন হতে হবে এবং অবশ্যই শোনা কথায় কান না দিয়ে আমাদের সবার আগে অথেনটিক সোর্স অনুসন্ধান করতে হবে ।
ইঞ্জা
একদম ঠিক বলেছেন ভাই, ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
এখন কানে তুলো দিয়েছি। ফালতু সেন্টিমেন্ট।
ইঞ্জা
সমস্যা এইখানেই আপু, আমরা কানে তুলো দিয়েই শান্তি, কিন্তু ওদিকে কাতারে কাতারে মানুষ মরে, আমার কথা হলো আমাদের উচিত এর বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ানো, তাহলেই রটনাকারীরা ভয় পাবে।
মনির হোসেন মমি
যা হবার তা হবেই ।যতটুকু অর্জন ততটুকুই পাব। গুজবে যেন কান না দেই। সমসাময়িক উত্তম পোষ্ট।
ইঞ্জা
আমাদের সচেতন হতে হবে, রটনাকারীদের বিরুদ্ধাচারণ করতে হবে, তবেই এরা ভয় পাবে ভাই।
রেহানা বীথি
কী সব হচ্ছে যে দেশে! দিন দিন এগোনোর বদলে পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা।
সুন্দর পোস্ট ভাইয়া
ইঞ্জা
যেন আবার অন্ধকার যুগে ফিরে যাচ্ছি আপু। 😢
প্রদীপ চক্রবর্তী
সময়োপযোগী লেখনী দাদা।
গুজবকে আমরা সকলে না বলি।
ইঞ্জা
সম্পূর্ণ একমত দাদা, সাথে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
শামীম চৌধুরী
হা হা হা….এসবই সম্ভব হীরক রাজার দেশে ইঞ্জা ভাই। আসলে আমরা কোন দেশের প্রজা?
ইঞ্জা
দুঃখজনক ভাবে তাই ভাই, হিরক রাজার দেশই যেন এই দেশ, উল্টো রথে চড়েছি আমরা।
ছাইরাছ হেলাল
দেখুন, আপনি আমাদের ভুং ভাং দিয়ে আবার গুজব খাইয়ে দিচ্ছেন না তো!!
ইঞ্জা
ভাই আমি ভুং ভাং দিলামই নাহয়, কিন্তু আপনারা মানছেন কেন, বোধবুদ্ধি হারানো উচিত নয় আমাদের।
শিরিন হক
গুজবে সচেতন হলেই হবেনা। দেশের প্রতি ভালোবাসা আইনের প্রতি শ্রোদ্ধা এব্ং সংহিসতা থেকে বাঁচতে সকলকে একযোগ হতে হবে।
ইঞ্জা
সম্পূর্ণ একমত আপু, একদম ঠিক বলেছেন।
মোঃ মজিবর রহমান
হুজুগে বাংগালী সত্য এর জন্য সরকার বিপথ্বের সামনে পর্বে তাও সত্য।
এইসব রটনার জন্যসঠিক বিচার হইনা। এর সাথে যোগ হয়েছে রাজনৌতিক হইরানি।
ইঞ্জা
একদম ঠিক বলেছেন ভাই, এইসব বন্ধ করতে হলে কঠোর আইন প্রয়োগ দরকার, ধন্যবাদ।
তৌহিদ
দাদা হুজুগে মাতানো জাতি গুজবে আক্রান্ত হবেই। এর কারন কিছুটা আপনার লেখাতেই ফুটে উঠেছে। জন্ম থেকেই যে শিশুটি গুজব দেখে আসছে তার জীবনেও গুজবের প্রভাব থাকবেই। ব্রীজ বানাতে মাথা লাগবে ছোটবেলায় রংপুরে এমন গুজব আমিও পেয়েছিলাম।
এই হারপিকের বিষয়টি ভাবছি। এই গুজব হারপিক কোম্পানিগুলিই ছড়ায়নিতো? বেশি বিক্রির ধান্দায়? মাথামোটারা এর সাইড এফেক্ট নিয়ে একবারও ভাবলোনা? আশ্চর্য!!
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখাটি দারুন লেগেছে দাদা।
ইঞ্জা
কে ভাবে কার কথা, এই দেশে সুযীগে টু পাইস কামানো লোকের অভাব নেই, হয়ত ওরাই ছড়িয়েছে, আবার সেইটা না হয়ে কোন উর্বর মস্তিষ্কের গুজব সৃষ্টিকারীও হতে পারে, আমার কথা হলো সে যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা উচিত।
ধন্যবাদ ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
গুজবে গুজবে দেশের মানুষ প্রায়ই এখন আজব পরিস্থিতিতে পরছে। কিছু কিছু সময় এমন সব কান্ড করছে যে, তার থেকে গজব কেও তুচ্ছ মনে হয়। মানুষ যতক্ষন পর্যন্ত নিজের বিচার বুদ্ধির সঠিক প্রয়োগ না করবে ততোক্ষন পর্যন্ত এর থেকে নিস্তার নেই।
সচেতন মুলক পোস্ট ভালো লাগলো ভাইজান। আরও লিখুন, শুভ কামনা 🌹🌹
ইঞ্জা
একদম উচিত বলেছেন আপু, আমরা আমাদের বিচার বুদ্ধি বিবেককে জাগরুক করতে হবে, তাহলেই এইসব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
ধন্যবাদ প্রিয় আপু।