খুব সকালেই আব্বার ফোন !!
তরী একলাফে বিছানায় উঠে বসলো । ফোন রিসিভ করতেই আব্বা মুখস্তর মতো করে বলতে থাকে “ তরী তুই দুপুরের বাসেই বাড়ি চলে আয় , তোর দাদির শরীর ভালো না “
তরী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ।
গত কাল রাতেই দাদির সাথে কথা হয়েছে তার ।দাদি দিব্যি ভালো আছেন !!
সম্ভবত , বাবা কোনো নতুন পাত্র পেয়েছেন , তরীর বিয়ের জন্য ! তাই জরুরি তলব।
তরী:- দাদির শরীর খারাপ, তো ডাক্তার দেখাও , আমি যেয়ে কি করবো !!
আব্বা হুঙ্কার দিয়ে উঠলো ফোনের অন্য প্রান্তে
“ তোমাকে আসতে বলা হয়েছে চলে এসো … এতো কথা কি জন্যে !!!
তরী কিছুটা সংকুচিত হয়ে বললো , আসতে বলছো আসবো … তুমি চিৎকার করছো কেনো …. মোবাইল টাওয়ার হেলে পড়বে তোমার চিৎকারে ।
এই বলে দ্রুত ফোন কেটে দিলো !!
নয়তো আব্বা সত্যি মোবাইল টাওয়ার হেলিয়ে ফেলবেন চিৎকার করে !!!
আব্বার এই হুংকারের পর বসে থাকা যায় না !!
দাদির সাথে কথা বলে জেনে নিলো তরী, আব্বা প্রায় বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন , ছেলে দেখতে দিলিপ কুমারের মতো !! দাদির চোখে সুন্দর মানেই দিলিপ কুমার !!
দাদিকে তরী বললো, আমার পছন্দ রানভির কাপুর … দিলিপ কুমার না !
দাদি নাক ঝারতে ঝারতে, বললো হের তো পেট মরা , কাঙ্গাইল্লা চেহারা !! তোর পছন্দ খারাপ ।
ফোন কেটে দিলো তরী শান্ত ভাবে ।বুঝলো দাদিও এইবার বাবার দলে ।
দুপুরের বাসে তরী ঢাকা থেকে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে বাসে উঠলো ।
তরী ইডেন কলেজে অনার্স পড়ছে । গাজিপুরে বাসা তাদের । ২ ভাই বোন তারা । ছোট ভাই ক্লাস সেভেনে পড়ে । মা একটা স্কুলের শিক্ষক ।
তরীর বাবা , অল্প আয়ের সঠিক মানুষ !! কোনো অন্যায় করে না , কাউকে করতেও দেয় না । মিথ্যা কথা সহ্য করতে পারেন না ।তরীদের পরিবারে তার কথাই শেষ কথা ।
বাড়ি পৌছে বাসার পরিস্হিতি বোঝার জন্য তরী ছোট ভাইয়ের সামনে দিয় ২/৩ বার যাওয়া আসা করল !! বদের ওস্তাদ বই নিয়ে মহা ব্যস্ত ,বই থেকে চোখই সরায় না !!
নিজ ঘরে ফিরে তরী মোবাইলটা হতে নেয় জয়ন্ত কে ফোন করবে , জয়ন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র । তরীদের বাসার দুই বাসা পরই জয়ন্তদের বাসা ।সেও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থেকে পড়ালিখা করছে ।তরীর প্রেমিক !!
জয়ন্তর দিকে তাকালেই তরীর মনে হয় , জয়ন্ত কোনো কারণে ভয় পেয়ে আছে । সব সময় সংকুচিত হয়ে থাকে আসন্ন বিপদের ভয়ে । এক মাত্র বই এবং লিখা পড়া তার
স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা ।
রিং হতেই জয়ন্ত ফোন রিসিভ করে এবং ভয় পাওয়া গলায় বলে হ্যালো তরী!!!
তরী হাই তুলতে তুলতে বলে “ এই শোনো আমার তো বিয়ে বুঝলা , কিছু টাটকা ফুল লাগবে , তুমি সাহাবাগের মোড়ে চলে যাও ।”
তখনই তরীর বাবা প্রচন্ড নরম সুরে তরীকে ডাকে !!
যে ডাক বাসার সামগ্রিক আবহাওয়ার সাথে যায় না !!
তরী বেশ ঘাবড়ে যায় বাবার এই রকম ডাকে !!
আস্তে আস্তে বাবার ঘরে উঁকি দেয় তরী———
সেখানে বাবা , মা এবং সীডনিতে বসবাসরত বাবার চাচাত ভাই , করিম চাচা এবং চাচি বসা !
করিম চাচা কখন এলেন !! উনি তো থাকেন সিডনি তে !!
কিছু বোঝার আগেই আব্বা বললেন অভদ্রের মতো দাড়ায় আছো কেন !! চাচা চাচিকে সালাম কর !!!
তরী থতমত খেয়ে সালাম করতে যেয়ে টেবিলে বাড়ি খেয়ে চায়ের কাপ উল্টে ফেলল। এবং তখনই খেয়াল করলো টেবিল ভর্তি দোকানের হরেক রকম নাস্তা !!!
যেখানে আব্বা , বাসায় দোকানের খাবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন ।
লজ্জা পেয়ে আম্মার দিকে তাকাতেই তার সর্পিল চক্ষু বানের কবলে পড়ো তরী।
চাচি উঠে এলো
থাক মা , তোমার আর লজ্জা পেতে হবে না । আপনারা থামুন তো ভাই সাহেব !! মেয়েটা ঘাবরে গেছে ।
চাচা চাচীকে কেনো সালাম করতে হলো , তরির মাথায় ঢুকছিলো না বিষয়টা!!
চাচি বললেন তরী মা কে আমার খুব পছন্দ হয়েছে ।
তরীর আব্বা আম্মা এক সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলেন ।অন্দর বাড়িতে ধুপ ধাপ আওয়াজেই বোঝা গেলো ছোট ভাই শয়তানটা ঘাপটি মেরে ছিল দরজার পাশেই !! সে খবর রটাইতে প্রস্হান করলেন !!
চাচা চাচি বিদায় নিয়ে চলে গেলেন । এর মাঝে কি সব কথা হচ্ছিল তরীর মাথায় কিছুই ঢুকছিলো না !! তরী শুধু ভাবছিলো চাচি কখন তার হাতটা ছারবেন !! আর তরীর চোখে ভাসছিলো ,ছবিতে দেখা চাচা চাচির বিশাল আকারের পুত্র ।
চাচিরা যেতেই বাবা বললেন তরী আগামী শুক্রবার তোমার বিবাহের দিন ধার্য করা হইছে , বলো আলহামদুলিল্লাহ !
আব্বা উত্তেজিত হলে গম্ভির ভাষায় কথা বলেন ! তরী মিনমিন করে বলার চেষ্টা করলো ,আব্বা আমি আরো পড়তে চাই ….. ন
বাবা দাঁত মুখ শক্ত করে কিড়মিড় করে বললেন–তোমাকে পড়তে মানা করছে কে ?? সিডনি যেয়ে পড়বা ।
বুঝলাম বিশাল দেহের অধিকারী চাচাতো ভাই হাবিবের সাথে বিবাহ ঠিক করছেন আব্বা ! দাদি তারে কেমনে বললো দিলিপ কুমার !!!
বললাম আব্বা হাবিব ভাইরে আমি বড় ভাইয়ের মতো দেখি , আপনে ছোট বেলায় তারে হাবু বাবা বলতেন !!
।আব্বা তেড়ে এলো আমার দিকে ,এত সাহস মুখের উপর কথা বলা কবে থেকে শিখলা?
আমি এক দৌড়ে নিজ ঘরে !!
বাবা এখন অস্থির ভাবে ঘরের এক মাথা থেকে অন্য মাথায় যাবেন ।খানিক পর পর পানি খাবেন !! আম্মা ফোঁস ফোঁস করে বলতে শুরু করলেন,
তরী তুই বিয়েতে মত দে , নইলে মানুষটা হার্টএট্যাক করবে।আমি ছোট দুধের বাচ্চারা নিয়া কোথায় যাবো ??
তরী :- আম্মা তুমি এইটা কি বলো ? রানা ক্লাস সেভেনে পড়ে , ও কেমনে দুধের বাচ্চা হয় ??
আম্মা হাতের স্টিলের গামলা জোড়ে আছার মারলেন এবং নাকি কান্নার আয়োজন শুরু করলেন ।
আব্বা একা একাই বলতে লাগলেন , এমন ছেলে পাওয়া ভগ্যের বিষয় । আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে !! সিডনি থাকে ইন্জিনিয়ারিং পড়ে !! কত হাই প্রফাইলের ছেলে !! মাশাআল্লাহ।
তরী বললো ছেলে দেখতে হাতির মতো ।
বাবার মুখ কালো হয়ে গেলো। চেচিয়ে বললেন সোনার চামচ বাঁকাও ভালো।
কিছু সময় পর সবাই সরে গেলে , জয়ন্তকে ফোন দিলো তরী
রিং হওয়ার আগেই
জয়ন্ত :- হ্যালো , তরি তুমি তখন মজা করছিলা ?? তাই না !!
তরী:- , মজা করবো কেনো?? আমার বিয়ে কি মজার বিষয় ! মাশাল্লাহ বিবাহের পর সিডনি যাওয়া কনফার্ম । বড় উরোজাহাজে যেতে পারবো , পাত্রের স্বাস্হ্য সামান্য ভালো তো , সে বড় প্লেন ছাড়া উঠে না । ছোট প্লেনে রিস্ক থাকে ।
বেচারা এমনি ভীতু এ সব শুনে বললে , একটু লাইনে থাকো ।
তরী :- কেনো ? কি কাজ তোমার ??
জয়ন্ত :- পানি খাবো !!
তরী বুঝতে পারছিলো জয়ন্ত কোন লেভেলে ঘাবরে গেছে !!
কয় গ্লাস পানি সে খেয়েছে আল্লাহ জানে , পাক্কা ৪ মিনিট পর বলে , এখন আমরা কি করবো ?? পালিয়ে যাবো??
তরী :-হুমম পালানো যায় । বুদ্ধি মন্দ না !!
জয়ন্ত আঁতকে উঠলো !! বলে , কি ভাবে পালাবো ? পরশু থেকে এক্সাম।
তরী :- হুমমম . তাহলে তুমি মন দিয়া এক্সাম দেও আমি বরং সিডনি যাওয়ার জন্য লাগেজ গুছাই।
জয়ন্ত হরবর করে আতঙ্কের সাথে বললো– না, না প্লিজ।অল্প ক‘টা দিন শুধু ধৈর্য্য ধরো। আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলবো।
এবং তার গলার কাপন মোবাইলেই টের পাওয়া গেলো !!
তরী :- কবে কথা বলবা??
জয়ন্ত :- কাল, না মানে পরশু … আচ্ছা কবে কথা বলবো বলো তো ?
তরী :- তুমি বরং পন্জিকা দেখো , কবে কথা বলার শুভ তিথি আছে ।
পর দিন চাচা চাচি তাদের হস্তি সমতুল্য পুত্র এবং আরো একগাদা মানুষ জন সহ তরীকে দেখতে এলো । হয়ে গেলো আংটি বদল ।
ছেলেকে পছন্দ হয় নি তরীর । ছেলে তরীকে দেখবে কি , টেবিলে সাজানো নাস্তা পানির দিকেই তার আকর্ষন অধিক ।
তরী বললো, , ভাইয়া কোন খাবারটা খাবেন ? তুলে দিবো ?
সবাই তরীর এহেন কথায় নড়েচড়ে বসলো । পাত্র নিজেও চোখ ফেরালো খাদ্য দ্রব্য থেকে ।এবং নিজের মাশাআল্লাহ টাইপের দেহটা সামান্য সংকুচিত করতে চাইলো বলে মনে হলো ।
পরদিন বিকালে জয়ন্তর আসার কথা , তরী বারান্দায় অপেক্ষায় আছে, বাসার সামনে হঠাৎ একটা রিকশা থামলো এবং কচ্ছপের মতো জয়ন্তর ঘাড়টা রিকশা থেকে বের হয়ে এলো ।
তরীর আব্বা ছাদে ছিলেন , রানা নিচে বল খেলছিলো,।
আব্বা ছাদ থেকে , বাজখাই গলায় ,
“ এই পাজি ছেলে , কি করো এই খানে ?
বাকি কথা উচ্চারিত হওয়ার আগেই বাসার সামনের রিকশা এবং সাথে জয়ন্তর ঘাড় সব নাই হয়ে গেলো !!
আব্বা তখনও বলেই চলেছেন ,
তোমাকে না বলেছি বাসার সামনে বল খেলবে না , জানালার গ্লাস ভাঙ্গবে !!
রাতে জয়ন্ত ফোন করে করে বললো
:- তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম, তোমার বাবা আমাকে দেখেই চিৎকার করে উঠলো , আংকেল কি সব জেনে গেছেন আমাদের কথা ??
তরী চিবিয়ে চিবিয়ে বললো– আব্বা তোমাকে না রানাকে বকছিলো , তুমি কেনো পালিয়ে গেলে !!
জয়ন্ত বেশ স্বস্তি পেলো মনে হলো , বললো ওহ আচ্ছা ! তাই বলো ।
তরী :- ও আচ্ছা মানে ?? তুমি কবে কথা বলবা!! আমার বিয়ের পর ??
জয়ন্ত: না না , তা হতে যাবে কেন , কালকেই বলবো
তরী টের পেলো জয়ন্তর গলায় পানি নাই সাহারার হাহাকার গলা জুড়ে।
পরদিন জয়ন্ত আবার আসলো। কলিংবেল চাইতেই আব্বা চিৎকার করে উঠলো ,,,
কে ……. কে দরজায় ….
জয়ন্ত উর্ধ্বশ্বাসে পালালো।প্রচন্ড ভয় পায় সে আব্বাকে ।
ছোট বেলায় বল খেলতে যেয়ে তরীদের জানালার গ্লাস ভেঙ্গে তরীর আব্বার হাতে কানমলা খায়েছিল বেচারা !!
এখনও আব্বাকে দেখলেই সে নিজ কানে হাত রাখে।
ভয়ে বা আতংকে
বাচ্চা হাতির সাথে বিয়ে ঠিকঠাক।
সে তরীকে ফোন করে , কথা বলে ।
জানতে চায় , তাকে তরীর পছন্দ হয়েছে কি না ।
তরী: ভীষন পছন্দ হইছে আপনাকে ভাইয়া, ছোটখাটো জিনিস আমার কোনো দিন ভালো লাগে না , এই যেমন আমি নরমাল বাসে উঠি না , ডাবল–ডেকার বাস আমার প্রিয় !!
হাবিব চুপ করে রইলো , বুঝতে চেষ্টা করছিলো তরী সত্যি বলছে নাকি মজা করছে!!
জয়ন্ত রাতে ফোন দিলো ।
ওঁকে বিয়ের তারিখ জানালো তরী।
জয়ন্ত প্রায় দিশাহারা গলায় বললো
“ তুমি বিয়ে করলে আমি মরে যাবো “
তরী :- ভালো দেশে মিনমিনা জনগণ কমবে ! সাবধান সুইসাইড নেটে আমার নাম লিখবো না ।
জয়ন্ত প্রায় কেঁদেই। ফেলল।
জয়ন্ত :-তরি আমাকে আরেকটু সময় দেও। তুমি বিয়েটা আটকাও।
তরী :- আমি করে বিয়ে আটকাবো? আমার কি বাল্য বিবাহ হচ্ছে? বাল্য বিবাহ হলে থানায় যেয়ে পুলিশের কাছে বিচার দিতাম ।
জয়ন্ত :-আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলবো।
তরী:- কবে সেটি ? বাবার গলা শুনলেই ছুটে পালাও কেনো?
জয়ন্ত বড় নিশ্বাস নিয়ে বললো কালকে সকালে সত্যি সত্যি কথা বলবো।
গত দুই দিন ধরে ময়লার গাড়ির লোক ময়লা নিতে আসছে না । বারান্দার দিকে যাওয়া যাচ্ছে না গন্ধে। বিয়ে বাড়ি বলে কথা , লোকজন আসছে । এর মধ্যে ময়লার স্তুপ । তরীর আব্বার বর্তমান টেনশন হলো ময়লা । তিনি সবাইকে বলে রেখেছে ময়লাওয়ালা আসলে সে নিজে কথা বলবে।
সকালে কলিংবেল বাজতেই …..
আব্বা : ঐ যে নবাবজাদা আসছেন মনে হয় , কেউ দরজা খুলবি না , ওর সাথে আমি বুঝবো আজকে …
জয়ন্ত দ্বিক–বিদ্বিক ছুটে পালালো।
তরীর আব্বা চিৎকার করে বলতে লাগলেন–তোরে পাই নবাবজাদা, ছাল তুলে ফেলবো, টাকা নিয়ে যাস ময়লা মিস না !!!
জয়ন্তর ২৩ টা মিসকল মোবাইলের স্ক্রিনে কান্নাকাটি করছে . তরীর মন খারাপ !! কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না ।
তবে ২৪ নং কলটা রিসিভ করলো তরী…..
তরী, তুমি মন খারাপ করো না আমি আংকেলের সাথে কথা বলবেই । রাত জেগে আমি সব কথা লিখে ফেলেছি !! মুখস্তও করে ফেলেছি সব কথা !
তরী শান্ত থমথমে গলায় বললো আর ৫ দিন পর বিয়ে আমার , তোমার দাওয়াত থাকলো। খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নিও।
বলে ফোনটা কেটে দিলো তরী। এবং সিধ্বান্ত নিলো জয়ন্ত সাথে আর কথা বলবে না।
আকাশ জোড়া বিষন্নতা তার মনে।
পরদিন তরীর আব্বা খুব গম্ভির ভাবে পায়চারি করছেন !! হাতে একটা কাগজ ।আব্বাকে দেখে মায়া লাগে তরীর।
নিজেই এগিয়ে গিয়ে বললো ।
:- বাবা তুমি টেনশন করো না , তুমি আমাকে ভালো বিয়ে দিচ্ছো । আমার মন ভালো !!
বাবা চিৎকার করে উঠলেন !
কে তোমাকে বলেছে পাকামো করতে?? কোনো বিয়ে হচ্ছে না !
তরী নিজ কানকে বিশ্বাস করতে পারে না !! কি বলছে আব্বা !!!
আব্বা :- ঐ হারামজাদা সিডনিতে হোটেলে কাজ করে !!
আমাদের মিথ্যা বলেছে সে ইন্জিনিয়ারিং পড়ে । হারামজাদা ইন্টার ফেল !!
কত বড় সাহস আমাকে ঠকায় !
বলে আব্বা কাঁপতে লাগলেন !
তরী দৌড়ে গিয়ে আব্বা কে ধরলো । আব্বা তুমি শান্ত হও , তোমার প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে ।
চেচামেচি শুনে বাড়ির সবাই এসে জড় হলো আব্বার ঘরে।
আব্বা একটু শান্ত হয়ে জানালেন, তিনি খোঁজ নিয়ে জেনেছেন ছেলে পক্ষ একাধিক মিথ্যা কথা বলেছে ছেলে পক্ষ। তাই বাবা বিয়ে ক্যান্সেল করে দিয়েছেন।
দাদী বসে পরলেন সোফায় , আচঁল দি্য়ে চোখ মুছতে শুরু করলেন ।
সাথে সাথে তরীর আম্মা তার বিখ্যাত নাকি রান্না শুরু করতে যাচ্ছিল! আব্বা তীব্র ধমক দিয়ে উঠলেন!!
কান্নার কি আছে বিয়ে ভেঙ্গেছে তো কি হয়েছে , বিয়ে ডেট মতোই হবে ।
তরী আতকে উঠলাম!!
কি বলছে আব্বা এসব ,
আব্বা :- মুখ কালো করে বললেন, তরী জয়ন্ত কে খবর দেও । ওর বাবা মা কে নিয়ে আসতে বলো ।
তরীর প্রায় অজ্ঞান হওয়ার অবস্হা । বাবা জয়ন্তর কথা জানলো কি করে !!!
আব্বা:- গাধাটা গতকাল বাজারে যাওয়ার পথে, আমার হাতে একটা Application ধরায় দিয়ে উল্টা দৌড় দিতে যেয়ে এক রিকশার উপর যেয়ে পরছে , হাত পা ছিলে একাকার অবস্হা। পরে ওরে তুলে ওদের বাসায় দিয়ে আসলাম ।
তরী হা হয়ে শুনছিলে , তারপর বাবার হাতের কাগজটার রহস্য বুঝতে পারলে তরী।
পূর্বে ঠিক করা তারিখেই জয়ন্তর সাথে তরীর বিয়ে হয়ে গেলো ।বিয়ের দিন খাবার টেবিলে বাবাকে আসতে দেখে জয়ন্ত এক উঠে দাড়াতে গিয়ে বোরহানের গ্লাস ফেলে দিলো তরীর গায়ে !!
সারা গায়ে বোরহানি মেখে তরী শশুর বাড়ি প্রবেশ করলো।
১৫টি মন্তব্য
তৌহিদ
শেষের দিকে পড়তে গিয়ে হাসতে হাসতে শেষ!! যাক তবুও তরী জয়ন্তের সাথে ঘর বাঁধলো।
ভালো লিখেছেন আপু।
রোবায়দা নাসরীন
আন্তরিক ধন্যবাদ ।
আচ্ছা লিখাটি কি ম্যাগাজিনের জন্য বেশি বড় হয়ে গেলো??
তৌহিদ
না, ব্লগের বড় লেখা বলে কিছু নেই আপু। মানসম্মত লেখা যত বড়ই হোক পাঠক ঠিকই পড়ে। লেখার মেইন ফ্লো ঠিক রাখবেন দেখবেন পড়তে ভালো লাগছে। অবশ্য এক, দুই, তিন এভাবে পর্ব করে দিলেও সুন্দর লাগে দেখতে।
মনির হোসেন মমি
হা হা হা ঘটনার শেষ চমক ঐ চিঠি।মাঝে মাঝে তরী বা জয়ন্তুর অপ্রস্তুত ঘটনাগুলো হাসালো বেশ।বানানগুলো আরো একটু ঠিক করে নিন।গল্প পছন্দ হইছে।
রোবায়দা নাসরীন
আন্তরিক ধন্যবাদ ।
মোঃ মজিবর রহমান
রোবায়দা নাসরীন আপু, অনেক অনেক হাসিটা পেলাম মন ভরেও হাস্লাম অনেক দিন পর। আরো এই রকম লেখা চাই। চাই।
রোবায়দা নাসরীন
গল্পটা পড়ে হাসতে পেরেছেন । সেটাই স্বার্থকতা।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন।
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা, দারুন মজা পেলাম এমন গল্পে।
শেষ দিকে এসে তো ভাবলাম, ছোট হাতির সাথে তরীর বিয়েটা হচ্ছে।
ঘটনা হঠাৎ বাঁক নিয়ে জয়ন্তরের সাথেই হলো।
এই বিয়ের পরের কিছু ঘটনা নিয়ে আর একটা গল্প দিন তো।
চমৎকার আপনার লেখার হাত।
উপস্থাপনায় মুগ্ধ হলাম।
রোবায়দা নাসরীন
আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনাদের মন্তব্য প্রেরণা জোগায় ।
রাফি আরাফাত
সারা গায়ে বোরহানি মেখে তরী শশুর বাড়ি প্রবেশ করলো।আহা আহা কি মজা কি মজা।।হিহিহি
রোবায়দা নাসরীন
ধন্যবাদ অনন্ত।
ছাইরাছ হেলাল
আপনার গল্প বলার অদ্ভুত অথচ শালীন সৌন্দর্য-প্রবাহ বিদ্যমান।
টুইস্ট টি খুব সুন্দর ছিল, এ ভাবে শেষ হবে এপ্লিকেশন দিয়ে হাত-পা ছিলে-ছুলে রিকশার ধাক্কায় াগে বুঝতে পারিনি।
জয়ন্ত চরিত্রটি ফাইন, ওর উপর কর্তৃত্ববাদী আচরণ দেখতে ভালই লাগে।
আপনি গল্প লিখুন নিয়মিত।
ধন্যবাদ, লেখা চালু থাকুক।
রোবায়দা নাসরীন
আন্তরিক ধন্যবাদ ।
গল্পটা ভাললেগেছ্ জেনে কৃতজ্ঞতা বোধ করছি।
শামীম চৌধুরী
জয়ন্তের জীবন স্বার্থক করে তুললেন তরীকে ঘর বাঁধিয়ে।
দারুন লিখেছেন আপু।
সঞ্জয় মালাকার
দারুণ আনন্দ পেলাম, আহা্ কি মজা কি মজা
শেষ দিকে এসে ছুট হাতিটার সাতে তরীর বিয়ে হচ্ছে।