লিফট গিয়ে থামলো ১১ তলায়। লিফট থেকে বের হয়েই কেমন একটা ফিলিংস হতে লাগলো। করিডোরের ডেকোরেশন কেমন যেন ভুতুড়ে টাইপের।
আল্লাহর নাম নিতে নিতে রুম খুঁজে নিয়ে ঢুকলাম। চমৎকার রুম। ভাবছিলাম হানিমুনটা বিয়ের পরেই করে দরকার ছিলো, বেশ দেরি হয়ে গেলো। যাই হোক সারারাত জেগে বেশ ক্লান্ত ছিলাম। প্ল্যান হলো ফ্রেস হয়ে একটু রেস্ট নিয়ে টুইন টাওয়ার দেখতে যাবো। কারণ হোটেলে আসার সময় দেখেছিলাম মালয়েশিয়ার আকর্ষণ টুইন টাওয়ারকে। হোটেলের কাছেই মনে হলো। বিকেলে ঘুম থেকে জেগে ফ্রেস হয়ে হোটেল থেকে বের হলাম আমরা। হাটতে হাটতে দেখি ম্যাকডোনাল্ডস এর দোকান।
আমাকে আর কে পায়। সেখানে হালকা খাবারের অর্ডার দিয়ে ভেতরের লোকজন দেখছিলাম আর কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরেও তাকাচ্ছিলাম। কত কি খাচ্ছে সবাই। ছেলে, মেয়ে, বুড়ো, বুড়ি সবাই আসছে, খাচ্ছে, চলে যাচ্ছে।
কেউ কাউকে দেখছে না, আমিই দেখছি। এর মধ্যে হঠাৎ দেখে পাশ দিয়েই মেট্রো ট্রেন যাচ্ছে। একের পর এক। কি যে কিউট একেকটা আর একেকরকম ছবি দেয়া গায়ে। মেট্রো ট্রেন দেখে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা এতে চড়েই যাবো। ম্যাকডনাল্ডস থেকে বের হয়ে পাশে মেট্রো স্টেশনে গেলাম। বলে দেয়া হলো যে স্টেশনে আমরা নামবো সেখান থেকে কিছুটা হাটতে হবে, তবেই টুইন টাওয়ার এরিয়া। অসুবিধা নাই, টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে থাকলাম ট্রেনের। কি সুন্দর অটো সিস্টেম যে টিকিট ছাড়া কেউ প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই পারবে না। বা বের হতেও পারবে না। একটু পর ট্রেন এলে উঠে পড়লাম। কত মানুষ যাচ্ছে ট্রেনে। ছেলেরা কেউ শার্ট -প্যান্ট, কেউ টিশার্ট এর সাথে জিন্স বা শর্টস, আবার মেয়েরা ফতুয়া, ফুলপ্যান্ট হিজাব বা গেঞ্জি হাফপ্যান্ট।
কতগুলোতো ভীষণই দৃষ্টিকটু কিন্ত কেউ ডিস্টার্ব বা মন্তব্য করছে না কিছু। যার যার মত যাচ্ছে, আসছে।
ঠিক এক স্টেশন পরেই নেমে গেলাম আমরা। তারপর হাটা। কি পরিষ্কার রাস্তা, কি পরিস্কার ফুটপাত আর সব চেয়ে মজার হলো জেব্রা ক্রসিং এ হাটার সাইন না আসা পর্যন্ত কোন হাটা নাই। রাস্তা ফাঁকা থাকলেও দাঁড়িয়ে থাকবে সেই চিহ্নের অপেক্ষায় কিন্ত নিয়ম ভাংবে না। কত কিছু শেখার বাকি আমাদের।
হাটতে হাটতে আকাশের দিকে হঠাৎ তাকিয়ে দেখি টুইন টাওয়ার দেখা যাচ্ছে।
জোরে পা চালালাম। কাছে গিয়ে দেখি কি বিশাল টাওয়ার। ঘাড় উঁচু করে দেখলে মটকে যেতে পারে।
ঘুরে ঘুরে দেখলাম এর সৌন্দর্য। সন্ধ্যা হচ্ছে আর ভীড় বাড়ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা এসেছেন এটি দেখতে।
সবাই দেখছেন, ছবি তুলছেন আর আমি আফসোস করি কেন একটা ভালো ক্যামেরা নাই আমার 🙁
কর্তা হাঁপিয়ে গিয়ে সামনের ফোয়ারার পাশে এক জায়গায় বসে পড়লেন। এইযে বসলেন আর উঠেন না। ছবি তোলাতে তার খুব বিরক্তি।
শেষে আমি নিজেই ঘুরে ঘুরে মোবাইলে ছবি দেখতে লাগলাম। এর মধ্যে এক বন্ধুর সাথে হোয়াটস আপে কথা হচ্ছিলো।উনি বললেন টুইন টাওয়ারের পেছনে যাও, সেখাানে ডান্সিং ফোয়ারা শো হয় সন্ধ্যার পর। কর্তাকে বললাম। উনি আজ যেতে রাজি হলেন না। বললেন অন্যদিন। বলে বসে রইলেন।
আমি এদিক সেদিক ঘুরে ছবি তুলতে লাগলাম।
আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হলো আর টুইন টাওয়ারের সৌন্দর্যও বদলে যেতে লাগলো। কি অপূর্ব সৃষ্টি!!!
অনেক রাত পর্যন্ত বসে থাকলাম সেখানে। বেশ ভালো লাগছিলো টুইন টাওয়ার আর তার পর্যটকদের।
তারপর রাত ৯ টার দিকে বের হয়ে একটা দোকান থেকে সফট ড্রিংক্সের ক্যান কিনে খেতে খেতে একটা ট্যাক্সি নিয়ে বাংলা খাবার হোটেলের পথ ধরলাম। আর পথে ভাবতে থাকলাম, এমন একটি টুইন টাওয়ার কি আমাদের দেশে বানানো অসম্ভব কিছু? কোথাও একটি পুলিশ দেখলাম না। সবাই নিয়ম মেনে চলছে। আবহাওয়া, পরিবেশ সবই আমাদের মত তবে আমরা কেন পারবো না? ভাবতে ভাবতে পৌছে গেলাম বাংলা হোটেলে। আজ অর্ডার দিলাম ভাত, রূপচাঁদা, ডাল, সবজি আর গরুর গোশত। শেষে দই। দেখি হোটেল পুরা ভর্তি বাঙালী। কথাবার্তা শুনে মনেই হয় না এটা অন্য দেশ। ওয়েটার, কুক, মালিক সব বাংলাদেশী। বেশ ভালো লাগলো। হেব্বি খেয়ে দেয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। কাল ১০টায় গাড়ি আসবে, যাবো গেন্টিং হাইল্যান্ডে।
চলবে…….
আগের পর্বগুলো পড়ুনঃ
মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনী ১/ মালয়েশিয়াতে কয়েকদিন -১
২১টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
ভ্রমনের সাবলিল বর্ননা চমৎকার হচ্ছে। এমন বর্ননা দিতে পারিনা বলেই অনেক দেশ ভ্রমন করেও কিছুই লিখতে পারিনি।
টুইন টাওয়ারের সামনের ফোয়ারা আমারও খুব ভাল লাগে। রাতে টুইন টাওয়ারের বিপরিতের আগুন বিল্ডিংটা অদ্ভুত সুন্দর।
৮৫ সালেও মালয়েশিয়া আমাদের চেয়ে গরীব ছিল। সঠিক পরিকল্পনা আর রাজনৈতিক পরিবেশ শান্ত বলে দেশটি উঠে গেল আমাদের চেয়ে অনেক উচুতে।
নীহারিকা
ধন্যবাদ আপনাকে।
আমরা শুনেছি আপনি অনেক দেশ ভ্রমণ করেছেন। এমন ভাগ্য সত্যিই বিরল কিন্ত আপনার তেমন কোনো ভ্রমণ কাহিনী আমরা পড়তে পারিনি। সে আমাদের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। যে আপনি এত ভালো লেখেন সেই আপনি ভ্রমণ কাহিনী লিখতে পারেন না বললে আমরা কোথায় যাবো বলুন?
আপনার কথার মত আমার কর্তাও সারা সময় একই কথা বলেছেন। উনি ১৯৯১ সালে মেলয়েশিয়া গিয়েছিলেন। তখন আর এখনকার তুলনা করতে গিয়ে ওনাকে শুধু আফসোস করতেই দেখলাম। উনি বলেন এবারের ভ্রমণ আমাকে আনন্দ দেয়নি কষ্ট দিয়েছে দুটি রাষ্ট্রের অবস্থান বিবেচনা করে।
মিষ্টি জিন
অনেক সুন্দর করে ভ্রমনের বর্নন করলেন আফা। শোনেন বিয়ের পর হানিমুনে না গেছেন তো কি হয়েছে ? এখন তো হনুমুন করলেন।😜 তা কম কিসে?
কর্তারা অমন ই হয়। যেখানে বসে শিকড় না গজানো পর্যন্ত সেইখান থেকে উঠে না। টুইট টাওয়ার এডিয়াটা বেশ পরিস্কার পরিছন্ন।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
নীহারিকা
সে শিকড় কি এই সেই শিকড় আফা? মনে হয় মাটির গভীরে চলে যাওয়া শিকড়। জি আপা খুব ভালো লেগেছে টুইন টাওয়ার এরিয়া। পরে আরেকদিন গিয়েছিলাম। সেটাও আসবে বর্ণনায় 🙂
ধন্যবাদ আপা।
নীলাঞ্জনা নীলা
ইসসিরে আমি টুইন টাওয়ার দেখিনি। ;(
কি সুন্দর বর্ণনা দিচ্ছেন আপু। শুনুন বিয়ের পর পর হানিমুনে এলে দেখা যেতো চিলিমুন হয়ে গেছে। আমি তো আমার ছেলে হবার পরে সানমুন করেছি। 😀
নীহারিকা
টুইন টাওয়ার দেখার আফসোস নিয়েন না। আমি আপ্নেরে দেখামু 🙂 লেখা পড়ে ভাবুন আপনিও ছিলেন আমার সাথে 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
আপু আফসোস নেই এখন আর। এভাবে বললে আফসোস কি আর থাকে, আপনি বলুন? -{@
নীহারিকা
🙂
ছাইরাছ হেলাল
কাহিনী কিন্তু খুব সুন্দর করেই লিখতে পারছেন, এবারে বুঝতে পারছি ভ্রমণ কাহিনীকার আসলেই আপনি।
অনেক কিছুই দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি দেখছি। তবে টাওয়ারের ওদিকটায় না গিয়ে ভালই মিস করেছেন।
পরের বার কিন্তু একজন ছবিওয়ালা নিয়ে যেতে ভুল করবেন না,
এখানের কোন কোন জায়গায় গেলে মনে হয় দেশেই আছি, যা অনেক ভাল লাগে। অনেক অনেক ভাল মানুষ আছে তবে
প্রথম যে বাংলাদেশিটির সাথে আলাপ হয়েছিল সে মস্ত টাউট ছিল। অনেক সুন্দর একটি দেশ।
প্রতিটি পর্ব আরও ডিটেলস-এ যেয়ে লিখুন, তাড়াহুড়োর কিছু নেই।
যেমন ট্রেনে যা দেখলেন, হোটেলে যা দেখলেন বা খেলেন এগুলো নিয়ে এক একটি পর্ব হতে পারে,
ভেবে দেখুন।
কবে যে আল্লাহ বৈদ্যাশে নেবে আর চক্ষু মেইল্লা সোন্দর সোন্দর আল্লার নেয়ামত দেখুম ও
শেষ কালে এমুন সুন্দর করে লিখুম কে জানে!!
চাইয়া রইলাম, আবারও।
স্বাগতম গ্যান্টিং হাইল্যান্ডে;
নীহারিকা
ঠিক বলেছেন, পর্বটি একটু তাড়াহুড়ো করেই লিখেছি। যাক পরের পর্বগুলো আরো বিস্তারিতভাবে লিখবো ইনশাআল্লাহ। তবে টুইন টাওয়ারের পেছনে কিন্ত গিয়েছিলাম পরেরদিন 🙂 সেটা আসবে পরবর্তী বর্ণনায়।
হ কবে যে বিদেশ যাইবেন, আর কবে যে ল্যাকপেন! এই ভাইগ্য সবার হয় না গো ভাইজান। দোয়া করি যাতে আল্লাহ আপ্নেরে একবারের জইন্যে হইলেও বৈদেশ যাওনের তৌফিক দান করেন। আমীন
ছাইরাছ হেলাল
খাছ-দিলে দুয়া দিলে অনেক কিছুই হবে,
আমীন, আমীন!!
নীহারিকা
হাহাহা আমীন
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার কল্যানে মালয়েশিয়ায় ভ্রমণ দর্শন হলো বেঁচে থাকুন আরো দেখতে চাই, শুনতে চাই। পড়তে চাই।
নীহারিকা
অনেক ধন্যবাদ ভাই। পাশে থাকুন আরো পর্ব আসছে অনেক সুন্দর সুন্দর স্পট নিয়ে।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সালামত পাগি।ভ্রমণ কাহিনী।সত্যি বলতে কি আমাদের সবাইকে অন্ততঃ এক বার করে হলেও বিদেশ ভ্রমণ জীবনের দিক বেদিক জানতে বেশ প্রয়োজন।সুন্দর হয়েছে বর্ননা যেনো আরো এক বার ঘুরে এলাম মালেশিয়া থেকে। -{@ -{@
নীহারিকা
অবশ্যই ভাই। সম্ভব হলে যাওয়া উচিৎ। আর বর্ণনা করছি মনের আনন্দে। খুব মজা করে ঘুরেছি। সেসব আপনাদের সাথে শেয়ার করবো না তো করবো কার সাথে?
ইঞ্জা
আসলেই মালেশিয়া খুব সুন্দর এক দেশ, খুব ভালো লাগলো আপনার এই ভ্রমন কাহিনী, ভালো থাকবেন দাদী।
নীহারিকা
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
ইঞ্জা
শুভকামনা
শুন্য শুন্যালয়
আমাদের দেশে বানানো কঠিন কিছু হবেনা, কঠিন হবে তা রক্ষা করা। এয়ারপোর্টের রাস্তা কিংবা হাতিরঝিল, কোথায় সেই সৌন্দর্য্য। অভ্যস্থতায় আমাদের ভেতরের সব সুন্দর শেষ। বান্দরবন, সিলেটের মতো সুন্দর অরণ্যেও এখন ভ্রমণকারীরা নোংরা ফেলে নষ্ট করছে সব।
আপনার ভ্রমণ লেখার গুন তো দেখি একদম পাক্কা। এদ্দিন কই আছিলেন? এরপর মালয়শিয়া গেলে আপনারে পোস্ট খুইল্যা হাঁটা দিমু।
এইসব নিরামিষ লোক লইয়া ভ্রমণে গেছেন ক্যান? ছবিও তুলতে দেয়না, গররররররর।
সুন্দর পোস্ট হচ্ছে, দেখি চার নাম্বারে কী আসে!
নীহারিকা
বইনরে আমি পুরা বেগুণ। কি ছাতামাতা ল্যাক্তেছি আল্লাহই জানে।
নিরামিষের লোক নিয়া কি যে যন্ত্রণা কি কমু। ছবি তুলতে দেখলেই তার মেজাজ খারাপ।