
কল্পনা-০৭
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে ফারাহ। দূর্ঘটনার মাত্রা এতটাই মারাত্মক ছিলো যে,ফারাহ’র বাঁ হাতটা কেঁটে ফেলতে হয়েছে। ফারাহ’র বাবার বাসা থেকে তার মা-বোনরা ছুটে এসেছিলো হাসপাতালে। মেয়েকে দেখেও গিয়েছে। ফারহা’র সাথে সেই রাতে একজন সঙ্গী থাকার খুবই প্রয়োজন ছিলো । অবশেষে বানু সেই রাতে হাসপাতালে থেকে যায় ভাবীর কাছে।
জলিল শেখ বানুকে রেখে চলে আসে আমার বাসায়। পরের দিন গ্রামে যাবে শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে আনতে। কদ্দুস বয়াতী নিজে না এসে রহিমের মা’কে বলেন তুমি জামাই বাবা’জির সাথে চলে যাও। আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। আমি জর্জকে বলে দিবো সে যেন তোমার থাকার ব্যাবস্থা করে। কোন অবস্থাতে যেন রহিমের বাসায় না থাকো। ফারাহ’র আচরনে দাদা এতটাই মনঃক্ষুন্ন যে,নেহায়েৎ কর্তব্য পালন করাটাকেই যথেষ্ট মনে করছেন। ভাবীতো মা’। তাই মুখ ফুঁটে কিছু বলতে পারে না রহিমের বাবার সামনে।
রহিম ফাতেমাকে দিয়ে যায় আমার বাসায়। বলে যায় চাচা, শ্বশুড়বাড়ির লোকজনদের বলেছিলাম ফারাহ’র সাথে রাতে হাসপাতালে থাকতে। আমার শ্বাশুড়ি বললেন,সাবাহ’র বিয়ে, কারোই দম ফেলানোর সময় নেই। সবাই ব্যাস্ত। তুমি বাবা তোমার মা’কে একটু বলো, কয়েকটাদিন তার বউমা’র কাছে এসে থাকুক। তখন জলিলকে বলি বাবা-মাকে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য। ফাতেমার জন্য ফারাহ’র সুস্থ্যতা ও তার পাশে আমাকে থাকতেই হবে চাচা। ফারাহ’র কিছু হলে ফাতুর যে কি হবে চাচা? বলেই হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠলো।
দিনের বেলায় বানু হাসপাতালে থাকে। সন্ধ্যার সময় জলিল শেখ অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে হাসপাতাল থেকে বানুকে নিয়ে যায়। রাতে রহিম মা’কে হাসাপাতালে নিয়ে আসে। দিন-রাত হাসপাতালেই থাকেন বউ আর শ্বাশুড়ি। আসার সময় বানু মা’কে একটি এয়ারটাইড বক্সে কিছু শুকনা খাবার দেয় । বাথরুম থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ ফারাহ’র জন্য নিজ হাতে করে যাচ্ছে বানু আর রাহিমের মা’ জননী। আমি খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে খেয়াল করেছি কোন ক্লান্তি ও অসহ্যতার ছাপ নেই দুজনের চোখে-মুখে। উনাদের সেবা যত্ন আবারো মনে করিয়ে দেয়
”মানুষ মানুষের জন্যে”।
বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম। বাঁ হাতটা কাঁটার পর পঁচন ধরে। বানু নিজ হাতে রোজ সেই ব্যান্ডিজ খুলে পরিস্কার করে। অথচ তার মা’-বোনরা নাকে কাপড় গুঁজে ফারাহ’র সাথে দু’চারটি কথা বলেই চলে যায়। দিনে দিনে ফারাহ’র এখন অনুশোচনা হচ্ছে । সে বুঝতে পারছে তার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন কতই না আপন করে নিতে চেয়েছিলো তাকে। দুই একদিন পর পর ফারাহ’র মা,ভাই,বোন ও ভাবী আসে। কেউই তার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে না তুমি সুস্থ্য হয়ে উঠছো বা উঠবে।
অথচ রহিমের মা’ প্রতি রাতে ফারাহ’র মাথা উনার কোলে নিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে বলে
বউ’মা আমি আছি না।
দেখবা কোন অালাই-বালাই তোমারে ছুঁইতেই পারবো না।
ভাবী ঢাকায় আসার পর ফাতেমাকে আমি বানুর বাসায় রেখে আসি। সারাদিন ভাবী ফাতেমাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকেন। অথচ এই ভাবী তার নাতনী ফাতুকে একটু আদর করার জন্য,বুকে শক্ত করে ধরে রাখার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকতেন। কিন্তু ভাগ্য আজ কত সুপ্রসন্ন। চাহিদার আগেই সে ভাগ্য নিজে এসে আজ ধরা দিয়েছে রহিমের মা’র কাছে।
ফজরের নামাজ শেষে ফারাহ’কে দেখ-ভাল করে মাত্র চোখ লেগেছে রহিমের মা’র। উনি বলতেই পারবেন না কখন যে ঘুমে কাতর হয়ে শুয়ে পড়েছেন। হঠাৎ উনি পায়ের উপর শীতল ঠান্ডা অনুভব করায় চাদরটা আরেক পা দিয়ে টেনে আনতে গেলে ফারাহ’র মুখে পা লেগে যায়। তাকিয়ে দেখেন ফারাহ উনার দু’পা ধরে অঝোরে কাঁদছে। চোখের পানি পায়ের উপর পড়াতে ফ্যানের বাতাসে শীতল ঠান্ডা লেগেছে। রহিমের মা’ উঠেই বউ’মাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে
মাগো কি অইছে তোমার? তুমি এমুন করতাছো কে?
ফারাহ কোন জবাব না দিয়ে শুধু এইটুকু বললো,
মা’ আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি ক্ষমা না করলে আল্লাহ আামকে ক্ষমা করবেন না।
আমি পাপী মা’।
আল্লাহ আমাকে পাপের শাস্তি দিচ্ছেন।
এই প্রথম কদ্দুস বয়াতীর সহধর্মিনী তার পুত্রবধুর কন্ঠে মা’ ডাক শুনলেন।
(ছবিঃ প্রতীকি)
(চলবে)
২১টি মন্তব্য
শাহরিন
শুরুতে ভাবতেই পারিনি গল্পটি এভাবে এগুবে। মানুষের বিপদে যারা এগিয়ে আসে তারাই পরমআত্বীয়।
শামীম চৌধুরী
চিরন্তন সত্য কথা। মানুষ মানুষের জন্য।
ছাইরাছ হেলাল
মানুষের মনুষত্ববোধ এক সময় হয়ত এভাবেই জেগে ওঠে,
চলুক।
শামীম চৌধুরী
মানুষ যখন তার অতীত বা বর্তমান কর্মের অনুশোচনায় আসে তখন সে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে চায়। ফারাহ’র দুঃসময়ে সেটাকে আনতে চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ হেলাল ভাই গল্পটা পড়ার জন্য।
মাছুম হাবিবী
চলবে মানে একদম দৌড়াবে দাদা অনেক সুন্দর লিখেছেন।
শামীম চৌধুরী
দাদাভাই, হুইল লাগাতে হলে বলবেন। সেটাও লাগিয়ে দেবো। অনেক অনেক ধন্যবাদ গল্পটা পড়ার জন্য।
তৌহিদ
মা ডাকের মধুরতার তুলনাহীন। মানুষের আবেগীয় দিকগুলির বহিঃপ্রকাশ ঘটেই একসময়।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
শামীম চৌধুরী
মা’ হচ্ছে স্বর্গীয়। পরের পর্ব পড়ার নিমন্ত্রন দেয়া হলো তৌহিদ।
আরজু মুক্তা
খারাপ ভালো নিয়ে মানুষ।।মনুষ্যবোধ জাগ্রত হোক সবার মাঝে।
শামীম চৌধুরী
জ্বী আপু, মনুষ্যবোধ যেন লোহার শিকের বন্দী না হয়।
শিরিন হক
আগের লেখা পড়া হয়নি। তবে এটুকু পড়ে খুব ভালো লাগলো। মানুষের মনুসত্য বোধ টিকে আছে কিছু মানুষের মাঝে তাইতো আমাদের সমাজ আজো টিকে আছে। সকলের মাঝে মনুসত্যের প্রকাশ ঘটুক।
শামীম চৌধুরী
শিরিন আপু অনুরোধ রইলো আগের পর্বগুলো সময় হলে পড়ে নেবার জন্য। দোয়া করবেন আমার জন্য।
হাফেজ আহমেদ রাশেদ
মানবিকতার অভাব থাকলেও একদম মনুষ্যপদবাচ্য মানুষ কম হলেও আছে এখনো,বেশ ভালোই চলছে লেখাটি
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ রাশেদ ভাই। আপনার মত উৎসাহ সহকারে পাশে পেলে কার না ইচ্ছে হয় লেখার জন্য। দোয়া করবেন।
মনির হোসেন মমি
স্রষ্টার লীলাখেলা বুঝা বড় দায়।কাকে কখন কোন অবস্থায় রাখবেন শুধু তিনিই জানেন।গল্পের শেষে এসে শরিরের পশমগুলো দাড়িয়ে গেল।বউ শাশুড়ীর এমন মিল থাকারই কথা কিন্তু অধিকাংশ বউয়েরা শাশুড়ীকে সহ্য করতে পারেন না।যাক গল্পে শেষ দৃশ্যের পট আমাকে মুগ্ধ করল।চলুক।
শামীম চৌধুরী
আপনাকে লেখার শেষ অংশ মুগ্ধ করায় আমি স্বার্থক। ভালো থাকবেন। পাশে থাকবেন।
সঞ্জয় মালাকার
শ্রষ্টার লীলা খেলা বুঝা বড় দায়, কখন কাকে কিভাবে রাখেন তা তবনি নিজেই জনেন।
পড়ে বেশ ভাল লাগলো দাদা
আপনাকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
শামীম চৌধুরী
আপনার জনয রইলো শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
ছবিটি দেখে চমকে উঠেছি। মনে হয়েছিল গল্পটি একদম সত্যি। অবশ্য গল্পের সত্যতা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশায় আছি। কাল্পনিক গল্প এতোটা হৃদয় ছোঁয়া হয়না।
পরিবেশ পরিস্থিতি আমাদের আপন-পর বুঝতে সাহায্য করে। অনেকে বুঝতে পেরে বাকি জীবন সুন্দর ভাবে গঠন করে নেন। অনেকে করার সময় পাননা।
ফারাহ’র সুস্থতা কামনা করি। বানুর নিবিড় পরিচর্যা ও সকলের চেষ্টায় সে সুস্থ জীবন ফিরে পাক।
পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায়। শুভ কামনা 🌹🌹
জিসান শা ইকরাম
যাক ফারাহর বোধ জাগ্রত হলো অবশেষে,
গল্পের উপস্থাপনা গল্পকে বাস্তবের মত করেছে,
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ জিসান ভাই। পরের পর্ব পড়ার জন্য নিমন্ত্রন রইলো।