বউয়ের চিঠি পেলাম
বউয়ের চিঠি এক অমূল্য সম্পদ । যারা বিদেশে আছেন তাদের প্রতি আমার রীতিমত হিংসে হয় । হিংসে হয় এজন্য যে তারা নিয়মিত তাদের জীবন সঙ্গিনী তথা ‘ সংসার ‘ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পার্টনার বউয়ের চিঠি পান। দেশে যারা থাকেন তাদের এ সুযোগ খুব একটা হয় না ।
অবশ্য যারা চাকরী করেন এবং ২/৩ মাস অন্তর বউয়ের দেখা পান তারাও অনেক সময় বউয়ের চিঠি পেয়ে থাকেন।
বউয়ের চিঠির মধ্যে একটি আলাদা শিহরণ আছে, আকর্ষন আছে .. শিরশিরে অনুভূতি আছে, আছে রোমাঞ্চ ।
বইয়ের চিঠি নিয়ে কত গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস সিনেমা রচিত হয়েছে তার হিসেব নেই ….
অনেক জনপ্রিয় কয়েকটি গানের একটি হচ্ছে……
চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাংগা ভাংগা হাতে……
এই চিঠি লিখার ঠিকানার জন্য মেয়েরা খুইব উদগ্রীব থাকে…..
মেয়েটিও গানের সুরে গাইতে থাকে…..
চিঠি দিও পত্র দিও জানাইও ঠিকানা রে, জানাইও ঠিকানা…..
চিঠি নিয়ে আরো কত কি!
যাক, এই চিঠি একসময় পরস্পরের মনের আকুতি জানাবার একমাত্র মাধ্যম হলেও এখন আর সে যুগ নেই ।
এখন হচ্ছে ডিজিটালের যুগ, মেসেজ এর যুগ , স্কাইফি-্ইমু-ভাইবারের যুগ….
কি জানি হয়তো আগামীতে এমন একটি সংকেত সংযোগে নিজস্ব লাইভ কণ্ঠই সরাসরি প্রিয় জনের কানের মধ্যে প্রতিধ্বনীত হবে মোবাইল ছাড়াই।
ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে কোন নেট, মোবাইল, কম্পিউটার ছাড়াই হয়তো একে অপরের কাছাকাছি হয়ে যাবে ।
এখন বলি আমার কথা । আমি প্রবাসীও নই আবার দুরে কোথায় থাকি তাও নয় । শহরে আমার বাসাতেই থাকি স্ত্রী পুত্র কন্যা নিয়ে । তবু আমি বউয়ের হাতের লেখা চিঠি পাই । এটা অবশ্য আমার বিশাল ভাগ্যই বলতে হবে।
অবশ্য আমি মাঝে মাঝে আবদার করেই বলি- ওগো আমাকে একটি চিঠি লিখনা গো ….
বউ বলতো আপনি আমার সাথেই আছেন । ঠিচিতে কি লিখবো……
কি লিখবা!…….. এই মন জ্বলে, চোখ জ্বলে, কান জ্বলে, পেট জ্বলে এসব লিখবা আরকি!
অভিমানী বউ বলতো এসব আমি পারবো না ।
এসব না পারলেও মাসের শুরুতে সুন্দর একখান চিঠি ধরিয়ে দিতে কিন্তু সে কখনও ভুল করেনি । তেমনি একটি চিঠি সেদিন সকালে বাসা থেকে বের হবার সময় বউ পকেটে ঢুকিয়ে দিয়েছে । অফিসে পৌছার পর আবার মোবাইল করে বলেও দিয়েছে পকেটে চিঠি আছে। দেখতে যেন ভুলে না যাই। পকেট থেকে চিঠি নিয়ে পড়ে দেখলাম।
চিঠিতে সে লিখেছে……..
প্রিয় পতি,চিনি, চা পাতা, লবন, হরলিক্স, ডেটল সাবান, ৩৭ সাবান, ভিমবার, নুডুলস, সেমাই, ময়দা, চনাবোট, গম, চনার ডাল , সরিষার তৈল, নারিকেল, সাদা সরিষা , বিস্কুট, খাবার স্যালাইন, প্যারাসুট তৈল, পেন্সিল , সাপনার, কলম , সব্জি ।
ইতি – আপনার ঘরণী ।
এখন বলুন তো এই চিঠি পেয়ে আমি গান কোনটি ধরবো…
২৬টি মন্তব্য
ইঞ্জা
:D) কাছে থাকা স্বামীর কাছে বউ তো আর বিরহের চিঠি লিখবেনা, লিখবে তো বাজারের ফর্দ।
ভাবীকে আমার সালাম দিবেন সুন্দর চিঠির জন্য :D)
খুব ভালো লাগলো। 🙂
চাটিগাঁ থেকে বাহার
ওকে,
ভালো লাগলো জেনে খুশি হলাম।
ভালো থাকবেন। -{@
নীহারিকা জান্নাত
আমিও এমন চিঠিই লিখি।
মোবাইলের মেসেজ বক্সে সব সেভ করা আছে 🙂
চাটিগাঁ থেকে বাহার
চিরকুট অনেক সময় হারিয়ে যায়। মেসেজ অনেকটা নিরাপদ। তবে প্রায় সময় মেসেজ টুন খেয়াল না করলে দেখা হয়না । বাসায় গিয়ে যখন জানতে পারি মেসেজ দিয়েছিল। তখন আফসোসই করতে হয়।
আপনাকে ধন্যবাদ। -{@
ছাইরাছ হেলাল
বাহ্ এমন চিঠি পাবার সৌভাগ্য হয়নি, এক্ষেত্রে আপনি ভাগ্যবান তা মানছি।
আসলে সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পাল্টে গেলেও কী যেন কিছু একটা হয়ত থেকেই যায়।
শিরোনামে কিন্তু প্রতিযোগিতা লেখেন-নি,
তা হলে আমরা আরও চিঠি পাচ্ছি ধরেই নিচ্ছি,
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আপনি অনেক চালাক। -{@
মিষ্টি জিন
আমার কেমন জানি মনে হচ্ছিল বউ আপনাকে এমন চিঠিই দিবে । ভাগ্যবান আপনি।
চিঠিটা বাধিয়ে রাখুন। 😀
চাটিগাঁ থেকে বাহার
নামের সাথে কাজের অনেকের মিল আছে। আপনিও তাদের একজন। 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
বাহ! এমন চিঠি আমি জীবনেও তরুণকে লিখতে পারিনি। কারণ সে বেশ মনোযোগী সংসারী মানুষ।
আপনি তো ভাগ্যবান ভাবী এতো সুন্দর চিঠি লিখেছেন। আপনার খেয়াল রাখেন ভালো ভাবেই। 😀
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আমি অবশ্যই ভাগ্যবান। আলহামদুলিল্লাহ!
তবে মনে হয় সংসারের প্রতি মনোযোগী না। তাইতো চিঠি লিখতে হয়।
নীলাঞ্জনা নীলা
এইতো বুঝেছেন। 🙂
শুন্য শুন্যালয়
মাসের শুরুতেই চিঠি ধরিয়ে দিতে ভুল করেন না শুনেই বুঝেছিলাম এ সেই পরম অপেক্ষার চিঠিই হবে। 🙂
মনে পড়লো হঠাৎ আমিও একদিন আমার হাজব্যান্ডকে বলছিলাম দেখো তোমার আমার মেসেজের ঘরে শুধুই বাজারের লিস্ট।
মজা পেলাম 🙂
চাটিগাঁ থেকে বাহার
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। -{@ -{@
অরণ্য
এমন রোমান্টিক ঘরণী পেয়েছেন। নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করুন। এমন চিঠির ফাঁকে হুট করে অন্য চিরকুটও আসুক। জীবন তো একটাই! (y)
চাটিগাঁ থেকে বাহার
রোমাঞ্চটা আসলে সৃষ্টি করে নিতে হয়। সংসারে অনেক তিক্ততাও আছে। মাঝে মাঝে কিছু রসিকতার আমদানী করতে পারলে কিছুটা সুখের প্লেবার পাওয়া যায় আরকি। -{@
মোঃ মজিবর রহমান
দারুন বাহার ভাই। সব রকম উপকরণ আছে এই পত্রে,
চাটিগাঁ থেকে বাহার
বিজ্ঞ ভাইয়ের উৎসাহমূলক মন্তব্যে পুলকিত হলাম। 🙂
মেহেরী তাজ
চিঠি তো চিঠিই যে আসল চিঠি মানে মনের ভাব প্রকাশের চিঠি হোক বা বাজার লিস্ট।
হা হা হা :D)
হাসি পাচ্ছে কিছু করার নাই…..
চাটিগাঁ থেকে বাহার
কিচ্ছু যখন করার নেই তখন আর কি করা।
হাসতেই থাকুন………….. (y)
আবু খায়ের আনিছ
গান গাইতে হবে না, চিঠির মর্ম উদ্ধার করুন তাহলেই হবে।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
চিঠির মর্ম উদ্ধারে যতই গভীরে যাবো ততই ব্যাংক ব্যালেন্স কমতে থাকবে যে…………… ;?
আবু খায়ের আনিছ
তাতেও মন্দ হয় না, সুখ আর শান্তি যদি আসে।
মৌনতা রিতু
বাজারের ফর্দ আমিই বানাই তা আবার আমিই পার্সে করে বাজারে নিয়ে যাই।
তবে স্বামীরা বউ এর থেকে প্রেমিকার চিঠি পড়তেই নাকি বেশি মজা পায়। তাই বউ বেচারি আর অযথা চিঠি লেখার কষ্টটা করে না।
এমন চিঠি সবাই পাক। এমন কামনা করি। শুভকামনা।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আপনার জন্যও শুভকামনা থাকলো। -{@ -{@
গাজী বুরহান
“কি লিখবা!…….. এই মন জ্বলে, চোখ
জ্বলে, কান জ্বলে, পেট জ্বলে এসব
লিখবা আরকি!”
\|/
রোমাঞ্চে ভরপুর এমন চিটি বহুকাল পড়া হয় নি। দাড়ান, এক্টু হাইসা লই ;(
চাটিগাঁ থেকে বাহার
শুধু না হেসে আপনিও কিছু নিয়ে আসুন চিঠি পত্র………. 🙂