গাছের পাতা ছিঁড়ে রান্না বাটি খেলা দিনগুলো পার করে, হঠাৎই একদিন মনে করিয়ে দ্যায়, পাড়া প্রতিবেশী বা আত্মীয় স্বজন —-মাইয়া বড় হইয়া গ্যাছে, এহন আর বাইরে, মাঠে, বাগানে খেলতে দিওনা “।
বাসার সামনের মাঠ কিংবা একটু দুরে সহকারি পুলিশ সুপারের অফিস মাঠ, কোনোটাতে আর পাড়ার মেয়েরা দল বেঁধে গোল্লাছুট, দাঁড়িয়া বান্দা, ছি-বুড়ি,কানামাছি খেলতে আসেনা। গার্লস স্কুলের প্রাচীর ঘেরা আঙিনায় আপত্তি নেই। তবুও অনুমতি পেতে কাঠখড় পোড়াতে হয় অনেক। এখন ঘরে বসে লুডু, কেরাম, পাঁচগুটি, খাতায় ছক কেটে চোর পুলিশ খেলা চলতে পারে। বাইরে মাঠে ময়দানে ড্যাং ড্যাং করা যাবেনা।
বিকেলটা এলেই সদর গেটটা ধরে শুন্য মাঠটার দিকে তাকিয়ে, কৃষ্ণচূড়া গাছটার নীচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের খোঁজা। —ওরা কই? বনা আর লাভলী’কে দেখা যাচ্ছে….. ওরা উল্টো দিকে কই যায়? পাশাপাশি বাসা বনা’র রাস্তার উল্টোদিকে লাভলী’র বাসা। দক্ষিন দিকের রাস্তা ধরে হাঁটছে একসাথে। দৌঁড়ে ছুটে গিয়ে ওদের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্ন করা ——- তোমরা কই যাও ওদিকে? —-“আমরা বই পড়তে যাই। =বই পড়তে মানে? কোথায় কি বই? == গল্পের বই, পাবলিক লাইব্রেরী’তে। == এইটা কোথায় কতদুর?? = ওইতো টাউন হলের নীচে!! যেন বিকেলটা কাটাবার মোক্ষম এক উপায় হাতের নাগালে পেয়ে যাওয়া। ছোটবেলা থেকেই ক্লাশের বই থেকে, আগ্রহ বেশি ছোটদের গল্পের বই, রুপকথা, কল্পকাহিনী’র প্রতি। খুশিতে চনমনিয়ে ওঠা চোখে জিজ্ঞেস করা = আমাকে নেবে? বনা=আসতে পারো। ওখানে সবাই যেতে পারে। =কোনো নিয়ম আছে নাকি? বনা=সদস্য হতে হয় আগে।=সেটা কিভাবে? বনা=আগে চলো! গেলেই বুঝতে পারবে।
কথা বলতে বলতে, গোপাল কাকা’র দোকান, মনি’দের বাসা পেরিয়ে ছোট্ট খালের পাড় হয়ে আদর্শ (পৌরসভা মাধমিক বিদ্যালয়)স্কুল, থানা কলোনী পার। বাঁয়ে মোড় নিয়ে টাউনহলের একেবারে শেষ পশ্চিম কোনার নিচ তলায় পাবলিক গ্রহন্থাগার। টাউন হলের পেছনেই খাল। খালের ওপাড়ে বাড়িঘরের ওপাশেই পৌরসভা ভবন দেখা যায়। লাইব্রেরির ভেতরে প্রবেশ করতেই তাপসদা’র উচ্চারন তাপস দাদা== এ কেডা? নতুন সদস্য? দে আগে পাঁচ টাকা দে, তারপর খাতায় নাম লেখ, তারপর বই নিয়া পড়তে বস্। ==রাত্রে প্রেসক্লাবে যাবেননা টেলিভিশন দেখতে? তখন আব্বা’র কাছ থেকে নিয়েন। তাপস’দা = এইতো!! দিলিতো ফাঁসাইয়া!!! টাউন হলের দোতলায় দক্ষিন দিকের কোনায় প্রেসক্লাব। সেখানে রোজ তাপস’দা টিভি দেখতে যায়। মাঝে মাজে যাওয়া হয় চাচা’দের সাথে। সেজন্যই তাপস’দাকে চেনা। তাপস’দা রোজ বাসার সামনে থেকেই আসাযাওয়া করেন।
কিছুদিন যাওয়া, বই পড়া চলার পর তাও বন্ধ হয়ে গেলো। মেয়ে আরো বড় হয়ে গেছে। ছেলে ছোকরারা এখানে সেখানে আড্ডা দেয়। টাউন হলে নানান সাংস্কৃতিক সঙ্ঘটন আছে। ওখানে অনেক স্কুল কলেজের ছেলে ছোকরাদের আনাগোনা। আর যাওয়া যাবেনা।
চলবে ——–
১৯টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
ছোটবেলার সুন্দর স্মৃতিগুলো একে একে পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। বই পড়ার নেশা সৃষ্টির পেছনে তাপস দাদাদের অনেক হাত। এখনকার প্রজন্ম ডিভাইসের কারনে এই সুন্দর অনুভূতি থেকে অনেকটাই বাইরে।
আপনি অনেক কিছু মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
চলুক এই স্মৃতিচারণ।
বন্যা লিপি
আপনাকে অস্ংখ্য কৃতজ্ঞতা, এগোতে চাইছি স্মৃতী নিয়ে, সহযোগীতায় সাথে চাই।শুভেচ্ছা শুভ কামনা। 🌺🌺🌹🌹
নীরা সাদীয়া
এভাবেই শেষ হয়ে যায় একটি কন্যাশিশুর জীবন। তারা বড় হয়, বেড়ে ওঠে, সবটাই অন্যের ইচ্ছায়।শিশুকালেই ইচ্ছেগুলোকে মাটিচাপা দিয়ে বেড়ে উঠতে হয় একজন নারীকে! কী আজব এই সমাজের নিয়ম কানুন! সারাক্ষণ পুরুষ নামক প্রানিকে ভয় পেয়ে কাটিয়ে দিতে হয় একটা জীবন।
অনেক ভালো এগিয়ে চলেছে লিখা।
আরো লিখুন।
বন্যা লিপি
সমাজ,সংস্কৃতি কিভবাবে যে মেয়েদের /কন্যাশিশুদের দেখতে চায়!!!! দেখেছি, জেনেছি, দেখতে দেখতেই একটা জীবন ফুরিয়ে যায় সবার….. দেখার শেষ হবেনা। সাথে পেলে এগিয়ে যাবে লেখা, লেখার গতি নিয়ে। অনেক অনেক শুভেচ্ছা, শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
এ দেখছি একটি জীবন, ক্রমাগত বেড়ে ওঠা, বড় হওয়া।
তবে পড়ার ব্যাপারটি যুক্ত হয়ে বেশ সুন্দর একটি অনুষঙ্গ এসে গেছে জীবনের সাথে, এটি কিন্তু দারুণ।
সবার এমন হয় না।
বন্যা লিপি
লেখায় প্রকাশিত হবে আরো কিছু। যেটুকু জানার বাইরে দেখার অদেখা ছিলো, আশা করি দেখা হবে ইনশাল্লাহ্। কৃতজ্ঞতা।
সাবিনা ইয়াসমিন
মেয়ে বড় হয়ে গেলে পাড়া–প্রতিবেশিদের নজরেই আগে পরে। অসুখে–খুশিতে–আনন্দে সব কিছুতেই যেনো তারাই নীতি নির্ধারনীর ভূমিকায় থাকেন। বেশির ভাগ বাঙালী মেয়েদের কিশোরী বেলার গল্পগুলো এখানে এসে থমকে যায়! মেয়ে বড় হয়ে গেছে, তার গল্প বলা নিষেধ ছিলো। অথচ গল্পের শুরু হয় তখন থেকেই…
চলুক, ভালো থাকো ভালোবাসায় থাকো বন্যা ❤❤
বন্যা লিপি
পাড়াপ্রতিবেশীর মতো শুভাকাঙ্খী আর আত্মীয়স্বজনের মতো শুভচিন্তকেরর মতো আর শুভচিন্তক হয়না কোনো কন্যাশিশুর মা’য়েদের ক্ষেত্রে।মা’য়েরাও ঠিকঠাক তেমনই চাইতেন, যেমনটি করে অন্যসবাই সমালোচনা করে, তার বিপরিত করে মেয়েকে বড় করতে। অতীব দুঃশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায়, মেয়েকে কত তারাতারি বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। এমনটা হয়েছে আমারই অনেক বান্ধবী”র সাথে। আজ তারা নানী দাদীও হয়ে গেছেন। সাথে পাচ্ছি। লেখা এগিয়ে চলবে। ভালোবাসায় ভালো থেকো সাবিনা ♥♥
তৌহিদ
আমাদের এই সাউথ এশিয়ান রিজিওনে মেয়েদের যেন অনেক তাড়াতাড়ি বড় বানিয়ে দেই আমরা। বেশিরভাগ পরিবারের ক্ষেত্রেই তাই হয়।
লেখাটি এ যেন প্রত্যেকটি নারীর অন্তরের কথার প্রতিফলন আপু।
ভালো লাগলো আপনি মুক্তচিন্তা করেছেন বলে।
বন্যা লিপি
ঠিক বলেছেন। মেয়েরা ছেলেদের থেকে একটু আগে আগেই বড় হয় সর্বত্র। শুভেচ্ছা রইলো। বাকিটুকুর সাথে থাকুন। দেখা যাক কতদুর যেতে পারি।
তৌহিদ
পাশে আছি☺
জিসান শা ইকরাম
এভাবেই বেড়ে ওঠে বাংলাদেশের প্রায় সব মেয়েরাই,
প্রতিবাদহীন ভাবেই মেনে নেয়, মেনে নিতে বাধ্য করা হয়,
নইলে সমাজে ঝড় ওঠার সম্ভাবনা থাকে,
এই প্রথা অত্যন্ত গ্লানিকর, অবশ্যই অবমাননাকর।
নিজের কষ্টকে লেখায় রূপান্তরিত করলে নিজে হালকা হওয়া যায়,
অসঙ্গতি গুলোও মানুষ বুঝতে পারে, অন্তত জানতে পারে।
শুভ কামনা।
বন্যা লিপি
উজ্বল এক লেখালেখির ইতিকথা শোনাতে এগিয়ে যাচ্ছি, সাথে পাচ্ছি এই বড় অনুপ্রেরনা। শুভ কামনা।
মোঃ মজিবর রহমান
হুম! ছোট্ট বেলার মনের আকাশ নিয়ে যত কিছু করা যেত বড় হলে বাধ আসে, বয়সে, পাড়ার মুরুব্বিদের কাছ থেকে। এই বড় না হলে বুঝি চলে না। !
সমাজে অনেক বাধা আসে তা বাস্তব থেকেই আপু। মুরুব্বিরা সেটা বুঝেই ক্রে হয়ত আমরা অবুঝ তাই মানি আবার বুঝেনারা মানেনা,
বন্যা লিপি
বলতে গেলে সমাজের মেয়ে/কন্যাশিশুদের জন্যই সর্বকালীন মুরুব্বী’দের চোখরগড়ানো বিধিনিষেধটা একটু বেশিই থাকে সবকালে। বোঝানো বা শিখিয়ে আত্মমর্যাদায় বলীয়ান করার কথা মনেও আসেনা কখনো। বরং চাপিয়ে দেয়া মুরুব্বিপনায় কেড়ে নেয়া হয় যাবতীয় শৈশব/কৈশোরিক বাল্যকাল।জ্বলজ্যান্ত চোখের সামনে দেখেছি এরকম বহু প্রতিবাদহীন রগরগে কাহিনী।আপনাকে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা
মোঃ মজিবর রহমান
আপু আমাকেও সন্ধ্যার মধ্যে বাসা য় ফেরে লাগত, বাবা নয় বড় ভাইয়ের নির্দেশ।
মোঃ মজিবর রহমান
তবে গ্রামে বড় হয়েছি বেশি কিছু শিখতে পারিনি।
রিতু জাহান
মানুষের ছেলেবেলা নির্মল নির্মোহ। আমার শৈশবের স্মৃতি খুব মধুর। আমি প্রাণবন্ত এক শৈশব কাটিয়েছি। আমার দুই ছেলে তা পেলো না। হয়তো আমিই সে পরিবেশটা দিতে পারিনি।
সেই সব দিন আমাদের,,,,
বন্যা লিপি
আপনার সাথে শতভাগ সহমত। আমরাই দিতে পারিনি মধুর কোনো শৈশব আমাদের সন্তান’দের কে। ওরা সাঁতার না জেনেও পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি করলো না, ওরা মাটিে চুলাতে রান্না বাটি খেলা কাকে বলে জানেইনা। গাদা গাদা বই বোঝাই করা ব্যাগ পিঠে বইতে বইতে একেকটা মেধার সমন হয়ে উঠছে।