আজ সকালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে সিএনজিতে উত্তরা ৯ নং সেক্টরের বাসায় ফিরছিলাম। জসিমউদ্দীন মোড়ে লাল সিগনাল পড়লো। আমাদের দেশে কেবল সিগনাল হলেই চলে না, সিগনাল মান্য করার জন্য লাঠি হাতে ট্রাফিক পুলিশও দরকার হয়। মাঝে মাঝে ট্রাফিক পুলিশ মুখে খিস্তি সহ হাতের লাঠিও ব্যবহার করেন। ট্রাফিক পুলিশ বাম হাতে লাঠি উঁচিয়ে বুঝাচ্ছেন সবাইকে যে সামনে যেতে মানা। আমার সিএনজি সড়কের একদম বাম পাশে ছিল। বাম দিকে যেতে সিগনালে মানা নেই। সিএনজি ওয়ালা বাম দিকে টার্ন নিতেই আমি বললাম যে আমরা তো সোজা যাবো তুমি বামে যাচ্ছো যে? উত্তরে সে বললো’ অপেক্ষা করেন, দেখেন কি করি আমি।’ এই বলে সে বাম দিকে সামান্য একটি গিয়েই অদ্ভুত ক্ষিপ্রতায় সিএনজিটি ডাইনে কেটে সোজা উত্তরা ৯ নং সেক্টরের দিকেই ছুটলো। বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বললো আমাকে যে সে এমন কৌশলে প্রায়ই ট্রাফিক সিগনাল/পুলিশকে বোকা বানিয়ে সোজা চলাচল করে।
এটি কি আসলেই কৌশল? এটি কি একধরনের প্রতারণা নয়? ট্রাফিক পুলিশের সাথে প্রতারণা করলো সে বাম দিকে যাবার ভান করে সোজা যাবার জন্য।
এটি তো আইনকে অমান্য করাও। ড্রাইভার লাইসেন্স নেয়ার সময় তাকে ট্রাফিক সিগনালের বিষয় প্রাকটিক্যাল এসব শিখানো হয়েছে, লাল বাতি হলে থামতে হবে, সবুজ বাতি হলে চলতে হবে।
দুর্ঘটনাও তো ঘটতে পারতো এমন অবস্থায়। বাম দিক থেকে দ্রুত গতির কোন যান আসলে দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারতো।
আসলে আমরা ছোট খাটো অন্যায় করতে করতে একসময় এটি যে অন্যায় তা ভুলে যাই। প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাত, কোনো কিছু দখল করা অনেকের কাছেই কৌশল হয়ে দাড়িয়েছে। বড় বড় অন্যায়ের মাঝে আমরা আমাদের শিশুকাল হতে বড় হচ্ছি। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে আমরা যা উচিৎ তা দেখতে পাই। বরং অনুচিত কাজে অভ্যস্থ হতে হতে উচিৎ কাজকেই আমরা অস্বাভাবিক মনে করছি।
——————————————————————————
বাসার কাছের মসজিদে এশার আজানের পরে ইমাম সাহেব বয়ান করছেন ” ইসলাম হচ্ছে এমনই শান্তির ধর্ম যেখানে একটি পিঁপড়াও মারা নিষেধ, একটি পাখিও মারা যাবে না, যারা এসব হত্যা করেন, তারা কি এসব সৃষ্টি করতে পারেন? সব কিছুর জীবন দিয়েছেন একমাত্র আল্লাহ। ”
এসব বয়ানেই হয় জনাব, ইসলামের নামে ১৯৭১ সনে এই বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করা হয়েছে, ২ লাখের বেশী নারীকে চরম লাঞ্ছনা করা হয়েছে। আইসিসি ইসলামের নামে মধ্যপ্রাচ্যে অরাজক অবস্থায় সৃষ্টি করে রেখেছে। পাকিস্থানে প্রতি সপ্তাহে বোমা মেরে হত্যা করা হচ্ছে সাধারণ জনতাকে, সিরিয়ায় যা হচ্ছে তাও ইসলামের নামে। বাংলাদেশে কি কম হয়েছে সম্প্রতি? হলি আর্টিজেন হত্যা, বিচারক হত্যা এসবও তো ইসলামের নামেই হচ্ছে।
আমরা কার কথা বিশ্বাস করবো ইমাম সাহেব?
৩১টি মন্তব্য
ইঞ্জা
দুঃখজনক ভাইজান, আমরা আইন অমান্য করতে শিখে গিয়েছি, আইন অমান্য করে দাঁত খেলানোটাই এখন যেন বাহাদুরি।
আবার মসজিদে মসজিদে, ওয়াজ মাহফিলে ইসলাম ধর্মের গুণগান হচ্ছে, ধর্মে কি কি নিষেধ আছে তা বয়ান করা হচ্ছে, ওদিকে এই ধর্মের নামেই পিঁপড়ার মতো মানুষ মারা হচ্ছে, আমার তো ধর্মের উপর থেকেই বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, বলুন কই যাবো?
জিসান শা ইকরাম
যথার্থই বলেছেন ভাই।
আমাদের যাবার কোনো জায়গা নেই এই দেশে।
ইঞ্জা
🙁
জিসান শা ইকরাম
মন খারাপ করবেন না ভাই,
এটিই সহ্য করতে হবে।
ইঞ্জা
আল্লাহ্ আল্লাহ্ ছাড়া আর কি বা করা যায়। 😑
ছাইরাছ হেলাল
অনিয়ম-ই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়ে আছে খাম্বার মত,
আর ধর্মের নাম করে অধর্ম চলে আসছে যুগ যুগ ধরে
কাল দাঁড়িয়ে আছে সাক্ষী হয়ে নীরবে।
জিসান শা ইকরাম
এই অনিয়মের নিয়ম ভাঙ্গার ডাক দেবে এমন কেউ নেই আমাদের দেশে আর,
ধর্মের নামে অধর্ম পুরোই বেঁধে রেখেছে আমাদের।
ছাইরাছ হেলাল
টেস্ট!
জিসান শা ইকরাম
টেস্ট সফল।
মাহমুদ আল মেহেদী
অন্যায়ের প্রতিবাদ করব এ পর্যন্তই শেষ! কিন্তু আর যে কিছু মনে থাকে না প্রতিবাদ করার সময় এলে। ধন্যবাদ ভাই মনের ভিতর আলোড়ন ফেলে দিলেন.
জিসান শা ইকরাম
এসব ছোট খাট বিষয় আমাদের মনকে আপোষ কামী করে ফেলছে অন্যায়ের সাথে।
মাহমুদ আল মেহেদী
ঠিক তাই
জিসান শা ইকরাম
হ্যা মেহেদী -{@
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এ সব আমাদেরই সৃষ্টি।আমরা মুখে বলি এক করি আরেক।আর ইসলাম!সেতো মহান যত দোষ অনুসারিদের ক্ষমতা অর্থের মোহে আমরাই ধর্মকে কলংকিত করছি।লেখাটা ভাল লাগল। -{@
জিসান শা ইকরাম
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
একটা গান শুনেছো নানা?
“চুরি করা মহাপূণ্য, যদি পেতে হয়
এ জগতে বোকারাই সত্যবাদী হয়।”—হ্যাঁ আমরা এমনই। কেউ যদি চুরি যাওয়া টাকা ফেরত দেয়, আমরা অবাক হই। তাকে বাহবা দেই। কিন্তু বলো তো, এতে বাহবা দেবার কি কিছু আছে?
এবারে আসি ধর্মের কথায়। ধর্মই মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে কথা আর বাড়াতে চাইনা। তবে মানুষের একমাত্র ধর্ম মানবতা, সেটাই আজ হারিয়ে গেছে।
জিসান শা ইকরাম
হ্যা শুনেছি।
বাহবা দেই কারন ফেরত দেয়াটা বর্তমানে অস্বাভাবিক, না দেয়াটা স্বাভাবিক।
ধর্মনিয়ে তোর সাথে সহমত পোষন করছি।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা 🌹🌹
মোঃ মজিবর রহমান
আমি মনে করি আমরা অতি স্বার্থপর মানুষ। এই ছোটঘাট বিষয়েও আইন মানতে রাজি নয়। আইনের ও ন্যায়ের স্বার্থে। বিভিন্ন বাসে বা পরিবহনে একই অবস্থা। উলটা পথে যদি ড্রাইভের নিয়ে আপনাকে দ্রত পোছে দেয় আমরা বাহবা দিই কিন্তু অপরাধবোধ মস্তিকে কাজে করেনা! সে ধরমে বলেন আর নৈতিকতায় বলেন।
সুন্দর একটি পোষ্ট ভাইজান।
জিসান শা ইকরাম
আপনার মন্তব্যের সাথে সহমত পোষন করছি।
ধন্যবাদ ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
নিসিদ্ধ কাজের প্রতি মানুষের চরম আসক্তিই এর কারন।যেটা নিষেধ সেটা করতে পেরেছি,সফল হয়েছি এটাই নিয়ম ভংগকারীদের শ্লোগানে পরিনত হয়েছে।নৈতিকতা বজায় রেখে কেউই অনিয়মে থাকতে পারবে না।শুধু সি এন জি ড্রাইভার না,,বড় বড় স্থানে বসে থাকা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ফুটপাতের উপর চলতে থাকা মোটর সাইকেল চালকও নিয়ম ভাংগার সাফল্য থেকে বঞ্চিত হতে চান না।
ধর্মের ব্যাপার স্যার নিয়ে কিছু লিখতে চাইনা।আইডিতে ধর্মপ্রান ইমানদার ব্যাক্তিদের হামলা হজম হবে না।
সাবিনা ইয়াসমিন
ব্যাপার স্যাপার হবে।
জিসান শা ইকরাম
ব্যাপার স্যাপার হবে – তা বুঝেছি।
জিসান শা ইকরাম
তর্ক এবং সমালোচনা যে কোনো ব্লগের প্রাণ,
অবশ্যই করা যাবে।
জিসান শা ইকরাম
নিসিদ্ধ কিছুর প্রতি আকর্ষন সুধু মাত্র আমাদের দেশেই কেন থাকবে? এই মানুষগুলোই যখন বিদেশে থাকে তখন তারা ট্রাফিক আইন ঠিকই মান্য করে। কানাডায় থাকা কালীন এক বাংলাদেশি ভাইর সাথে তার গাড়িতে রাত ২ টায় বাসায় ফিরছিলাম, রাস্তায় একটা গাড়িও ছিলনা অথচ ট্রাফিক সিগনালে ঠিকই দাঁড়ায় সে।
ধর্মের বিষয়ে তেমন কিছু বললে কল্লাই থাকবেনা আমাদের।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাইজান দেশেও মানে ক্যান্টনমেন্টের ভিতর গেলে।
সাবিনা ইয়াসমিন
তর্ক (সমালোচনা) করা যাবে?
রিতু জাহান
আমরা এখন আসলে সব কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমরা প্রতিটা মানুষ কম বেশি অন্যায় করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
আজকেই যেমনঃ কুড়িগ্রামে দুই বাসের চিপার মধ্যে দুইজনে মরতে লাগছিলাম। তিনি কিছুই বললেন না। চুপচাপ পাশ কাটিয়ে চলে আসলেন। তার ক্ষমতা ছিলো দুই বাসকেই টেনে কোর্টে নিয়ে আসার। করে নাই, কারণ, কে ঝামেলা চায়! সত্যি এই প্রতিবাদটাকে আমরা ঝামেলা মনে করে সহ্য করে যাচ্ছি আর নিজেরা প্রতিনিয়ত অন্যায় করে যাচ্ছি।
আর ধর্ম! বর্তমানে ধর্ম ব্যবসায়ীদের জন্য বিষয়ে আর কিছু বলতেও এখন ঘৃণা লাগে। শুধু জানি নিজের ইবাদতটুকু করতে হবে সহিভাবে।
সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া করে। তবে বেড়াজাল নয় কোনো।
জিসান শা ইকরাম
তোমার মন্তব্যের সাথে একমত।
মায়াবতী
বস *** ধর্ম বর্ণ আর মানুষ সব কিছু ই খুব কম্পলিকেটেড লাগে। ^:^
কোনটা সত্য আর কোন টা মিথ্যা কিচ্ছু বুঝি না এখন আর! প্রতিবন্দি হয়ে যাচ্ছি হয়তো।
জিসান শা ইকরাম
হয়ত নয়, আমরা আসলেই এখন সবাই এক ধরনের প্রতিবন্দি হয়ে গিয়েছি।