১২ বছর পর দিয়াখালিতে এল ইমু। ঢাকায় বসেই মজিদ মেম্বারের সমস্ত ডিটেইলস জেনেছে ও। কখন মজিদ বাজারে আসে কখন ফিরে যায়, কোন দোকানে চা খায়, আসা যাওয়ার সময় সাথে কারা থাকে ইত্যাদি সব জানে ইমু। সবার ছবিও সংগ্রহ করেছে ও। দুপুরের পর দিয়ে গাড়ি থেকে দিয়াখালি নেমে এক হোটেলে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছে। তারপর একটা সিগারেট ধরিয়ে মজিদ মেম্বারকে খুজতে বের হয়। বেশিক্ষন খুজতে হয়নি, প্রতিদিনকার মতো আজো মজিদ রহিম মিয়ার চা এর দোকানে আড্ডা দিচ্ছে। দূর থেকে নজর রাখে ইমু। আজকের আড্ডা যেন শেষই হয় না।
মাগরিবের আজান পরতেই মজিদ আড্ডা থেকে উঠে যায়। সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়। বাড়ি ফেরার সময় ফজলু নামের একজন সাথে থাকে সব সময়। আজ ফজলু কী কাজে যেন বাজারে রয়ে যায়। অগত্যা মজিদ একাই রওনা দেয় বাড়ির দিকে। মনে মনে খুশি হয় ইমু। রিক্সা না নিয়ে হাটতে থাকে মজিদ। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে পিছু নেয় ইমু। অদূরেই মসজিদ! মজিদ মেম্বার মসজিদে ঢুকে পরে। বাইরে অপেক্ষা করে ইমু। দীর্ঘ ১২ বছর অপেক্ষা করেছে ও। ইমুর বাবাকে খুন করেছে এই মজিদ মেম্বার। কিন্তু আদালতে মজিদ নির্দোষ প্রমানিত হয়। মামলা চালিয়ে নিজেদের সর্বস্ব খুইয়ে ফেলে ইমুর মা। ইমুর তখন ১০/১২ বছর বয়স। মজিদ ইমুর মাকে বারবার বলেছে- “ভাবিসাব, মিয়া ভাইর লগে আমার জমি লইয়া গ্যাঞ্জাম আছে সত্য তয় ভাইরে আমি খুন করি নাই। কে করছে তাও বুঝতেছি না। বিশ্বাস করেন!”
বিশ্বাস করেনি ইমুর মা। পিতৃহারা একমাত্র সন্তানকে নিয়ে শহরে চলে আসে। বহু কষ্ট করে ইমুকে মানুষ করে আর ইমুর ভেতর জাগিয়ে দেয় পিতৃ হত্যার প্রতিশোধস্পৃহা। আজ সেই প্রতি শোধের দিন। কোমরে গোজা বুলেট ভর্তি পিস্তলে হাত বুলিয়ে নিষ্ঠুর এক হাসি দেয় গাছের আড়ালে দাঁড়ানো ইমু।
নামাজ শেষে অল্প কয়েকজন মুসুল্লি সহ বেরিয়ে আসে মজিদ। আবার হাটা শুরু করে বাড়ির দিকে। অলরেডি অন্ধকার হয়ে আছে চারপাশ। পকেট থেকে মিনি একটা টর্চ বের করে হাটছে মজিদ, ২০ গজ দূরে ইমুও হাটছে। রাস্তার এই অংশটা প্রায় নির্জন। শুধু মাঝে মাঝে কিছু মালবাহী ছোট ট্রাক যাচ্ছে দিয়াখালি বাজারে। ট্রাকগুলোর হেডলাইটের আলো ছাড়া আর কোন আলো নেই পথে। ৭/৮ বছরের এক বাচ্চা মাঠ থেকে মনে হয় বাড়ি ফিরছে। হাতে ফুটবল। সেটাকে মাটিতে ড্রপ দিতে দিতে যাচ্ছে ছেলেটা। হঠাত বলটা রাস্তার মাঝামাঝি চলে যায়। ছেলেটাও দৌড়ে যায় বলটা ধরতে। এদিকে ইমু আর মজিদ দুজনেই দেখতে পায় তীব্র দুইটি আলো প্রচন্ড গতিতে এগিয়ে আসছে বিপরিত দিক থেকে। ট্রাকটা থামার সুযোগ পাবে না। একদম পিষে দেবে ছেলেটাকে। এক দৌড়ে রাস্তার মাঝে ছেলেটার কাছে পৌছে যায় মজিদ মেম্বার। কোনমতে শরিরের সাথে বাচ্চাটাকে আটকিয়েই ঝাপিয়ে পরে রাস্তার বাইরে। কয়েক ইঞ্চি দূর দিয়ে ছুটে যায় ট্রাকটি। ইমু ২০ গজ দূর থেকে পুরো দৃশ্যটাই দেখলো। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে গেছে ও। মজিদ আর বাচ্চাটা উঠে দাড়িয়েছে। মজিদের টর্চটা তখনো হাতে ধরা এবং সেটা জ্বলছিল। উঠে দাঁড়িয়ে টর্চ এর আলো ফেলে নিজের আর বাচ্চার ক্ষত দেখছে মজিদ। বাচ্চাটা অক্ষতই আছে কিন্তু মজিদের দুই হাটু ছড়ে গেছে। পাজামা ভেদ করে রক্ত দেখা যাচ্ছে।
কোমর থেকে পিস্তল বের করে ইমু। চোখের সামনেই পিতার খুনি। পিস্তলটা শক্ত করে ধরে খুব জোড়ে পাশের অন্ধকার ডোবায় ছুড়ে মারে ইমু। দৌড়ে যায় আহত মজিদ মেম্বারের দিকে।
২৪টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নিজেই ধরা খেলেন এটাই নিয়তি।খুবই ভাল লাগল।ভাল লাগল sipu is the back (y) -{@
শিপু ভাই
ধন্যবাদ ভাই
জিসান শা ইকরাম
গল্পের টার্নিং টা শেষ মুহুর্তে এসে হলো,
বুঝতেই পারিনি এমন সমাপ্তি হবে 🙂
অসাধারন একটি ছোট গল্প,
এমন লোক কাউকে খুন করতে পারেনা, কোথাও ভুল হয়েছিল ইমুর মা এর।
ব্লগে কি তোমার ছোট গল্প এই প্রথম পড়লাম?
শুভ কামনা।
শিপু ভাই
হ্যা মামা, এটাই প্রথম!
ইমুও এটা উপলব্ধি করেছে। 🙂
শিপু ভাই
আপনার জন্যও শুভ কামনা
জিসান শা ইকরাম
প্রথম গল্প হিসেবে দারুন সূচনা 🙂
ছাইরাছ হেলাল
গল্পের বাঁক বদলটি সুন্দর হয়েছে,
আরও কিছু লিখলে আস্তে আস্তে মান সম্পন্ন হবে অবশ্যই।
শিপু ভাই
জি মামা। এসব প্রাকটিস
গাজী বুরহান
প্রথমে ভাবছিলাম বাংলা সিনেমার কিচ্ছা!! পরে…
সুন্দর একটা ছোট গল্প। হয়ত মজিদ মেম্বার খুন করেই ছিল কিন্তু মানুষ কি চিরকাল খারাপ থাকতে পারে?
শিপু ভাই
হাহাহাহা ধন্যবাদ 🙂
শুন্য শুন্যালয়
ছোট্ট পরিপূর্ণ গল্প। বেশ ভালো লাগলো গল্পের টার্নিং।
কোন বড়মাপের ভালো কাজ বড় কোন খারাপ কাজকে ক্ষমা করে দিতে পারে।
গল্পকার শিপু ভাইয়ের অগ্রযাত্রা এগিয়ে যাক 🙂
শিপু ভাই
ধন্যবাদ শুন্য শুন্যালয়.
অনেকদিন পর দেখলাম আপনাকে। ভালো আছেন আশা করি 🙂
শুন্য শুন্যালয়
কে কাকে বলছে? এতো আমি বলবো, অনেকদিন পর দেখলাম আপনাকে দেশি ভাই।
হ্যাঁ ভালো আছি। ভালো থাকবেন 🙂
মৌনতা রিতু
অসাধারন একটা ছোট গল্প। প্রতিশোধের স্পৃহা দমন খুবই ভাল লেগেছে। শেষ মুহুর্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভাল থাকুন।
শিপু ভাই
ধন্যবাদ!
শুভকামনা
নীহারিকা জান্নাত
দারুন! চমৎকার!
গল্পের মোড়ে এসে চুপ করে গেলাম। কিছুক্ষণ ভাবলাম।
এই হচ্ছে ছোটগল্পকারের স্বার্থকতা।
খুব ভালো লেগেছে। শুভকামনা।
শিপু ভাই
ট্রাই করছি লেখার!
আপনার মন্তব্য আমাকে উতসাহিত করবে।
ধন্যবাদ আপু
নীহারিকা জান্নাত
আপনার ফেসবুক ওয়ালে বেশ কিছু অণুগল্প দেখলাম। সত্যি দারুন। সেগুলো সংকলণ আকারে ব্লগে দিয়ে দিতে পারেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
দারুণ একটা গল্প লিখেছেন। (y)
শিপু ভাই
ধন্যবাদ 🙂
রিফাত নওরিন
চমৎকার একটি ছোটগল্প…ভালো লাগলো!!!!
শিপু ভাই
ধন্যবাদ নওরিন 🙂
আবু খায়ের আনিছ
স্বাভাবিক ভাবেই এগিয়ে হঠাৎ মোড় নিয়ে ভিন্ন রাস্তায় চলে গেলো, পাঠককের চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দিবে। অসাধারণ হয়েছে।
ফিরে আসায় স্বাগতম ভাইয়া।
শিপু ভাই
অনেক ধন্যবাদ 🙂
হ্যাপি ব্লগিং