ডাঃ আরতি মুখার্জি ভোর ৪ টার দিকে ফিরে এলেন তার কোয়ার্টারে। ১৪ বছরের ছেলে সুমিত ঘুম জড়ানো চোখে দরজা খুলে দিতেই টলতে টলতে রুমে ঢুকে ফ্লোরে ঢলে পরলেন আরতি। দরজা বন্ধ করে ঘুরতেই সুমিত দেখে তার মা ফ্লোরে পরে আছে। বিদ্ধস্ত লাগছে। চোখ বন্ধ করে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর দরদর করে ঘামছে। সুমিত দৌড়ে যায় মায়ের মাথার কাছে – “কী হইছে আম্মু!? কী হইছে?”
আরতি কথা বলে না। সুমিত কেঁদে ফেলে। আরতি দু হাত বাড়িয়ে ছেলেকে বুকের উপর টেনে নেয়, জাপটে ধরে হাউমাউ করে কাদতে থাকে! কিছু বলতে পারে না! বলতে পারে না কয়েক ঘন্টা আগে কী বিপর্যয় ঘটে গেছে তার জীবনে। কর্তব্যের দায় মেটাতে কত বড় মূল্য দিতে হয়েছে তাকে।
গতকাল রাত দশটায় দুই যুবক এসে “ইমার্জেন্সি ডেলিভারি কেস” এর কথা বলে অনেক অনুনয় বিনয় করে ইউনিয়নেরই দুরবর্তী এক গ্রামে যেতে বলে। দুই যুবকের একজন ডাঃ আরতির পূর্ব পরিচিত। আগেও কয়েকবার এই ইউপি হেলথ কমপ্লেক্সে এসেছিল রোগী নিয়ে। রাত বেশি হওয়ায় আরতি আপত্তি জানালে যুবকরা জানায় যে তারা অটো নিয়ে আসছে আবার কাজ শেষে তাকে পৌছে দিয়ে যাবে। রোগীর অবস্থা গুরুতর, হাসপাতালে আনার সুযোগ নাই, ব্যাথা উঠেছে। এখন ডাঃ আরতি না গেলে অই প্রসুতিকে বাঁচানো যাবে না। কর্তব্যের ডাকে, মানবতার তাগিদে ডাঃ আরতি তার ব্যাগ নিয়ে অই যুবকদের সাথে বেরিয়ে যায়। সুমিত, অমিত আর ৩ বছর বয়সী মেয়ে স্নিগ্ধাকে বলে যায় খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পরতে।
কিন্তু কোথায় রোগী! কিসের প্রসূতী মহিলা! বেশ কিছুদূর রাতের নির্জন পথে অটো যাওয়ার পর এক পরিত্যাক্ত বাড়িতে নিয়ে যায় ডাঃ আরতিকে। ওখানে আরো তিন জন লোক ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার মুখ আর হাত পা বেঁধে ফেলে লোকগুলো!!!!
ভোরের দিকে বিদ্ধস্ত বিমূঢ় আরতিকে মুখ বাধা অবস্থায় নামিয়ে দিয়ে যায় কাছাকাছি জায়গায়। যাওয়ার আগে বলে যায় এই ঘটনা জানাজানি হলে বিপদ হবে আরতির!
মুখের কাপড় সরিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে হাটতে হাটতে বাসায় ফেরে আরতি।
সুমিত ফ্যান ছেড়ে দিয়ে মাকে সোফায় বসিয়ে ভেজা টাওয়েল দিয়ে মুখ গলা হাত মুছে দিচ্ছে। সোফায় বসে ক্ষনে ক্ষনে চমকে উঠছে। শরিরের অনেক জায়গায় ব্যাথা। কিছু জায়গা জ্বলছেও।পশুগুলো খামচে কামড়ে নিজেদের পাশবিকতার জ্বালা মিটিয়েছে।
শরিরের ব্যাথা সেরে যাবে, খামচি কামড়ের দাগ মিলিয়ে যাবে। কিন্তু ডাঃ আরতির হৃদয়ে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তা মিলাবে না এই জীবনে।
২৫টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
কী বলবো এই লেখায় বুঝতেছি না। একটু আগেই রিতু আপুর লেখায় বলে এলাম আমরা মানুষ বলে সভ্য হতে পেরেছি। আসলেই কী তা? আমরাও যে পশু তা এই পশুগুলো বারবারই মনে করিয়ে দেয়।
আফসোস এই সব সম্ভবের দেশে এতো বড় অপরাধের বিচারও নেই।
এই ক্ষত শুকাবার নয়।
শিপু ভাই
আর এই একই ঘটনা যদি ডাঃ আরতির বেলায় ২য় বার ঘটে তখন????
মোঃ মজিবর রহমান
সমাজের এক্টী রোগের বাস্তব চিত্র তুলে এনেছেন ভাই।
আর মনের খত শুকাবার নয়।
শিপু ভাই
হুম। এরপর যত ইমার্জেন্সিই হোক উনি কিন্তু আর যেতে চাইবেন না।
মোঃ মজিবর রহমান
নচিকেতা,” ধর্মের বাধ ভেংগে আশ্রয় চেয়ে চাই মানুষের কাছে।” স্বিচ্ছায় কেউ চাইনা, বাধ্য হয়ে জেতে হবে না হয় সংসার ত্যাগী হতে হবে।
নীরা সাদীয়া
সঠিক বিচার না হওয়াতে এসব গল্পের চরিত্রগুলো বাস্তবে বেড়েই চলেছে।
শিপু ভাই
সহমত!
নীহারিকা জান্নাত
মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ বলে কিছু আর রইলো না।
কাকে আর বিশ্বাস করবে মানুষ? কিভাবে বুঝবে কে সত্যি বলছে আর কে মিথ্যা?
এমন ঘটনা কারো জীবনে আর না ঘটুক।
শিপু ভাই
এটাই কাম্য
জিসান শা ইকরাম
এসব ঘটনার কোন ধরনের বিচার হয়না বলতে গেলে আমাদের দেশে,
উলটো চারিত্রিক দোষে অভিযুক্ত হয়ে যায় নারীরা।
কঠিন শাস্তি এবং নারীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধই একমাত্র সমাধান হতে পারে এধরনের অবস্থা থেকে মুক্তির,
নইলে পশুদের রাজত্বই কায়েম হবে দেশে।
শিপু ভাই
আপনার সাথে সহমত মামা
ছাইরাছ হেলাল
আসলে বিচারহীনতাই এ এক মাত্র কারণ।
এর ফলে কত মৃত্যুপথযাত্রী এক জন ডাক্তারের প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হবে তার হিসাব কে রাখে,
শিপু ভাই
বিচারের সাথে সাথে মূল্যবোধের শিক্ষাটাও জরুরী মামা
মেহেরী তাজ
কোন একটা পেশা আছে কি যে পেশায় “মেয়েরা” নিরাপদ??
একটা বিচার তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া খুব দরকার যা দেখে মানব সমাজ শিউরে ওঠে। অন্তত এটা বুঝতে শিউরে ওঠার অনুভূতি টা কেমন!!!
শিপু ভাই
একমত পোষন করছি আপনার সাথে
চাটিগাঁ থেকে বাহার
কি মন্তব্য করবো বুঝতে পারছি না!
শিপু ভাই
আসলে এসব ক্ষেত্রে কিছু বলার থাকে না। নির্বাক হয়ে যেতে হয়
গাজী বুরহান
উন্নয়নের জোয়ারের ঠেলা সামলাতে না পারা আমার এই শিঙাপুর রাষ্ট্র নিয়ে এমনি এমনি মন্তব্য করিনা। নরপিশাচদের দল হৈহৈ করে বড় হচ্ছে।। এদের কিছুই হয়না। সোনার দলগুলো তাদের এই সোনার ছেলেদের নিয়ে তবুও গর্ব বোধ করে।
শিপু ভাই
এটা দলিয় কেস না ভাউ। মনুষ্যত্বের কেস
আবু খায়ের আনিছ
প্রথমে ভেবেছিলাম ডাঃ কে দিয়ে কোন অনৈতিক কাজ করাবে (যেমন গর্ভপাত বা এই ধরনের কিছু) কিন্তু শেষে এসে স্তব্দ হয়ে গেলাম। অসাধারণ লিখার ক্ষমতা আপনার।
গল্প নিয়ে কি মন্তব্য করব বলুন, এই দৃশ্যগুলো এমন হয়ে গিয়েছে যে স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ আনিছ ভাই
নীলাঞ্জনা নীলা
গল্প বলে মনে হলোনা। কারণ এমন ঘটনা পত্রিকার পাতায় পড়েছি।
নারী মানেই শুধু একটা শরীর। আর কিছুই না। এ নিয়ে মুখ খুলতে গেলে দেখা যাবে এই ডাক্তারকে কলগার্ল বানিয়ে দেবে সমাজ।
আর কিছু লোক বলবে মেয়েমানুষের(এই শব্দটিকে আমি ঘেণ্ণা করি) কি দরকার রাতে চাকরী করার?
তাইতো আত্মহত্যা করে বেশীরভাগ। বেঁচে থেকে আজীবন একটা চাপা যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে যাবার মতো শক্তি সকলের থাকেনা।
শিপু ভাই
সত্যিই এটা গল্প না। আমার পরিচিত ঘটনাটা গল্পের আদলে লিখলাম যাতে কেউ অসম্মানিত না হয়। 🙂
ব্লগার সজীব
যেভাবে লিখলেন মনে হচ্ছে বাস্তব। কত অসহায় আমাদের নারীরা, মায়েরা, বোনেরা।
শিপু ভাই
বাস্তবতা থেকেই গল্পটা উৎসারিত